ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

২ হাজার, ৫ হাজার ও ১০ হাজার করে কতবার দিয়েছি, তবুও...


গো নিউজ২৪ | চাঁদপুর প্রতিনিধি প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৪, ২০১৭, ০৬:১৩ পিএম আপডেট: সেপ্টেম্বর ২৪, ২০১৭, ১২:১৯ পিএম
২ হাজার, ৫ হাজার ও ১০ হাজার করে কতবার দিয়েছি, তবুও...

দুই মাসের শিশুকে নিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন স্বজনেরা

চাঁদপুর: হাজীগঞ্জে যৌতুকের কারণে নির্যাতনে এক গৃহবধূকে হত্যা করেছেন স্বামী। এ ঘটনার পর থেকে স্বামী পলাতক রয়েছেন। হাজীগঞ্জ পৌরসভাধীন ১১নং ওয়ার্ড রান্ধুনীমূড়া গ্রামের দেওয়ান আলী বেপারী বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।

শনিবার রাতে ও রোববার ভোরে যৌতুকের দাবিতে স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস সুনিয়া (১৯) কে নির্যাতন করে স্বামী রায়হান হোসেন রানা (২৫)। এরপর মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে সুনিয়া। 

মৃত্যুর পর তার মরদেহ বসতঘরে টানিয়ে আত্মহত্যা খবর প্রচার করে স্বামী রানা পালিয়ে যায়। সংবাদকর্মীদের কাছে এমনটিই অভিযোগ করেছেন সুনিয়ার মা পারুল বেগম।

রায়হান হোসেন রানা পৌরসভাধীন ১১নং ওয়ার্ড রান্ধুনীমূড়া গ্রামের দেওয়ান আলী বেপারী বাড়ির বিল্লাল হোসেনের ছেলে। রানা স্ত্রী সুনিয়া ৫নং হাজীগঞ্জ সদর ইউনিয়নের তাজ্জদি মিজি বাড়ির রফিকুল ইসলামের মেয়ে। তাদের দু’মাস বয়সী জোবায়ের আহমেদ নামের একটি শিশু সন্তান রয়েছে। 

জানা যায়, রানার পিতা মো. বিল্লাল হোসেন ও রানার বড় ভাই মাসুদ, ছোট ভাই শাওন মাদক সেবন ও ব্যবসার সাথে জড়িত। এমনকি তাদের বাড়ির অধিকাংশ পুরুষ মাদক সেবন ও ব্যবসার সাথে জড়িত বলে স্থানীয় সূত্রে জানা যায়।

রোববার (২৪ সেপ্টেম্বর) সকাল ১১টায় হাজীগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক বলাই চন্দ্র দেবনাথ জান্নাতুল ফেরদাউস সুনিয়ার মরদেহ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসেন। এ ঘটনায় হত্যা মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে নিহতের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়। 

নিহতের মা পারুল বেগম জানান, সুনিয়াকে দেড় বছর আগে বিয়ে দেই রায়হান হোসেন রানার সাথে। আমি একটি সংসারে জন্য স্বর্ণালংকার, তৈজসপত্র, আসবাবপত্রসহ যা-যা প্রয়োজন সবকিছু জামাই রানাকে দিয়েছি। বিয়ের কিছুদিন পর থেকে আমার মেয়ের উপর যৌতুকের দাবিতে নির্যাতন শুরু করে রানা। 

আমি ২ হাজার, ৫ হাজার ও ১০ হাজার টাকা করে কতবার দিয়েছি তার হিসেব নেই। এ নিয়ে বেশ কয়েকবার পারিবারিকভাবে সালিস বৈঠক হয়। সর্বশেষ রানা ও তার পরিবার সিএনজি চালিত স্কুটার কিনে দেয়ার জন্য সুনিয়াকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন শুরু করে। আমি মেয়ের সুখের কথা ভেবে স্কুটার কেনার জন্য তাদের ২ লাখ টাকা দেই।

তিনি আরো জানান, গত ৩ মাস আগে রানা ৫ লাখ টাকা দিয়ে সিএনজি কিনেছে বলে আমাদের জানায়। আমরাতো ২ লাখ টাকা দিয়েছি, বাকি ৩ লাখ টাকার জন্য সুনিয়াকে জামাই রানা ও তার শ্বশুর, ভাসুর, দেবর মিলে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে। ইতোমধ্যে সিজারে আমার নাতি জোবায়ের দুনিয়াতে আসে। আমরা মেয়ের চিকিৎসা খরচ বাবদ রানাকে ৫০ হাজার টাকা দিয়েছি। তারা ১ মাস আগে আবারো ৩ লাখ টাকা দেয়ার জন্য সুনিয়াকে নির্যাতন করে।

মারধর করার পর আমি সুনিয়াকে আমাদের বাড়িতে নিয়ে যাই। সেখানে ১৫ দিন থাকার পর ২২ সেপ্টেম্বর শুক্রবার রানা আমাদের বাড়িতে যায় সোনিয়াকে আনার জন্য। আর এমন করবে না বলেও জানায়। তারপর আমি সুনিয়াকে যেতে দেই। সাথে আমার ছোট মেয়ে খাদিজা আক্তারকে (৮) বেড়াতে দেই। 

শুক্রবার রাতে সুনিয়াকে আনার পর শনিবার রাতে রানা আবারো আবার নির্যাতন শুরু করে। রোববার সকালেও নির্যাতন করে। নির্যাতনের এক পর্যায়ে সুনিয়া নিস্তেজ হয়ে পড়ে। তাদের বাড়িতে থাকা ছোটে মেয়ে খাদিজা কাঁদতে-কাঁদতে হাজীগঞ্জ বাজারে আমার বোনের মেয়ের বাসায় চলে আসে এবং বিষয়টি আমাদের জানায়। তারপর আমি ছুটে গিয়ে দেখি আমার মেয়ে বেঁচে নেই। তারা শ্বাসরোধ করে হত্যা করে খাটের উপর ফেলে রাখে তারা।

এ বিষয়ে স্থানীয় পৌর কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র-২ মো. শুকু মিয়া জানান, তদন্তে যদি তারা দোষী হয়ে থাকে, তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।

সুরতহাল রিপোর্টকারী উপ-পরিদর্শক বলাই চন্দ্র দেবনাথ জানান, নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে এসেছি।

হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচাজ (ওসি) মোহাং জাবেদুল ইসলাম জানান, নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। আমরা আইন অনুযায়ী ব্যবস্থাগ্রহণ করবো। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ময়নাতদন্ত রিপোর্ট হাতে এলে নিহতের কারণ জানা যাবে।

উল্লেখ্য, গত ২২ সেপ্টেম্বর কালচোঁ দক্ষিণ ইউনিয়নের স্থানীয় সৈয়দপুর গ্রামের সর্দার বাড়িতে মাদক ব্যবসায়ী স্বামীর হাতেও এক গৃহবধূ খুন হয়েছে।

গোনিউজ২৪/পিআর

দেশজুড়ে বিভাগের আরো খবর
মানুষের বিশ্বাসকে পুঁজি করে কোটি টাকা নিয়ে পালালো ডাচ-বাংলা ব্যাংকের এজেন্ট

মানুষের বিশ্বাসকে পুঁজি করে কোটি টাকা নিয়ে পালালো ডাচ-বাংলা ব্যাংকের এজেন্ট

দিনের শুরুতেই বিআরটিসি বাসের চাপায় নিহত ৪ 

দিনের শুরুতেই বিআরটিসি বাসের চাপায় নিহত ৪ 

ধারের টাকা দিতে না পারায় বন্ধুর স্ত্রীকে বিয়ে

ধারের টাকা দিতে না পারায় বন্ধুর স্ত্রীকে বিয়ে

বোমাটি বিস্ফোরিত হলে বাসের সবাই মারা যেতেন

বোমাটি বিস্ফোরিত হলে বাসের সবাই মারা যেতেন

রেললাইনে বোমা বিস্ফোরণের চেষ্টা, হাতেনাতে আটক ৩

রেললাইনে বোমা বিস্ফোরণের চেষ্টা, হাতেনাতে আটক ৩

হাতকড়া পরা অবস্থায় বাবার জানাজায় বিএনপি নেতা

হাতকড়া পরা অবস্থায় বাবার জানাজায় বিএনপি নেতা