ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কুড়িগ্রামে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়ম


গো নিউজ২৪ | কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি, বাদশাহ্ সৈকত প্রকাশিত: অক্টোবর ১১, ২০১৮, ১০:৪৪ এএম
কুড়িগ্রামে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়ম

কুড়িগ্রাম:জেলার ভুরুঙ্গামারী উপজেলায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ন প্রকল্প-২ এর আওতায় ঘর নির্মান কাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। যার জমি আছে ঘর নেই, তার নিজ জমিতে ঘর নির্মান প্রকল্পের ঘর তৈরিতে প্রকল্পের নীতিমালার তোয়াক্কা না করে নিম্নমানের উপকরন ব্যবহার করে নির্মান কাজ এগিয়ে চলছে।

আশ্রয়ন প্রকল্পের নীতিমালায় প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি)র মাধ্যমে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে কাজ করার কথা থাকলেও পিআইসি‘র সভাপতি তার একক ক্ষমতা বলে তার পছন্দের অফিস স্টাফ দিয়ে কাজ করছেন। পিআইসি সভাপতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার এস এইচ এম মাগফুরুল হাসান আব্বাসী নিজেই কাজের ঠিকাদারী হিসেবে আছেন বলে জানা গেছে।

সভাপতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার সহ পাঁচ সদস্যের অন্যান্য সদস্যরা হলেন পিআইও (সদস্য সচিব), উপজেলা প্রকৌশলী, উপজেলা সহকারী কর্মকর্তা(ভুমি) ও সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ চয়ারম্যানগন।

এমতাবস্থায় দুঃস্থ মানুষের ঘর নির্মান প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়ম ও দূর্নীতির প্রতিকার পাওয়ার জন্য এলাকাবাসী প্রকল্প পরিচালক, আশ্রায়ন-২ প্রকল্পসহ উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ বরাবর বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।

অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, এ প্রকল্পের অধীনে ভুরুঙ্গামারী উপজেলায় ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৪২৯টি ঘরের জন্য ৪ কোটি ২৯ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে ৪২৯টি ঘর নির্মান করা হবে। ১৭৫ বর্গফুটের ঘর নির্মানে কাঠের দরজা জানালা তৈরিতে শাল, গর্জন, জামরুল, কড়ই, আকাশ মনি প্রভৃতি কাঠ ব্যবহারের কথা থাকলেও নিম্নমানের কচি গাছ দিয়ে তড়িঘরি করে কাজ শেষ করার চেষ্টা চলছে। ফলে ঘরের স্থায়ীত্ব নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এতে সুবিধাভোগী সহ সংশ্লিষ্টদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে।

সিডিউলে ১৭৫ বর্গফুট আয়তনের একটি ঘরে ৪ বর্গ ইঞ্চি ১২টি পিলারের উচ্চতা ১২ ফুট মূল ঘর ও বারান্দা এবং ল্যাট্রিনে ৯টি খুটি ১০ ফুট ৬মিলিঃ ৪টি করে রড দেয়ার নিয়ম থাকলেও ১২টি পিলার ১১ ফুট করে এবং ৯টি পিলার ৯ ফুট করে ৬মিলিঃ রডের স্থলে ৪মিলিঃ ৩টি করে রড এবং রিং ৪মিলিঃ রডের পরিবর্তে মোটা তার ও নিম্নমানের খোয়া ব্যবহার করা হচ্ছে।

ঘরের ঢেউটিন ০.৩৬ মিঃমিঃ এর স্থলে ০.৩২মিঃমিঃ দেয়া হচ্ছে। ৪টি জানালায় লোহার গ্রিল দেয়ার কথা থাকলেও দিচ্ছে না। ঘর ও বারান্দার মেঝে সিসি ঢালাই ৩ ইঞ্চি ধরা থাকলেও ১-২ ইঞ্চি দিয়ে ঘরের কাজ সম্পন্ন করা হচ্ছে। পিএল এর ইটের গাথুনি ১ফুট ৯ইঞ্চি করার নির্দেশনা থাকলেও বাস্তবে করা হচ্ছে ১ ফুট এবং ব্যবহার করা হচ্ছে নিম্নমানের ইট ও খোয়া। এছাড়া ল্যাট্রিন নির্মানে ৮টি করে রিং স্লাব ব্যবহারের কথা থাকলেও দেয়া হচ্ছে ৬টি করে রিং স্লাব।

