ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সম্ভাবনার দুয়ারে বন্দরনগরী চট্টগ্রাম


গো নিউজ২৪ | আবু আজাদ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, চট্টগ্রাম প্রকাশিত: জুলাই ২৬, ২০১৭, ০১:৪৬ পিএম আপডেট: জুলাই ২৬, ২০১৭, ০৮:২৪ এএম
সম্ভাবনার দুয়ারে বন্দরনগরী চট্টগ্রাম

চট্টগ্রাম: সাগর, পাহাড় আর নদীর মিতালী বন্দরনগরী চট্টগ্রামকে করেছে প্রকৃতির রাজধানী। শত শত বছরের ব্যবসায়িক ঐতিহ্য এনে দিয়েছে বাণিজ্যিক রাজধানীর তমকা। তবে কেনো যেন রুপকথার ‘সুয়ো রানী-দুয়ো রানী’র গল্পের মত বারবার অবহেলিত হয়ে এসেছে বীর সূর্যসেনের চট্টগ্রাম। 

তবে না। এবার আর চট্টগ্রামকে সইতে হচ্ছে না সেই জ্বালা। নগরীর ওয়াসা মোড় থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে (ফ্লাইওভার) এখন আর স্বপ্ন নয়। তিন বছরের মধ্যে এই ফ্লাইওভার দিয়ে গাড়ি চলাচল করবে বলে আশা করা হচ্ছে। নগরীকে জলাবদ্ধতা থেকে মুক্ত করার জন্য নেয়া হচ্ছে ৬ হাজার কোটি টাকার মেগা প্রকল্প। শীঘ্রই শুরু হতে যাচ্ছে কর্ণফুলী টানেলের কাজও। সব মিলিয়ে উন্নয়নের স্বপ্ন দুয়ারে দাড়িয়ে চট্টগ্রাম।

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে (ফ্লাইওভার)

হাজার হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন করলেও জলাবদ্ধতা চট্টগ্রামের সব অর্জন নষ্ট করে দিচ্ছে। চট্টগ্রামের উন্নয়নে একাধিক বড় প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। অনেকগুলোর কাজ শেষ হওয়ার পথে। দৃশ্যমান উন্নয়ন লক্ষ্য করা যাচ্ছে ফ্লাইওভার ও ওভারপাস  নির্মাণের পর। সিডিএ (চট্টগ্রাম উন্নয়ন কতৃপক্ষ) এর হাতে অনেকগুলো প্রকল্প। পরিকল্পিতভাবে এসব উন্নয়ন এখন সময়ের দাবি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমান সরকার চট্টগ্রামের উন্নয়নে আন্তরিক।দীর্ঘদিন উন্নয়নের ছোঁয়া বঞ্চিত চট্টগ্রামে এরই মধ্যে বড় একটি ফ্লাইওভারসহ বেশ কিছু উন্নয়ন কাজ শেষ হবার পথে। এসব উন্নয়ন এখন দৃশ্যমান। তবে চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা ও জোয়ারের পানি নতুন কওে সমস্যা দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে এবারের বর্ষায় তা অস্বাভাবিক মাত্রায় রূপ নিয়েছে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হৈ চৈ কম হচ্ছে না। কিভাবে এ সমস্যার সমাধান করা যায় তা নিয়ে বিশেষজ্ঞরা বেশ কিছু পরিকল্পনা সরকারের কাছে পেশ করেছেন।

এ বিষয়ে আলাপকালে গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য ৬ হাজার কোটি টাকার একটি মেগা প্রকল্প গ্রহণ করা হচ্ছে। শীঘ্রই এটি একনেকের বৈঠকে উঠবে। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করা হয়েছে। তিনি চট্টগ্রামের মানুষের এ দুর্দশার বিষয়টি অবহিত হয়ে মেগা প্রকল্পের ব্যাপারে সবুজ সংকেত দিয়েছেন। 

মোশাররফ হোসেন বলেন, এ প্রকল্পের আওতায় সাগর-নদী পরিবেষ্টিত চট্টগ্রামকে জলাবদ্ধতা থেকে রক্ষার জন্য স্লইচ গেট নির্মান, খাল খনন ও পাম্প মেশিন দিয়ে পানি ফেলে দেয়াসহ বিশাল কর্মযজ্ঞ রয়েছে। চট্টগ্রামবাসী জলাবদ্ধতা থেকে শীঘ্রই মুক্তি পাবে।’ কর্নফুলীর তলদেশ দিয়ে টানেল নির্মানের কাজও শুরু হওয়ার পথে। এ টানেল নির্মান হলে চট্টগ্রামের সাথে কক্সবাজারের যোগাযোগ সহজ হয়ে যাবে। এ টানেলকে চট্টগ্রামকে আধুনিক একটি শহরে পরিণত করবে।

