ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

১০ হাজার মণ শুঁটকি, বিক্রির টার্গেট ১৪ কোটি টাকা


গো নিউজ২৪ | জেলা প্রতিনিধি প্রকাশিত: নভেম্বর ৭, ২০১৭, ০১:৫২ পিএম আপডেট: নভেম্বর ৭, ২০১৭, ০৭:৫২ এএম
১০ হাজার মণ শুঁটকি, বিক্রির টার্গেট ১৪ কোটি টাকা

পাবনা: পাবনার চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া উপজেলাসহ চলনবিল অঞ্চলে শুরু হয়েছে শুঁটকি মাছের মৌসুম। চলনবিল এবং উপজেলার বিভিন্ন নদীর পাড় দিয়ে অর্ধশতাধিক শুঁটকি চাতাল বসেছে। বিল থেকে ছোট মাছ ধরে পাড়ে বা উঁচু স্থানে নিয়ে আসে। পরে শুঁটকি মাছের চাতালে নিয়ে মাছ শুকানো হয়। জেলার চলনবিল অঞ্চলের এসব শুঁটকি চাতাল থেকে চলতি বছর প্রায় ১০ হাজার মণ শুঁটকি প্রায় ১৪ কোটি টাকায় বিক্রির সম্ভাবনা রয়েছে।

চলনবিল অঞ্চলের বিভিন্ন শুঁটকি চাতাল মালিক ও শ্রমিকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এক সময় দেশের এই বৃহত্তম বিল চলনবিল ছিল ছোট মাছ থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রজাতির মাছের অভয়ারণ্য। আর এ কারণে অনেক বছর আগে থেকেই এ অঞ্চলে মাছ শুকানো হয়ে থাকে। এ জন্য চলনবিল অঞ্চলে গড়ে উঠেছে অর্ধশতাধিক শুঁটকির চাতাল। বর্ষা মৌসুম শেষ হলে এবং বিলের পানি কমতে থাকলে জেলেরা মাছ শিকার করে বাজারে বিক্রির পাশাপাশি শুঁটকির চাতালে মাছ দিয়ে থাকে।

চাতাল মালিকরা জানায়, আশ্বিন থেকে ফাল্গুন মাস পর্যন্ত এই ৬ মাস মাছ শুকানোর কাজ চলে। আশ্বিন মাসে সীমিত আকারে কাজ হয়। এসময় কখনো কখনো বৃষ্টির কারণে মাছ শুকানো ব্যাহত হয়। চলনবিল ও নদী থেকে পুঁটি, খলসে, চাঁদা, বেলে, টাকি, সোল, গুঁচি, টেংড়াসহ নানা প্রজাতির মাছ শিকার করে শোকানো হয়ে থাকে। এসব শুঁটকি মাছ সৈয়দপুর, নীলফামারিসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্রি হয়ে থাকে।

ভাঙ্গুড়া উপজেলার ঝিকলকতি এলাকার চাতাল শ্রমিক মো. জমির শেখ জানান, রোদের ভালো তাপ থাকলে এক খরা মাছ শুকাতে ৩ থেকে ৪ দিন সময় লাগে। ৩ থেকে সাড়ে ৩ মণ মাছ শুকিয়ে ১ মন শুঁটকি হয়ে থাকে। এই মাছ শুকানোর কাজে শুধুমাত্র লবণ ব্যবহার করা হয়। কোনো প্রকার মেডিসিন দেওয়ার প্রয়োজন হয় না।

ভাঙ্গুড়া উপজেলার গুমানী নদীর পাড়ের চাতাল মালিক দুলাল উদ্দিন জানান, তার দুইটি চাতাল রয়েছে। এবছর আড়াই থেকে ৪শ মণ শুঁটকি প্রস্তুতির পরিকল্পনা রয়েছে। মাছের আকার ও প্রকার ভেদে প্রতি মণ শুঁটকি ২ হাজার ৪শ টাকা থেকে ১৪ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়ে থাকে।

চাটমোহর এলাকার কয়েকজন শুঁটকি প্রস্তুতকারী জানায়, বিভিন্ন মাছের আড়ত থেকে ৮০০ টাকা থেকে ৪ হাজার টাকা মণ দরে কাঁচা মাছ কিনতে হয়। এলাকায় মাছের দাম বেশি এবং সৈয়দপুর, নীলফামারীসহ অন্যান্য শুঁটকির আড়তে দাম কম হওয়ায় বর্তমানে লাভ কম হচ্ছে। তাছাড়া শ্রমিকদের মজুরি ও খাবার খরচ বেড়ে গেছে। নারী শ্রমিক কম মজুরিতে পাওয়া যায় বলে নারী শ্রমিকের সংখ্যাই বেশি।

পাবনা জেলার চাটমোহর উপজেলার চলনবিল পাড়ের মহিষলুটি এলাকায় শুঁটকি চাতাল শ্রমিক সাঁকোয়া দিঘী গ্রামের নারী পাতনী নেছা জানান, প্রতিদিনই কাজ করেন মোফাজ্জলের শুঁটকি চাতালে। পেটের খাবার, ওষুধ পত্র, কাপড় চোপরের যোগান দেওয়ার জন্যই প্রায় ২৫ বছর যাবত বছরের ৬ মাস কাজ করেন শুঁটকি চাতালে। শুঁটকির চাতালে কাজ শুরু হয় খুব ভোরে। সন্ধ্যা পর্যন্ত মাছ শুকানোর কাজে ব্যস্ত সময় কাটাতে হয়। বিনিময়ে প্রতিদিনের পারিশ্রমিক বাবদ মালিক তাকে একশ টাকা দেন। পাশাপাশি পুরুষ শ্রমিকরা একই কাজ করে প্রতি দিন মজুরি পান তিনশত টাকা। 

প্রতিদিন চলনবিলের চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া, তাড়াশ, সিংড়া, গুরুদাসপুর উপজেলার অর্ধশতাধিক চাতালে কাজ করেন প্রায় ২ শতাধিক নারী শ্রমিক। কম মজুরিতে বেশি কাজ করা যায় জন্য শুঁটকি চাতাল মালিকরা নারী শ্রমিকদের বেশি কাজে লাগান। পুরুষ শ্রমিকরা বিল থেকে মাছ শিকার করেন আর নারী শ্রমিকরা মাছ বাছাই এবং শুকানোর কাজ করে থাকেন।

নারী শ্রমিকরা আরও জানান, প্রতিদিন রান্না থেকে শুরু করে মাছ বাছাই আর শুকানোর কাজ করেন। অথচ মজুরি পান একবারেই কম। একজন পুরুষ শ্রমিককে প্রতিদিনের মজুরি ৩শ টাকা দেয়া হলেও নারী শ্রমিককে দেয়া হয় মাত্র একশ টাকা। এ নিয়ে অভিযোগের অন্ত নেই নারী শ্রমিকদের। কিন্তু কে শোনে কার কথা। অন্য কাজ না থাকায় বাধ্য হয়ে তারা এসময় কাজ করেন শুঁটকির চাতালে। 

গোনিউজ২৪/এমবি

অর্থনীতি বিভাগের আরো খবর
৫৯৫ টাকা কেজি দরে দিনে ১ কোটি টাকার গরুর মাংস বিক্রি করেন খলিল

৫৯৫ টাকা কেজি দরে দিনে ১ কোটি টাকার গরুর মাংস বিক্রি করেন খলিল

১৪ বছর আগে একীভূত হয়েও এখনো ধুঁকছে যে ব্যাংক

১৪ বছর আগে একীভূত হয়েও এখনো ধুঁকছে যে ব্যাংক

রেড জোনে থাকা ‘বেসিক ব্যাংক’ যাবে কার সঙ্গে?

রেড জোনে থাকা ‘বেসিক ব্যাংক’ যাবে কার সঙ্গে?

বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছে গেছে বিদেশি ঋণ, পরিশোধ হবে যেভাবে

বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছে গেছে বিদেশি ঋণ, পরিশোধ হবে যেভাবে

৫ বছর মেয়াদি সুকুক বন্ড বাজারে ছাড়ার উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে সরকার

৫ বছর মেয়াদি সুকুক বন্ড বাজারে ছাড়ার উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে সরকার

বেসিক ব্যাংক কি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে?

বেসিক ব্যাংক কি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে?