ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

গারদে বসেই সম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণ, মাঠে ভয়ংকর ১৫ কিলার


গো নিউজ২৪ | নিজস্ব প্রতিনিধি: প্রকাশিত: নভেম্বর ২২, ২০১৯, ০৪:৫৯ পিএম আপডেট: নভেম্বর ২২, ২০১৯, ১০:৫৯ এএম
গারদে বসেই সম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণ, মাঠে ভয়ংকর ১৫ কিলার

ক্যাসিনোকাণ্ডে গ্রেফতার যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের বহিষ্কৃত সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া জেলে বসেই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের  পরিকল্পনা করছেন। ক্যাসিনোসহ অবৈধ সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে যাচ্ছেন গারদে বসেই। সেই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে তার ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত আন্ডারওয়ার্ল্ডের ভয়ংকর ১৫ কিলারকে এরই মধ্যে নির্দেশনা দিয়েছেন খালেদ। বসের নির্দেশনা পেয়ে মাঠে কাজে শুরু করে দিয়েছে ওই কিলাররা।

খালেদের ঘনিষ্ঠ একাধিক সহযোগীর জবানি এবং অনুসন্ধানে এসব তথ্য বেরিয়ে এসেছে বলে জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক সূত্র।

প্রায় দুই মাস আগে খালেদ র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হলেও তার অস্ত্রধারী ক্যাডারদের কেউ গ্রেফতার হয়নি। তার বিশাল অস্ত্রভাণ্ডারও এখন পর্যন্ত অক্ষত।

এই ১৫ কিলার ঢাকার আলোচিত সব হত্যা মামলার আসামি। তাদের হাতেই রয়েছে খালেদের সব আগ্নেয়াস্ত্র। এদের মাধ্যমেই একসময় খালেদ ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিলেন। এখন জেলে বসেই ফরিকাপুল, পল্টন, রামপুরা, খিলগাঁও, সবুজবাগ, বাসাবো, মতিঝিল, রমনাসহ আশপাশের এলাকা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছেন। তারা ক্যাসিনো, ফুটপাত, বিভিন্ন স্থাপনায় চাঁদবাজি শুরু করে দিয়েছেন।

ধারণা করা হচ্ছে, খালেদের এই ১৫ ক্যাডারের হাতে রয়েছে শতাধিক আগ্নেয়াস্ত্র। এর মধ্যে ৪টি অত্যাধুনিক অভিজাত অস্ত্র একে-২২। অধিকাংশ অস্ত্রই চট্টগ্রামের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী যুবলীগ নেতা হেলাল আকবর চৌধুরী বাবরের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। বাবর চট্টগ্রামে জোড়া খুনসহ ১৬টি মামলার আসামি। চট্টগ্রাম থেকে অস্ত্রের চালান আসত ট্রেনে। বাবরের বন্ধুর পল্টনের অস্ত্রের দোকান থেকেও খালেদের কাছে অস্ত্র যেত। অস্ত্র মজুদ করা হতো ঢাকার শান্তিনগরের চামেলীবাগের একটি বাসা এবং কমলাপুরের একটি বাসায়। চামেলীবাগের বাসাটি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এক জনপ্রতিনিধির। আর কমলাপুরের বাসাটির মালিক একজন চিকিৎসক। তারা দু’জনেই খালেদের ঘনিষ্ঠ বন্ধু।

একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, খালেদের প্রধান সহযোগীর নাম বেলাল হোসেন কিসলু ও রইছ উদ্দিন। তারা দু’জনেই শীর্ষ সন্ত্রাসী কাইল্লা পলাশের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেছে। ২০০৫ সালে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে বনশ্রীর ক্রিস্টাল ক্যাবল নেটওয়ার্কের অফিসে মিথুন ও টিটু খুনের অন্যতম আসামি তারা। রনি ও সজিব নামের দুই ভাড়াটে কিলারও এই ডাবল মার্ডার কেসের আসামি। তারা খালেদের হয়ে এখন দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। শুধু ডাবল মার্ডার নয়, ক্যাবল ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ২০১৪ সালে মগবাজারে মাহবুবুর রহমান রানা হত্যার সঙ্গে জড়িত রইছ, রনি ও সজিব। খালেদের আরেক সহযোগী ফখরুলও এই রানা হত্যায় জড়িত। শাহাদাত হোসেন সাধু, রাসেল ও সোহাগ নামে আরও তিন ভাড়াটে কিলার খালেদের দলে যোগ দিয়ে নগরীর ত্রাস হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করে।

