ঢাকা : বিশ্বের যে কয়টি মুসলিম দেশে পতিতাবৃত্তি আইনত বৈধ তাদের মধ্যে বাংলাদেশ ও রয়েছে। তবে বাংলাদেশের শুধুমাত্র ২০টি পতিতালয়আইনত বৈধ। এর মধ্যে দৌলতদিয়া দেশের সবচেয়ে বড় পতিতালয়। এর পরেই রয়েছে টাঙ্গাইলের কান্দাপাড়া। দৌলতদিয়াতে প্রায় ১৩০০যৌনকর্মী রয়েছেন। এটি বিশ্বের একটি অন্যতম বৃহৎ পতিতালয়। সারাদেশে প্রায় এক লাখের ও বেশি যৌনকর্মী রয়েছে বলে জরিপে দেখাগেছে।
কান্দাপাড়া পতিতালয় বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তর এবং সবচেয়ে পুরনো পতিতালয়। প্রায় দুই শতক আগে প্রতিষ্ঠিত এই পতিতালয়টি২০১৪ সালে ভেঙে দেয়া হয়। কিন্তু পরবর্তীতে এনজিও কর্মীরা এটি আবার তৈরি করে দেন। তাদের মতে, অনেক মেয়েরা এখানেই জন্মেছে,তাদের জীবন কেটেছে এখানে, এখন এই পতিতালয় ভেঙ্গে দিলে তাদের আর কোন যাওয়ার জায়গা থাকবে না। এটিই তাদের একমাত্র আশ্রয়।
বর্তমানে কান্দাপাড়া পতিতালয়টি একটি দেয়ালে ঘেরা, এর ভেতরেই রয়েছে সরু সরু গলি, টিনের ঘর, ছোট ছোট মুদির দোকান, চায়েরদোকান। পতিতালয়ের রয়েছে আলাদা নিয়মকানুন যা আমাদের সমাজের মতো একেবারেই নয়। সম্পূর্ণ এক আলাদা জগত সেটি। পতিতালয়ের ভেতরে মেয়েরাই সবচেয়ে অসহায় আবার তারাই ক্ষমতাধর। তবে একজন যৌনকর্মী সবচেয়ে অসহায় থাকে ১৩/১৪ বছর বয়সে। এই অল্পবয়স্কা মেয়েগুলো পরিচিতা হয় “ছুকড়ি” নামে। সাধারণ ভাষায় তারা ‘শুল্কাধীন কর্মী” বা “Bonded Girl’ বলে অভিহিত।
এখানকার বেশিরভাগ মেয়ে হয়তোবা এসেছে গরীব পরিবার থেকে যেখানে তার বেঁচে থাকার জন্য আর কিছুই করার ছিলোনা, অথবা এসেছে পাচারকারীদের খপ্পরে পড়ে। পতিতালয়ে তাদের কোন অধিকার নেই, কোন স্বাধীনতা নেই। তারা নিজের ইচ্ছেমত খদ্দের পছন্দ করতে পারে না, নিজের আয় নিজের কাছে রাখতে পারেনা। প্রত্যেকটা যৌনকর্মী থাকেন একেকজন “ম্যাডাম” বা “সর্দারনী” এর আয়ত্তে এবং তাদের টাকা ম্যাডামদের কাছেই থাকে। কারণ সর্দারনীরা তাদের কিনে নিয়েছে। যতদিন না তাদের কেনার টাকা পরিশোধ হচ্ছে, তারা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবে না। একবার টাকা পরিশোধ হয়ে গেলে তারা চাইলে বাইরে গিয়ে নতুন করে তাদের জীবন শুরু করতে পারবেন, অথবা পতিতালয়ে স্বাধীনভাবে কাজ করে নিজের আয় নিজে রাখতে পারবেন।
কিন্তু টাকা পরিশোধ করতে ৬/৭ বছর লেগে যায়। ততদিনে তারা গণিকা পেশায় অভ্যস্ত হয়ে পরেন। তাই টাকা পরিশোধ হওয়ার পর বাইরে না গিয়ে পতিতালয়েই আবার স্বাধীনভাবে কাজ শুরু করেন। কারণ এতদিন এই পেশায় থাকার পর সমাজে স্বাধীনভাবে নতুন জীবন শুরু করা সহজ নয়। তাই বেশিরভাগ যৌনকর্মীরা শেষ পর্যন্ত গণিকালয়েই থেকে যান। এবং এক সময়ে তারাই হয়ে ওঠেন “ম্যাডাম“। আর এভাবেই চক্র পূর্ণ হয়।
এগারো বছর বয়সী শেফালী, কান্দাপাড়া গণিকালয়ের একজন যৌনকর্মী। তার জন্ম হয়েছে এই পতিতালয়ে কারণ তার মা ছিলো একজন যৌনকর্মী। তার ভাষ্যমতে, প্রতিদিন তাকে ২০ থেকে ২৫ জন খদ্দেরের চাহিদা মেটাতে হয়। সে জানেও না, রোজ তার কত আয়। কারণ তারসব টাকা ম্যাডাম নিয়ে যায়। কাজের বিনিময়ে সে কাপড়, তিনবেলা খাবার আর মাঝেমধ্যে কিছু উপহার পায়।
তবে মাঝে মধ্যে ম্যাডামের মারও খেতে হয় তাকে। শেফালী বলেন, কম বয়সী হওয়ায় অনেক সময় টাকা না দিয়ে বা কম টাকা দিয়ে চলে যায় খদ্দেররা। এজন্য মার খেতে হয়। আরে বাবা ‘টাকা দিতে পারছ না তো এই জায়গায় আসোছ কেন’, প্রশ্ন শেফালীর।
গো নিউজ২৪/আই