ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সারা বিশ্বে যে ৭টি পরিবর্তন আনলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প


গো নিউজ২৪ | আন্তর্জাতিক ডেস্ক প্রকাশিত: এপ্রিল ২৬, ২০১৭, ০৩:২৮ পিএম আপডেট: এপ্রিল ২৬, ২০১৭, ০৯:২৮ এএম
সারা বিশ্বে যে ৭টি পরিবর্তন আনলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প

ডোনাল্ড ট্রাম্প

মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প হোয়াইট হাউজে প্রবেশের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বাকি বিশ্বের সম্পর্ক অনেক ভাবেই বদলে গেছে।  উত্তর কোরিয়া থেকে শুরু করে রাশিয়া, ইরান, ন্যাটো এবং নিজেদের সামরিক শক্তি কোন দিক বাকি নেই।

এখানে তার সাতটি উল্লেখ করা হচ্ছে:

১. এশিয়ায় পারমানবিক উত্তেজনা উশকে দেয়া
ডোনাল্ড ট্রাম্পের শাসন বড় ধরনের নিরাপত্তার প্রশ্ন তৈরি করেছে এশিয়ায়। শপথের আগেই তাইওয়ানের প্রসঙ্গে তার মন্তব্যই শুধু চীনকে হতবাক করেনি, দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের তৈরি দ্বীপে তার প্রবেশ আটকে দেয়ার হুমকি দিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসনও। উত্তর কোরিয়ার বিষয়ে ওবামা প্রশাসনের নীতি ছিল "কৌশলগত সহনশীলতা" প্রদর্শন। কিন্তু ট্রাম্পের ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স বলেছেন, "কৌশলগত সহনশীলতা বা ধৈর্যের যুগের অবসান'' ঘটেছে।

ডোনাল্ড ট্রাম্প কিভাবে কিম জং আনকে মোকাবেলা করবেন -সেটাই দেখার বিষয়। তবে অনিশ্চিত কর্মকাণ্ড-সর্বস্ব এই মার্কিন রাষ্ট্রপ্রধান তার প্রাথমিক দিনগুলোতে যেসব কাজ করলেন, তাতে আগামী বছরগুলোতে এশিয়ায় পারমানবিক উত্তেজনা যে বাড়তে যাচ্ছে তা অনুমেয়।

২. রাশিয়ার সাথে সম্পর্কে আরও জটিলতা বৃদ্ধি
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারের সময় ট্রাম্প রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে একজন দক্ষ নেতা হিসেবে প্রশংসা করেছিলেন। তার সাথে সুসম্পর্ক রাখতে চান বলেও তখন জানিয়েছিলেন।

রাশিয়ার অ্যাম্বাসেডরের সাথে আলাপের সূত্র ধরে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইকেল ফ্লিন আকস্মিক পদত্যাগ করলে ট্রাম্প প্রশাসনের সাথে রাশিয়ার সম্পর্ককে ঘিরে উদ্বেগের বিষয়টি চলতে থাকে।

ট্রাম্প বলেছিলেন পুতিনের ওপর বিশ্বাস রাখতে চান তিনি। কিন্তু "তা হয়তো দীর্ঘস্থায়ী হবে না" সতর্ক করেন তিনি। তবে তা আর হয়নি। বরং সিরিয়ায় রাসায়নিক হামলার ঘটনাকে ঘিরে সম্পর্কের আরও অবনতি হয়েছে। এই হামলার জন্য মার্কিন কর্তৃপক্ষ সিরিয়ার সরকারকে দোষারোপ করে আসলেও, রাশিয়া অব্যাহত-ভাবে বাশার আল আসাদের প্রতি সমর্থন দিয়ে আসছে। দুদেশের সম্পর্ক ভালো হলে সেটা জাতির জন্য 'দারুণ ব্যাপার' হতো বলে উল্লেখ করলেও, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন "ঘটছে তার বিপরীত"।

৩. নেটোর দিকে অধিক মনোযোগ
আগে নেটোর প্রতি সমালোচক মনোভাব ছিল ট্রাম্পের। তিনি এই সংগঠনকে সেকেলে বলেও আক্রমণ করেছেন। প্রতিরক্ষা মন্ত্রী জেমস মাতিস ফেব্রুয়ারি মাসে নেটোর সদস্যদের সতর্ক করে বলেন, সদস্য দেশগুলো যদি ট্রাম্পের চাহিদা মোতাবেক জিডিপির ২% প্রতিরক্ষা খাতে খরচ করতে না পারে তাহলে ওয়াশিংটন তার প্রতিশ্রুতি মোতাবেক ব্যবস্থা নেবে।

