ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

যাকে রক্ত দিয়ে বাঁচালেন তিনিই কেড়ে নিলেন প্রাণ


গো নিউজ২৪ | নিজস্ব প্রতিনিধি: প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২০, ০৫:১০ পিএম আপডেট: ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২০, ১১:১০ এএম
যাকে রক্ত দিয়ে বাঁচালেন তিনিই কেড়ে নিলেন প্রাণ

অনেক দিন আগে মা-বাবা মারা গেছেন। তিন ভাইয়ের মধ্যে আব্দুস সালাম ছোট। বড় ভাইয়েরা আলাদা সংসার করছেন। এইচএসসি পাস করে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএ পড়ছেন তিনি। লেখাপড়ার পাশাপাশি কৃষিকাজ করে সংসারের হাল ধরেন আব্দুস সালাম। দেড় মাস আগে টিনশেড বাড়ি নির্মাণ করেছেন। এখন বিয়ে করে সংসার জীবনের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন আব্দুস সালাম। বুধবার বউ দেখতে যাওয়ার কথা ছিল তার।

এমতাবস্থায় কয়েক বছর আগে ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত অবস্থায় যাকে নিজের রক্ত দিয়ে জীবন বাঁচিয়েছিলেন, হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছিলেন- তারই ছুরিকাঘাতে প্রাণ গেল আব্দুস সালামের।

তুচ্ছ ঘটনায় মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে উপজেলার চোপীনগর ইউনিয়নের বৃ-কুষ্টিয়া চার মাথা বাজারে চা পানের সময় প্রকাশ্যে আব্দুস সালামকে ছুরিকাঘাত করে রক্ত দিয়ে জীবন বাঁচানো সেই সাবেক ইউপি সদস্য শাজাহান আলী (৪৫)। পরে রাত ১০টার দিকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধিন অবস্থায় মারা যান আব্দুস সালাম। 

আব্দুস সালাম (৩৫) বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার আমরুল ইউনিয়নের ঝালোপাড়া গ্রামের মৃত জমির উদ্দিন প্রামাণিকের পুত্র। সাবেক ইউপি সদস্য শাজাহান আলী উপজেলার বৃ-কুষ্টিয়া গ্রামের মৃত আজগর আলীর পুত্র এবং চোপীনগর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য।

প্রত্যক্ষদর্শী শহিদুল ইসলাম জানান, সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে বৃ-কুষ্টিয়া চার মাথা বাজারে এক চা দোকানের বেঞ্চে আব্দুস সালাম ও শহিদুল ইসলাম পাশাপাশি বসে চা পান করছিলেন। এমন সময় শাজাহান আলী হঠাৎ করে এসে আব্দুস সালামের শার্টের কলা ধরে বলে তুই কি হয়েছিস। তোকে আজ শেষ করে ফেলব। এ কথা বলেই আব্দুস সালামের বা পাঁজরে পরপর তিনবার ছুরিকাঘাত করে। 

আরেক প্রত্যক্ষদর্শী এনামূল ফকির জানান, তিনিও ওই বাজারে বসে ছিলেন। হইচই শুনে দ্রুত এগিয়ে গিয়ে দুজনকে দুই দিকে সরিয়ে দিয়ে গিয়ে দেখা যায় আব্দুস সালামের বাম পাঁজর রক্তাক্ত হয়ে গেছে। কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই শাজাহান আলী রক্তমাখা ছুরি নিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়। 

নয়ন নামের স্থানীয় এক ব্যক্তি জানান, আব্দুস সালাম প্রায় প্রতিদিনই বৃ-কুষ্টিয়া চার মাথা বাজারে চা পান করতে আসত। ওই দিন সন্ধ্যা ৭টার দিকে বৃ-কুষ্টিয়া তিন মাথা রাস্তার ওপর আব্দুস সালামের সাথে দেখা। তাকে দেখে নয়ন বলেন, এত দেরি কেন চা তো ঠাণ্ডা হয়ে গেল। উত্তরে আব্দুস সালাম বলেন, আমিতো আর চোরদের সাথে ঘুরি না যে সকাল সকাল বাজারে যেতে হবে। কোথায় কি ভাবে অন্যের ক্ষতি করতে হবে তা খুঁজতে হবে। এ সময় সম্ভবত শাজাহান আলী রাস্তার পাশে বসে ছিলেন। কথা বলতে বলতে দুজনে এক সাথে চার মাথা বাজারে এসে সেখান থেকে বাড়িতে চলে যান নয়ন। পরে শুনতে পারেন শাজাহান আলী আব্দুস সালামকে ছুরিকাঘাত করেছে।

স্থানীয়রা জানান, শাজাহান আলী, নয়ন, আব্দুস সালাম ও তারেক এরা সবাই প্রায় এক সাথে চলাফেরা করত। এরা বন্ধুর মতো ছিল। তবে শাজাহানের স্বভাব-চরিত্র ভালো ছিল না। শাজাহানের ছেলেও ভালো না। মাদক সেবন করে। কিছুদিন আগে তিনজন কলেজছাত্রীকে শ্লীলতাহানি ও আটকে রাখার ঘটনা ঘটিয়েছিল দুর্বৃত্তরা। তাদের মধ্যে শাজাহানের ছেলেও ছিল।

তারেক নামের আরেক জন জানান, ছুরিকাঘাতের সময় শাজাহানের ছেলে কিছুটা দূরে হাসুয়া নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। তাদের কাছে সব সময় ধারালো অস্ত্র থাকত।

জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ('এ' সার্কেল) সনাতন চক্রবর্তী ঘটনাস্থল পরিদর্শনের গেলে প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়রা এভাবে জবানবন্দি দেন। এ সময় থানার ওসি আজিম উদ্দীনসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। এর আগে বুধবার সকাল ১০টার দিকে পাশের বাড়িতে আত্মগোপনে থাকা শাজাহান আলীর স্ত্রী ও এক শিশু কন্যাকে স্থানীয়রা বাইরে থেকে তালা লাগিয়ে আটকে রেখে পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ গিয়ে তাদেরকে উদ্ধার করে।

গো নিউজ২৪/আই

দেশজুড়ে বিভাগের আরো খবর
মানুষের বিশ্বাসকে পুঁজি করে কোটি টাকা নিয়ে পালালো ডাচ-বাংলা ব্যাংকের এজেন্ট

মানুষের বিশ্বাসকে পুঁজি করে কোটি টাকা নিয়ে পালালো ডাচ-বাংলা ব্যাংকের এজেন্ট

দিনের শুরুতেই বিআরটিসি বাসের চাপায় নিহত ৪ 

দিনের শুরুতেই বিআরটিসি বাসের চাপায় নিহত ৪ 

ধারের টাকা দিতে না পারায় বন্ধুর স্ত্রীকে বিয়ে

ধারের টাকা দিতে না পারায় বন্ধুর স্ত্রীকে বিয়ে

বোমাটি বিস্ফোরিত হলে বাসের সবাই মারা যেতেন

বোমাটি বিস্ফোরিত হলে বাসের সবাই মারা যেতেন

রেললাইনে বোমা বিস্ফোরণের চেষ্টা, হাতেনাতে আটক ৩

রেললাইনে বোমা বিস্ফোরণের চেষ্টা, হাতেনাতে আটক ৩

হাতকড়া পরা অবস্থায় বাবার জানাজায় বিএনপি নেতা

হাতকড়া পরা অবস্থায় বাবার জানাজায় বিএনপি নেতা