ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

চা’য়ের কাপে স্বপ্ন বুনছে মেধাবী দুই কিশোর


গো নিউজ২৪ | রফিক মজিদ, শেরপুর প্রতিনিধি : প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০১৮, ০২:২১ পিএম আপডেট: ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০১৮, ০৮:২১ এএম
চা’য়ের কাপে স্বপ্ন বুনছে মেধাবী দুই কিশোর

ভারতের প্রেসিডেন্ট নরেন্দ্র মোদী ছোট বেলায় চা বিক্রি করতেন। বাংলাদেশের শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতি উপজেলার মালিঝিকান্দা ইউনিয়নের তিনআনী বাজারের ফুটপাতের ধারে মেধাবী দুই কিশোর চা বিক্রি করে বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট হতে না পারলেও অনন্ত তাদের জীবন যুদ্ধে জয়ি হতে চায় তারা। তারা পড়াশোনার ফাঁকে চায়ের কাপে দুধ, চিনি আর চা-পাতির সংশিশ্রনে দেখেন ভবিষ্যত জীবনে উপরে উঠার রঙ্গিন স্বপ্ন।


জেলার নালিতাবাড়ি উপজেলার রাজরগর ইউনিয়নের দোহালিয়া গ্রামের মৃত আহেদ আলীর ছেলে আরিফ হোসেন গত বছর জেএসসিতে জিপিএ-৪.৭৯ পায়। সে এবার মালিঝিকান্দা হাই স্কুলে ৯ম শ্রেনীতে অধ্যায়ন করছে। অপরদিকে আরিফের ভাতিজা একই গ্রামের রফিকুল ইসলামের (আরিফের মামাত ভাই) ছেলে লিটন আহম্মেদ জেএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে তার সাথে একই স্কুলে ৯ম শ্রেনীতে অধ্যায়ন করছে।  


পৈত্রিক বাড়ি ভিটে ছাড়া তাদের আর কোন জমি নেই। বাড়ি থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দুরে পাশ্ববর্তি ঝিনাইগাতি উপজেলার তিনাআনী বাজারের প্রধান সড়কের পাশে ফুটপাতে চায়ের দোকান করেন লিটনের বাবা রফিকুল। ওই চায়ের দোকানে লিটন এবং তার (লিটনের) বাবার মামাত ভাইয়ের ছেলে আরিফ (চাচা) স্কুল ছুটির পর চা বিক্রি করেন। বিনিময়ে তাদের দু’জনের খাবার ও পড়াশোনার খরচ চালিয়ে যাচ্ছে রফিকুল। লিটনের বাবা রফিকুল সকাল থেকে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত দোকান চালানোর পর লিটন এবং আরিফ দু’জনে মিলে চা বিক্রির দায়িত্ব নেয়। এসময় রফিকুল বাড়িতে খেতে যায় এবং সন্ধ্যার পর আবারও দোকানে এসে তাদেরকে ছুটি দিলে তারা বাড়ি গিয়ে পড়তে বসে। এরপর রাতের মধ্যে সারাদিনের পড়া শেষ করে ঘুমিয়ে পড়ে এবং পরের দিন আবারও নিয়মমতো স্কুলে ছুটে যায়। এভাবেই চলছে চাচা-ভাতিজার স্বপ্ন বুননের জীবন সংগ্রাম।


প্রায় ৩ বছর আগে আরিফের বাবা মারা যাবার পর তার মামাত ভাইয়ের ওই চায়ের দোকানে যখন কাজ নেয় তখন তার পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়। এসময় মালিঝিকান্দা গ্রামের সুজন নামে দশম শ্রেনীর এক মেধাবী শিক্ষার্থী বিষয়টি স্থানীয় দরিদ্র ও অসহায় শিক্ষার্থী উন্নয়ন সংস্থা ‘ডপস’ এর প্রতিষ্ঠাতা সেনা সদস্য মো. শাহিন মিয়া বিএসপিকে অবগত করেন। পরে শাহিন মিয়া আরিফের মামাত ভাই ও লিটনের বাবা রফিকুলের সাথে কথা বলেন। এসময় তিনি দুই জনেরই লেখা-পড়ার প্রবল ইচ্ছের কথা জানায় এবং লেখা-পড়া বন্ধ না করার জন্য অনুরোধ করেন। একই সাথে আরিফ ও লিটনকে ডপস এর সদস্য করে শিক্ষা উপকরণের সহযোগীতার কথা জানায়। এতে রফিকুল শাহিন মিয়ার কথায় রাজি হয় এবং আরিফ পুনরাই শিক্ষা জীবনে ফিরে আসে। তার সাথে সাথে লিটনও আরো মনোযোগী হয়ে উঠে পড়াশোনায়। আরিফ ও লিটন সম্পর্কে চাচা-ভাতিজা হলেও তারা একে অপরের বন্ধুর মতো চলাফেরা ও পড়াশোনা করে যাচ্ছে। আর্থিক সংকটের কারণে পাঠ্য বয়ের পাশপাশি অন্যান্য বই একটি করে কিনে দুই জনে ভাগাভাগি করে পড়ে থাকেন।


