ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ভেজাল ছাড়া কিছুই পাওয়া যাচ্ছে না


গো নিউজ২৪ | নিউজ ডেস্ক প্রকাশিত: মার্চ ৭, ২০২১, ০৭:৪১ এএম
ভেজাল ছাড়া কিছুই পাওয়া যাচ্ছে না

কোনো কিছুতেই ভেজাল ও মানহীন পণ্য তৈরি ও বিক্রি বন্ধ হচ্ছে না। মুদি দোকান থেকে শুরু করে সর্বত্র মানহীন ও ভেজাল পণ্য দেদার বিক্রি হচ্ছে। ব্রেড, বিস্কুট, সেমাই, নুডলসসহ নানা ধরনের মিষ্টি জাতীয় খাবার তৈরিতে কাপড়ে ব্যবহৃত রঙ প্রয়োগ করা হচ্ছে। শিশুখাদ্য দুধও ভেজালমুক্ত নয়। নোংরা পানি দিয়ে আইসক্রিম বানানো হচ্ছে। জীবন রক্ষাকারী ওষুধও ভেজালমুক্ত রাখা যাচ্ছে না। আর এসব পণ্য কিনে ভোক্তারা প্রতারিত হচ্ছেন। বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকিও।

রাজধানীর যত্রতত্র নকল কারখানায় ওয়াসার পানি বোতলজাত করে ‘মিনারেল ওয়াটার’ তৈরি করা হচ্ছে। এছাড়া অপরিপক্ব ফল পাকাতে অবাধে ক্যালসিয়াম কার্বাইড ব্যবহার করা হচ্ছে। মাঠপর্যায়ে কৃষি পণ্যেও বিষাক্ত রাসায়নিক (কেমিক্যাল) মেশানো হচ্ছে। নকল কারখানার মালিক ও ভেজাল পণ্য বাজারজাতকারীদের বিরুদ্ধে একাধিক সরকারি সংস্থা অভিযান চালালেও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ারও কোনো নজির নেই। ধরা পড়ার পর জরিমানা ও কারখানা সাময়িক বন্ধ হলেও একই ধরনের অপকর্মে তারা আবার লিপ্ত হয়। এছাড়া প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে অনেকে নির্বিঘ্নে অপকর্ম করে যাচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খাদ্য ও পানীয়ের সঙ্গে কাপড়ের রঙ শরীরে প্রবেশ করলে ব্যাপক ক্ষতি হয়। এতে কোনো না কোনো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবে সবচেয়ে বেশি দৃশ্যমান ক্ষতিগুলো হয়- লিভার, কিডনি, হৃৎপিণ্ড ও অস্থিমজ্জার। ধীরে ধীরে অঙ্গগুলো নষ্ট হয়। এক্ষেত্রে শিশু ও বয়স্কদের অঙ্গগুলো তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়। এছাড়া ভেজাল খাদ্যপণ্যে দেশে বিভিন্ন রকমের ক্যানসার, লিভার সিরোসিস, কিডনি ফেলিউর, হৃদযন্ত্রের অসুখ, হাঁপানি অনেকগুণ বেড়ে যায়।

বিদেশি ব্র্যান্ডের নামে ভেজাল পণ্য তৈরি করে বাজারজাতকারী চক্রের দুই সদস্যকে ১ জানুয়ারি গ্রেফতার করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানার উত্তর রায়েরবাগের একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

সিআইডি সূত্র জানায়, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী দীর্ঘদিন ধরে উত্তর রায়েরবাগের রশিদবাগ এলাকার একটি ভবনে ভারতীয় বিভিন্ন ব্র্যান্ডের লোগো ব্যবহার করে নকল পণ্য তৈরি করে আসছিল। এছাড়া ১৩ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর সবুজবাগ থানা এলাকায় অভিযান চালায় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। ঝিলপাড় এলাকার একটি নামহীন বেকারিতে অভিযান চালানো হয়। এ সময় সেখানে দেখা যায়, মেয়াদোত্তীর্ণ বিস্কুট ও ব্রেডসহ বেকারি পণ্য মিকচার মেশিনে দিয়ে নতুন করে পণ্য তৈরি করা হচ্ছে। কাপড়ের রঙ, হাইড্রোজেন, কেমিক্যাল দিয়ে নতুন করে বিস্কুট ও ব্রেড (পাউরুটি) তৈরি করে রাজধানীসহ বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্রি করছে। ভেজাল পণ্য দেখে বোঝার কোনো উপায় নেই- এগুলো ভেজাল বা মানহীন।

