ঘনিয়ে আসছে পবিত্র ঈদুল আজহা, তাই টুং টাং শব্দে সরগম কালীগঞ্জের কামার পল্লীগুলো। নাওয়া খাওয়া ভুলে অবিরাম কাজ করছেন কামাররা। বিশ্রাম নেই একদন্ড। দিনরাত সমান তালে হাসুয়া, ছুরি, চাপাতি, দা,বটি তৈরি ও শাণ দেওয়ার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে এখানকার কামার পল্লীগুলো।
কুরবানির ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে ততই যেন ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন স্থানীয় কামার ও ক্রেতারা। ক্রেতারা তাদের পছন্দের হাসুয়া, ছুরি, চাপাতি, ভোজালী, কুড়াল, মাংস কাটার জন্য গাছের গুলের টুকরো কিনতে ব্যস্ত। তবে বিগত সময়ের তুলনায় এসব সরঞ্জামাদির দাম একটু বেড়েছে বলে জানান স্থানীয় ক্রেতারা। তারপরও ক্রেতারা তা হাসি মুখে তৈরি এবং কিনে নিচ্ছে।
উপজেলার বিভিন্ন কামার পল্লী সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, কুরবানির ঈদকে সামনে রেখে কামার পল্লীগুলোতে কাক ডাকা ভোর থেকে ঝিঁঝিঁ ডাকা রাত পর্যন্ত কাজ করে যাচ্ছেন তারা।
সারা বছর কাজ না থাকলেও কুরবানির ঈদের এ সময়টা বরাবরই ব্যস্ত থাকতে হয় তাদের। পশু জবাইর সরঞ্জামাদি কিনতেও লোকজন ভীড় করছেন তাদের দোকানে। কামারের দোকানগুলোতে শোভা পাচ্ছে কুরবানির পশু জবাইয়ের উপকরণ।
প্রতি বছর কুরবানির ঈদ উপলক্ষে হাসুয়া, দা, ছুরি, চাপাতি, ও ধামার ব্যাপক চাহিদা বেড়ে যায়। কালীগঞ্জ বাজারের শ্রীদাম দাস, ও লক্ষন কর্মকার জানান, সারাবছর কাজ খুব কম থাকে। কুরবানির এলে কাজ বেড়ে যায়। বর্তমানে ছোট ছুরি থেকে শুরু করে বড় ছুরি ও ধামার শাণ দেয়ার জন্য ৫০ টাকা থেকে শুরু করে কাজের গুণাগুণের উপর ভিত্তি করে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হচ্ছে। এছাড়া প্রতিটি দা বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৩শ’ টাকা, হাসুয়া ২০০ টাকা, ছোট ছুরি ৮০ টাকা, বটি ২৫০ টাকা, চাপাতি ২৫০-৩০০ টাকা করে।
কালীগঞ্জ বাজারে পশু জবাইয়ের ছুরি কিনতে আসা পৌর এলাকার ভাদার্ত্তী গ্রামের সেলিম জানান, কুরবানির ঈদের আর মাত্র কয়েকদিন বাকী তাই আগেই পশু জবাইয়ের সরঞ্জাম কিনার কাজটি সেরে ফেলেছেন। তবে অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার ছুরি, চাকু, চাপাতির দাম একটু বেশি বলে জানান তিনি।
লোহার পাশাপাশি এদিকে স্টিলের ছুরি, চাকুও লোকজনকে আকৃষ্ট করছে। কালীগঞ্জ বাজারের খেয়াঘাট এলাকার আরেক কামার দোকানী বক্তারপুর গ্রামের মানিক কর্মকারের কাছে কুরবানিরকাজে ব্যবহৃত হয় এমন জিনিসের দাম সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, চাপাতি ৫০০ থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত রাখা হচ্ছে। তবে ঈদ ছাড়া অন্য সময় একটু কম রাখা হয় বলে স্বীকার করেন তিনি।
এদিকে, যারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে শাণ দেন তাদের অবস্থা মোটামুটি ভালো বলে জানা গেছে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে কাজ করেন কুমিল্লার আক্কাস আলী নামের একজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তাদের কমবেশি সারা বছরই কাজ থাকে। কারণ মহিলাদের তো সারা বছরই হাসুয়া, দা-ছুরি দিয়ে কাজ করতে হয়।
নতুন সরঞ্জামাদি কেনা ও মেরামত করার একটু বেশি মূল্যের বিষয়ে কামার দোকানীদের কাছে জানতে চাইলে তারা জানান, বর্তমানে কয়লা ও রডের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় আমাদেরও মূল্য একটু বৃদ্ধি করতে হয়েছে।
গো নিউজ২৪/আই