ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

৩০ ফার্মেসিতে দেখানো হয়েছে, কেউ লেখা বুঝতে পারেনি


গো নিউজ২৪ | নিউজ ডেস্ক প্রকাশিত: আগস্ট ২০, ২০১৭, ০৫:৩০ পিএম আপডেট: আগস্ট ২০, ২০১৭, ১১:৩০ এএম
৩০ ফার্মেসিতে দেখানো হয়েছে, কেউ লেখা বুঝতে পারেনি

এটা (প্রেসক্রিপশন/ব্যবস্থাপত্র) কলেজ গেটের ৩০টি ফার্মেসিতে দেখিয়েছি, কিন্তু কেউ লেখা বুঝতে পারেনি। হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত হয়ে গেছি। এখন আবার ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাব ঠিক করে লিখে আনতে।’ এভাবেই একটি প্রেসক্রিপশন দেখিয়ে নিজের দুর্ভোগের কথা জানালেন ইউনুস আলী।

চিকিৎসক এমনভাবে প্রেসক্রিপশনটা লিখেছেন যেটা অভিজ্ঞ ওষুধ বিক্রেতারাও বুঝতে পারেননি। 

তিনি বলেন, এই প্রেসক্রিপশন দেখে কোনো দোকানিই এর পাঠোদ্ধার করতে পারেননি।

প্রেসক্রিপশনটিতে দেখা যায়, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের বহির্বিভাগের টিকেট কেটেছিলেন ইউনুস আলী। সেখানে সমস্যার বর্ণনা দেওয়ার পর প্রেসক্রিপশন লেখেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। প্রেসক্রিপশনে দুটি ওষুধের নাম লেখেন তিনি। চিকিৎসকের নামটিও বোঝার উপায় নেই।

প্রায় একই রকম অভিজ্ঞতার কথা জানালেন মিরপুরের বাসিন্দা ইমান শেখ (৩৫)। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এলাকায় দেখা হলে তিনি বলেন, ‘সারা দিন একটা প্রেসক্রিপশন নিয়ে ঘুরছি। মিরপুরের কোনো ফার্মেসিই বুঝতে পারেনি। বাধ্য হয়ে ঢাকা মেডিকেলে এলাম প্রেসক্রিপশনটা আবার চিকিৎসককে দেখিয়ে ঠিক করে লিখে নিতে।’

অথচ উচ্চ আদালতের নির্দেশ ছিল স্পষ্ট ভাষায় প্রেসক্রিপশন লেখার ব্যাপারে। সে নির্দেশ বাস্তবায়ন না হওয়ায় ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে রোগী ও তাদের স্বজনদের। অনেক সময় প্রেসক্রিপশন বুঝতে না পেরে ভুল ওষুধ দিচ্ছেন বিক্রেতারা। আবার কখনো বা ওষুধ নেই বলে বিদায় করে দিচ্ছেন ক্রেতাদের।

এমনকি নিজের লেখা প্রেসক্রিপশন পড়ে দেখলে কখনো কখনো নাকি চিকিৎসক নিজেও বুঝতে পারেন না- এমন অভিযোগও পাওয়া গেছে। রাজধানীর অর্ধশতাধিক ফার্মেসির ওষুধ বিক্রেতা, ক্রেতা ও চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

চিকিৎসকরা কেউ কম শিক্ষিত নন, তারপরও কেন হাইকোর্টের নির্দেশনা উপেক্ষা করে দুর্বোধ্যভাবে প্রেসক্রিপশন লিখছেন সেই প্রশ্ন রাখেন ভুক্তভোগীরা।

