ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

রায়পুর-লক্ষ্মীপুর মহাসড়কে অনিয়ম-দুর্নীতির মধ্যে চলছে নির্মাণ কাজ


গো নিউজ২৪ প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০১৮, ১২:৩৭ পিএম
রায়পুর-লক্ষ্মীপুর মহাসড়কে অনিয়ম-দুর্নীতির মধ্যে চলছে নির্মাণ কাজ

অনিয়ম, দুর্নীতি ও নিম্ন মানের কংকর দিয়ে চলছে রায়পুর-লক্ষ্মীপুর-চাঁদপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের প্রায় ৪০ কিলোমিটার সড়কের নির্মাণকাজ। রায়পুর অংশের কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করায় ক্ষুব্ধ হয়ে একাধিকবার কাজ বন্ধ করে দিয়েছিল স্থানীয় লোকজন।

ব্যস্ততম এ সড়কে দুর্ভোগ যেন নিত্যসঙ্গী। এ সড়ক দিয়ে চলাচল করতে হয় ৩০ জেলার কয়েক লাখ পরিবহন ও মানুষকে। সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) কর্মকর্তাদের যথাযথ তদারকি না থাকায় ইচ্ছামতো কাজ করছেন ঠিকাদার। যেন অনিয়মে ভরপুর গুরুত্বপূর্ণ সড়কের এ নির্মাণকাজ।

অভিযোগ রয়েছে, সওজের কুমিল্লা অঞ্চলের সাবেক অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. শাহাব উদ্দিন খান এ কাজের ঠিকাদারের সঙ্গে যোগসাজশে নিজের ইচ্ছামতো প্রাক্কলন করেছিলেন। এতে শুধু নতুন মাটির ব্যবহারের জন্যই ১৮ কোটি ৫৯ লাখ ৮৪ হাজার টাকা বরাদ্ধ রয়েছে। অথচ সড়ক থেকে ওঠা মাটি দিয়েই কাজটি করা সম্ভব বলে জানিয়েছে স্থানীয় লোকজন।

অভিযোগ রয়েছে, নির্মাণ কাজে ২০-২৫ বছরের পুরনো ইটের কণা-খোয়া ও ভিটি বালুর ব্যবহার, সড়কের পারে নতুন মাটি ব্যবহার না করা এবং নিয়ম অনুযায়ী সড়ক প্রশস্তকরণের কাজ করা হচ্ছে না। সড়ক প্রশস্তকরণের সময় পানি ব্যবহার না করায় ধুলাবালিতে চলাচলকারীদের ভোগান্তির শেষ নেই। এ ছাড়া ঠিকাদারের মনগড়া ট্রাফিক ব্যবস্থার কারণে প্রতিদিন তীব্র যানজট ও দুর্ঘটনায় জনজীবন দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে। সড়কে চলাচলে নষ্ট হচ্ছে বিপুল কর্মঘণ্টা। নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগে সম্প্রতি রায়পুরের রাখালিয়া গ্রামে ওই সড়কের কাজ বন্ধ করে দেয় গ্রামবাসী। পরে গ্রামবাসীকে নিয়মানুযায়ী কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ফের শুরু করা হয়।

সওজ সূত্র জানায়, সড়কটি এখন ১৮ ফুট চওড়া রয়েছে। এটি ২৪ ফুট করা হবে। দুই পাশে ছয় ফুট সম্প্রসারণের পাশাপাশি পাঁচ ফুট করে ১০ ফুট আরো মাটি ফেলে ভরাট করা হবে। রায়পুরের বর্ডার বাজার থেকে লক্ষ্মীপুর সদরের গো হাটা পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার নির্মাণের জন্য ৫৮ কোটি ৯৪ লাখ ১৩ হাজার ৫৭ টাকা বরাদ্দ হয়। লক্ষ্মীপুরের গো হাটা থেকে চন্দ্রগঞ্জ বাজার পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণে ৭৪ কোটি ১৬ লাখ ৯৭ হাজার ৬৯ টাকা বরাদ্দ হয়। এর মধ্যে নতুন মাটি ব্যবহারের জন্য বরাদ্দ রয়েছে আট কোটি ১৯ লাখ ২৭ হাজার ১১৮ টাকা। এর মধ্যে নতুন মাটি ব্যবহারের জন্য ১০ কোটি ৪০ লাখ ৬৫ হাজার ৯৩৯ টাকা বরাদ্দ রয়েছে। কাজ দুটি পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কুমিল্লার রানা বিল্ডার্স। পরে প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে যৌথভাবে কাজে চুক্তিবদ্ধ হয় হাসান বিল্ডার্স ও মেসার্স সালেহ আহমেদ। তারা গত বছরের ডিসেম্বরে কাজ শুরু করে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ডিসেম্বরে সড়কটির ৪০ কিলোমিটারের কাজ শুরু হয়। সড়কের কিছুদূর পর পর এক লেন বন্ধ রেখে অন্য লেন দিয়ে যানবাহন চলছে। শ্রমিকরা নিম্ন মানের খোয়া আর বালুর মিশ্রণে ভিত্তি স্থাপন করছে। সড়কের দুই পাশে তিন ফুট করে ছয় ফুট প্রস্থ মাটির বক্সকাটিং করার কথা থাকলেও বিভিন্ন স্থানে ২৮-২৯ ইঞ্চি (প্রায় আড়াই ফুট) কাটিং করা হয়েছে। এতে ওই বক্সে রোলার চাপা দিতে গিয়ে আটকা পড়তে হচ্ছে। সওজের কর্মকর্তাদের তদারকি না থাকায় ঠিকাদারের লোকজন খামখেয়ালিভাবে নির্মাণকাজ করছে। নিয়মানুযায়ী বালু ও মাটি সরবরাহ করা হচ্ছে না। কাজে ২৫-৩০ বছরের পুরনো ইট-খোয়া ও রাবিশ ব্যবহার করা হচ্ছে। এর সঙ্গে নামমাত্র নতুন মাটি, খোয়া ও বালুর ব্যবহার হচ্ছে। ঠিকাদারের নিয়োগ করা সড়কের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে পর্যাপ্তসংখ্যক নিজস্ব ট্রাফিক না থাকায় প্রতিদিনই তীব্র যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। সংস্কারকাজের সময় পানি না ছিটানোর কারণে ধুলাবালিতে খুব কষ্ট পাচ্ছে চলাচলকারীরা। ধুলাবালির কারণে সামনে কী আছে তা দেখা যায় না। আশপাশের গাছপালা ও ফসলের ক্ষেত অনেকটা বিবর্ণ হয়ে গেছে। যানবাহন চালকরা নিজেদের মতো করে চলাচলের চেষ্টা করলে তীব্র যানজট হয়। এতে প্রায়ই বাস ও কাভার্ড ভ্যান উল্টে পড়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সড়কটিতে গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকে।

