বউ-শাশুড়ি, ননদ-ভাবি এবং ভাইয়ের বউদের মধ্যে সাংসারিক খুঁনসুটি যেন বাঙালি সমাজের চিরায়ত ঘটনা। সংসারের আধিপত্য বিস্তারের এই লড়াই যেন এবার ভোটের মাঠেও গড়িয়েছে। এ ব্যাপারে ছাড় দিতে রাজি নন কেউ। এসব সম্পর্কের নির্বাচনি যুদ্ধ ভোটারদের আলাদাভাবে নজর কেড়েছে বলে জানা গেছে।
নাটোরের বাগাতিপাড়ায় সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে এবার বউ-শাশুড়ি, ননদ-ভাবি— এমনকি দুই জায়ের মধ্যে নির্বাচনি লড়াই শুরু হয়েছে।
উপজেলার পাঁচ ইউনিয়নে আসন্ন নির্বাচনে জামনগর ইউনিয়নের একই ওয়ার্ডে বউ-শাশুড়ি এবং পাকা ইউনিয়নের একই ওয়ার্ডে ননদ-ভাবি এবং দুই জা নির্বাচনি প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মাঠে নেমেছেন। জয়ী হতে তাদের সবাই মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। এদের কেউ কাউকেই ছাড় দিতে রাজি নন।
জানা গেছে, উপজেলার জামনগর ইউনিয়নের ৪, ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডে সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বী দুই প্রার্থী বউ-শাশুড়ি আলাদাভাবে ভোটারদের নজর কেড়েছেন। প্রার্থীরা হলেন— বউমা শামীমা খাতুন টিনা এবং তার চাচি শাশুড়ি সাজেদা খাতুন। শাশুড়ি সাজেদা খাতুন জামনগর গ্রামের কলেজশিক্ষক আব্দুল জলিলের স্ত্রী এবং বউমা শামীমা খাতুন টিনা একই এলাকার সাইফুল ইসলামের স্ত্রী। তারা দুজনই ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা এবং একই ভিটায় বাস করেন।
জামনগর ইউনিয়নের ওই তিন ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা মেম্বার পদে মোট তিন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে সাজেদা খাতুন তালগাছ প্রতীক এবং শামীমা খাতুন টিনা সূর্যমুখী প্রতীক নিয়ে ভোটের লড়াইয়ে মাঠে নেমেছেন। জয়ী হতে মাঠে ঘুরে বেড়াচ্ছেন দুজনই। কেউ কাউকেই ছাড় দিচ্ছেন না। সাজেদা খাতুন এর আগেও দুবার একই পদে নির্বাচন করে পরাজিত হয়েছেন। তবে এবার জয়ের ব্যাপারে বেশ আশাবাদী তিনি।
অন্যদিকে শামীমা খাতুন টিনাও প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের পরাজিত করে বিজয়ী হতে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। নির্বাচনে ভোটাররা তাকেই বিজয়ী করবেন বলে এমন আশা তার।
অন্যদিকে পাঁকা ইউনিয়নের ১, ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডে সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে ভোটযুদ্ধে মাঠে নেমেছেন এক পরিবারের ননদ-ভাবি এবং অন্য আরেক পরিবারের দুই জা। ভোটারদের বেশিরভাগের দৃষ্টি এবার এই ওয়ার্ডের দিকে। কে হচ্ছেন এই ওয়ার্ডের মহিলা মেম্বার।
প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে ননদ লাইলী বেগম সালাইনগর গ্রামের আশকান আলীর স্ত্রী এবং শিলা খাতুন তার খালাতো ভাই সুমন আলীর স্ত্রী। তারা দুজনই ২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা এবং পাশাপাশি বাড়িতে বসবাস করেন। ননদ লাইলী বেগম বক প্রতীক এবং ভাবি শিলা খাতুন কলম প্রতীক নিয়ে ভোটের লড়াইয়ে মাঠে নেমেছেন।
ওই একই ওয়ার্ডে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী দুই ভাইয়ের বউ হলেন— শাহানাজ পারভীন এবং শিল্পী খাতুন। তারা দুজনে চাচাতো ভাইয়ের বউ। শাহানাজ পারভীন বড় স্বরাপপুর গ্রামের ভুট্টু সরদারের স্ত্রী এবং শিল্পী খাতুন একই এলাকার দুলাল সরদারের স্ত্রী। ওই ওয়ার্ডের বর্তমান সংরক্ষিত মহিলা মেম্বার শাহানাজ পারভীন এবার ভোটের মাঠে তালগাছ প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছেন। অন্যদিকে শিল্পী খাতুন সূর্যমুখী প্রতীক নিয়ে সব প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে ডিঙিয়ে জয় পেতে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন।
সংরক্ষিত মহিলা মেম্বার পদে ওই ওয়ার্ডে মোট সাত প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এ বিষয়ে দিঘা কলেজের মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক মাহাবুবুল আলম বলেন, মূলত প্রতিনিধিত্বমূলক মনোভাব এবং প্রতিহিংসা পরায়ণ আচরণের বহিঃপ্রকাশের কারণেই এসব সম্পর্কের মানুষগুলো সামাজিক কার্যকলাপের পাশাপাশি রাজনৈতিক কার্যকলাপেও জড়িত হচ্ছে। এই নির্বাচনে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা এমনটিই প্রমাণ করে।