এদিকে ২০১৩ সালে আলোচিত যুবলীগ নেতা রিয়াজুল হক খান মিল্কী হত্যা মামলার তিন আসামিকে পুনর্বাসিত করেন খালেদ। এই তিনজন হল- কাইল্যা আমিনুল, অঙ্কুর ও উজ্জ্বল মোর্শেদ। তাদের কাছেও খালেদের অস্ত্রভাণ্ডারের অনেক অস্ত্র রয়েছে। ২০১০ সালে মহাখালীর বক্ষব্যাধি হাসপাতালের চিকিৎসক ও স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ নেতা ডা. নিতাই হত্যা মামলার দুই আসামি কবির ও পারভেজকে দলে ভিড়িয়েছে খালেদ। কবিরের বিরুদ্ধে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় হত্যা, ছিনতাই, ডাকাতি, চাঁদাবাজিসহ অন্তত ১৫টি মামলা রয়েছে। খালেদের আরেক সহযোগী পল্টি রিপন ২০০৭ সালে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা কাওছার হত্যা মামলার আসামি। আরেক সহযোগী সেলিম মহাখালীতে আওয়ামী লীগ নেতা সিদ্দিক হত্যা মামলার আসামি।

খালেদের অস্ত্রভাণ্ডারের মূল নিয়ন্ত্রক কিসলু। কিসলু নিজেকে খালেদের ভাই হিসেবে পরিচয় দেয়। সে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় নিয়ন্ত্রণ করত। টেন্ডার কিংখ্যাত জি কে শামীমের সঙ্গেও ছিল তার ঘনিষ্ঠতা। খালেদের অস্ত্রভাণ্ডারের ভারী অস্ত্রগুলো তার কাছেই রয়েছে। এছাড়া ছোট ছোট অনেক আগ্নেয়াস্ত্রের মজুদও তার কাছে। কিসলুকে আইনের আওতায় আনা গেলে খালেদের অস্ত্রসাম্রাজ্যের যাবতীয় তথ্য জানা যাবে।

খালেদের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে পরিচিত সোহরাওয়ার্দী জানান, বাবরের মাধ্যমে খালেদ অস্ত্র সংগ্রহ করত। বায়তুল মোকাররম মসজিদের উল্টোপাশে পল্টনে বাবরের এক বন্ধুর একটি বৈধ অস্ত্রের দোকান আছে। বৈধ অস্ত্রের আড়ালে সেখানেও চলে অবৈধ অস্ত্রের কারবার। বাবর তার কাছ থেকেও অস্ত্র নিয়ে খালেদকে দিয়েছে। একটি সূত্র জানায়, অস্ত্র ও ইয়াবার বিনিময়ে খালেদ ব্যাগভর্তি করে বাবরকে টাকা দিত। সেই টাকা নিয়ে বাবর বিমানে করে চট্টগ্রামে যেত। ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরুর পর বাবর দুবাইয়ে পালিয়ে যায়।

খালেদের একটি ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে, প্রায় দুই মাস আগে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের সময় গ্রেফতার হন খালেদ। ওই সময় তার ধারণা ছিল, দ্রুতই জামিনে মুক্ত হবেন তিনি। কিন্তু এখন তিনি বুঝতে পারছেন সহজে তার মুক্তি মিলছে না। এ কারণেই এখন তার পরিকল্পনা- জেলে বসেই সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণ করা। জেলে বসেই সহযোগীদের নির্দেশনা দিয়ে তিনি বলেছেন, রামপুরা, খিলগাঁও, সবুজবাগ, বাসাবো, মতিঝিল এবং রমনা এলাকার নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে বিদেশে পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসী মানিকের সঙ্গে যেন তারা সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখে। দীর্ঘদিন ধরে মজুদ করা আগ্নেয়াস্ত্র যেন খোয়া না যায়, এ বিষয়েও ঘনিষ্ঠদের নির্দেশনা দিচ্ছেন তিনি।

সূত্র-যুগান্তর

গো নিউজ২৪/আই

অপরাধ চিত্র বিভাগের আরো খবর
মামা, মামি ও মামাতো বোনকে গলা কেটে হত্যা করলো ভাগনে

মামা, মামি ও মামাতো বোনকে গলা কেটে হত্যা করলো ভাগনে

বিএনপির সমাবেশে সংবাদকর্মীরা হামলার শিকার

বিএনপির সমাবেশে সংবাদকর্মীরা হামলার শিকার

এমটিএফই প্রতারক মাসুদকে দেশে ফেরানোর চেষ্টা চলছে, নেওয়া হবে ইন্টারপোলের সহায়তা

এমটিএফই প্রতারক মাসুদকে দেশে ফেরানোর চেষ্টা চলছে, নেওয়া হবে ইন্টারপোলের সহায়তা

‘বঙ্গবন্ধু হত্যার কুশীলবদের চিহ্নিত করতে কমিশনের খসড়া প্রস্তুত’

‘বঙ্গবন্ধু হত্যার কুশীলবদের চিহ্নিত করতে কমিশনের খসড়া প্রস্তুত’

কিশোরী নির্যাতন করে যুব মহিলা লীগ নেত্রী মিশু তিন দিনের রিমান্ডে

কিশোরী নির্যাতন করে যুব মহিলা লীগ নেত্রী মিশু তিন দিনের রিমান্ডে

গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত দুই যুদ্ধাপরাধী গ্রেপ্তার

গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত দুই যুদ্ধাপরাধী গ্রেপ্তার