বক্তব্য জানতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রানা বিল্ডাসের স্বত্বাধিকারী মো. আলমের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। আর কাজ তদারকির দায়িত্বে থাকা নাজমুল হাসান পাখিকে একাধিকবার মোবাইল ফোনে কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি।

লক্ষ্মীপুর সওজের কার্যসহকারী মাসুদুর রহমান বলেন, ‘আমাদের দু-একজন কর্মকর্তার দায়িত্বে অবহেলার কারণে কিছুটা অনিয়ম হচ্ছে।’

লক্ষ্মীপুর সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী জহিরুল ইসলাম বলেন, কোনো অনিয়মের অভিযোগ কেউ করেনি।’ বরাদ্দ থাকা সত্ত্বেও কাজে নতুন মাটির ব্যবহার হচ্ছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখনো সময় আছে। অব্যবস্থাপনার বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হবে।

মনগড়া কাজের প্রাক্কলন তৈরি প্রসঙ্গে সওজের কুমিল্লা অঞ্চলের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. শাহাব উদ্দিন খান বলেন, অভিযোগ সঠিক নয়। ঠিকাদার শতকরা ১০ ভাগ ছাড়ে কাজটি নিয়েছে। সড়ক নির্মাণের পর কোনো সমস্যা হলে তিন বছর পর্যন্ত ওই ঠিকাদারকেই তা সংস্কার করে দিতে হবে।

লক্ষ্মীপুর-২ (রায়পুর ও সদরের একাংশ) আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি মোহাম্মদ নোমান বলেন, ‘যেনতেনভাবে কাজ করার খবরে একাধিকবার সড়কের নির্মাণকাজ পরিদর্শন করেছি। এ সময় ঠিকাদারের লোকজনকে সতর্ক করে যথাযথভাবে কাজ করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

গো নিউজ২৪/এমআর

দেশজুড়ে বিভাগের আরো খবর
মানুষের বিশ্বাসকে পুঁজি করে কোটি টাকা নিয়ে পালালো ডাচ-বাংলা ব্যাংকের এজেন্ট

মানুষের বিশ্বাসকে পুঁজি করে কোটি টাকা নিয়ে পালালো ডাচ-বাংলা ব্যাংকের এজেন্ট

দিনের শুরুতেই বিআরটিসি বাসের চাপায় নিহত ৪ 

দিনের শুরুতেই বিআরটিসি বাসের চাপায় নিহত ৪ 

ধারের টাকা দিতে না পারায় বন্ধুর স্ত্রীকে বিয়ে

ধারের টাকা দিতে না পারায় বন্ধুর স্ত্রীকে বিয়ে

বোমাটি বিস্ফোরিত হলে বাসের সবাই মারা যেতেন

বোমাটি বিস্ফোরিত হলে বাসের সবাই মারা যেতেন

রেললাইনে বোমা বিস্ফোরণের চেষ্টা, হাতেনাতে আটক ৩

রেললাইনে বোমা বিস্ফোরণের চেষ্টা, হাতেনাতে আটক ৩

হাতকড়া পরা অবস্থায় বাবার জানাজায় বিএনপি নেতা

হাতকড়া পরা অবস্থায় বাবার জানাজায় বিএনপি নেতা