ঢাকা মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

বাসন্তী


গো নিউজ২৪ প্রকাশিত: অক্টোবর ২৪, ২০১৭, ০৫:৪১ পিএম আপডেট: অক্টোবর ২৬, ২০১৭, ০৯:৫৯ এএম
বাসন্তী

বাসন্তী - (পর্ব-১)

আমি কবি, লেখক, সাহিত্যিক কোনকিছু নই
যে মেঘমালার সাথে ঘুরে বেড়াব,খেলা করব,
আকাশের তারাদের সাথে কথা বলব-
নীলাম্বরীর স্বর্গীয় নিলীমা দিয়ে ঘর বানিয়ে
ছুঁয়ে দেখব তার অস্বিত্ব,
ভালবাসার তুলিতে তার ছবি আঁকব।

মহাকালের বাণীর আশায়, যোগ সাধনায়
ধ্যানমগ্ন রব, সহস্র দিন উপবাস করব,
পাহাড়ে চূড়ায় উঠে চর্যাপদ রচিব, 
সাগরের অতলে নেমে ঝিনুকের বুকের মুক্তা তুলে আনব।
কারণে বা অকারণে বর্ণমালাকে সাজাবো 
কবিতার উষ্ণতায় ইচ্ছেমত ছন্দ তুলব!

বাসন্তী 
আমি রূপ বুঝিনা, রস জানিনা, কোন কিছুর
স্বাদ-গন্ধ খুঁজিনা, রংধনুতে দেখি না সপ্ত আভা!
শূণ্যতার মধ্যে পাইনা পূর্ণ্যতার কোন দর্শন, 
আসেনা তাই আমার মাঝে 
নিকষ অাধাঁর ভেদী কোন নক্ষত্রের অন্ত প্রভা!

মনে পড়ে, কেবল মনে পড়ে বাসন্তী 
আমি তোমাকে দেখেছিলাম অকাল বৈধপ্য বেলায়,
মহান দারিদ্রের স্রোতোবহা শূণ্য হাতের পূণ্য যৌবন মোহে, মরুসম তৃষ্ণায় এক ফোঁটা জলশূণ্য দুস্তর দূর্গম তপ্ত বালুকাময় অগ্নিপথে--

পেয়েছিলাম তোমাকে সেই স্বপ্ন মোহাবিষ্ট, 
পরাজয় নিশ্চিত অসম জীবনযুদ্ধে-
ঢাল-তলোয়ার,বল্ল-বর্ম-শিরোস্রান-সমর-সজ্জাবিহীন দু'টি ত্রস্ত শূণ্য হস্ত-পদ লৌহ খরমহীন অলিখিত,
অসমাপ্ত এক বৃথা রণাঙ্গণে।

সমূদ্রের উত্তাল ঢেউয়ের মাঝে টিপটিপ করে জ্বলা,
মৃত্যুকে হাতে নেয়া দু:সাহসী ধীবরের ক্ষূদ্র তরণীতে,
পুরাতন টিনের চালের জরাজীর্ণ অতি ক্ষূদ্র ছিদ্র-ভেদী হঠাৎ ক্ষণিক আলোর মাঝে আবিস্কার করেছিলাম বাসন্তী আমি তোমাকে, শুধু তোমাকে।

শ্রাবণের অঝোর ধারা বর্ষণে ডুবে যাওয়া সদ্য রোপিত ধান ক্ষেতের পাশে কৃষাণির নিথর দু'টো চোখ তুলে চাহনির আকাশসম দু:খ মাঝে।

তাই, চল্লিশের কোঠায় এসে, বহু বছর পর মনস্থির করলাম, আমার কবিতা কেউ পড়ুক বা না পড়ুক,

কবিতার ভাষায় আধুনিকতা, সুর-ছন্দ, রুপ-মাধূর্য, শৈল্পিকতা, অঙ্গসৌষ্ঠব কেমন হবে না হবে তাও জানিনা।

অক্ষরবৃত্ত, মাত্রাবৃত্ত, অন্তমিল, গদ্য-পদ্য রীতি,
ছান্দিকতা-নান্দনিকতা এল না গেল-তা
আমি দেখতে চাইনা,
কবি কি বুঝে, না বুঝে কোনকিছু ভাবিনা,
কোন রীতি-নীতি, ধারা, মান-বিশ্লেষণ 
একদম বুঝতে চাইনা।

আমি চাই, আমি শুধু চাই------
আমি লিখব, আমি লিখব একটি ইতিহাস,
শুধু একটি নামের একটি কবিতা-
যে কবিতাটি দিয়েই হবে একটি বই,
শুধু একটি বই, 
বইয়ের থাকবে একটি নাম
"বাসন্তীর কথা"।

ইতিহাস থেকে হারিয়ে যাওয়া বাসন্তী আজ
কেমন আছে, কোথায় আছে তা
অনেকের মত আমারও জানতে ইচ্ছে করে
বড় জানতে ইচ্ছে করে।

দিন পাল্টেছে, সময় বদলেছে
এসেছে কত নতুনত্ব, পরিবর্তনের ছোঁয়া
লেগেছে গ্রামে,শহরে, নগরে, বন্দরে-
বাজছে নতুন গান, নব উত্তরণের সুর
আমা-তোমা হ'তে দূর বহুদূরে।

বাসন্তীর মনের অনন্ত বাসনা, অন্তহীন কামনা
যেন একটি চিরন্তন স্বপ্নের কল্পকথা, রূপকথা।

