ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রথীশ হত্যাকাণ্ডের ভয়ঙ্কর সেই পরিকল্পনার ছক


গো নিউজ২৪ | রংপুর প্রকাশিত: এপ্রিল ৫, ২০১৮, ১১:৩৫ এএম
রথীশ হত্যাকাণ্ডের ভয়ঙ্কর সেই পরিকল্পনার ছক

র‌্যাবের হাতে ধরা পড়েছেন রংপুর বিশেষ আদালতের সরকারি আইনজীবী রথিশ চন্দ্র ভৌমিক ওরফে বাবু সোনার অন্যতম হত্যাকারী ও তার স্ত্রী দীপা ভৌমিক স্নিগ্ধা। র‌্যাব জানিয়েছে, রথিশ চন্দ্রের মোবাইল নম্বর ট্র্যাকিং করতে গিয়েই তারা এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচনের সূত্র খুঁজে পান। পরে সেই সূত্র ধরেই জিজ্ঞাসাবাদে স্বামীকে হত্যার সব তথ্য স্বীকার করে নেন রথিশের স্ত্রী স্নিগ্ধা।

র‌্যাব সূত্রে, দুই মাস আগেই আইনজীবী রথিশ চন্দ্রকে হত্যার পরিকল্পনা করেন তার স্ত্রী দীপা ভৌমিক। এই পরিকল্পনায় সহযোগী ছিলেন তার প্রেমিক কামরুল ইসলাম। তাদের দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা গেছে, রথিশ চন্দ্রকে হত্যা করে তার লাশ গুম করার জন্য নগরীর তাজহাট মোল্লাপাড়ায় কামরুল তার বাড়ির নির্মাণকাজ অসমাপ্ত রাখেন। গত ২৯ মার্চ তারা রথিশ চন্দ্রকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে দীপা ও কামরুলের কর্মস্থল তাজহাট উচ্চবিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী সবুজ ও রোকনকে দিয়ে কামরুলের নির্মাণাধীন বাড়ির মধ্যে একটি গর্ত খুঁড়ে রাখে। লাশ ঢেকে পুঁতে রাখার জন্য পলিথিন ও বালুও সংগ্রহ করে রাখা হয়।

যে কারণে হত্যা করা হয় রথীশ চন্দ্রকে: জানা গেছে, রথিশ-দীপা দম্পতির দুই ছেলে-মেয়ের মধ্যে ছেলে বড়। তিনি ঢাকায় আইন বিষয়ে পড়ালেখা করছেন। আর তাদের মেয়ে রংপুরে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দীপা ভৌমিক ও কামরুল ইসলাম পার্শ্ববর্তী তাজহাট উচ্চবিদ্যালয়ে ২৫ বছর ধরে সহকারী শিক্ষক হিসেবে কাজ করে আসছেন। বছর দুয়েক হলো তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এই সম্পর্কের সূত্র ধরে রথিশ চন্দ্রের বাসায় কামরুলের যাতায়াত ছিল বলেও জানান স্থানীয়রা। একপর্যায়ে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেন দীপা ও কামরুল। তাতে যেন রথিশ বাধা হয়ে না দাঁড়াতে পারেন, সে কারণেই তাকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেন তারা।

জিজ্ঞাসাবাদে দীপা ও কামরুল র‌্যাবকে জানিয়েছে, তাদের সম্পর্কের বিষয়টি রথিশ চন্দ্র জানতে পারলে তা নিয়ে কথাকাটাকাটি হয়। বিষয়টি নিয়ে গত শুক্রবার (৩০ মার্চ) পারিবারিকভাবে সালিশ করার সিদ্ধান্ত ছিল। সালিশে বসার আগের দিনই রথিশকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেন দীপা ও কামরুল। সেই অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার রাতে রথিশ বাসায় ফেরার পর খেতে বসলে তার খাবারে ১০টি ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দেওয়া হয়। তার মেয়ের খাবারে দেওয়া হয় তিনটি ঘুমের ওষুধ।

খাওয়ার পর বাবা-মেয়ে অচেতন হয়ে পড়লে আগে থেকেই বাসার বাইরে অপেক্ষা করা কামরুল বাসায় ঢোকে। এরপর রথিশ চন্দ্রকে শ্বাসরোধে হত্যা করে দীপা ও কামরুল। রাতে লাশটি বাসাতেই ছিল। সকালে রথিশ চন্দ্রের লাশ একটি আলমারিতে ভরে একটি ভ্যান ভাড়া করে এনে তাতে করে নিয়ে যাওয়া হয় কামরুলের তাজহাট মোল্লারপাড়ার নির্মাণাধীন বাড়িতে। সেখানে আগে থেকেই তৈরি করা গর্তে তা পুঁতে রাখা হয়। এ কাজে তাকে সহায়তা করে দুই শিক্ষার্থী সবুজ ও রোকন।

যেভাবে গল্প তৈরি করে দীপা

বৃহস্পতিবার রাতেই রথিশ চন্দ্রকে হত্যার পর শুক্রবার সকালে তার লাশ বাসা থেকে সরিয়ে দেওয়ার পর দুপুর থেকে দীপা ভৌমিক প্রচার করতে থাকে, রথিশ চন্দ্র সকাল ৬টার দিকে জরুরি কাজের কথা বলে বেরিয়ে গেছেন। এরপর থেকেই তার কোনও সন্ধান মিলছে না। তার ফোন দুটোও বন্ধ। স্বজনরা তার কোনও সন্ধান না পেয়ে রাতে থানায় বিষয়টি জানান। রথিশ চন্দ্রের সন্ধানে নামে পুলিশ।