কর্নফুলীর তলদেশ দিয়ে টানেল

এদিকে কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পাড় থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত বিস্তৃত দক্ষিণ চট্টগ্রামে আগামী পাঁচ বছরে এক লাখ কোটি ডলার বিনিয়োগ হওয়ার আশা করছে সরকার। এই বিশাল বিনিয়োগের মহাযজ্ঞ সামাল দেয়ার ক্ষেত্র প্রস্তুতের ক্ষেত্রে ওয়াসা-বিমানবন্দর ফ্লাইওভার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। দক্ষিণ চট্টগ্রামের পণ্যসামগ্রী শাহ আমানত সেতু থেকে শুরু করে মুরাদপুর ফ্লাইওভার হয়ে বন্দরে পৌঁছতে পারবে। ইপিজেড এবং কেইপিজেডের যানজট নিরসন করে নগরীর যান চলাচলের ক্ষেত্রেও ফ্লাইওভারটি ব্যাপক ভূমিকা রাখবে।

সিডিএ সূত্রে জানা গেছে, ১৬ দশমিক ৫ কিলোমিটার মূল এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে এবং ৯টি পয়েন্টে ১২ কিলোমিটারসহ মোট ২৮ দশমিক ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ হবে। চার লেনের এই প্রকল্পের প্রস্থ ৬০ ফুট। ফ্লাইওভার নির্মাণ প্রকল্পটি প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হবে ৩ হাজার ২৫০ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। এর পুরোটাই বাংলাদেশ সরকার বহন করবে। প্রকল্প বাস্তবায়নকাল ধরা হয়েছে জুলাই ২০১৭ থেকে জুন ২০২০ পর্যন্ত। কয়েকদিনের মধ্যে প্রকল্পের কনসালটেন্ট নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হবে। আগামী সেপ্টেম্বরে প্রকল্পটির কাজ শুরু হবে।

লালখান বাজার থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত ১৬ দশমিক ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ফ্লাইওভারের ৯টি জংশনে (স্টেশন) ২৪টি র‌্যাম নামবে। টাইগারপাস মোড় থেকে নিউমার্কেটের দিকে ওঠা-নামার সুযোগসহ র‌্যাম, আগ্রাবাদ বাদামতলী মোড়ে ওঠা-নামার, বারিক বিল্ডিং মোড় থেকে স্ট্র্যান্ড রোডে যাওয়া-আসার, নিমতল বিশ্বরোড মোড় থেকে পোর্ট কানেকটিং রোডে ওঠা-নামার, কাস্টমস মোড়ে ওঠা-নামার, সিইপিজেড মোড়ে ওঠা-নামার, কর্ণফুলী ইপিজেড মোড়ে ওঠা-নামার, কাঠগড় মোড়ে ওঠা-নামার, সি-বিচ মোড়ে ওঠা-নামার এবং সর্বশেষ বিমানবন্দরে ওঠা নামার সুযোগ থাকছে এই ফ্লাইওভারে। জংশনগুলোর কোনটিতে দুইটি এবং কোনটিতে চারটি র‌্যাম্প থাকবে। প্রতিটি ৫০০ মিটার করে ২৪টি র‌্যাম্পে ১২ কিলোমিটার র‌্যাম্প নির্মিত হবে।

এদিকে এই প্রকল্প বাস্তবায়নে কিছু প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়বে সিডিএ। আগ্রাবাদ শেখ মুজিব রোডে রাস্তার নিচে ১২ ফুট প্রস্থ আন্ডারগ্রাউন্ড ড্রেন এবং এর পাশেই রয়েছে ওয়াসার প্রধান সরবরাহ লাইন। এছাড়া সল্টগোলা এবং দেওয়ানহাট রয়েছে ওভারপাস। ফ্লাইওভার নির্মাণের ক্ষেত্রে এসব বড় প্রতিবন্ধকতা হিসেবে দাঁড়ালেও প্রকৌশল বিদ্যার সর্বাধুনিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করে কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। 

