ঢাকা মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

দেশে ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের প্রভাব শুরু


গো নিউজ২৪ | নিজস্ব প্রতিনিধি প্রকাশিত: মে ২০, ২০২০, ০২:৪১ পিএম আপডেট: মে ২০, ২০২০, ০২:৫৪ পিএম
দেশে ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের প্রভাব শুরু

ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের প্রভাবে বুধবার (২০ মে) সকাল থেকে উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটে বৃষ্টির সঙ্গে ঝড়ো হাওয়া বইছে। বাড়ি-বাড়ি গিয়ে লোকজনকে আশ্রয় কেন্দ্রে আনতে কাজ করছেন স্বেচ্ছাসেবকরা।

বঙ্গোপসাগর ও সুন্দরবন সন্নিহিত বাগেরহাট জেলার মানুষ প্রায়ই ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসের সঙ্গে লড়াই করে। সে কারণে প্রাকৃতিক দুর্যোগে খুব সহজেই তারা সাইক্লোন সেন্টারে যেতে চায় না। বুধবার সন্ধ্যায় সুপার সাইক্লোন আম্ফান আঘাত হানতে পারে এ খবর জেনে জেলার ৯৭৭টি আশ্রয় কেন্দ্র ছেড়ে তারা সকালে নিজ নিজ বাড়িতে ফিরে গেছেন।

বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ জানান, প্রশাসনের পক্ষ থেকে উপকূলীয় উপজেলা শরণখোলা, মোরেলগঞ্জ, মোংলা ও রামপালের নদী তীরবর্তী এলাকায় বসবাসরত প্রায় দুই লাখ মানুষকে সন্ধ্যার আগে আবারও আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসারে ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এ জন্য রেড ক্রিসেন্টসহ ১১ হাজার ৭০৮ জন স্বেচ্ছাসেবক বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়ার মধ্যে বাড়ি বাড়ি গিয়ে মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে আনতে কাজ করছেন।

পটুয়াখালী

সুপার সাইক্লোন ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের প্রভাবে সাগর ও নদীর পানি ৩ ফুট বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে কলাপাড়ার এক ইউনিয়নের ১৭টি ও রাঙ্গাবালীর ৭টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। তবে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। এ পর্যন্ত ৩ লাখ মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন বলে জেলা প্রশাসন থেকে জানানো হয়েছে।

সুপার সাইক্লোন আম্ফান মোকাবেলায় পায়রা সমুদ্রবন্দর ও পটুয়াখালী জেলায় ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত জারি করেছে আবহাওয়া বিভাগ।

সদরের নদীর চর এলাকার বাসিন্দা জাহাঙ্গীর বলেন, স্বাভাবিকের তুলনায় নদীতে পানি অনেক বেশি। পানির নিচে আমার ঘর। আমি মালামাল নিয়ে ঘর ছেড়ে উঁচু ভবনে যাচ্ছি।

রাঙ্গাবালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মাসফাকুর রহমান জানান, মধ্য চালিতাবুনিয়া, বিবির হাওলা, চরলতা, গোলবুনিয়া, চর আন্ডা, খালগোড়া, গোঙ্গীপাড়া ও চর কাশেম প্লাবিত হয়েছে। এতে প্রায় ৭৪০টি বাড়িঘর ডুবে গেছে। বিচ্ছিন্ন চরের মানুষদের সাইক্লোন শেল্টারে নিয়ে আসা হয়েছে। সেখানে তাদের শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া যারা রোজা আছেন তাদের ইফতারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

লালুয়া ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড সদস্য মো. রবিউল ইসলাম জানান, কলাপাড়ার লালুয়া ইউনিয়নের ৪টি ওয়ার্ডের ১৭টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। নদীতে জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ৪ ফুট বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে তারা সাইক্লোন শেল্টারে অবস্থান করছেন। ৪, ৫, ৬ ও ৮ নম্বর ওয়ার্ডগুলো পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

ভোলা

ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের কারণে ভোলায় ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত চলছে। আম্ফানের প্রভাবে বুধবার নদীর পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ৪-৫ ফুট বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে ভোলার চরফ্যাশন ও মনপুরার ১৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এদের মধ্যে চরফ্যাশন উপজেলার ঢালচর ইউনিয়নের ১০টি গ্রাম, কুকরী-মুকরি ইউনিয়নের নিমাঞ্চলের ২টি গ্রাম ও মনপুরা উপজেলার চর নিজামন, মহাজন কান্তি, কলাতলির চর রয়েছে।

