ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন বরগুনার পুলিশ সুপার বিজয় বসাক


গো নিউজ২৪ | ইবরাহীম সোহেল, জেলা প্রতিনিধি প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৪, ২০১৭, ০৯:৫৬ পিএম আপডেট: ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০১৮, ০৩:৪৬ পিএম
অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন বরগুনার পুলিশ সুপার বিজয় বসাক

বরগুনা: সৃজনশীল দৃষ্টিভঙ্গি আর নানামুখী উন্নয়ন প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে সারা দেশে এক অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন বরগুনার পুলিশ সুপার বিজয় বসাক। একজন বিজয় বসাকের নেতৃত্বে ভিন্নতায় অনন্য এখন বরগুনা জেলা পুলিশ। ইভটিজিং, জঙ্গিবাদ ও মাদক বাণিজ্যসহ সকল প্রকার অপরাধ নির্মূলে তার সাহসী ভূমিকা ইতোমধ্যেই নজর কেড়েছে বাংলাদেশ পুলিশের। অসংখ্য ইতিবাচক উদ্যোগের মধ্য দিয়ে পাঁচ-পাঁচবার বরিশাল বিভাগের সেরা পুলিশ সুপার হন বিজয় বসাক।  

নিচে তার বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড তুলে ধরা হল:
যে মুখে ডাকি মা সে মুখে মাদককে বলি না: মাদক থেকে দূরে থাকার আহ্বান নিয়ে পুলিশ সুপার বিজয় বসাক নিজেই রচনা করেছেন একটি স্লোগান। আর সেটি হচ্ছে- ‘যে মুখে ডাকি মা সে মুখে মাদককে বলি না’। এ স্লোগানকে কেন্দ্র করে স্থানীয় শিল্পীদের সুরে রচনা করা হয়েছে মাদক বিরোধী সঙ্গীত। মাদক বিরোধী এ সঙ্গীত ও স্লোগানকে সামনে রেখে পাড়ায় মহল্লায় গ্রামগঞ্জে, স্কুল-কলেজে কমিউনিটি পুলিশিং এর মাধ্যমে সাধারণ মানুষের কাছে কাছে গিয়ে জঙ্গিবাদ, মাদক ও ইভটিজিংসহ সকল প্রকার অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে পুলিশ সুপার বিজয় বসাকের নেতৃত্বে নিরবচ্ছিন্নভাবে প্রচার ও প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে বরগুনা জেলা পুলিশ।      

স্কুলে স্কুলে জেলা পুলিশের ক্যারিয়ার ক্যাম্পেইন: পুলিশ হয়ে নয় সাধারণ মানুষ হয়ে কখনো বেঞ্চে, কখনো পাশে দাঁড়িয়ে ছাত্র-ছাত্রীর বুকে সাহস জাগিয়ে তুলেছেন। আইনের প্রতি তাদের শ্রদ্ধাশীল করে গড়ে তুলতে পুলিশ সুপার বিজয় বসাকের নেতৃত্বে বরগুনা জেলা পুলিশের উদ্যোগে স্কুলে স্কুলে আয়োজন করা হচ্ছে দেশপ্রেম ও ক্যারিয়ার ভাবনা বিষয়ক আলোচনা অনুষ্ঠান। এসব আয়োজনের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ার ভাবনা, মানবীয় গুণাবলির বিকাশ এবং দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করতে মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টরের মাধ্যমে শিক্ষামূলক বিভিন্ন ভিডিও ক্লিপস প্রদর্শন করা হয়। চলতি বছর বরগুনার ছয়টি উপজেলার ২০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় সাত হাজার শিক্ষার্থীকে জঙ্গিবাদ, মাদক ও ইভটিজিংসহ সকল প্রকার অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে প্রচার ও প্রচারণায় সম্পৃক্ত করেছে।

পুলিশই জনতা, জনতাই পুলিশ: ১২ লাখ মানুষের নিরাপত্তায় মাত্র ছয়শ পুলিশ পর্যাপ্ত নয়। নানা সীমাবদ্ধতার বিষয় ভাবনায় রেখে জেলার চারটি পৌরসভাসহ ৪২টি ইউনিয়নে গঠন করা হয়েছে কমিউনিটি পুলিশিং-এর স্থানীয় কমিটি। কমিউনিটি পুলিশিং এবং গ্রাম পুলিশিং কার্যক্রমকে আরও গতিশীল করে তুলতে সাফল্যের স্বীকৃতি স্বরূপ জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে কমিউনিটি পুলিশিং এর তৃণমূল নেতাদেরকে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে নিয়মিত ধন্যবাদপত্র ও সম্মাননা ক্রেস্ট উপহার দিয়ে আসছেন পুলিশ সুপার বিজয় বসাক।

পুলিশের রক্তে বাঁচে জনতার জীবন: জেলার প্রায় ১২ লাখ মানুষের জন্য একটি মাত্র জেনারেল হাসপাতাল। নজিরবিহীন চিকিৎসক সংকটের পাশাপাশি এখানে রয়েছে জরুরি রক্তের সংকট। নিভৃত গ্রাম থেকে আসা অধিকাংশ রোগীদের চিকিৎসা সেবা পেতে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে যেসব ধকল পার হতে হয় তার মধ্যে অন্যতম প্রধান সংকট এটি। জেলার প্রত্যন্ত  গ্রামাঞ্চল থেকে আসা দরিদ্র পরিবারের রোগীদের জরুরি রক্তের প্রয়োজনে পুলিশ সুপার বিজয় বসাকের উদ্যোগে ২০১৬ সালে স্থাপন করা হয় পুলিশ লাইফ ব্লাড ব্যাংক। জেলার ছয় শতাধিক পুলিশ সদস্যের রক্তের গ্রুপ এবং একাধিক জরুরি মোবাইল ফোন নম্বর দিয়ে লিফলেট ছাপিয়ে বিতরণ করা হয়েছে সর্বস্তরের সাধারণ মানুষের মাঝে। পুলিশ লাইফ ব্লাড ব্যাংক জরুরি রোগীদের জন্য এ পর্যন্ত তিন শতাধিক ব্যাগ রক্ত দিয়েছে বলে জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে। এমনকি  নিজের শরীর থেকে ব্লাড দিয়েও সাহায্য করেন এসপি বিজয় বসাক।

জাগরণী নারী সহায়তা কেন্দ্র: জেলা পুলিশের একটি সমীক্ষায় জানা গেছে, বাংলাদেশের যেকোনো জেলার চেয়ে উপকূলীয় জেলা বরগুনায় নারী নির্যাতনের মামলার সংখ্যা অনেক বেশি। নানান কারণে বিবাহ বিচ্ছেদ সমস্যা এবং পারিবারিক কলহের তুচ্ছ বিষয় নিয়ে এখানে নারী নির্যাতনের অনেক ঘটনা ঘটে থাকে। সেসব ঘটনাকে কেন্দ্র করে মামলা হয় নারী নির্যাতনে। মাসের পর মাস বছরের পর বছর ধরে চলে মামলা। ভেঙে যায় সংসার। এমনসব দরিদ্র, অসহায় এবং নির্যাতিত নারীদের ভোগান্তি লাঘবে পুলিশ সুপার বিজয় বসাকের প্রচেষ্টায় স্থানীয় নারী নেত্রীসহ সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের প্রবীণ ব্যক্তিবর্গের সমন্বয়ে তৈরি করা হয় বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির একটি ভিন্ন ধর্মী প্লাটফর্ম। নাম দেয়া হয় ‘জাগোরণী নারী সহায়তা কেন্দ্র’।  এটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে মাত্র এক বছরের ব্যবধানে এ উদ্যোগের মধ্য দিয়ে নির্যাতনের শিকল ছিড়ে স্বাভাবিক জীবন ফিরে পেয়েছে বরগুনার বিভিন্ন গ্রামের প্রায় চার শতাধিক দরিদ্র অসহায় নারী।

অভাগিনী সুরমাদের পাশে জেলা পুলিশ : ১১ বছরে বিয়ে হয়েছিল তার।  ১৫ বছরে মা।  আর ২০ বছর হতে না হতেই বিধবা হয়েছিলেন বরগুনার পাথরঘাটার দরিদ্র জেলেবধূ সুরমা। গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে গেলে জলদস্যুরা নির্মমভাবে হত্যা করেছিল সুরমার স্বামী ইসমাইলকে। সেই থেকে দু-দুটি কন্যাশিশু নিয়ে চরম অনিশ্চিত হয়ে পরে সুরমার জীবন। পুলিশ সুপার বিজয় বসাকের উদ্যোগে সুরমার পাশে দাঁড়ায় বরগুনা জেলা পুলিশ। কমিউনিটি পুলিশিং এবং স্থানীয় সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক নেতাদের সম্মিলিত সহায়তায় পাথরঘাটার রূপধন বাজারে একটি দোকান করে দেয়া হয়েছে। দোকান চালিয়ে এখন অনেকটাই ভালো আছেন সুরমা। শুধু সুরমাই নয়, বরগুনার বেতাগী উপজেলার মোকামিয়া ইউনিয়নের পুলের হাট বাজারের হতদরিদ্র মাকছুদাসহ একাধিক অসহায় নারী জেলা পুলিশের সহায়তায় এখন স্বাবলম্বী।           

