ঢাকা: রাজধানী ঢাকায় ৮ বছর ধরে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া সৎমেয়েকে ধর্ষণ করে গেছেন আরমান হোসেন ওরফে সুমন (৩৮) নামে এক সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার। এক পর্যায়ে মেয়েটি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে তাকে গর্ভপাত ঘটান। তারপরেও মেয়েটির ওপর চলতে থাকে নির্যাতন।
এক পর্যায়ে সৎবাবার ঘর ছেড়ে অন্য এক আত্মীয়ের বাড়িতে ওঠে মেয়েটি। সেখানেও রেহাই নেই। অডিও ভিডিও প্রকাশের হুমকি দিয়ে কুপ্রস্তাব দিতেই থাকে। এক পর্যায়ে মেয়ের বন্ধুকে পাঠান সেসব ভিডিও। অবশেষে নিরূপায় হয়ে মেয়েটি ৮ বছরের গোপন বিষয়টি সামনে আনেন।
মামলা হওয়ার পর গ্রেপ্তার করা হয়েছে সেই সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার আরমানকে। এরপরই বের হতে থাকে নানা তথ্য। অনেকেই আরমানের ফেসবুকে (https://www.facebook.com/armanhossain.sumon.1) ঢু মারতে থাকেন। সেখানেও পাওয়া গেছে এসব ঘটনার কিছুটা আলামত। আরমানের ফেসবুক জুড়ে রয়েছে নানা বিচিত্র ছবি। স্ট্যাটাসে ছড়িয়ে আছে আত্মহত্যা, হতাশা, ভালোবাসা হারানোর হাহাকার।
গর্ভপাত ঘটনার পর ২০১৬ সালের ২৩ ডিসেম্বর আরমান তার ফেসবুকে লিখেছিলেন,...একবারও মানুষ ভাবে না বৈধ্য বা অবৈধ্য যেভাবেই হোক সেই অবুঝ শিশুটির তো কোনো দোষ নেই। তবে তাকে কেন আমাদের পাপের কারণে জীবন দিতে হবে? সে যদি সুন্দরভাবে পৃথিবীর আলোর মুখ দেখে তবে কি খুব বেশি মানুষের সমস্যা হবে? তার জীবন ধারণ কিংবা চলার পথ এক সময় তো সে নিজেই তৈরি করে নিবে।
বিভিন্ন সময় এরকম আরো অনেক স্ট্যাটাস দিয়েছেন যাতে তার সেই ঘটনার প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। তিনি এক পর্যায়ে লিখেছেন, আমি চাই সবাই সঠিকটা জানুক। সমস্ত দোষ আমার একার না। এবার আমি বলতে চাচ্ছি। আর কখনও লিখেছেন, বিষাক্ত এই পোকা ভয়ংকর। ক্ষত আরও বাড়াবে দিনদিন।
২০১৪ সালে তার সৎমেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ২৩ সেপ্টেম্বর প্রথমদিনের ক্লাসে যাওয়ার সময় সঙ্গে ছিলেন আরমান। এ বিষয়ে feeling পরমহানন্দ দিয়ে স্ট্যাটাস দেন আরমান। লেখেন, আজ আমার মেয়ে... এর প্রথম ইউনিভার্সিটিতে ক্লাস। আমি বেলা ২টায়...ইউনিভার্সিটিতে নামিয়ে দিলাম। অনেক ভালোলাগতেছে আবার ভয় হচ্ছে। মেয়ে বড় হলে নাকি বাবাদের অনেক ভয় বেড়ে যায়। ভয়ের কারণ কিছুই নেই তবুও যখনি... কে নামিয়ে দিলাম ও বলে আমাকে ভার্সিটির ভেতরে দিয়ে যাও। আমি ওকে ভার্সিটির অফিস রুমে দিয়ে আশ্বস্ত করলাম যে আমি আছি। তারপর বাইরে বসে আছি ছোট্ট বাচ্চাদের কিন্ডারগার্ডেন এ দিয়ে যেভাবে গার্ডিয়ান বাইরে বসে থাকে ঠিক সেই ভাবে। সবাই আমার মেয়ের জন্য দোয়া করবেন।
আরমানের ফেসবুকে আরো দেখা যায়, ‘বুকের ভিতরে বোবা কান্নাগুলো কেউ শোনে না বা কেউ বুঝেও না বুঝার চেষ্টা করে না। সবাই উপদেষ্টা হয়ে উপদেশ দেয় অতীত ভুলে যাও। ভুলে যাওয়া কি সত্যিই এতো সহজ?
জীবনটা যার জন্য ছিলো সেই তো বুঝলো না সেই তো ধংসের বাণী শোনালো। সে হয়তো নতুনভাবে নতুন কারো হাত ধরে আগামীর পথে পথ চলছে কিন্তু আমি? একবারও কি ভাবেনি আমার কথা? আমি কি এতোটাই খারাপ ছিলাম তার জন্য যে সে আমাকে এভাবে ছুড়ে ফেলে দিলো।
আরমান আবারো লেখেন, কারো কারো জীবনে এমন কিছু ঘটনা থাকে, যা চাইলেও সে অন্য কারো সাথে কখনও শেয়ার করতে পারে না। কাউকে বললেও সে হয়তো বুঝতে পারে না। আর এইঘটনা গুলোকে স্মৃতির পাতা থেকেও কখনো মোছা যায় না। তাই এই বেদনাগুলো শুধু নিজের মাঝেই বয়ে বেরাতে হয় আজীবন...।
তিনি আরো লেখেন, কারো মনে আঘাত দিও না, সুখী হতে পারবে না। ভালোবাসতে না পার, অভিনয় কর না। মনে রেখ কারো চোখের পানি, তোমার জীবনে অভিশাপ হয়ে ঝরতে পারে..।
গো নিউজ২৪/এএইচ