বাসন্তী জানেনা, আমি এখন আছি
সেই ঠিকানায়, সেই পুরান পথে-
যেখানে একদিন ছিল বাসন্তীর সদা গমন
দিনে-রাতে, আলো-আধাঁরে নিত্য বিচরণ।
সেই এ্যাবরো-থ্যাবরো আঁকা-বাঁকা
টুকরো ইট-পাথর ছড়ানো ছিটানো
উঁচু-নিঁচু ভঙ্গুর সেই সরু গলি।
এখন প্রতিদিন একইভাবে এ পথে হাটি,
কেউ জানেনা, আমি যে শুধু
আমার সাথে সেই বেদনার কথা বলি।

বাসন্তী 
দিন যায় আসে রাত নিয়ত একই নিয়মে
অাঁধার চিড়ে ওঠে ভোরের স্নিগ্ধ আলো,
পাখিরা তরু শাখা ছেড়ে উড়ে চলে 
আপন দিগন্তে ফেলি রাতের মায়া
নতুন আশায়, নতুন ক্ষুধা অন্তরে জ্বলে।

বাসন্তীও প্রজাপতির মত ছুটছে
এ বাগান থেকে অন্য কোন কাননে
এ ফুল থেকে অন্য কোন ফুল বনে,
কিসের আশায়, কিসের নেশায়-
দূর অতীতের মিলন-বিরহের কথা
নেই তার মনের কোন কোণে-
যেমন ফুরিয়ে যায় পাঁপড়ি-রেণু
ভ্রমরের ক্ষণিক মায়ার ছলে।

যা বাসন্তীর বিশ্বাস ছিল তাই ক'রেছে সে
শুণায়ে অমর বাণী আমায়---
যে পারে বেদনা ভুলতে যত
বিকশি হয় জীবনে সে তত।

বাসন্তী 
আমি থাকি আমার মাঝে খুঁজি না সাদা-কালো
চেনা পথ করি না অচেনা, সহজ-সত্য-সঠিক ধ্যান-খেয়ালে আমার আয়নায় আমাকেই দেখি। 
কখন সম্মুখে কখন পশ্চাতে সমানে তাকাই, 
পথিকের চলার রবে বাহিরের সাথে ভেতর মেলাই, 
মাঝে মাঝে আকাশের দিকে অপলক চাহি
সেই বেদনার বুক ফাঁটা ক্রন্দন-কথা প্রভূকে বলি।

বাসন্তীর দেখা যদি কখন কোথাও মেলে
স্বপ্নে কিংবা বাস্তবে, কাছে বা দূর দেশে,
মিলালে মিলবে একটি প্রশ্নের উত্তর সেদিন-
ঘুচবে জড়তা, স্পন্দিত প্রাণ শিহরি উঠবে
হয়তো বাসন্তীর মধুর মিলন সুখ আবেশে।

একদিন নতুন রূপে বাসন্তীর আগমন হবে
মায়াময় সে চাঁদ মুখ যদি কেউ দেখে,
চেতন-অচেতন, বোধ-অবোধ, হার মানা হার
প্রণাম করবে কতজন, অঞ্জলি দিতে সহস্র
প্রেমিক ছুটবে তার লাগি ভুলে নিদ্রা আহার।

আমিও সেদিন সবার অলক্ষ্যে বাসন্তী'র
দু'হাতে তুলে দেব দুঃসহ বেদনার স্মৃতিময় 
এক খন্ড কালো মেঘ, ভেতরে যার রয়েছে
এক জীবনের অন্তর্নিহিত ব্যথা, অমিমাংসিত সত্যার্ঘ,
শূণ্য হাতে না মেলা তার স্পর্শ, না পাওয়ার দাগ
অপূর্ণ প্রেম, না মেটা সাধ, সেই বিরহের স্বর্গ । 

--------------------------------
সৈয়দ এ মু'মেন (২০ অক্টোবর ২০১৭ খ্রিঃ)

সিনিয়র এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড

সাহিত্য ও সংষ্কৃতি বিভাগের আরো খবর
‘ছি ছি ছি ছি’ দুয়োধ্বনি দিয়ে বইমেলা থেকে বিতাড়িত মুশতাক-তিশা!

‘ছি ছি ছি ছি’ দুয়োধ্বনি দিয়ে বইমেলা থেকে বিতাড়িত মুশতাক-তিশা!

৭৬ বছরে এসে কবি হেলাল হাফিজ বললেন, ‘একা থাকার সিদ্ধান্ত ছিলো ভুল’

৭৬ বছরে এসে কবি হেলাল হাফিজ বললেন, ‘একা থাকার সিদ্ধান্ত ছিলো ভুল’

বইমেলায় এসেছে ডিআইজি (প্রিজন্স) জাহাঙ্গীর কবিরের বিচিত্র কয়েদখানা

বইমেলায় এসেছে ডিআইজি (প্রিজন্স) জাহাঙ্গীর কবিরের বিচিত্র কয়েদখানা

বীর মুক্তিযোদ্ধা রাতুল কৃষ্ণ হালদার এর দুটি বই এবারের বই মেলায়

বীর মুক্তিযোদ্ধা রাতুল কৃষ্ণ হালদার এর দুটি বই এবারের বই মেলায়

এবার একুশে পদক পাচ্ছেন যারা

এবার একুশে পদক পাচ্ছেন যারা

যাত্রাপালার ইতিহাস

যাত্রাপালার ইতিহাস