প্রকল্পের টাকা আত্মসাতের জন্য ঘর নির্মানে প্লান ডিজাইনে প্রাক্কলন মোতাবেক কাজ করা হ্য়নি। প্রতিটি ঘর ১ লক্ষ টাকা ব্যায়ে নির্মানের কথা থাকলেও তা ৪০-৫০ হাজার টাকায় সম্পন্ন করা হচ্ছে। আর এ কাজ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) এর সহযোগীতায় একক ভাবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বাস্তবায়ন করছেন বলেও অভিযোগ করছেন ভুক্তভুগীরা। ঘর নির্মানের এসব উপকরন উপজেলা চত্ত্বরের ডাক বাংলা থেকে বিতরন করা হলেও নিতে এসে কারভোগীদের গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত টাকা। উপকারভোগীরা তাদের নিজ খরচে নিয়ে যাচ্ছে ঘর তৈরির এসব সামগ্রী। ঘরগুলি যেভাবে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করে তৈরি করা হচ্ছে তাতে ২-৩ বছরের মধ্যে নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। উপজেলার সর্বস্তরের জনগন এর প্রতিকারের দাবী জানান।

উপজেলার উপকারভোগী পাথরডুবি ইউপির মইদাম গ্রামের মলিদা বেগম, চর-ভুরুঙ্গামারী ইউপির কল্পনা খাতুন, পাইকেরছড়া ইউপির আছিয়া খাতুন ঘর নির্মানের উপকরনের স্লিপ নিতে সেখানে দায়িত্বরত আবুল হোসেন ও মহব্বত মিস্ত্রী কে অতিরিক্ত ৩শ টাকা দিয়ে উপকরন নিতে হচ্ছে। উপকরনগুলো নিম্নমানের হওয়ায় নিজ খরচে বাড়ীতে নিয়ে আসতে খুটি ও রিং স্লাব ভেঙ্গে যাচ্ছে। এ ঘটনায় উপকারভোগীরা ইউএনও‘র নিকট অভিযোগ করেও প্রতিকার পান নি বলে জানান। 

এ ব্যাপারে উক্ত প্রকল্পের সদস্য সচিব উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা খন্দকার মিজানুর রহমান জানান, প্লান ডিজাইন আমি পাই নাই, ইউএন স্যার নিজ দায়িত্বে কাজ করছেন।

ভুরুঙ্গামারী উপজেলা প্রকৌশলী এন্তাজুর রহমান বলেন, কাজ চলছে কিন্তু এ ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না।

উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান গোলাম ইয়াছিন বলেন, এ ব্যাপারে কিছুই জানিনা তবে জানতে পারলাম ব্যাপক অনিয়ম হচ্ছে এবং নিম্নমানের উপকরন ব্যবহার করে ঘর নির্মান করা হচ্ছে।

শিলখুড়ী ইউপি চেয়ারম্যান ইউসুফ বলেন, প্রকল্পের আমি একজন সদস্য থাকার পরও আমি কিছুই জানি না। তবে জানতে পেরেছি বাজার থেকে নিম্নমানের খুটি/পিলার ক্রয় করে দেয়া হচ্ছে।

উপজেলা চেয়ারম্যান নুরুন্নবী চৌধুরী জানান, ঘর নির্মান প্রকল্পের ব্যাপারে ইউএনও সাহেব তাকে কিছুই জানায়নি।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার এস এইচ এম মাগফুরুল হাসান আব্বাসীর নিকট জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কিছু বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

গো নিউজ২৪/এমআর

দেশজুড়ে বিভাগের আরো খবর
মানুষের বিশ্বাসকে পুঁজি করে কোটি টাকা নিয়ে পালালো ডাচ-বাংলা ব্যাংকের এজেন্ট

মানুষের বিশ্বাসকে পুঁজি করে কোটি টাকা নিয়ে পালালো ডাচ-বাংলা ব্যাংকের এজেন্ট

দিনের শুরুতেই বিআরটিসি বাসের চাপায় নিহত ৪ 

দিনের শুরুতেই বিআরটিসি বাসের চাপায় নিহত ৪ 

ধারের টাকা দিতে না পারায় বন্ধুর স্ত্রীকে বিয়ে

ধারের টাকা দিতে না পারায় বন্ধুর স্ত্রীকে বিয়ে

বোমাটি বিস্ফোরিত হলে বাসের সবাই মারা যেতেন

বোমাটি বিস্ফোরিত হলে বাসের সবাই মারা যেতেন

রেললাইনে বোমা বিস্ফোরণের চেষ্টা, হাতেনাতে আটক ৩

রেললাইনে বোমা বিস্ফোরণের চেষ্টা, হাতেনাতে আটক ৩

হাতকড়া পরা অবস্থায় বাবার জানাজায় বিএনপি নেতা

হাতকড়া পরা অবস্থায় বাবার জানাজায় বিএনপি নেতা