অধিদফতরের পক্ষ থেকে ১১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীসহ সারা দেশে ভেজালবিরোধী অভিযান পরিচালিত হয়। অনিবন্ধিত ওষুধ, মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ ও পণ্য, নকল পণ্য বিক্রির অপরাধে সারা দেশে ৬৮টি প্রতিষ্ঠানকে ৯ লাখ ২৮ টাকা জরিমানা করা হয়। এছাড়া ৩০ জানুয়ারি জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর রাজধানীর বাড্ডা-সাতারকুল এলাকায় অভিযান চালায়। এ সময় দেখা যায়, বাজার থেকে মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য কিনে নতুন করে মিষ্টি জাতীয় খাবার তৈরি ও প্যাকেটে ভরে বাজারজাত করা হচ্ছে। উৎপাদনের তারিখও দেওয়া হচ্ছে পরের দিন। জানতে চাইলে বাজার তদারকি সংস্থা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার যুগান্তরকে বলেন, অভিযানকালে আমরা এমন সব প্রতিষ্ঠান পাই যেগুলোর কোনো নাম নেই। এসব প্রতিষ্ঠান বিষাক্ত রাসায়নিক (কেমিক্যাল) দিয়ে বেকারি পণ্য তৈরি করে। তারা ভেজাল শিশু খাদ্যও তৈরি করে।

মনজুর শাহরিয়ার আরও বলেন, অভিযানকালে বাজারের মুদি দোকান থেকে শুরু করে শপিংমলে মেয়াদোত্তীর্ণ খাবার বিক্রি করতে দেখেছি। এছাড়া ভেজাল ও মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধও বিক্রি করা হচ্ছে। তিনি বলেন, অভিযানে আমরা কাউকে ছাড় দিচ্ছি না। প্রতিষ্ঠানও সিলগালা করেছি। ধোঁকাবাজরা যাতে অসাধু পন্থায় ভেজাল পণ্য আর তৈরি করতে না পারে সেজন্য ফলোআপ করা হচ্ছে। এছাড়া প্রতিদিন রাজধানীসহ সারা দেশে ঝটিকা অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।

বিএসটিআই সূত্র জানায়, একটি পণ্য বাজারজাতকরণের আগে পণ্যের গুণগতমানের নিশ্চয়তা বিধানে (পণ্য পরীক্ষা) বিএসটিআই সিএম সনদ নিতে হয়। কিন্তু প্রতিষ্ঠানগুলো গুণগতমান পরীক্ষা ছাড়াই (সনদ না নিয়ে) বিএসটিআই লোগো ব্যবহার করে পণ্য বাজারজাত করে আসছে। সংস্থাটি জানায়, নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ অভিযান পরিচালনা করে তাদের ধরা হচ্ছে। এজন্য অনেক প্রতিষ্ঠানকে সিলগালা ও অনেক প্রতিষ্ঠানকে জরিমানাও করা হচ্ছে।

অর্থনীতি বিভাগের আরো খবর
৫৯৫ টাকা কেজি দরে দিনে ১ কোটি টাকার গরুর মাংস বিক্রি করেন খলিল

৫৯৫ টাকা কেজি দরে দিনে ১ কোটি টাকার গরুর মাংস বিক্রি করেন খলিল

১৪ বছর আগে একীভূত হয়েও এখনো ধুঁকছে যে ব্যাংক

১৪ বছর আগে একীভূত হয়েও এখনো ধুঁকছে যে ব্যাংক

রেড জোনে থাকা ‘বেসিক ব্যাংক’ যাবে কার সঙ্গে?

রেড জোনে থাকা ‘বেসিক ব্যাংক’ যাবে কার সঙ্গে?

বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছে গেছে বিদেশি ঋণ, পরিশোধ হবে যেভাবে

বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছে গেছে বিদেশি ঋণ, পরিশোধ হবে যেভাবে

৫ বছর মেয়াদি সুকুক বন্ড বাজারে ছাড়ার উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে সরকার

৫ বছর মেয়াদি সুকুক বন্ড বাজারে ছাড়ার উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে সরকার

বেসিক ব্যাংক কি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে?

বেসিক ব্যাংক কি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে?