ঢাকা শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

ডজনখানেক ব্যাংক কমতে পারে


গো নিউজ২৪ | নিউজ ডেস্ক প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৭, ২০২৪, ০৮:৫৮ এএম
ডজনখানেক ব্যাংক কমতে পারে

নানা কৌশলে খেলাপি ঋণ কম দেখানোর সুযোগ পাচ্ছে ব্যাংকগুলো। এর মধ্যেও কয়েকটি ব্যাংকের দুরবস্থায় সমালোচিত হচ্ছে পুরো খাত। আবার আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ব্যাংকিং খাতের সুশাসন ও খেলাপি ঋণ কমানোর ওপর জোর দিয়েছে। চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে খেলাপি ঋণ কমানো, তারল্য সংকট ও মূলধন ঘাটতি থেকে বের হতে না পারলে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বিভিন্ন সূচকের ভিত্তিতে তদারকির এক পর্যায়ে দুর্বল কিছু ব্যাংককে অপেক্ষাকৃত সবল ব্যাংকের সঙ্গে বাধ্যতামূলকভাবে একীভূত করা হবে। সব মিলিয়ে ডজনখানেক ব্যাংক কমতে পারে বলে জানা গেছে। 

সংশ্লিষ্টরা জানান, অর্থনীতির আকারের তুলনায় বাংলাদেশে ব্যাংকের সংখ্যা বেশি নিয়ে নানা সমালোচনা রয়েছে। দেশে এখন ব্যাংক রয়েছে ৬১টি। বড় জালিয়াতি ও অনিয়ম উদ্ঘাটিত হয়েছে এমন ব্যাংকে সংকট বেশি। ব্যাংকিং খাতের মোট খেলাপি ঋণের ৬৩ শতাংশের বেশি আছে ১০ ব্যাংকে। মূলধন ঘাটতিতে রয়েছে ১৪টি ব্যাংক। এর মধ্যে অনেকই লোকসানে। আবার পরিচালনা পর্ষদে সুশাসন ঘাটতির কারণে বেনামি ও ভুয়া ঋণ আর ফেরত আনতে না পেরে বড় ধরনের তারল্য সংকটে পড়েছে কয়েকটি ব্যাংক। 

ফলে কয়েকটি ব্যাংক একীভূত করলে এ খাতের পরিস্থিতির কিছুটা হলেও উন্নতি হবে। এ ছাড়া একটি বার্তা যাবে যে, ভালো না করলে টিকে থাকা যাবে না। 

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক ড. মইনুল ইসলাম বলেন, ব্যাংকিং খাতের সুশাসন ঘাটতি ও খেলাপি ঋণ একটি আরেকটির সঙ্গে সম্পৃক্ত। ব্যাংকিং খাতের বিভিন্ন সংকটের মূলে সুশাসনের অভাব। সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও খেলাপি ঋণ কমাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে রোডম্যাপ দিয়েছে, তা ভালো। তবে সব ব্যাংকের ক্ষেত্রে তা সমানভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। মনে হয়, কেন্দ্রীয় ব্যাংক তা পারবে না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন নীতিনির্ধারক পর্যায়ের কর্মকর্তা বলেন, ব্যাংকিং খাতের সুশাসন ফেরানো গেলে আস্থার সংকট কমে যাবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রথমে প্রতিটি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ, করপোরেট সুশাসন, তারল্য ও মূলধন পর্যালোচনা করা হবে। চলতি বছরের মার্চ, জুন, সেপ্টেম্বর ও ডিসেম্বর প্রান্তিকের তথ্য পর্যালোচনা করে আগামী বছরের মার্চ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া শুরু হবে। প্রথম ধাপেই ব্যাংক একীভূত করা হবে না। শুরুতে বিভিন্ন সুবিধা বন্ধ করা হবে। এরপর একীভূত করার উদ্যোগ নেওয়া হবে। এসব নিয়ে চার মাস ধরে আইএমএফের সঙ্গে অত্যন্ত নিবিড়ভাবে কাজ চলছে। অবশ্য আইএমএফ কিছু না বললেও ব্যাংকিং খাতের সংস্কার না করে উপায় নেই।

বেসরকারি একটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক নতুন করে যেসব উদ্যোগ নিয়েছে, সব ব্যাংকের জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য হলে পুরো খাতের অবস্থা পরিবর্তন হয়ে যাবে। আস্থাহীনতা, তারল্য সংকট, মূলধন ঘাটতি কিংবা উচ্চ খেলাপি ঋণ থাকবে না। তাঁর মতে, সব ব্যাংকই সারাদেশ থেকে আমানত নিয়ে ঢাকা, চট্টগ্রামকেন্দ্রিক ঋণ দিচ্ছে। দেশের প্রতিটি ব্যাংকের প্রডাক্ট এবং টার্গেট গ্রাহক একই। এ অবস্থার অবসানে বিশেষ নীতিমালা করা দরকার। আবার একই ব্যক্তি একাধিক ব্যাংকের শেয়ার কিনে কর্তৃত্বে থাকার সুযোগ পাচ্ছেন। শেয়ারের বিপরীতে লভ্যাংশ পাওয়া তাদের লক্ষ্য নয়। পর্ষদে নিজের লোক বসিয়ে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ঋণ বের করা নিয়ে তারা ব্যস্ত। এ জন্য বেনামি শেয়ার কিনে অনেক সময় যাকে-তাকে পরিচালক করা হয়। ব্যাংক একীভূত হলে স্বাভাবিকভাবে পরিচালক সংখ্যা কমবে। আবার এমডিসহ সব পর্যায়ের কর্মকর্তা দক্ষতার পরিচয় দিতে না পারলে টিকতে পারবেন না। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ব্যাংকগুলোর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কাগজে-কলমে খেলাপি ঋণ ছিল ১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৮ কোটি টাকা। মোট ঋণের, যা ৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ। এর মধ্যে রাষ্ট্রীয় বাণিজ্যিক ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ২১ দশমিক ৭০ শতাংশ এবং বেসরকারি ব্যাংকের ৭ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। তবে দুর্দশাগ্রস্ত তথা পুনঃতপশিল কিংবা অবলোপনের পরও আদায় না হওয়া ঋণের পরিমাণ ৪ লাখ কোটি টাকার বেশি। মোট ঋণের যা ২৬ শতাংশ। এর আগে ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত কাগজে-কলমে খেলাপি ঋণ দেখানো হয় ১ লাখ ২০ হাজার ৬৫৭ কোটি টাকা। মোট ঋণের যা ৮ দশমিক ১৬ শতাংশ। দুর্দশাগ্রস্ত ঋণের পরিমাণ ছিল ৩ লাখ ৭৮ হাজার কোটি বা মোট ঋণের ২৫ দশমিক ৫৮ শতাংশ।

২০১৯ সালে আ হ ম মুস্তফা কামাল অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়ে ঘোষণা দেন– খেলাপি ঋণ এক টাকাও বাড়বে না। তবে খেলাপি কমাতে কঠোরতার পথে না গিয়ে ব্যবসায়ীদের একের পর এক সুবিধা দিতে শুরু করেন। ২০১৯ সালের এপ্রিলে এক নির্দেশনার মাধ্যমে খেলাপি ঋণ হিসাব পদ্ধতিতে শিথিলতা আনে বাংলাদেশ ব্যাংক। আন্তর্জাতিক উত্তম চর্চা থেকে বেরিয়ে ঋণ শ্রেণীকরণের সময় বাড়ানো হয়। তখন মেয়াদি ঋণ খেলাপি করার সময়সীমার অতিরিক্ত ছয় মাস এবং অন্য ক্ষেত্রে তিন মাস করে বাড়ানো হয়। ওই বছরের ১৬ মে মাত্র ২ শতাংশ ডাউনপেমেন্ট দিয়ে ১০ বছরের জন্য ঋণ পুনঃতপশিলের নীতিমালা করা হয়। তবে কোনো কিছুতেই খেলাপি ঋণ কমানো যাচ্ছিল না। তখন ব্যবসায়ীদের দাবি মেনে ঋণের সুদহার কমাতে ২০২০ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি এক নির্দেশনার মাধ্যমে ওই বছরের এপ্রিল থেকে সব ঋণের সর্বোচ্চ সুদ ৯ শতাংশ বেঁধে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর মধ্যে শুরু হয় করোনা মহামারির প্রভাব। এরপর ঋণ পরিশোধ না করেও নিয়মিত দেখানোর এক অদ্ভুত সুযোগ চালু করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কোনো কিছুতেই খেলাপি ঋণে লাগাম আসেনি। বরং টাকা পরিশোধ না করার নতুন একটি গোষ্ঠী তৈরি হয়েছে। এখন আইএমএফের চাপে আবার আন্তর্জাতিক উত্তম চর্চার আলোকে ঋণ শ্রেণীকরণ নীতিমালায় ফিরতে হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংককে। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, আগের পদ্ধতিতে শ্রেণীকৃত ঋণ হিসাব শুরু হলে খেলাপি ঋণ প্রথমে কিছুটা বাড়বে। এ কারণে ঋণ অবলোপন নীতিমালা শিথিল এবং খেলাপি ঋণ কেনার কোম্পানি গঠন আইন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে একটি ঋণ অবলোপন করতে হলে শতভাগ নিরাপত্তা সঞ্চিতি বা প্রভিশন করতে হবে। ফলে সুযোগ দিলেই এসব ঋণ অবলোপন হয়ে যাবে তেমন নয়। আবার খেলাপি ঋণ বিক্রি করতে চাইলেই অন্যরা কিনে নেবে না। ফলে আদায় জোরদারের বিকল্প নেই। যে কারণে এমডির কর্ম মূল্যায়নে ঋণ আদায়ের লক্ষ্য অর্জন, ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে কঠোরতা, অর্থঋণ আদালতের বাইরে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির মতো বিষয় সংযুক্ত করা হচ্ছে। অন্যদিকে ঋণ আদায়ে কর্মকর্তাদের উৎসাহ দিতে বিশেষ ভাতা চালু হবে। সূত্র: সমকাল

অর্থনীতি বিভাগের আরো খবর
৫৯৫ টাকা কেজি দরে দিনে ১ কোটি টাকার গরুর মাংস বিক্রি করেন খলিল

৫৯৫ টাকা কেজি দরে দিনে ১ কোটি টাকার গরুর মাংস বিক্রি করেন খলিল

১৪ বছর আগে একীভূত হয়েও এখনো ধুঁকছে যে ব্যাংক

১৪ বছর আগে একীভূত হয়েও এখনো ধুঁকছে যে ব্যাংক

রেড জোনে থাকা ‘বেসিক ব্যাংক’ যাবে কার সঙ্গে?

রেড জোনে থাকা ‘বেসিক ব্যাংক’ যাবে কার সঙ্গে?

বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছে গেছে বিদেশি ঋণ, পরিশোধ হবে যেভাবে

বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছে গেছে বিদেশি ঋণ, পরিশোধ হবে যেভাবে

৫ বছর মেয়াদি সুকুক বন্ড বাজারে ছাড়ার উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে সরকার

৫ বছর মেয়াদি সুকুক বন্ড বাজারে ছাড়ার উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে সরকার

বেসিক ব্যাংক কি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে?

বেসিক ব্যাংক কি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে?