নারায়ণগঞ্জ: জেলার বন্দরে শ্বশুর-শাশুড়ি মিলে সোনিয়া (৩৩) নামে এক পুত্রবধূকে নির্যাতন করেছেন। আর এই দৃশ্য ভিডিও করেছেন সোনিয়ার স্বামী আ. রহমান (৩৫)। সম্প্রতি তিনি ভিডিওটি ফেসবুকে আপলোড করলে মুহূর্তের মধ্যেই সেটি নিয়ে এলাকার মধ্যে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।
বৃহস্পতিবার (২৪ আগস্ট) সকালে ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া নির্যাতনের সেই ভিডিওটি দেখে সোনিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা যায়, ভিডিওটি চলতি বছরের ১০ এপ্রিল তারিখের। কিন্তু সম্প্রতি ভিডিওটি ফেসবুকে আপলোড করা হয়। এ নিয়ে পুরো শহরে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে।
সোনিয়া বলেন, ‘আমার স্বামী ও তার বড় ভাই মিলে শ্বশুরের মোদি দোকান দেখাশোনা করত। কিন্তু তাতে মালামাল উঠানোর জন্য টাকার প্রয়োজন হয়। এতে করে এ বছরের শুরুর দিকে শ্বশুর বাড়ির লোকজন আমার কাছে ৫ লাখ টাকা দাবি করে। কিন্তু আমার বাবার বাড়ির লোকেরা টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানায়। এ কারণে তারা প্রায়ই আমর ওপর নির্যাতন চালাত। এরপরেও সব কিছু সহ্য করে ওই সংসারে আমি থাকতাম। কিন্তু গত ১০ এপ্রিল রাতে আমার জা আমাকে ডেকে নিয়ে যায়। এরপর আমার শ্বশুর-শাশুড়িসহ অন্যরা আমাকে বলে, তোমার স্বামীর টাকা লাগবে। তুমি টাকা এনে দাও। টাকা চেয়ে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে আমাকে ওই পরিবারের সবাই মিলে অকথ্য ভাষায় গালাগালসহ মারধর করে। এ সময় আমার স্বামী নির্যাতনের দৃশ্য ভিডিও করে।’
এ ঘটনার পর থেকে সোনিয়া তার দু বছরের একমাত্র ছেলে সন্তানকে নিয়ে মাসদাইর এলাকায় তার বাবার সাথে বসবাস করছে। তার শ্বশুরবাড়ি নারায়ণগঞ্জ বন্দর উপজেলার রাজবাড়ী এলাকায়।
এদিকে নির্যাতিত সোনিয়া এ ঘটনায় আদালতে দুটি মামলা দায়ের করেন। যৌতুকের অভিযোগে ১৯ এপ্রিল আদালতে এ মামলা দায়ের করা হয়। এরপর সেই মাসে নারী ও শিশু নির্যাতনের আরেকটি মামলা তাদের বিরুদ্ধে করা হয়। এসব মামলায় স্বামী রহমান পলাতক থাকলেও বাকিরা জামিনের আছেন। তাই রহমানের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট ইস্যু হয়েছে।
মামলার আসামিরা হলেন- সোনিয়ার স্বামী মো. আ. রহমান, ভাশুর ইব্রাহিম খলিল, শাশুড়ি রাহিমা খাতুন, শ্বশুর আ. রশিদ, ননদ রেহেনা বেগম।
সোনিয়ার শ্বশুর আব্দুর রসিদ বলেন, ‘আমার ছেলের বউ সোনিয়া নানা অযুহাতে ঝগড়া করত। আমার মেয়ের ঘরের নাতি-নাতনিদের একেবারে সহ্য করতে পারতো না। তাই আমার ছেলে আ. রহমান তার স্ত্রীকে নিয়ে এই বাড়ির দ্বিতীয় তলায় আলাদা থাকত। তবে খাওয়া-দাওয়া আমাদের সাথেই করত। কারণ আমার ছেলে কোনো কাজকর্ম করত না।’
তিনি বলেন, ‘আমার একটি জমি রহমানকে লিখে দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু পরবর্তীতে তা আর দেইনি। সেটি অন্যত্র বিক্রি করে দেই। তাই রহমান একদিন তার স্ত্রীকে খবর দিয়ে বাপের বাড়ি থেকে ডেকে আনে। তখন সোনিয়া রহমানের মায়ের কাছে সেই জমির টাকা দাবি করে অকথ্য ভাষায় গালগাল করতে থাকে। এর এক পর্যায়ে আমি সামনে যেতে সে আমার পাঞ্জাবির কালার আকড়ে ধরে। ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে আমার পাঞ্জাবিটি ছিড়ে ফেলে। এ দেখে রমহানের মা এগিয়ে আসলে তাকে জুতো দিয়ে কয়েকবার আঘাত করে। এরপর রহমানের মা তাকে মারধর করে। এ সময় আমার ছেলে রহমান দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তা ভিডিও করে। তখন এতো কিছু বুঝিনি। কিন্তু এখন বুঝতে পেরেছি আমার পুত্রবধূর প্ররোচনায় রহমান নাটকীয়তার মধ্য দিয়ে ভিডিও করে আমাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ভিডিওতে পুরো ঘটনাটি ফেসবুকে আপলোড হয়নি, আংশিক হয়েছে। ওদের যতটুকু দরকার ততটুকু আপলোড করা হয়েছে। এরপর নাটক করে আমাদের সকলের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করলেও স্বামীকে জামিনে ছাড়িয়ে নিয়ে পালিয়ে থাকতে বলে।’
শাশুড়ি রাহিমা খাতুন বলেন, ‘আমাদের সংসারে কোনো অভাব নেই। শুধুমাত্র আমাদের কাছ থেকে টাকা খসিয়ে নেয়ার জন্যই স্বামী-স্ত্রী নাটক করে এতো কিছু করেছে। যদি নাটক না হতো তাহলে স্ত্রীর পক্ষ হয়ে স্বামী কেন ভিডিও করবে, তাও বাবা-মায়ের বিরুদ্ধে গিয়ে। এরপর সোনিয়া মামলা শক্ত করার জন্য আমার ছেলেসহ পরিবারের সবার নামে মামলা করলেও পরবর্তীতে কেন স্বামীকে ছাড়িয়ে আনল এবং তাকে পালিয়ে থাকতে বলল। এগুলো সব কিছু ওদের নাটক।’
গো নিউজ২৪/এমবি