এছাড়াও পানিতে তলিয়ে গেছে ওই গ্রামের শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান, পুকুর, মাছের ঘেরসহ বিভিন্ন স্থাপনা। তবে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

বুধবার সকাল থেকেই জেলায় থেমে থেমে বৃষ্টি ও ঝড়ো বাতাস বইছে। দুপুর পর্যন্ত ভোলার ২১টি চরসহ ঝুঁকিপূর্ণ নিমাঞ্চলের ৩ লাখ ১৫ হাজার মানুষ ১ হাজার ১০৪টি আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে। আশ্রয় নেয়া এসব মানুষের মাঝে ইতোমধ্যে শুকনা খাবার বিরতণ করা হয়েছে। দুপুরেও তাদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

অন্যদিকে আম্ফানের কারণে ভোলার সাত উপজেলার সকল নদীতে মাছ ধরার ট্রলার ও নৌকা এবং মালবাহী জাহাজ ইতোমধ্যে তীরে নোঙর করা হয়েছে।

বরগুনা

বরগুনার প্রধান তিনটি নদী পায়রা, বলেশ্বর ও বিষখালীতে জোয়ারের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়েছে। নদীতীরের বাসিন্দারা বলছেন নদীতে ইতোমধ্যেই স্বাভাবিকের তুলনায় অন্তত ৫ থেকে ৬ ফুট পানি বেড়েছে।

বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার ঈদগাহ মাঠ সংলগ্ন বিষখালী নদীর তীরের বাসিন্দা আব্দুস সালাম বলেন, স্বাভাবিকের তুলনায় নদীতে অনেক পানি বেড়েছে। আর একটু পানি বৃদ্ধি পেলেই আমাদের ঘরবাড়ি পানিতে ডুবে যাবে।

বরগুনার বাইনচটকি ফেরিঘাট এলাকার বাসিন্দা আল আমিন বলেন, বিষখালী নদীর এই এলাকায় জোয়ারের পানি এতটাই বৃদ্ধি পেয়েছে যে ফেরির গ্যাংওয়েসহ সংযোগ সড়ক তলিয়ে গেছে। জোয়ারের উচ্চতা স্বাভাবিকের থেকে ৫ থেকে ৬ ফুট বেশি না হলে এখানে সাধারণত পানি ওঠে না।

বরগুনার তালতলী উপজেলার বগি এলাকার মো. শাহীন বলেন, পায়রা নদীতে প্রচণ্ড ঢেউ শুরু হয়েছে, সেই সঙ্গে জোয়ারের উচ্চতাও বৃদ্ধি পেয়েছে অনেক। এই উচ্চতা বেড়েই চলছে। পানির উচ্চতা এভাবে বৃদ্ধি পেতে থাকলে এই এলাকার বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করতে বেশি সময় লাগবে না।

এ বিষয়ে বরগুনার পানি উন্নয়ন বোর্ডের পানি পরিমাপক মো. মাহতাব হোসেন বলেন, আজ (বুধবার) সকাল ৯টায় বরগুনায় জোয়ারের উচ্চতা ছিল ২.৮৫ সেন্টিমিটার। যা বিপদসীমার সমান সমান। আর এক ঘণ্টার ব্যবধানে সকাল ১০টায় বরগুনায় জোয়ারের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়ে ৩.১০ সেন্টিমিটার হয়েছে।

খুলনা

খুলনার উপকূলীয় এলাকার খুব কাছাকাছি চলে এসেছে সুপার সাইক্লোন আম্ফান। ইতোমধ্যে আম্ফানের প্রভাবে খুলনা অঞ্চলের নদ-নদীতে জোয়ারের পানি কয়েক ফুট পর্যন্ত পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। বেড়িবাঁধ উপচেও পানি ঢুকছে লোকালয়ে।

ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের প্রভাবে এখন বৈরি আবহাওয়া বিরাজ করছে খুলনাঞ্চল জুড়ে। বৃষ্টির সঙ্গে বইছে দমকা হাওয়া। ক্ষণে ক্ষণে ভারি বৃষ্টিও হচ্ছে বিভিন্ন স্থানে। সময় যত যাচ্ছে ততোই বাতাসের তীব্রতা বাড়ছে। নদীতে বাড়ছে জোয়ারের পানি এবং উত্তাল অবস্থা বিরাজ করছে। মোংলা বন্দরসহ আশপাশের নদীর নৌযানগুলো নদীর পাড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে রাখা হয়েছে। সকাল থেকে ভারী বৃষ্টিপাত এবং দমকা হাওয়া লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

