ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আলো ছড়াচ্ছে বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক বিদ্যালয়


গো নিউজ২৪ | রাকিবুল ইসলাম রাকিব, গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৮, ২০১৮, ১২:৫৬ পিএম
আলো ছড়াচ্ছে বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক বিদ্যালয়

সময়টা ২০১৪ সাল। আমি ও প্রতিবেশী ছোট ভাই মাহবুবুর রহমান নিজেদের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘রোমান সচেতন কল্যাণ সংস্থা’ নিয়ে এলাকার পিছিয়ে পড়া দরিদ্র জনগোষ্ঠীদের মাঝে কাজ করি। হঠাৎ একদিন প্রতিবন্ধীদের নিয়ে স্কুল করার চিন্তা মাথায় আসে। বিষয়টা নিয়ে কথা বলি মাহবুবের সাথে।  ইতিবাচক সাড়া দেয় মাহবুব। স্কুলের কথা শোনে অনুপ্রেরণা ও পরামর্শ দেন আমার বড় বোন আশরাফুল নেছা। উৎসাহটা তখন আরো বেড়ে যায়। 

এক কান, দু কান করে স্কুল প্রতিষ্ঠার গল্পটা এরই মাঝে ছড়িয়ে পড়ে গ্রামের যুব সমাজের মাঝে। সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়ে স্কুল প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে আসে গ্রামের শিক্ষিত তরূণ-তরূণীরা। ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে গল্পের পরিধিটা। সবার সিদ্ধান্তে স্কুলের নামকরণ করা হয় ‘বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক বিদ্যালয়’।  

প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেওয়া হয় মাহবুবুর রহমানেকে। ২০১৫ সালের ১ জানুয়ারি আমাদের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পৃষ্ঠপোষকতায় মইলাকান্দা গ্রামের শ্যামগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের একটি পরিত্যক্ত ছাত্রাবাসে দশ জন শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু হয় স্কুলটির। 

প্রতিবন্ধীদের নিয়ে স্কুল প্রতিষ্ঠার গল্পের শুরুর দিকটা এভাবেই এই প্রতিবেদকের কাছে তুলে ধরেন ‘রোমান সচেতন কল্যাণ সংস্থা’র  কো-অর্ডিনেটর ও স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মামুনুর রশীদ। 

তিনি বলেন, স্কুল প্রতিষ্ঠার শুরুতেই স্বপ্রণেদিত হয়ে স্বেচ্ছাশ্রমে স্কুলে শিক্ষকতার কাজে যোগ দেন এলাকার বাসিন্দা স্বপন, ফেরদৌস, নোমান, শহীদুল, মাসুদ, সাজেদা, আনিসুর, তাসলিমা, পাপিয়া, আখি, রুনা সহ অনেকই। এরপর সবার সহযোগিতা নিয়েই নানা চড়াই-উৎড়াই পেরিয়ে স্কুলটি এখন উপজেলার প্রতিবন্ধী  ছেলে-মেয়েদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিয়েছে। 

সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও সুযোগ-সুবিধা পেলে আমরা স্কুলটিকে দেশের মডেল স্কুলে পরিণত করতে পারবো।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠার পর থেকে নানা প্রতিকূলতা ও সংকট মোকাবিলা করে স্কুলটি তিন বছর অতিক্রম করেছে। 

নিজস্ব জায়গা না থাকায় বেশ কয়েকবার স্কুলের স্থান পরিবর্তন করতে হয়েছে। চলতি বছরের শুরু থেকে স্কুলের পাঠদান ও দাপ্তরিক কার্যক্রম চলছে গৌরীপুর -নেত্রকোণা সড়কের শ্যামগঞ্জ অটোস্ট্যান্ড সংলগ্ন একটি ভাড়াটে ভবনে। বর্তমানে ওই স্কুলটিতে ১৫৩ জন প্রতিবন্ধী শিশু পড়াশোনা করছে। প্রধান শিক্ষক ও সহকারি শিক্ষক সহ সর্বমোট ১৮ জন শিক্ষক এখানে বিনা পারিশ্রমিকে শিক্ষকতা করছেন। 

সম্প্রতি স্কুলটি সমাজসেবা অধিদপ্তরের তালিকাভুক্ত করার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন করা হলেও এখন পর্যন্ত কোনো উদ্যোগ নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা সমাজ সেবা অফিসার ইসতিয়াক আহমেদ বলেন, আবেদনটি আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট প্রেরণ করেছি। অনুমোদন হলেই আমরা প্রতিবন্ধী স্কুলের শিক্ষার ব্যবস্থার প্রসারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

গত শনিবার সকালে এই প্রতিবেদক যখন ওই স্কুলের আঙিনায় পা রাখেন তখন স্কুলের ভেতর থেকে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার কলরব ভেসে আসছিলো। ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, এক কক্ষ বিশিষ্ট একটি জরাজীর্ণ পাকা ভবনের এক পাশে চলছে শিক্ষকদের দাপ্তরিক কার্যক্রম। 

অন্যপাশের একটি অংশে সারি সারি বেঞ্চ- টেবিল ও মাদুর বিছিয়ে রেখে শিক্ষার্থীদের পাঠাদান দেওয়া হচ্ছে। অধ্যয়নরত স্কুলের প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের বয়স ৫ থেকে ১৮ এর মধ্যে। কেউ দৃষ্টি, কেউ বাক, কেউবা বুদ্ধি আবার কেউবা শারীরিক প্রতিবন্ধী। শিক্ষার্থীরা সবাই গৌরীপুর, ফুলপুর, তারাকান্দা, পূর্বধলা, সহ আশোপাশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলার বাসিন্দা। 