তবে নেটোর প্রতি মনোযোগী হওয়ায় মার্কিন প্রেসিডেন্টকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন নেটোর প্রধান জেনস স্টোলটেনবার্গ।  ট্রাম্পও তার মনোভাব বদলে ফেলেন এবং বলেন, নেটো আর প্রাচীন বা সেকেলে প্রতিষ্ঠান নেই। সন্ত্রাসের হুমকির প্রেক্ষাপটে এই জোটের গুরুত্ব রয়েছে এবং ইরাকি এবং আফগান শরিকদের আরও সহায়তা দেয়ার জন্য জোটের সদস্যদের প্রতি তিনি আহ্বান জানান।

৪. সামরিক শক্তির ব্যবহার
ইরাক ও আফগানিস্তানে যুদ্ধ বন্ধ এবং মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে সংঘাতে না জড়ানোর প্রত্যাশায় বারাক ওবামাকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচন করা হয়েছিল। এমনকি সিরিয়ায় নৃশংসতার মাত্রা যখন চরম রূপ নিয়েছিল তখনও তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন, যেকোনো সামরিক হস্তক্ষেপের জন্য ব্যাপক মাশুল দিতে হবে।

ওবামা প্রশাসন মানবিক সহায়তা প্রদান, বিদ্রোহীদের পরিবর্তনের জন্য অর্থ প্রদান, যুদ্ধবিরতির চেষ্টা এবং প্রেসিডেন্ট আসাদকে অপসারণের জন্য রাজনৈতিক মধ্যস্থতার দিকে মনোযোগী হয়েছে।

ডোনাল্ড ট্রাম্পও এর আগে সিরিয়ায় মার্কিন সামরিক অভিযানের ব্যাপারে বিরোধী ছিলেন। ২০১৩ সালে তিনি টুইটারে লেখেন, "সিরিয়ার কথা ভুলে যান, আমেরিকাকে আবার শ্রেষ্ঠ করে তুলুন"।

এরপর সম্পূর্ণ বিপরীত অবস্থান নিয়ে তিনি এপ্রিলে সিরিয়ায় সরকারি বিমানঘাঁটিতে মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র হামলার নির্দেশ দিলেন । এটাই প্রথম সিরিয়ায় সংঘাত শুরুর পর সরাসরি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে সিরিয়া লক্ষ্য করে মিসাইল হামলা।  অল্প সময়ের ব্যবধানে আফগানিস্তানে মাদার অফ অল বোম্বস নিক্ষেপ করে আবারও বিশ্বের সামনে নিজের সামরিক শক্তির পরিচয় দিল আমেরিকা।

৫. মুক্ত বাণিজ্যের সম্ভাবনার পথে অনিশ্চয়তা
বহু দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্র বাকি বিশ্বের সাথে যেভাবে বাণিজ্য পরিচালনা করছে তার সাতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য-নীতি। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কর্মহীনতার অজুহাতে বর্তমানে চলছে এমন অনেকগুলো বাণিজ্য চুক্তি বাতিল করে দেয়ার হুমকি দিয়েছেন ।

বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা থেকেও আমেরিকাকে প্রত্যাহার করে নেয়ারও চিন্তাভাবনা রয়েছে তার। তিনি প্রথম কর্ম-দিবসেই ১২-জাতির বাণিজ্য জোট ট্রান্স-প্যাসিফিক পার্টনারশিপ টিপিপি বাতিল করেন। তিনি চীনের বিরুদ্ধে মুদ্রা কারসাজিরও অভিযোগ তুলে নেতিবাচক প্রচার চালাচ্ছেন। তবে বিশ্লেষকদের আশঙ্কা এটা এক ধরনের 'বাণিজ্য যুদ্ধ' ডেকে আনতে পারে। সমালোচকদের আশঙ্কা ট্রাম্পের অবস্থান বিশ্বে উষ্ণায়ণ কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে অনিচ্ছুক দেশগুলোকে আরও সুযোগ দেবে।