অন্যদিকে রাজধানীর মিরপুর-১, ১০, কল্যাণপুর, শ্যামলী, কলেজ গেট এবং রাসেল স্কয়ারের লাজফার্মা, আবেদীন ফার্মা, ওয়াসী ফার্মা, আয়েশা ফার্মেসি, মির ফার্মা, রাসেল ফার্মা, মেডিকাস ফার্মা, গ্রিন লাইফ ফার্মেসি, আল-সামি ড্রাগ হাউস, বাংলাদেশ ফার্মাসহ বেশ কয়েকটি ওষুধের দোকানের বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চিকিৎসকদের লেখার কারণে অনেক সময় প্রেসক্রিপশন বুঝতে তাদের সমস্যা হয়। বিশেষ করে এক এলাকার প্রেসক্রিপশন অন্য এলাকার ফার্মেসিতে নিয়ে গেলে বোঝা মুশকিল হয়ে যায়। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে বিক্রেতারা তাদের এলাকার হাসপাতাল-ক্লিনিকগুলোর চিকিৎসকদের প্রেসক্রিপশন বেশি বেশি হাতে পান। তাই অন্য এলাকার চিকিৎসকদের প্রেসক্রিপশন বুঝতে তাদের সমস্যা হয়।

লাজ ফার্মার প্রধান ফার্মাসিস্ট আল-আমিন তালুকদার বলেন, ‘আমাদের এখানে প্রতিদিন প্রায় তিন হাজার প্রেসক্রিপশন আসে। এর মধ্যে কমপক্ষে তিন থেকে চারশ প্রেসক্রিপশন খুব হিজিবিজি করে লেখা থাকে। এ ছাড়া প্রতিদিন অন্তত পাঁচ থেকে ১০টা প্রেসক্রিপশন একদম বুঝতে না পেরে ফেরত পাঠাতে হয়। বিশেষ করে সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরা বেশি হিজিবিজি করে লেখেন।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পলিচালক (অর্থ) খাজা আবদুল গফুর জানান, ‘ইউনিট কনসেপ্টকে কাজে লাগাতে হবে। ইউনিটের প্রধান সঠিক করে লিখবেন এবং তার সহকর্মীদেরকেও সুন্দর করে লিখতে পরামর্শ দেবেন। এভাবে যদি এখান থেকে বের হয়ে আসা যায়।’

বিষয়টি সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান বলেন, ‘হাইকোর্ট যখন প্রেসক্রিপশন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন, তখন এ বিষয়ে আমরা অনেক আলোচনা করেছিলাম। কিন্তু পুনরায় অভিযোগ না আসায় পরে আমরা আর সেভাবে ফলোআপ করিনি। আসলে রোগীর চাপ বেশি হওয়ায় চিকিৎসকদের তাড়া থাকে। যার ফলে প্রেসক্রিপশন ভালো বা খারাপ হচ্ছে সেদিকে খুব বেশি নজর থাকে না।’

চিকিৎসকদের এমন দুর্বোধ্য প্রেসক্রিপশন থেকে মুক্তির পথ আছে কি না জানতে চাইলে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দীন বলেন, ‘প্রেসক্রিপশন লেখার ক্ষেত্রে ডাক্তারদের আরো সচেতন হতে হবে। জনভোগান্তির কথা মাথায় রাখতে হবে। অ্যাসোসিয়েশনের আগামি মিটিংয়ে আমি ঢাকাসহ সারা দেশের বিএমএ নেতাদের জানাব বিষয়টি। আশা করছি এর থেকে পরিত্রাণ সম্ভব।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অর্থোপেডিক সার্জারি বিভাগের এক চিকিৎসক বলেন, এভাবে লেখা চিকিৎসকদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। নিজের লেখা প্রেসক্রিপশন অনেক চিকিৎসক পরে দেখলে নিজেই বুঝতে পারেন না যে এটা তারই লেখা।

গত ২ জানুয়ারি চিকিৎসকদের ব্যবস্থাপত্র সম্পর্কে হাইকোর্টে রিট করেন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষে (এইচআরপিবি) আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।

এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ৯ জানুয়ারি স্পষ্ট অক্ষরে ‘পড়ার উপযোগী করে’ চিকিৎসকদের প্রেসক্রিপশন (ব্যবস্থাপত্র) লেখার নির্দেশনা দিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে ৩০ দিনের মধ্যে সার্কুলার জারির নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে ব্যবস্থাপত্রে ওষুধের জেনেরিক নাম লিখতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না- তা জানতে চেয়ে রুল জারি করা হয়।

বিচারপতি নাঈমা হায়দার ও বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমানের বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেন। স্বাস্থ্যসচিব, বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিলের রেজিস্ট্রার, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সেক্রেটারিসহ বিবাদীদের চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়।

এ বিষয়ে রিটকারীর আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশনা মানতে চিকিৎসকরা বাধ্য। আর যদি তা না মেনে কোনো চিকিৎসক হিজিবিজি করে প্রেসক্রিপশন লেখেন, তাহলে বিএমডিসি তাদের সনদ বাতিল করার ক্ষমতা রাখে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক আ ব ম ফারুক বলেন, চিকিৎসকের হাতের লেখা ছোট হাতে হওয়া উচিত নয়। কারণ প্রেসক্রিপশনে থাকা ওষুধের নাম বোঝা না গেলে ফার্মেসি থেকে ভুল ওষুধ রোগীকে দিতে পারে। ওষুধের জেনেরিক নাম কাছাকাছি হওয়ায়ও যেটি প্রেসিক্রিপশনে লেখা থাকে তার বদলে অন্যটি দিয়ে দেয়। এমন বহু ঘটনা শুনেছি আমরা। তিনি বলেন, ডাক্তাররা জানেন রোগী বা ফার্মেসির ওষুধ বিক্রেতারা তার লেখা পড়তে পারছেন না। কিন্তু তারপরও তারা প্রেসক্রিপশনের লেখাকে সহজবোধ্য করেন না। তাদের কাছে ভিজিটই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হয়। তিনি আরো বলেন, ব্যস্ততা বা রোগীর চাপ নয়, পুরোটাই দায়িত্বহীনতা ও দায়িত্বশীলতার বিষয়। একজন ডাক্তার ইচ্ছা করলেই প্রেসক্রিপশনের লেখাকে সহজবোধ্য করে তুলতে পারেন। দায়িত্বশীল হতে পারেন।

তিনি বলেন, প্রেসক্রিপশনে অস্পষ্ট ভাষায় ওষুধের নাম লেখা চিকিৎসকদের যেন একটা ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। অনেক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকও স্পষ্ট করে লিখতে পারছেন না। জনসাধারণের ভোগান্তি থেকে পরিত্রাণের জন্য চিকিৎসকদের বের হয়ে আসতে হবে ছোট হাতের প্রেসক্রিপশন লেখার রীতি থেকে। এ বিষয়ে ডাক্তারদের মুখ্য ভূমিকা রাখতে হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

গোনিউজ২৪/পিআর

স্বাস্থ্য বিভাগের আরো খবর
করোনা নিয়ে হঠাৎ বড় দুঃসংবাদ

করোনা নিয়ে হঠাৎ বড় দুঃসংবাদ

দেশে এইডস রোগী বাড়ছে, বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন সমকামীরা

দেশে এইডস রোগী বাড়ছে, বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন সমকামীরা

বহির্বিশ্বে গ্রহণযোগ্যতা হারানোর পথে বাংলাদেশের এমবিবিএস ডিগ্রি

বহির্বিশ্বে গ্রহণযোগ্যতা হারানোর পথে বাংলাদেশের এমবিবিএস ডিগ্রি

বাংলাদেশে ডেঙ্গু টিকার সফল পরীক্ষা

বাংলাদেশে ডেঙ্গু টিকার সফল পরীক্ষা

মশা নিধন যাদের দায়িত্ব, তাদের তা সঠিকভাবে পালন করতে হবেঃ স্বাস্থ্যমন্ত্রী

মশা নিধন যাদের দায়িত্ব, তাদের তা সঠিকভাবে পালন করতে হবেঃ স্বাস্থ্যমন্ত্রী

ইউটিউব দেখে ফিজিওথেরাপি সেন্টার!

ইউটিউব দেখে ফিজিওথেরাপি সেন্টার!