ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ব্যাংকের উচ্চ পদে বাড়ছে নারীর উপস্থিতি


গো নিউজ২৪ | নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: মার্চ ৮, ২০২১, ০২:৪০ পিএম আপডেট: মার্চ ৮, ২০২১, ০৮:৪০ এএম
ব্যাংকের উচ্চ পদে বাড়ছে নারীর উপস্থিতি

১৯৯০ সালে এএনজেড গ্রিন্ডলেজ ব্যাংকে ম্যানেজমেন্ট ট্রেইনি হিসেবে যোগদানের মধ্য দিয়ে ব্যাংকিং ক্যারিয়ার শুরু করেন হুমায়রা আজম। কাজ করেছেন এইচএসবিসি, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক ও আইপিডিসিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে। কর্মজীবনে নানা ধাপ পেরিয়ে এখন ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনার সর্বোচ্চ পদে। দায়িত্ব পালন করছেন ব্যাংকটির ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হিসেবে। 

হুমায়রা আজমের মতো নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে এখন ব্যাংকিং পেশায় আসছেন অনেক নারী। বর্তমানে এ খাতে ২৮ হাজারেরও বেশি নারী চাকরি করছেন। যা মোট কর্মীর ১৮ শতাংশ। এছাড়া ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের রয়েছেন ১২ শতাংশের বেশি নারী। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পারিবারিক চাপে অনেক নারী ব্যাংকে ক্যারিয়ার শুরু করলেও বেশিদিন টিকে থাকতে পারছেন না। তবে পরিবারের সহযোগিতা পেলে এ খাতে নারীদের অংশগ্রহণ দ্রুতই বাড়বে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর মোট জনবল ১ লাখ ৮৩ হাজার ২০৬ জন। এর মধ্যে নারী কর্মী ২৮ হাজার ৩৭৮ জন। এ হিসাবে ব্যাংকিং পেশায় নারীর হার দাঁড়িয়েছে ১৮ দশমিক ৩২ শতাংশ। ২০ বছর আগে এ হার অর্ধেকেরও কম ছিল। এখন ব্যাংকগুলোয় ৩০ বছরের কম বয়সী যেসব কর্মী আছেন তাদের মধ্যে ২০ দশমিক ৬২ শতাংশ নারী। ৩০ থেকে ৫০ বছর বয়সী কর্মীর মধ্যে নারীর হার ১৫ দশমিক ৭৬ শতাংশ। ৫০ বছরের বেশি বয়সীর মধ্যে এ হার বেড়ে ৮ দশমিক ৪০ শতাংশে উঠেছে।

ট্রাস্ট ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হুমায়রা আজম বলেন, সংসার ও চাকরি দুটা এক সঙ্গে করা সহজ নয়। সবাই বলেন ওয়ার্ক লাইফ ব্যালেন্স। আসলে চাকরি করলে সংসার পুরো হয় না। আবার সংসার করলে চাকরি পুরো হয় না এটাই সত্য কথা। ১৯৯০ সাল থেকে শুরু করেছি। এখনো চলছে। ঘানি টেনে যাচ্ছি। নারী হলে যেটা হয়, অফিসেও কাজ করতে হয় সংসারে এসেও কাজ করতে হয়। জীবন ব্যালেন্স করা খুব কঠিন। একজন নারীকে যদি ক্যারিয়ারে নজর দিতে হয়। তাকে অনেক সিরিয়াস হতে হবে। শতভাগ কাজ করেই তাকে টিকে থাকতে হবে। অনেক ক্ষেত্রে ১০০ নয় হাজারো ভাগ কাজ করে টিকে থাকতে হয়। কর্ম জীবনে এটাই বাস্তবতা।

এতো কিছুর পরও ব্যাংকে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ছে উল্লেখ করে হুমায়রা আজম বলেন, ব্যাংকে নারী কর্মী বাড়ছে আগামীতে আরোও বাড়বে। এর মূল কারণ নারীরা অনার্স মাস্টার্স পাস করার পর এটার মূল্যায়ন হিসাবে চাকরিতে আসছেন। এ ক্ষেত্রে ব্যাংকের জবকে বেশি নিরাপদ মনে করছেন। তবে যাদের বাড়িতে মা বা শাশুড়ি আছেন অথবা পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সহযোগিতা পান তাদের জন্য কাজ করা কিছুটা সহজ হয়। আর যাদের এ সহযোগিতা নেই তাদের টিকে থাকা খুবই চ্যালেঞ্জ। 

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সরকারি বাণিজ্যিক ৬ ব্যাংকে কর্মরত ৫০ হাজার ১৬ জনের মধ্যে নারী কর্মী রয়েছেন ৭ হাজার ৬৩৯ জন। যা মোট কর্মীর ১৮ দশমিক ০৩ শতাংশ। এর মধ্যে নারী বোর্ড সদস্য ৪ দশমিক ৭৬ শতাংশ, উচ্চ পর্যায়ের ১৩ দশমিক ৬ শতাংশ, মধ্যম পর্যায়ের ১৫ দশমিক ৭৪ শতাংশ এবং প্রারম্ভিক পর্যায়ের ১৫ দশমিক ২৩ শতাংশ নারী কর্মী রয়েছেন।   

