ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

৩ কারণে স্থগিত প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর


গো নিউজ২৪ | অনলাইন ডেস্ক প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১০, ২০১৬, ০৮:৩০ এএম আপডেট: ডিসেম্বর ১২, ২০১৬, ০৬:১২ এএম
৩ কারণে স্থগিত প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর

পিছিয়ে গেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর। ১৮ ডিসেম্বর থেকে নির্ধারিত দুইদিনের দ্বিপক্ষীয় এ সফরটি পিছিয়ে আগামী জানুয়ারির শেষে বা ফেব্রয়ারিতে আয়োজনের জন্য বৃহস্পতিবার ভারতকে অনুরোধ করেছে বাংলাদেশ। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। এদিকে হুট করে প্রধানমন্ত্রীর সফরটি স্থগিত করে তা পিছিয়ে দেওয়ার অনুরোধ জানানোর বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বা সরকারের শীর্ষমহল কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে সরকার ঘনিষ্ঠ একাধিক সূত্রের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অন্তত তিনটি কারণকে এ সফর পেছানোর ব্যাপারে বিবেচনায় নিয়েছে বাংলাদেশ। এর সবগুলোই ভারতের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতিকেন্দ্রিক।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র ও আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের তিন জন নেতা জানিয়েছেন, ভারতে ‘আম্মা’ বলে খ্যাত রাজনীতিবিদ জয়ললিতার মৃত্যুকে ঘিরে দেশটির বিরাজমান পরিস্থিতি, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সম্ভাব্য চীন সফর, মুদ্রানীতি নিয়ে দেশটির বিরাজমান অস্থির পরিস্থিতির কারণেই মূলত পূর্ব নির্ধারিত সময়ে সফরের ব্যাপারে আগ্রহী হননি প্রধানমন্ত্রী। আর তাই, দুই দেশের পররাষ্ট্র কর্মকর্তাদের সম্মতিতে গুরুত্বপূর্ণ এ সফর স্থগিত করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ঘনিষ্ঠ ওই সূত্র আরও জানায়, ভারত সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হচ্ছে তিস্তার পানি বণ্টনের সমাধান। কিন্তু, মুদ্রা বাতিল ইস্যুতে এ মুহূর্তে ভারতের রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থির। বিশেষ করে, তিস্তার পানিচুক্তির ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর সম্মতির প্রয়োজন রয়েছে, কিন্তু দেশটিতে ৫০০ ও এক হাজার টাকার নোট বাতিল নিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদির সিদ্ধান্তকে মোটেও ভালোভাবে নেননি মমতা, উল্টো এ ইস্যুতে মাঠ গরম করার চেষ্টা করছেন তিনি। ফলে দেশটির বিরাজমান পরিস্থিতিতে তিস্তা নিয়ে আলোচনা সন্তোষজনক পর্যায়ে যায়নি। তাই বর্তমান পরিস্থিতিকে তিস্তার পানির হিস্যা আদায়ের জন্য অনুকূল ভাবছে না সরকার।

এদিকে, কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, ভারত এখন বেশি ব্যস্ত দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির চীন সফর নিয়ে। তাই এই মুহূর্তে চীনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বিষয়গুলো নিয়েই বেশি মনোযোগী দেশটির সরকার। এর ফলে তিস্তার পানিকেন্দ্রিক আলোচনায় ভাটা পড়েছে। সঠিক মনোযোগ না পাওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে। তাই এ সফর নিয়ে কিছুটা দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ছিল বাংলাদেশেরও। এরই মধ্যে ভারতও সফর পিছিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করায় সুযোগ লুফে নিয়েছে বাংলাদেশ।

তবে এই সফর স্থগিতের বিষয়ে সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে আনুষ্ঠানিক কোনও কারণ দেখানো হয়নি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম বলেন, ভারত সফর স্থগিতের বিষয়ে এখনও আমরা কিছু জানি না। আমাদের কাছে কোনও তথ্য নাই।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও তার মন্ত্রণালয়ের কোনও কর্মকর্তাও কারণ ব্যাখ্যা করতে রাজি হননি। এমনকি সরকারি দলের নেতারাও এ বিষয়ে কথা বলতে চাননি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবউল আলম হানিফ শুধু বলেন, ‘সফর স্থগিত হওয়ার কারণ আমার জানা নাই।’

উল্লেখ্য, ২০১১ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং এর ঢাকা সফরের সময়ে তিস্তা চুক্তি স্বাক্ষরের কথা ছিল। কিন্তু, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর চরম বিরোধিতার কারণে তখন এ চুক্তি করা সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে অবশ্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতাগ্রহণের পর বাংলাদেশ সফরে এলে তার সফরসঙ্গী হন মমতা। সে সময় এ চুক্তির ব্যাপারে ইতিবাচক কথা শুনিয়েছিলেন তিনি।

