করোনা পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ আছে প্রায় ১৫ মাস ধরে। সর্বশেষ ঘোষণা অনুযায়ী, ৩০ জুন পর্যন্ত বন্ধ থাকবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে সোমবার (২৮ জুন) থেকে সারাদেশে লকডাউন ঘোষণা দিয়েছে সরকার। এ সময় সরকারি-বেসরকারি সব অফিস বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী।
লকডাউনের কারণে ৩০ জুন চলমান ছুটি শেষে খুলবে না শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বরং বিধিনিষেধের সঙ্গে মিল রেখে বাড়বে ছুটি। শুধু তাই নয়, লকডাউন বা বিধিনিষেধ উঠে গেলও সংক্রমণের হার ৫ শতাংশের নিচে নেমে আসা পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি অব্যাহত থাকবে বলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, গত ফেব্রুয়ারি ও চলতি জুন মাসে দুই দফা ঘোষণা দিয়েও করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা সম্ভব হয়নি। এ অবস্থায় চলতি বছর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আদৌ খোলা সম্ভব হবে কি না তা অনিশ্চিত। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, করোনার তৃতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে। এটা কবে শেষ হবে বলা যাচ্ছে না। সংক্রমণ নিচের দিকে নামতে থাকলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া যাবে সেটা বলা যাবে না। যতক্ষণ পর্যন্ত সংক্রমণের হার ৫ শতাংশের নিচে নেমে আসবে, ততক্ষণ খুলবে না। এ অবস্থায় চলতি বছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নাও খুলতে করতে পারে।
এর আগে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি জানান, পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে কোনো ঝুঁকি নেওয়া হবে না।
এদিকে করোনার ঊর্ধ্বগতির কারণে সোমবার থেকে আসছে কঠোর লকডাউন। এ অবস্থায় ফের অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে যথাসময়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা। শুক্রবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, করোনার হার আবার ক্রমেই বাড়ছে। আজকেই ১৩ শতাংশের উপর ছিল। ৫ শতাংশের নিচে না এলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হচ্ছে না। ৩০ জুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সম্ভাবনা নেই। তবে পরিস্থিতি বুঝে শিক্ষামন্ত্রী সিদ্ধান্ত জানাবেন। এর জন্য কয়েকদিন অপেক্ষা করতে হবে।
শুক্রবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ২৮ হাজার ২৪৭ জনের। পরীক্ষা করা হয়েছে ২৭ হাজার ৬৫৩টি। নমুনা পরীক্ষার তুলনায় শনাক্তের হার ২১ দশমিক ৯৩ শতাংশ। দেশে এ পর্যন্ত মোট নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৬৪ লাখ ৬৩ হাজার ১১৯টি। মোট পরীক্ষার তুলনায় শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৬০ শতাংশ।
করোনার বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে আইইডিসিআরের সাবেক পরিচালক উপদেষ্টা মুস্তাক আহমেদ বলেন, এখন তৃতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে। গত কয়েকদিন ধরে সংক্রমণের হার ঊর্ধ্বমুখী। প্রথম ঢেউ বেশিদিন থাকলেও দ্বিতীয় ঢেউ কম সময়ের মধ্যে চলে গেছে। তবে এই মুহূর্তে তৃতীয় ঢেউ কতদিন থাকবে তা বলা মুশকিল। তাই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ব্যাপারে সরকার এই মুহূর্তে কোনো ঝুঁকি নেবে না।
জানতে চাইলে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক আলমগীর মুহম্মদ মনসুরুল আলম বলেন, সরকারের ঘোষিত তারিখে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিতে সব ধরনের প্রস্তুতি আছে। সরকারের নির্দেশনা পেলেই প্রতিষ্ঠান খোলা যাবে। তবে সবকিছু নির্ভর করছে পরিস্থিতির ওপর।
এদিকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সোমবার (২৮ জুন) থেকে সাত দিনের জন্য সারাদেশে কঠোর লকডাউন শুরু হচ্ছে। এ সময় জরুরি পরিষেবা ছাড়া সব সরকারি-বেসরকারি অফিস বন্ধ থাকবে। জরুরি কারণ ছাড়া ঘর থেকে কেউ বের হতে পারবে না। বিধিনিষেধের বিষয়ে আরও বিস্তারিত জানিয়ে শনিবার (২৬ জুন) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে আদেশ জারি করা হবে।
কঠোর লকডাউনের সময় জরুরি পণ্যবাহী বাহন ছাড়া সব ধরনের যানবাহনের চলাচল বন্ধ থাকবে। শুধু অ্যাম্বুলেন্স ও চিকিৎসা সংক্রান্ত কাজে ব্যবহৃত যানবাহন চলাচল করতে পারবে। গণমাধ্যম এ বিধিনিষেধের আওতাবহির্ভূত থাকবে।-ঢাকা পোস্ট