৬. জলবায়ু পরিবর্তন প্রসঙ্গ পুনর্বিবেচনা
ট্রাম্প বলেছিলেন, দায়িত্ব নেয়ার প্রথম একশো দিনের মধ্যেই তিনি প্যারিস জলবায়ু চুক্তি বাতিল করবেন।তবে সেটা তিনি করেননি। তার সিনিয়র উপদেষ্টাদের মধ্যে এ বিষয়ে বিভক্তি রয়েছে। তবে প্রেসিডেন্ট ওবামার প্রণীত জলবায়ু প্রবিধান পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি। মানুষের দ্বারা জলবায়ু পরিবর্তন সৃষ্টির বিজ্ঞানসম্মত বিষয়টিকে বারবার নাকচ করে আসছেন ট্রাম্প এবং একে তিনি "কাল্পনিক" আখ্যা দিয়ে আসছেন। অন্য অনেক বিষয়ের তিনি এক্ষেত্রে সাংঘর্ষিক মতামত প্রকাশ করেছেন।

নিউইয়র্ক টাইমসকে তিনি নভেম্বরে বলেন, তিনি স্বীকার করেন মানুষের কর্মকাণ্ড এবং জলবায়ু পরিবর্তনের মাঝে কিছু যোগাযোগ আছে এবং তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে সরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্তের বদলে এ বিষয়ে নজর দেবেন।

যদিও মার্কিন জলবায়ু নীতির আমল পরিবর্তন করার ক্ষেত্রে ট্রাম্পকে আইনগত এবং পদ্ধতিগত কিছু বাধা পেরোতে হবে। তবে সমালোচকদের আশঙ্কা তার অবস্থান বিশ্বে উষ্ণায়ণ কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে অনিচ্ছুক দেশগুলোকে আরও অপারগ করতে পারে।

৭. ইরানের পরমাণু চুক্তি নিয়ে সংশয়
ইরানের পরমাণু অস্ত্র কর্মসূচি বন্ধের বিনিময়ে অবরোধ তুলে নেয়ার যে চুক্তি হয়েছিল তাকে বারাক ওবামার প্রশাসন "ঐতিহাসিক বোঝাপড়া" বলেই মূল্যায়ন করেছে। কিন্তু ট্রাম্প একে বলেছেন, "আমার দেখা এ যাবত-কালের সবচেয়ে বাজে কোনও চুক্তি"।

এই চুক্তি ভেঙে ফেলা হবে তার প্রধান অগ্রাধিকার কাজের একটি। কিন্তু তিনি আসলে কি করতে চান সেটি স্পষ্ট নয়। তার সরকার ইরানের বিষয়ে মার্কিন নীতি পুনরায় ঢেলে সাজাতে চাইছে।

বিষয়টি শুধু ইরানের পরমাণু কর্মসূচির ক্ষেত্রেই প্রভাব ফেলবে তা নয়, সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যে তার ভূমিকা, সিরিয় সংঘাত, সৌদি আরব এবং ইসরায়েলের সাথে সম্পর্কেও প্রভাব ফেলবে।  সূত্র- বিবিসি

 


গো নিউজ২৪/এএইচ

আন্তর্জাতিক বিভাগের আরো খবর
পাকিস্তানের নির্বাচনে জিতে যাচ্ছে ইমরান খান-সমর্থিত স্বতন্ত্ররা

পাকিস্তানের নির্বাচনে জিতে যাচ্ছে ইমরান খান-সমর্থিত স্বতন্ত্ররা

একসঙ্গে মরতে এসে সরে গেলেন প্রেমিকা, ট্রেনে কেটে প্রেমিকের মৃত্যু

একসঙ্গে মরতে এসে সরে গেলেন প্রেমিকা, ট্রেনে কেটে প্রেমিকের মৃত্যু

তোশাখানা কী, চাঞ্চল্যকর যে মামলায় স্ত্রীসহ ফেঁসে গেলেন ইমরান খান

তোশাখানা কী, চাঞ্চল্যকর যে মামলায় স্ত্রীসহ ফেঁসে গেলেন ইমরান খান

জাপানে ২৪ ঘণ্টায় ১৫৫টি ভূমিকম্পের আঘাত

জাপানে ২৪ ঘণ্টায় ১৫৫টি ভূমিকম্পের আঘাত

ডালিম দিয়ে তৈরি আফগানিস্তানের পানীয় বিশ্বজুড়ে আলোচনায়, কিনছে আমেরিকাও

ডালিম দিয়ে তৈরি আফগানিস্তানের পানীয় বিশ্বজুড়ে আলোচনায়, কিনছে আমেরিকাও

বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রশ্নে যা বলছে যুক্তরাষ্ট্র

বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রশ্নে যা বলছে যুক্তরাষ্ট্র