থানা হাজতে স্যানিটারি ন্যাপকিন: থানা হাজতে নারী হাজতিদের জন্য বাংলাদেশে সর্বপ্রথম স্যানিটারি ন্যাপকিন সরবরাহের প্রথা চালু করেন পুলিশ সুপার বিজয় বসাক।  এছাড়া নারী পুলিশ ও পুলিশ পরিবারের প্রজনন স্বাস্থ্য সচেতনতায় পুলিশ সুপার বিজয় বসাক নিজ উদ্যোগে প্রজনন স্বাস্থসেবা বিষয়ক একাধিক কর্মশালাসহ বহু সভা ও সেমিনার আয়োজন করে আসছেন।

বরিশাল বিভাগের শ্রেষ্ঠ পুলিশ সুপার: কমিউনিটি পুলিশিং-এর মাধ্যমে জনগণের দোরগোড়ায় পুলিশি সেবা পৌঁছানো, হতদরিদ্র অসহায় নারীদের জন্য বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি, জেলার প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের স্কুলে স্কুলে মাদক ও জঙ্গিবাদ বিরোধী প্রচারণা ও ক্যারিয়ার ভাবনা বিষয়ক আলোচনা অনুষ্ঠানসহ জেলার আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বিশেষ ভূমিকা রাখায় পাঁচ-পাঁচবার বরিশাল বিভাগের শ্রেষ্ঠ পুলিশ সুপার নির্বাচিত হন বিজয় বসাক। এছাড়া পেশাগত দায়িত্ব পালনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখায় ২০১১ সালে প্রেসিডেন্ট পুলিশ মেডেল (পিপিএম) এবং ২০১২ এবং ২০১৬ সালে দু’দুবার তিনি অর্জন করেন আইজি ব্যাচ। বরগুনায় যোগদানের পর থেকেই এখানকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি শক্ত হাতে নিয়ন্ত্রণে রেখেছেন তিনি।

ব্যক্তি জীবনে বিজয় বসাক: ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে বারবার যোগাযোগ করে নিজ প্রচেষ্টায় বরগুনা পুলিশ সুপারের কার্যালয় ভবন এবং এর ইন্টেরিয়র ডিজাইনেও আকর্ষণীয় পরিবর্তন এনেছেন বিজয় বসাক। মূল ক্যাম্পাসে মায়ের কোলে শিশুর একটি দৃষ্টিনন্দন মনুমেন্ট তৈরি করেছেন তিনি। ব্যক্তি জীবনে একজন ভালো স্পোর্টস ম্যান বিজয় বসাক। অবসরের একটি বড় সময় কাটে তার বই পড়ে। আবৃত্তিতে রয়েছে তার বিশেষ দখল। স্থানীয় সাংস্কৃতিক আন্দোলনেও রয়েছে তার সমান সহযোগিতা। নিজ প্রচেষ্টায় বরগুনা জেলা পুলিশের উদ্যোগে প্রতিবছর মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক ও বিসিএস উত্তীর্ণ কৃতি তরুণদের সংবর্ধনার আয়োজন করে তাদের হাতে নানাবিধ পুরস্কার তুলে দেন তিনি। 

প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালের ১৪ জুন পুলিশ সুপার হিসেবে বরগুনায় যোগ দেন বিজয় বসাক। জেলা পুলিশের উদ্যোগে কমিউনিটি পুলিশিংয়ের মাধ্যমে নানামুখী সৃজনশীল কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে পুলিশি সেবাকে জনবান্ধব করে গড়ে তোলেন তিনি।

গোনিউজ/এমবি

দেশজুড়ে বিভাগের আরো খবর
মানুষের বিশ্বাসকে পুঁজি করে কোটি টাকা নিয়ে পালালো ডাচ-বাংলা ব্যাংকের এজেন্ট

মানুষের বিশ্বাসকে পুঁজি করে কোটি টাকা নিয়ে পালালো ডাচ-বাংলা ব্যাংকের এজেন্ট

দিনের শুরুতেই বিআরটিসি বাসের চাপায় নিহত ৪ 

দিনের শুরুতেই বিআরটিসি বাসের চাপায় নিহত ৪ 

ধারের টাকা দিতে না পারায় বন্ধুর স্ত্রীকে বিয়ে

ধারের টাকা দিতে না পারায় বন্ধুর স্ত্রীকে বিয়ে

বোমাটি বিস্ফোরিত হলে বাসের সবাই মারা যেতেন

বোমাটি বিস্ফোরিত হলে বাসের সবাই মারা যেতেন

রেললাইনে বোমা বিস্ফোরণের চেষ্টা, হাতেনাতে আটক ৩

রেললাইনে বোমা বিস্ফোরণের চেষ্টা, হাতেনাতে আটক ৩

হাতকড়া পরা অবস্থায় বাবার জানাজায় বিএনপি নেতা

হাতকড়া পরা অবস্থায় বাবার জানাজায় বিএনপি নেতা