আরিফ জানায়, বাবাকে হারিয়ে তিন বেলা দু’মুঠো পেটের ভাত জোগাতেই যখন কষ্ট হচ্ছিল তখন থেকেই আমার মা গ্রামের বিভিন্ন বাড়িতে ঝিয়ের কাজ শুরু করেন। এখনও তাই করে যাচ্ছে এবং আমাকে আমার মামাত ভাইয়ের চায়ের দোকানে কাজ নিতে হয়েছে। বাড়িতে বিদ্যুৎ নেই এক চালা ঘরে নেই খাট এবং কোন টেবিল-চেয়ার। ফলে ভাঙ্গা একটি চৌকিতে বসে পড়তে হয়। রাতের বেলা কুপি বাতি দিয়ে পড়তে গেলেও কেরোসিন তেলের চিন্তায় খুব বেশিক্ষণ পড়তে পারিনা। তাই খুব সকালে উঠে আবারও পড়া শেষ করে ছুটে যাই স্কুলে এবং স্কুল ছুটি শেষে বাড়িতে এসে কোন রকমে দু’মুঠো ভাত খেয়েই ছুটে যেতে হয় চা বিক্রি করতে। আমার খুব ইচ্ছে লেখা-পড়া করে অনেক বড় হবো। মায়ের দু:খ ঘুচাবো। কিন্তু জানিনা এভাবে শত অভাবের মধ্যে থেকে কতদুর যেতে পারবো। তবে সরকারী বা বেসরকারী কোন সহযোগীতা পেলে আমি আরো পড়া-লেখা করে ভবিষ্যতে নিজের পায়ে দাড়াতে চাই এবং বড় অফিসার হতে চাই।


লিটন জানায়, স্কুলের ফাঁকে বাবা’র চায়ের দোকান চালিয়ে অনেক কষ্ট করে লেখা-পাড়া করতে হচ্ছে। আমি ভবিষ্যতে লেখা-পড়া করে সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবো। সেখান থেকে বড় ডিগ্রী নিয়ে সরকারী চাকুরি করে আমাদের দু:খ ঘোচাবো। তবে আমাদের এ জীবন যুদ্ধে সরকারী কোন সহযোগীতা পেলে আমরা আরো ভালো ভাবে লেখা-পড়া করতে পাবো এবং ভালো রেজাল্টও করতে পারবো।


চা বিক্রেতা রফিকুল জানায়, আমার মামা মারা যাওয়ার পর আমার নিজের অভাবের সংসার থাকার পরও তার ছেলে মামাত ভাই আরিফের দায়িত্ব গ্রহন করি। অভাবের কারণে আমার মামি অন্যের বাড়িতে কাজ করে। আরিফ ও আমার ছেলে লিটন খুবই মেধাবী ছাত্র। কিন্তু সংসার খরচের পাশাপাশি পড়া-শোনার খরচ বহন করা আমার পক্ষে খুবই কঠিন। তাই আমার ছেলে ও মামাত ভাই আমার এই চায়ের দোকানে পড়াশোনার ফাঁকে একটু কাজ করে আমাকে সহযোগীতা করে। তারপরও আমি চাই তারা ভালো রেজাল্ট করে অনেক বড় হোক। মাঝখানে আরিফের পড়াশোনা বন্ধ হয়ে গেলেও পরবর্তিতে ডপস এর সহযোগীতায় আবারও আমার ছেলের সাথে একই ক্লাসে পড়াশোনা শুরু করেছে। আমিও এখন তাদের দুই জনের পড়াশোনার ব্যপারে সকল সহযোগীতা করবো। আগে তারা রাত ৯ টা পর্যন্ত কাজ করতো কিন্তু এখন রাত ৮ টার মধ্যেই তাদের ছেড়ে দেই বাড়িতে পড়াশোনার জন্য। তবে তাদের পড়াশোনার ব্যপারে সরকারী ও বেসরকারী কোন আর্থিক সুজোগ পেলে আমার কষ্ট অনেকটা কমে যেতো। 

 

গো নিউজ২৪/আই
 

দেশজুড়ে বিভাগের আরো খবর
মানুষের বিশ্বাসকে পুঁজি করে কোটি টাকা নিয়ে পালালো ডাচ-বাংলা ব্যাংকের এজেন্ট

মানুষের বিশ্বাসকে পুঁজি করে কোটি টাকা নিয়ে পালালো ডাচ-বাংলা ব্যাংকের এজেন্ট

দিনের শুরুতেই বিআরটিসি বাসের চাপায় নিহত ৪ 

দিনের শুরুতেই বিআরটিসি বাসের চাপায় নিহত ৪ 

ধারের টাকা দিতে না পারায় বন্ধুর স্ত্রীকে বিয়ে

ধারের টাকা দিতে না পারায় বন্ধুর স্ত্রীকে বিয়ে

বোমাটি বিস্ফোরিত হলে বাসের সবাই মারা যেতেন

বোমাটি বিস্ফোরিত হলে বাসের সবাই মারা যেতেন

রেললাইনে বোমা বিস্ফোরণের চেষ্টা, হাতেনাতে আটক ৩

রেললাইনে বোমা বিস্ফোরণের চেষ্টা, হাতেনাতে আটক ৩

হাতকড়া পরা অবস্থায় বাবার জানাজায় বিএনপি নেতা

হাতকড়া পরা অবস্থায় বাবার জানাজায় বিএনপি নেতা