ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

৪৬ বছরেও বীরাঙ্গনা খেতাব মিলেনি ববিজান বেগমের


গো নিউজ২৪ | মির্জাপুর প্রতিনিধি প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৪, ২০১৭, ০৭:১৩ পিএম
৪৬ বছরেও বীরাঙ্গনা খেতাব মিলেনি ববিজান বেগমের

স্বাধীনতার ৪৬ বছর পার হয়েছে, দেশ অনেক এগিয়ে গেছে, অনেকের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়েছে। শুধু অন্ধকারেই রয়ে গেছেন ৭১ এ পাকবাহনী কর্তৃক নির্যাতিত অসহায় ববিজান বেগম। মৃত্যুর পূর্বে বীরাঙ্গনার খেতাবটা পাবেন কিনা তা অনিশ্চিত।

টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার ১৩ নং বাঁশতৈল ইউনিয়নের বাঁশতৈল পশ্চিমপাড়া(নয়াপাড়া) গ্রামের অসহায় ববিজান বেগমের(৬৫) বাড়ি। তার পিতার নাম আরাদন আলী।

 মুক্তিযুদ্ধের সময় ধর্ষিত নারীদের বাংলাদেশ সরকার বীরাঙ্গনা খেতাব দিয়েছেন। কিন্তু সামাজিকভাবে হয়রানি হওয়ার ভয়ে অনেকেই তা জানাতে নারাজ। আবার অনেকেই তাঁর উপর এমন ঘটনাকে গোপন করে রেখেছেন। তেমনি একজন নারী ববিজান বেগম।

মাত্র ১৩ বছর বয়সে একই গ্রামের দবু খাঁর ছেলে দুদু খাঁর সঙ্গে তার বিয়ে হয়। তিনি গ্রামের গৃহবধুদের মধ্যে ছিলেন সুন্দরী।বাংলার নিবৃত পল্লীর সহজ-সরল গৃহবধূ। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতাযুদ্ধ শুরু হয়। এসময় তাঁর বয়স ছিল ১৯ বছর। পাক বাহিনী কর্তৃক গণধর্ষণের মতো পাষবিক অত্যাচারে তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন।

পরে তারা চলে গেলে আশপাশের লোকজন তাকেসহ আরো কয়েকজনকে উদ্ধার করে চিকিৎসা দেন। এতে তিনি সুস্থ্য হলেও ধর্ষিতা হওয়ার অপরাধে তাকে স্বামীর সংসার ছাড়তে হয়। পরে সাত বছরের সংসার জীবনের এক বছরের শিশুকন্যা রহিমা আক্তারকে নিয়ে তাকে বাধ্য হয়ে বাবার বাড়ি চলে যেতে হয়।

এদিকে সেখানে সৎ মায়ের অভাবের সংসারে বেশি দিন ঠাঁই হয়নি ববিজান বেগমের। দেশ স্বাধীন হওয়ার কিছুদিন পর ময়মনসিংহের আব্দুল মালেক নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে তাঁর দ্বিতীয় বিয়ে হয়। সেখানে জন্ম হয় এক পুত্র সন্তান।তার নাম রফিকুল ইসলাম। কিন্তু মালেকের আগের স্ত্রী-সন্তান থাকায় সেখানেও টিকতে পারেননি তিনি। ছেলে রফিকুলকে নিয়ে ফিরে আসেন বাবার বাড়ি বাঁশতৈল গ্রামে।

বাবা আরাদন আলী মারা যাবার পর সৎ মায়ের সংসারে ঠায় হয়নি তাঁর। তিনি সরকারি একটু জমিতে ঘর তুলে ছেলে রফিকুল ও মেয়ে রহিমাকে নিয়ে বসবাস শুরু করেন। শিশু ছেলে-মেয়ে নিয়ে ভিক্ষা করে খেয়ে না খেয়ে চলতে থাকে তাঁর সংসার।

তাঁর এমন দুরবস্থা দেখে বাঁশতৈল গ্রামের বৃদ্ধ ইয়াদ আলী নিজেকে সেবাযত্ন করার জন্য ববিজানকে স্ত্রীর মর্যাদা দেন। ইয়াদ আলী মারা যাবার পর অসহায়তার কারনে সরকারী বনাঞ্চলের রিজার্ভের একটি প্লট পান ববিজান বেগম। সেখানে ছেলে-মেয়ে নিয়ে বসবাস করে আসছেন। কিন্তু তাঁর সেই প্লটটি নিয়েও একই গ্রামের গফুর মিয়ার ছেলে নুরু মিয়াসহ আরও কয়েকজন মিলে নানাভাবে হয়রানি করে আসছে।