এর মধ্যে শনিবার সকালে গণমাধ্যমকর্মীরা রথিশ চন্দ্রের বাসায় গেলে দীপা ভৌমিক তাদের জানান, শুক্রবার সকালে বাসা থেকে বের হয়ে যাওয়ার পর রথিশ চন্দ্রের আর কোনও সন্ধান পাওয়া যায়নি। এ সময় তিনি বলেছিলেন, শুক্রবার সকালে গোসল করে চা-বিস্কুট খেয়ে বাসা থেকে বের হয়ে গেছেন রথিশ। তবে দীপা ভৌমিকের আচরণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও তাকে সন্দেহ করতে শুরু করে।

নিখোঁজের চার দিন পেরিয়ে গেলেও কোনও সন্ধান মেলেনি রথিশ চন্দ্রের। এরমধ্যে র‌্যাব ও পুলিশ তার মোবাইল ট্র্যাক করার সিদ্ধান্ত নেয়। তারা পরীক্ষা করে দেখতে পায়, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টা থেকেই মোবাইল ফোন দুটি বন্ধ ছিল। নম্বর দুটি ট্র্যাকিং করে মঙ্গলবার র‌্যাব নিশ্চিত হয়, সেগুলো বাসার আশপাশেই রয়েছে। অনুসন্ধানের পর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় র‌্যাব দীপা ভৌমিককে চ্যালেঞ্জ করে, রথিশের মোবাইল ফোন দুটি তার কাছেই আছে। পরে তিনি এ তথ্য স্বীকার করে নেন। র‌্যাব জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত রাখলে রাত ১১টার দিকে রথিশ হত্যার কথা স্বীকার করে নেন দীপা। তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী মোল্লাপাড়ায় কামরুলের নির্মাণাধীন বাড়ি থেকে রথিশ চন্দ্রের লাশ উদ্ধার করে র‌্যাব।

রংপুর র‌্যাব ১৩-এর ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মেজর আরমিন রাব্বি জানান, নিহত আইনজীবী বাবু সোনার স্ত্রী ও তার প্রেমিকের জবানবন্দির ওপর ভিত্তি করে তাদের দেখানো জায়গা থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়।

হত্যার জন্য অত্যন্ত সুপরিকল্পিত ছক কষেছিলেন তার স্ত্রী স্নিগ্ধা সরকার দীপা ভৌমিক ও পরকীয়া প্রেমিক কামরুল ইসলাম। তদন্ত সংস্থাগুলোর সূত্রমতে শুধু পরিকল্পনাই নয়, হত্যার পর ঘটনাটিকে ভিন্নভাবে প্রবাহিত করতে তারা নানামুখী কৌশল নেন। এজন্য তারা জাপানি নাগরিক কোনিও হোসি ও মাজারের খাদেম রহমত আলী হত্যা মামলার রায়, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল এ টি এম আজহারুল ইসলামের মামলার সাক্ষী এবং ডিমলায় রাজ দেবোত্তর সম্পত্তি নিয়ে বিরোধের প্রসঙ্গকে সামনে রেখে হত্যাকাণ্ড বাস্তবায়নের চেষ্টা করতে থাকে।

সূত্রমতে, পরিকল্পনার অংশ হিসেবে স্ত্রী স্নিগ্ধা সরকার দীপা ভৌমিক ও পরকীয়া প্রেমিক কামরুল ইসলাম হত্যাকাণ্ডের দিন বেছে নেয় ২৯ মার্চ রাতে। ওই রাতেই বাবু সোনার ভাই সাংবাদিক সুশান্ত ভৌমিক অফিসিয়াল কাজে ঢাকায় যান। তদন্ত সূত্রগুলো জানায়, সুশান্ত ভৌমিকের ঢাকায় যাওয়া বিষয়টি বাবু সোনার স্ত্রী তার পরকীয়া প্রেমিককে নিশ্চিত করেই ওই রাতেই হত্যাকাণ্ডটি ঘটান।

গো নিউজ২৪/এমআর

অপরাধ চিত্র বিভাগের আরো খবর
মামা, মামি ও মামাতো বোনকে গলা কেটে হত্যা করলো ভাগনে

মামা, মামি ও মামাতো বোনকে গলা কেটে হত্যা করলো ভাগনে

বিএনপির সমাবেশে সংবাদকর্মীরা হামলার শিকার

বিএনপির সমাবেশে সংবাদকর্মীরা হামলার শিকার

এমটিএফই প্রতারক মাসুদকে দেশে ফেরানোর চেষ্টা চলছে, নেওয়া হবে ইন্টারপোলের সহায়তা

এমটিএফই প্রতারক মাসুদকে দেশে ফেরানোর চেষ্টা চলছে, নেওয়া হবে ইন্টারপোলের সহায়তা

‘বঙ্গবন্ধু হত্যার কুশীলবদের চিহ্নিত করতে কমিশনের খসড়া প্রস্তুত’

‘বঙ্গবন্ধু হত্যার কুশীলবদের চিহ্নিত করতে কমিশনের খসড়া প্রস্তুত’

কিশোরী নির্যাতন করে যুব মহিলা লীগ নেত্রী মিশু তিন দিনের রিমান্ডে

কিশোরী নির্যাতন করে যুব মহিলা লীগ নেত্রী মিশু তিন দিনের রিমান্ডে

গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত দুই যুদ্ধাপরাধী গ্রেপ্তার

গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত দুই যুদ্ধাপরাধী গ্রেপ্তার