এদিকে, সরকারি দলের নেতাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে তিস্তা নিয়ে একটি গ্রহণযোগ্য সমাধানের আশায় আছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার। তিস্তার পানির হিস্যা আদায়কে নির্বাচনের আগে ‘র্টানিং পয়েন্ট’ হিসেবেই দেখা হচ্ছে। তবে, সফরটি পিছিয়ে গেলেও বিষয়টিকে তেমন ক্ষতিকর কিছু ভাবা হচ্ছে না। সরকারের কূটনৈতিক একটি সূত্র জানিয়েছে, দুই দেশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর কিছুদিনের জন্য পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে, একেবারে তা বাতিল করা হয়নি। এই পেছানোটা সম্পর্কের টানাপড়েনেও নয়।

নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে হাঙ্গেরিতে অনুষ্ঠিত পানি সম্মেলনে যোগ দিয়ে ফেরার পর থেকেই প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর আলোচনায় উঠে আসে। সম্প্রতি পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী সংবাদ সম্মেলন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর এই সফর দুই দেশের মধ্যে অমীমাংসিত সমস্যা সমাধানে নতুন দিক উন্মোচন করবে। গত শনিবার প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনে তিস্তা চুক্তির সম্ভাবনা নিয়ে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে জবাবে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ এ বিষয়ে প্রস্তুত। এখন বিষয়টি ভারতের ওপরও নির্ভর করছে।’

উল্লেখ্য, প্রতিবেশী দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে আগামী ১৮ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে যাওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। দুই দিনের এ সফরে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে পানি সহযোগিতার ওপর জোর দেওয়া হয়েছিল।

অন্যদিকে, ভারত জোর দিয়েছিল নিরাপত্তা, সামরিক ও সন্ত্রাসবাদ সহযোগিতার ওপর। কূটনৈতিক সূত্রগুলি জানায়, দুইদেশের মধ্যে চুক্তি, এজেন্ডা, প্রকল্প ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলোচনা বহুদূর এগিয়েছেও। এবারের সফরে নতুন বিষয় হিসেবে নিউক্লিয়ার, স্পেস, স্যাটেলাইট, বাণিজ্য সহযোগিতাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ২০টির বেশি চুক্তি এবং সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হওয়ার কথা ছিল। নিরাপত্তা ও সামরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য একটি রূপরেখা কাঠামোর বিষয়ে দুই পক্ষের ভেতরে আলোচনা হওয়ারও কথা ছিল। এছাড়া লাইন অফ ক্রেডিট ফরম্যাটের বদলে প্রকল্পভিত্তিক সহায়তার আওতায় ভারত বিভিন্ন প্রকল্পে অর্থায়নের আভাস দিয়েছিল। এ কারণেই শেখ হাসিনার ভারত সফর গুরুত্ব বহন করছে। সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন

 

গো নিউজ২৪/জা আ 

জাতীয় বিভাগের আরো খবর
টয়লেটসহ একাধিক সুবিধা নিয়ে দেশে আসছে ছাদখোলা দোতলা ট্যুরিস্ট বাস

টয়লেটসহ একাধিক সুবিধা নিয়ে দেশে আসছে ছাদখোলা দোতলা ট্যুরিস্ট বাস

‘রপ্তানিযোগ্য হারবাল প্রডাক্টের উৎপাদন প্রক্রিয়া ও মান উন্নয়ন’ প্রশিক্ষণ কর্মশালা

‘রপ্তানিযোগ্য হারবাল প্রডাক্টের উৎপাদন প্রক্রিয়া ও মান উন্নয়ন’ প্রশিক্ষণ কর্মশালা

পাঠ্যবইয়ের সংশোধনসহ সচিবদের একগুচ্ছ নির্দেশনা দিলেন প্রধানমন্ত্রী

পাঠ্যবইয়ের সংশোধনসহ সচিবদের একগুচ্ছ নির্দেশনা দিলেন প্রধানমন্ত্রী

শাহজালাল বিমানবন্দরে মাসুদের কাছে পাওয়া গেল ৩ কেজি সোনা

শাহজালাল বিমানবন্দরে মাসুদের কাছে পাওয়া গেল ৩ কেজি সোনা

ইজতেমায় এক বদনা পানি ১০ টাকা!

ইজতেমায় এক বদনা পানি ১০ টাকা!

হজে যাওয়ার মানুষ পাওয়া যাচ্ছে না, দফায় দফায় সময় বাড়াচ্ছে মন্ত্রণালয়

হজে যাওয়ার মানুষ পাওয়া যাচ্ছে না, দফায় দফায় সময় বাড়াচ্ছে মন্ত্রণালয়