কয়রা উপজেলার কয়রা সদর, উত্তর বেদকাশী এবং দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের কয়েক জায়গা দিয়ে বেড়িবাঁধ উপচে পানি প্রবেশ করেছে লোকালয়ে। স্থানীয়রা বেড়িবাঁধে মাটি দিয়ে পানি আটকানোর চেষ্টা করছেন। তবে আজকের আমাবশ্যার জোয়ারে বাঁধ ভেঙে যাওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্থানীয় লোকজন।

সুন্দরবন সংলগ্ন খুলনা জেলার কয়রা, দাকোপ ও পাইকগাছা উপজেলাসহ আশপাশের অঞ্চলে বয়ে চলেছে দমকা হাওয়া, হচ্ছে বৃষ্টিপাতও। স্থানীয় নদ-নদীর পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ২-৩ ফুট উচ্চতায় বয়ে চলেছে। দাকোপ ও কয়রা উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকার জনসাধারণ আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছেন।

সাতক্ষীরা

ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের প্রভাবে সাতক্ষীরার উপকূলীয় নদীগুলো উত্তাল হয়ে উঠেছে। নদীর পানি কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। ঝড়ো হাওয়ার সঙ্গে বৃদ্ধি পেয়েছে নদীর ঢেউ।

এদিকে শেষ মুহূর্তে উপকূলীয় বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রে নিতে প্রচার-প্রচারণা ও কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে প্রশাসন। ইতোমধ্যে সাতক্ষীরা উপকূলীয় আশাশুনি ও শ্যামনগর উপজেলাসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলার দুই লাখেরও বেশি মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে মানুষের অনিহা রয়েছে বলে জানিয়েছেন জনপ্রতিনিধিরা।

উপকূলীয় শ্যামনগর উপজেলার বাসিন্দা জাহিদ সুমন জানান, শ্যামনগর উপজেলার উপকূলবর্তী খোলপেটুয়া ও কালিন্দি নদীর পানি কয়েক ফুট বৃদ্ধি পেয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বাঁধ ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

দেবহাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাজিয়া আফরিন জানান, দেবহাটার ইছামতি নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। উপকূলীয় বাসিন্দাদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।

অন্যদিকে আশাশুনি উপজেলার খোলপেটুয়া ও কপোতাক্ষ নদের পানিও বৃদ্ধি পেয়েছে। নদীর পানি উত্তাল হয়ে উঠেছে।

শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আ.ন.ম আবুজর গিফারী বলেন, ঝড়ো বাতাসের সঙ্গে নদীর পানি ও ঢেউ কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। শেষ মুহূর্তেও উপকূলীয় এলাকার বাসিন্দাদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার কাজ চলমান রয়েছে। এখন পর্যন্ত উপজেলার ৯৫ হাজার মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।

গোনিউজ২৪/এন

দেশজুড়ে বিভাগের আরো খবর
মানুষের বিশ্বাসকে পুঁজি করে কোটি টাকা নিয়ে পালালো ডাচ-বাংলা ব্যাংকের এজেন্ট

মানুষের বিশ্বাসকে পুঁজি করে কোটি টাকা নিয়ে পালালো ডাচ-বাংলা ব্যাংকের এজেন্ট

দিনের শুরুতেই বিআরটিসি বাসের চাপায় নিহত ৪ 

দিনের শুরুতেই বিআরটিসি বাসের চাপায় নিহত ৪ 

ধারের টাকা দিতে না পারায় বন্ধুর স্ত্রীকে বিয়ে

ধারের টাকা দিতে না পারায় বন্ধুর স্ত্রীকে বিয়ে

বোমাটি বিস্ফোরিত হলে বাসের সবাই মারা যেতেন

বোমাটি বিস্ফোরিত হলে বাসের সবাই মারা যেতেন

রেললাইনে বোমা বিস্ফোরণের চেষ্টা, হাতেনাতে আটক ৩

রেললাইনে বোমা বিস্ফোরণের চেষ্টা, হাতেনাতে আটক ৩

হাতকড়া পরা অবস্থায় বাবার জানাজায় বিএনপি নেতা

হাতকড়া পরা অবস্থায় বাবার জানাজায় বিএনপি নেতা