স্কুল ঘুরে দেখা গেছে, শুধু শিশুরা নয়, বয়স্ক প্রতিবন্ধীরাও শিক্ষার আলো গ্রহণ করছেন স্কুলটিতে। এখানে অধ্যয়নরত প্রতিবন্ধীদের শিক্ষার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলা, গান-বাজনার, সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডেরও প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন শিক্ষকরা। কথা হয় স্কুলের সহাকারি শিক্ষক স্বপন সাহার সাথে। তিনি বলেন, প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা এই স্কুলে আসার আগে একরকম ঘরবন্দি অবস্থায় থাকত। কিন্তু স্কুলে আসার পর থেকেই ওদের জীবন পাল্টে যেতে শুরু করেছে। 

প্রশিক্ষণ পেয়ে স্কুলের শিক্ষার্থীরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে শুরু করেছে। প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী লালন, রুমন, হেলেনা, পিয়াস ভালো গান গাইতে পারে। শিল্পী ও রুনা দুই প্রতিবন্ধী ভালো নাচতে পারে। এরই ফাঁকে স্কুলের আঙ্গিনা ঘুরে  ঘুরে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এই অঞ্চলে প্রতিবন্ধীদের পড়াশোনার জন্য কোনো স্কুল নেই। তাই স্কুলটি প্রতিষ্ঠার পর এখানে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের শিক্ষার পরিবেশ তৈরি হয়েছে। বিশেষ যে সকল দরিদ্র প্রতিবর্ন্ধী শিক্ষার্থীদের ভালো স্কুলে (প্রতিবন্ধী) পড়াশোনার সামর্থ্য নেই তারাই এখানে ভর্তি হয়েছেন। প্রতিবন্ধীদের নিয়মিত স্কুলে আসা দেখে অন্য প্রতিবন্ধী শিশুরাও স্কুলে আসার বিষয়ে উৎসাহিত হয়ে উঠেছেন।

পূর্বধলার বৈরাটি ইউনিয়নের জমিলা খাতুন বলেন, প্রতিবন্ধী হওয়ার কারণে আমার নাতীডারে কোনো ইসকুলে ভর্তি করাইতে পারছিলাম না। এইহানে ভর্তি হওয়ার নাতি আশিক এহন নিজেই নিজের নাম লেখা শিখছে। আশিকের দেহাদেহি গ্রামের প্রতিবন্ধী শিশু ফয়সাল, তিন্নি, ইয়াসিনও এহন এই ইসকুলে আইতাছে।

স্কুলের প্রধান শিক্ষক মাহবুবুর রহমান বলেন, আর্থিক সমস্যার কারণে স্কুল প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখনো শিক্ষকরা বিনা পারিশ্রমিকে শিক্ষকতা করছে। তবে প্রতিমাসে স্কুলের ভাড়া, অফিস, ও কর্মচারী খরচ বাবদ প্রায় ১২ হাজার টাকা আমরা নিজেরাই খরচ করছি। তাছাড়া স্কুলের শিক্ষার্থীদের বেঞ্চ, টেবিল, ক্রীড়াসামগ্রী, গান বাজনার সরঞ্জাম, স্কুল ভ্যান সহ প্রয়োজনীয় নানা আসবাবপত্র ও জিনিসপত্রের সংকট রয়েছে। তারপরেও সংকট ও সম্ভাবনা নিয়ে আমরা সকলের সহযোগিতায় স্কুলটিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মর্জিনা আক্তার বলেন, প্রতিবন্ধী স্কুলটির বিষয়ে আমি অবগত আছি। স্কুলের শিক্ষার্থীদের যাতায়াত সুবিধার জন্য একটি স্কুলভ্যান দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অচিরেই সেটি স্কুলে প্রেরণ করা হবে। 

গো নিউজ২৪/এবি

শিক্ষা বিভাগের আরো খবর
রমজান মাসের কোন কোন দিন প্রাইমারিসহ স্কুল-কলেজ খোলা থাকবে

রমজান মাসের কোন কোন দিন প্রাইমারিসহ স্কুল-কলেজ খোলা থাকবে

‘শরীফার গল্প’ রেখেই ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির বইয়ে হবে সংশোধন

‘শরীফার গল্প’ রেখেই ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির বইয়ে হবে সংশোধন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন উপ-উপাচার্য হলেন অধ্যাপক সীতেশ চন্দ্র বাছার

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন উপ-উপাচার্য হলেন অধ্যাপক সীতেশ চন্দ্র বাছার

‍‍`শরিফ থেকে শরিফা‍‍` ইস্যুতে সুখবর দিলেন শিক্ষামন্ত্রী

‍‍`শরিফ থেকে শরিফা‍‍` ইস্যুতে সুখবর দিলেন শিক্ষামন্ত্রী

৫ জেলার স্কুল বন্ধ

৫ জেলার স্কুল বন্ধ

সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শনিবারের সাপ্তাহিক ছুটি কি বাতিল, যা জানা গেল

সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শনিবারের সাপ্তাহিক ছুটি কি বাতিল, যা জানা গেল