সরকারি বিশেষায়িত বাণিজ্যিক তিন ব্যাংকে কর্মরত ১১ হাজার ৮০০ জনের মধ্যে নারী কর্মী রয়েছেন ১ হাজার ৮৯৬ জন। যা মোট কর্মীর ১৬ দশমিক ০৭ শতাংশ। এর মধ্যে নারী বোর্ড সদস্য ৭ শতাংশ, উচ্চ পর্যায়ের ৭ দশমিক ২৩ শতাংশ, মধ্যম পর্যায়ের ১৪ দশমিক ৮৪ শতাংশ এবং প্রারম্ভিক পর্যায়ের ১৩ দশমিক ৭৪ শতাংশ। 

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের বেসরকারি ৪১টি ব্যাংকে কর্মরত ৯৯  হাজার ৬৩৩ জনের মধ্যে নারী কর্মী রয়েছে ১৭ হাজার ৮৯৫। যা মোট জনবলের ১৮ দশমিক ৩১ শতাংশ। এর মধ্যে নারী বোর্ড সদস্য ৭ শতাংশ, উচ্চ পর্যায়ের ১৩ দশমিক ১০ শতাংশ, মধ্যম পর্যায়ের ১৫ দশমিক ০৮ শতাংশ এবং প্রারম্ভিক পর্যায়ে নারী কর্মী আছেন ১৬ দশমিক ১৮ শতাংশ। তবে শতাংশের হিসাবে ব্যাংক খাতে সবচেয়ে বেশি নারী কাজ করেন বিদেশি ৯ ব্যাংকে। এসব ব্যাংকে কর্মরত ৩ হাজার ৮৬২ জনের মধ্যে নারী কর্মী রয়েছে ৯৪৮। যা মোট জনশক্তির ৩২ দশমিক ৫৩ শতাংশ। এর মধ্যে নারী বোর্ড সদস্য ১৭ দশমিক ৩৯ শতাংশ, উচ্চ পর্যায়ের ২১ দশমিক ১৬ শতাংশ, মধ্যম পর্যায়ের ২১ দশমিক ২৫ শতাংশ এবং প্রারম্ভিক পর্যায়ে নারী কর্মী রয়েছেন ২৭ দশমিক ১৪ শতাংশ। ব্যাংক বর্হিভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানে এক হাজার ১৫ জন নারী কর্মী কাজ করছেন। যা মোট কর্মীর ১৬ শতাংশ।

জানা গেছে, সরকারি ব্যাংকে পরিচালক নিয়োগ দেয় সরকার। নারী উদ্যোক্তা, সাবেক নারী ব্যাংকার, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ও যুগ্ম সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সরকারি ব্যাংকে পরিচালক পদে নিয়োগ দেয়া হয়। আর বেসরকারি ব্যাংকে পরিচালকদের স্ত্রী, কন্যা ও পুত্রবধূরা ব্যাংকের পরিচালক হিসেবে বেশি দায়িত্ব পালন করেন।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবে, সরকারি ছয়টি ব্যাংকে কর্মসংস্থান বদল করা নারী কর্মকর্তার হার ৩ দশমিক ২৩ শতাংশ, সরকারি বিশেষায়িত তিনটি ব্যাংকে ১২ দশমিক ৮৮ শতাংশ, বেসরকারি বণিজ্যিক ব্যাংকে ১২ দশমিক ৪৬ শতাংশ ও বিদেশি বাণিজ্যিক ব্যাংকে ৩৩ দশমিক ৭০ শতাংশ। 

ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, পড়ালেখা শেষ করে ব্যাংকগুলোয় প্রচুর নারী কর্মী যোগদান করলেও পরে তাদের অনেকে চাকরি ছাড়ছেন। মূলত কাজের চাপ, সন্তান লালন-পালন ও পরিবারের সদস্যদের নেতিবাচক মনোভাবের কারণে এসব নারী ব্যাংকার মধ্যপর্যায়ে এসে চাকরি ছেড়ে দিচ্ছেন।

অর্থনীতি বিভাগের আরো খবর
৫ বছর মেয়াদি সুকুক বন্ড বাজারে ছাড়ার উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে সরকার

৫ বছর মেয়াদি সুকুক বন্ড বাজারে ছাড়ার উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে সরকার

বেসিক ব্যাংক কি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে?

বেসিক ব্যাংক কি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে?

বাজারে এখন টাকা ও ডলার উভয় মুদ্রার সংকট, অদল-বদল নিয়ে নতুন সিদ্ধান্ত

বাজারে এখন টাকা ও ডলার উভয় মুদ্রার সংকট, অদল-বদল নিয়ে নতুন সিদ্ধান্ত

ইসলামী ব্যাংকসহ ৮টি ব্যাংকের কারণে ঘাটতিতে পুরো ব্যাংক খাত

ইসলামী ব্যাংকসহ ৮টি ব্যাংকের কারণে ঘাটতিতে পুরো ব্যাংক খাত

হোটেল-রেস্তোরাঁয় বিয়ে বা জন্মদিনের অনুষ্ঠানে জনপ্রতি ৫০ টাকা আয়করের প্রস্তাব

হোটেল-রেস্তোরাঁয় বিয়ে বা জন্মদিনের অনুষ্ঠানে জনপ্রতি ৫০ টাকা আয়করের প্রস্তাব

ব্যাংক পরিচালকদের সভায় অংশগ্রহণকারীদের সম্মানী মাসে ৫০ হাজার টাকা

ব্যাংক পরিচালকদের সভায় অংশগ্রহণকারীদের সম্মানী মাসে ৫০ হাজার টাকা