বয়স হওয়ায় ববিজান এখন কানে কম শোনেন, স্মৃতিশক্তিও কমে গেছে। কাজ কর্ম করতে না পারায় ছেলের সংসারে খেয়ে না খেয়ে কাটছে। এভাবে কেটে গেছে স্বাধীনতার ৪৬ বছর।

বিগত সরকার এমনকি মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রনালয়ও ববিজানের কোন কোঁজ খবর রাখেনি।স্থানীয় চেয়ারম্যান মেম্বারগনও তার দেখাশোনা এমনকি খোঁজ খবর নেননি।নিরবে নিবৃতে কেটে যাচ্ছে তার জীবন।

 ববিজান বলেন, পাক বাহিনীর ওই অত্যাচারের পর ভাগ্যে জুটেছে এলাকার মানুষের লাঞ্ছনা, ঘৃণা, অপবাদ।আর এ্সব কারনে হারাতে হয়েছে স্বামীর সংসার। তাই লোক লজ্জার ভয়ে এতদিন ওইসব কথা কাউকে বলতে পারিনি। আর যারা আমার বিষয়টি জানে, তারাও আমার কোন খবর রাখেনি।

এদিকে গত বছর স্থানীয় ও জাতীয় কয়েকটি দৈনিকে ববিজানের বিষয়ে রিপোর্ট প্রকাশ হয়।এই রিপোর্টের সুত্র ধরে মন্ত্রী পরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. মাকছুদুর রহমান পাটওয়ারী টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসককে ববিজান বেগমকে সকল ধরেনের সুযোগ সুবিধার নির্দেশ দিয়েছিলেন।জেলা প্রশাসন তাকে থাকার জন্য দুই বান্ডিল ঢেউটিন ও কিছু নগদ টাকা দিয়েছিলেন।

এছাড়া একটি বয়স্ক ভাতার কার্ড, থাকার জন্য সরকারী খাস জমির বরাদ্ধ, ব্যাংকে হিসাব খোলার ব্যবস্থা এবং ববিজান বেগমের জীবনের শেষ প্রাপ্য বীরঙ্গনার(খেতাব) সনদপত্র মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রনালয়ের মাধ্যমে দ্রুত প্রদান করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু প্রশাসনের সেই আশ্বাস এখনও আলোর মুখ দেখেনি।

এ ব্যাপারে ১৩ নং বাঁশতৈল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো.আতিকুর রহমান মিল্টনের বলেন, ববিজান খুবই অসহায়।লোকলজ্জার ভয়ে কোন সাহায্য সহযোগিতা চাননি। ৭১ র মত কুতসা রটনাকারী তার চার পাশে এখনো রয়েছে।প্রশাসনও তার কোন খোঁজ খবর রাখেননি।তিনি ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইসরাত সাদমীন বলেন, ববিজান সম্পর্কে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসনে পাঠানো হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে জেলা প্রশাসন থেকে গত মে মাসে তা সংশ্লিষ্ঠ মন্ত্রনালয়ে পাঠানো হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

গোনিউজ২৪/কেআর

 

দেশজুড়ে বিভাগের আরো খবর
মানুষের বিশ্বাসকে পুঁজি করে কোটি টাকা নিয়ে পালালো ডাচ-বাংলা ব্যাংকের এজেন্ট

মানুষের বিশ্বাসকে পুঁজি করে কোটি টাকা নিয়ে পালালো ডাচ-বাংলা ব্যাংকের এজেন্ট

দিনের শুরুতেই বিআরটিসি বাসের চাপায় নিহত ৪ 

দিনের শুরুতেই বিআরটিসি বাসের চাপায় নিহত ৪ 

ধারের টাকা দিতে না পারায় বন্ধুর স্ত্রীকে বিয়ে

ধারের টাকা দিতে না পারায় বন্ধুর স্ত্রীকে বিয়ে

বোমাটি বিস্ফোরিত হলে বাসের সবাই মারা যেতেন

বোমাটি বিস্ফোরিত হলে বাসের সবাই মারা যেতেন

রেললাইনে বোমা বিস্ফোরণের চেষ্টা, হাতেনাতে আটক ৩

রেললাইনে বোমা বিস্ফোরণের চেষ্টা, হাতেনাতে আটক ৩

হাতকড়া পরা অবস্থায় বাবার জানাজায় বিএনপি নেতা

হাতকড়া পরা অবস্থায় বাবার জানাজায় বিএনপি নেতা