ডেস্ক: পৃথিবীতে সন্তানের জন্য মায়েরা যে কত কত মহৎ কাজ করেন তার ইয়াত্তা নেই। সন্তান জন্ম থেকে বড় হওয়া পর্যন্ত যেন তার ভূমিকার শেষ নেই। সেরকমই একজন মা চট্টগ্রামের মোসামাৎ জেসমিন।
সন্তানরা না খেয়ে থাক এটা তিনি মা হিসাবে চাইতে পারে না আর তাই বেছে নিয়েছেন রিকশা চালকের পেশা। এটা কোটি কোটি মায়ের মধ্যেও এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
নারীবাদীদের কাছে এক দৃষ্টান্ত হতে পারেন জেসমিন। পুরুষশাসিত সমাজে তিনি বেছে নিয়েছেন এমন এক পেশা, যা মূলত পুরুষের কাজ হিসেবেই বিবেচিত। রিকশায় চালকের আসনে মেয়েদের সচরাচর দেখা যায় না বাংলাদেশে। জেসমিন তাই ব্যতিক্রম। জীবন চালাতে রিকশাকে বেছে নিয়েছেন তিনি।
তার কথায়, ‘‘আল্লাহ আমাকে একজোড়া হাত এবং একজোড়া পা দিয়েছেন। আমি ভিক্ষা করিনা। তারচে তার দেয়া উপহার কাজে লাগিয়ে জীবিকা নির্বাহ করি।’’
পাঁচ বছর আগে রিকশা চালানো শুরু করেন জেসমিন। তার এক প্রতিবেশী তাকে কয়েকদিন রিকশা চালানোর আমন্ত্রণ জানালে তিনি তা গ্রহণ করেন।
জেসমিন বলেন, ‘‘শুধু নিজের কথা ভাবলে পরের বাড়িতে দাসী হতে সমস্যা ছিল না। কিন্তু সন্তান থাকলে সেটা সম্ভব নয়। আর ফ্যাক্টরির কাজ অনেক কঠিন এবং পয়সা অনেক কম।’’
সবকিছু বিবেচনা করে শেষমেশ রিকশা চালানোকেই পেশা হিসেবে নেন চট্টগ্রামের এই নারী। তবে শুরুটা সহজ ছিল না। সমাজ থেকে বাধা এসেছিল।
‘‘আমি নারী বলে কেউ কেউ আমার রিকশায় উঠতে চাইতো না। কেউ কেউ মনে করতেন, আমি যেভাবে রাস্তায় ঘোরাঘুরি করি ইসলামে তা করা বারণ। কেউ কেউ আবার আমি নারী বলে আমাকে ভাড়া কম দিয়েছে,’’ বলেন তিন সন্তানের মা জেসমিন।
স্থানীয়রা জেসমিনের নাম দিয়েছে ‘পাগলি খালা।’ এখনো সুযোগ পেলে কেউ কেউ তাকে চটানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু সেসব গায়ে মাখেন না জেসমিন বরং রিকশা চালান সচেতনভাবেই।
স্থানীয় এক ট্রাফিক পুলিশ জানিয়েছেন, রাস্তায় নিয়মকানুন মেনেই রিকশা চালান জেসমিন। এমনকি হেলমেটও পরেন, যা অন্য রিকশাওয়ালারা সচরাচর পরেন না।
চট্টগ্রামে জেসমিনের এলাকার মসজিদের ইমামও তার কাজের প্রশংসা করেছেন। নুরুল আলম আজমিরি বলেন, ‘‘তিনি আমাদের সমাজে একটি ভালো উদাহরণ। কেননা, অনেক ক্ষেত্রে কঠিন সময়ে মেয়েরা পতিতাবৃত্তি বা মাদক বেচার মতো কাজে জড়িয়ে পড়েন। সেক্ষেত্রে তিনি যা করছেন তা প্রশংসার যোগ্য। তাছাড়া সন্তানের উন্নতির কথাও ভাবছেন তিনি।’’
গত বছর জেসমিনের রিকশায় পরিবর্তন এসেছে। এখন ব্যাটারিচালিত রিকশা চালান তিনি। গড়ে দৈনিক রোজগার আটশো টাকার মতো। আট ঘণ্টা কাজ করলে এমন আয় করতে পারেন তিনি। এ থেকে রিকশার দৈনিক ভাড়া মিটিয়ে বাকিটা তার নিজেরই থাকে।
গোনিউজ২৪/এম