দীর্ঘ ৫ বছর ধরে ১৬ বছর বয়সী এক তরুণীকে ধর্ষণ ও পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করে একটি চক্র। বর্তমানে মেয়েটির বয়স ২১ বছর। পাঁচ বছর ধরে মেয়েটির সঙ্গে পরিবারের সদস্যদের কথাও বলতে দেয়নি অসাধু চক্রটি।
তার পরিবার জানতো মারা গেছে। অবশেষে ৫ বছর পর ভিকটিম মেয়েটিকে জীবিত উদ্ধার ও চক্রের ৫ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো (পিবিআই)। গ্রেফতাররা হলেন- রিনা বেগম ওরফে লতা বেগম, সোহাগ ব্যাপারী, রাব্বী, আল আমিন ও বছির।
বুধবার (৮ সেপ্টেম্বর) পিবিআই’র ঢাকা মেট্রো দক্ষিণ জোনের পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, মেয়েটির বাবা-মা দরিদ্র হওয়ায় তারা মেয়েকে খালা বাসনা বেগমের কাছে রাখে। বাসনা বেগম লতা বেগম নামে এক নারীর বাসায় মেয়েটিকে গৃহকর্মী হিসেবে পাঠিয়ে দেয়। লতার স্বামী ওই যুবতীকে দীর্ঘ ৫ বছর লুকিয়ে রেখে পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করে।
পিবিআইয়ের এসপি বলেন, মেয়েটির বাড়ি গোপালগঞ্জ। ২০১৬ সালের ২২ এপ্রিল সোহাগ ব্যাপারী নামে একজন গাড়িচালক মেয়েটিকে তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে। এরপর তাকে নুরের চালা এলাকার গলির সামনে নামিয়ে দেয়। এরপর থেকেই নিখোঁজ ছিলেন মেয়েটি। তার পরিবার ভেবেছিল মেয়েটি মারা গেছে।
এই ঘটনার ৮ দিন পর ২৪ এপ্রিল পূর্ব ভাটারার চিতাখোলা ব্রিজের পূর্ব পাশে বালুর মাঠে অজ্ঞাত পরিচয় এক কিশোরীর বস্তাবন্দি ও গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করে ভাটারা থানা পুলিশ।
পুলিশের বক্তব্য অনুযায়ী, মেয়েটিকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করে গলা কেটে হত্যা করে এবং সুযোগ বুঝে বালুর মাঠে পুতে রাখে। এই ঘটনা শুনে মেয়েটির খালা বাসনা বেগম আত্মীয়-স্বজনসহ থানায় গিয়ে আংশিক বিকৃত কিশোরীর গলা কাটা লাশ দেখে ও তার পরিহিত জামা দেখে পুলিশকে জানায়, এটা ভিকটিমের মরদেহ।
এ বিষয়ে ভিকটিমের খালা প্রথমে থানায় একটি জিডি করেন এবং পরবর্তীতে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা করেন। মামলার এজাহারে ৩৪ জনের নাম উল্লেখ করা হয়।
পিবিআইয়ের এসপি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান আরও বলেন, এই মামলায় ভাটারা থানা পুলিশ ২০১৯ সালে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিলেও প্রতিবেদনে ‘তথ্যগত ভুল’ আছে উল্লেখ করে এটি তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় পিবিআইকে। পিবিআইয়ের ঢাকা মেট্রো দক্ষিণ জোনের উপ-পরিদর্শক (এসআই-নিরস্ত্র) মাসুদ খান তদন্ত করে দীর্ঘ ৫ বছর পর মেয়েটিকে উদ্ধার করে।
তিনি বলেন, পিবিআইয়ের একটি বিশেষ টিম মঙ্গলবার (৭ সেপ্টেম্বর) আধুনিক তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় বিশেষ অভিযানে ফরিদপুর জেলা পুলিশের সহায়তায় ফরিদপুর থেকে ভিকটিমকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করে।