এদিকে ওয়াসা থেকে যাওয়া ফ্লাইওভারটি গেলে টাইগারপাসের পাহাড় কাটতে হবে- এমন একটা আশঙ্কা আগে ছিল। তবে পাহাড় না কেটে বর্তমান রোড ডিভাইডারের ওপর দিয়ে যাতে ফ্লাইওভারটি যেতে পারে- এমন করেই ডিজাইন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।

প্রকল্প পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মাহফুজুর রহমান বলেন, প্রকল্পটির কাজ শিগগিরই শুরু হচ্ছে। তিন বছরের মধ্যে এই ফ্লাইওভারের কাজ শেষ করা যাবে বলে আশা করছি।

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিশাল বাজেটের ওয়াসা মোড় থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত ফ্লাইওভার প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছেন। এটি বাস্তবায়িত হওয়ার পর বহদ্দারহাট থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত ফ্লাইওভারের আওতায় চলে আসবে। এতে পুরো নগরীর যাতায়াত ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আসবে।

আবদুচ ছালাম বলেন, মুরাদপুর থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত ফ্লাইওভার নির্মিত হয়ে গেছে। এখন ওয়াসা মোড়ের ফ্লাইওভারের দুইপাশ থেকে দুটি উইং চলে যাবে লালখান বাজারের দিকে। আর মাঝখানে থাকবে ফ্লাইওভারের নেমে যাওয়া অংশ। দুই উইং লালখান বাজার মোড় পার হয়ে একসাথে মিলিত হবে। নির্মাণের পর ফ্লাইওভারের ইলেক্ট্রনিক টোল থাকবে। তবে কোথায় কীভাবে টোল নির্ধারণ করা হবে, তা পরে চূড়ান্ত করা হবে।

প্রসঙ্গত গত বছরের ৩১ জানুয়ারি এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই সময় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের অর্থায়নে ফ্লাইওভারটিকে বিমানবন্দর পর্যন্ত সম্প্রসারণের নির্দেশনা দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। পরবর্তী কালে বন্দর কর্তৃপক্ষ থেকে ফ্লাইওভারের জন্য দেয়ার মতো অর্থ নেই বলে জানানো হয়। এতে প্রকল্পটি অনিশ্চয়তায় পড়ে। এরপর সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম প্রকল্পটি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের উর্ধ্বতন মহলে দৌড়ঝাঁপ করেন। এরপর প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত দেন সরকারি তহবিল থেকেই প্রকল্পটির জন্য অর্থায়ন করা হবে। এরপর নতুন করে প্রকল্প সারপত্র তৈরি করে মন্ত্রনালয়ে পাঠায় সিডিএ। নানা প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে প্রকল্পটি গত ১১ জুলাই একনেকের সভায় অনুমোদন পায়।

গো নিউজ২৪/পিআর

জাতীয় বিভাগের আরো খবর
টয়লেটসহ একাধিক সুবিধা নিয়ে দেশে আসছে ছাদখোলা দোতলা ট্যুরিস্ট বাস

টয়লেটসহ একাধিক সুবিধা নিয়ে দেশে আসছে ছাদখোলা দোতলা ট্যুরিস্ট বাস

‘রপ্তানিযোগ্য হারবাল প্রডাক্টের উৎপাদন প্রক্রিয়া ও মান উন্নয়ন’ প্রশিক্ষণ কর্মশালা

‘রপ্তানিযোগ্য হারবাল প্রডাক্টের উৎপাদন প্রক্রিয়া ও মান উন্নয়ন’ প্রশিক্ষণ কর্মশালা

পাঠ্যবইয়ের সংশোধনসহ সচিবদের একগুচ্ছ নির্দেশনা দিলেন প্রধানমন্ত্রী

পাঠ্যবইয়ের সংশোধনসহ সচিবদের একগুচ্ছ নির্দেশনা দিলেন প্রধানমন্ত্রী

শাহজালাল বিমানবন্দরে মাসুদের কাছে পাওয়া গেল ৩ কেজি সোনা

শাহজালাল বিমানবন্দরে মাসুদের কাছে পাওয়া গেল ৩ কেজি সোনা

ইজতেমায় এক বদনা পানি ১০ টাকা!

ইজতেমায় এক বদনা পানি ১০ টাকা!

হজে যাওয়ার মানুষ পাওয়া যাচ্ছে না, দফায় দফায় সময় বাড়াচ্ছে মন্ত্রণালয়

হজে যাওয়ার মানুষ পাওয়া যাচ্ছে না, দফায় দফায় সময় বাড়াচ্ছে মন্ত্রণালয়