ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ষড়যন্ত্র করেই কি সরিয়ে দেয়া হয়েছিল সাবেক সৌদি যুবরাজকে?


গো নিউজ২৪ প্রকাশিত: জুলাই ২১, ২০১৭, ১১:২১ এএম
ষড়যন্ত্র করেই কি সরিয়ে দেয়া হয়েছিল সাবেক সৌদি যুবরাজকে?

সৌদি যুবরাজের পদ থেকে ভাতিজা মোহাম্মদ বিন নায়েফকে সরিয়ে ওই আসনে নিজের ছেলে মোহাম্মদ বিন সালমানকে অধিষ্ঠিত করেন দেশটির বাদশা সালমান। গত মাসের ২১ তারিখ এই ঘটনার পর সাবেক যুবরাজকে জেদ্দায় তার নিজ বাসভবনে গৃহবন্দী রাখা হয়েছে বলেও অভিযোগ আছে। অবশ্য এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে আসছে সৌদি রাজপরিবার।

তেলসমৃদ্ধ প্রভাবশালী এই মুসলিম দেশটিতে ক্ষমতার আকস্মিক এ পরিবর্তন কীভাবে হলো, এতে কার কী ভূমিকা ছিল- এ নিয়ে বিস্তারিত এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তুলে ধরেছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স। প্রতিবেদনে বলা হয়, হঠাৎ করেই প্রাসাদ থেকে বাদশার ডাক আসে মোহাম্মদ বিন নায়েফের কাছে। সেদিন তিনি চতুর্থ তলায় যান বাদশার সঙ্গে দেখা করতে। তখন পর্যন্ত মোহাম্মদ বিন নায়েফই ছিলেন রাজসিংহাসনের পরবর্তী উত্তরসূরী। কিন্তু এক রাতেই বদলে যায় সব।

মোহাম্মদ বিন নায়েফের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্রের ভাষ্য, ‘একটি কক্ষে কেবল বাদশা ও মোহাম্মদ বিন নায়েফই ছিলেন। আর কেউ ছিলেন না। বাদশা নায়েফকে বলেন, আমি চাই তুমি পদ থেকে সরে দাঁড়াও। বারবার বলার পরও আসক্তি কাটানোর জন্য তুমি কোনও চিকিৎসা করাচ্ছ না। এটা তোমার সিদ্ধান্ত গ্রহণে মারাত্মক প্রভাব ফেলছে।’

মোহাম্মদ বিন নায়েফ ব্যথানাশক ওষুধ (মরফিন) নিতেন। তবে স্বাধীন কোনও সূত্র থেকে বিন নায়েফের আসক্তির বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারেনি বার্তা সংস্থা রয়টার্স। প্রাসাদের কোনও কর্মকর্তাও এ বিষয়ে কিছু বলতে রাজি হননি।

নায়েফের আসক্তির বিষয়টি নাকচ করে সৌদি আরবের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘এ গল্পটির কাছে হলিউডের অলীক কল্পনার ছবিও হার মানবে।’ তবে অপর কর্মকর্তারা বলেন, বিন নায়েফকে জাতীয় স্বার্থে সরিয়ে দেয়া হয়েছে এবং ‘চাপ ও অসম্মানের’ জন্য নয়। তাকে সরিয়ে দেয়ার কারণ ‘গোপনীয়’।

মোহাম্মদ বিন নায়েফ

বিভিন্ন সূত্রের খবরে বলা হয়, বাদশা তার সন্তানকে সিংহাসনে বসাতে বদ্ধপরিকর ছিলেন। নায়েফের আসক্তির ব্যাপারটি সামনে এনে তাকে দূরে সরিয়ে দেয়া হয়। সৌদির রাজনৈতিক বিভিন্ন সূত্র এবং বিন নায়েফের ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা যায়, ‘এটা বিন নায়েফের জন্য একটি বড় আঘাত ছিল। এটি একটি অভ্যুত্থান। তিনি এ ব্যাপারে আদৌ প্রস্তুত ছিলেন না।’

সূত্রমতে, মোহাম্মদ বিন সালমান মনে করেন, নায়েফ বেশ কয়েকটি ব্যাপারে নীতিগতভাবে ভুল করেছেন। ইয়েমেন সমস্যা এবং বেসামরিক কর্মচারীদের আর্থিক সুবিধা কর্তনের জন্য তাকে দোষারোপ করা হয়।

২১ জুন রাত ১১টার দিকে দেশটির রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা কাউন্সিলের বৈঠক হয়। এর চার ঘণ্টা আগে বাদশাহর ছেলের সালমানের কাছ থেকে ফোন পান মোহাম্মদ বিন নায়েফ। তিনি ভেবেছিলেন, এটা নিয়মিত (রুটিন কল) ফোন। বাদশা সালমান নায়েফের সঙ্গে দেখা করতে চান। এর কয়েক ঘণ্টা পরই নায়েফকে সরিয়ে দেয়া হয়। বাদশা ও নায়েফের সংক্ষিপ্ত বৈঠকের খবরটি পরে সবাইকে চিঠি দিয়েও জানিয়ে দেয়া হয়।

বাদশাহর নামে ফোন করে একটি চিঠি পড়ে শোনানো হয় সব সদস্যকে। ওই চিঠিতে রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা কাউন্সিলের ৩৪ সদস্যের মধ্যে তিনজন বাদে সবাই সই করেন। এর অর্থ হলো ষড়যন্ত্র কাজে দিয়েছে। চিঠিতে লেখা ছিল নায়েফের আসক্তির কথা। এতে বলা হয়েছে, ‘আমরা দুই বছর ধরে চেষ্টা করেছি কিন্তু কোনও কাজে আসেনি। এই বিপজ্জনক পরিস্থিতি থেকে তর (নায়েফ) মুক্ত হওয়া উচিত এবং মোহাম্মদ বিন সালমানকে তার জায়গায় মনোনীত করা হোক।’

রাজপ্রাসাদের একটি সূত্র জানায়, ওই সময়ে প্রাসাদের একটি কক্ষে বিন নায়েফকে বলতে গেলে আটকেই রাখা হয়। সেখানে আর কেউ ছিলেন না। তার মোবাইল ফোনটিও কেড়ে নেয়া হয়। তার দেহরক্ষীদেরও বদলে ফেলা হয়।

সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আহমেদ বিন আবদুল আজিজ, রাজপরিবারের সদস্য আবদুল আজিজ বিন আবদুল্লাহ এবং রিয়াদের সাবেক উপ-গভর্নর যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সাদ চিঠিতে সই করেননি। রাজপ্রাসাদের একটি সূত্র জানায়, যারা বাদশার সিদ্ধান্তের পক্ষে ছিলেন, তাদের সবার ফোনকল রেকর্ড করা হয়। এরপর তা বিন নায়েফকে শোনানো হয়। তাকে বোঝানো হয়, ‘তোমার পক্ষে আর কেউ নেই।’

মোহাম্মদ বিন সালমান

রাতভর চিন্তার পর ভোরের দিকে হাল ছেড়ে দেন বিন নায়েফ। তিনি প্রাসাদের উপদেষ্টাকে বলেন, বাদশাহর সঙ্গে দেখা করতে চান তিনি। খুব সংক্ষিপ্ত বৈঠকেই সব শেষ হয়ে যায়। পদত্যাগে রাজি হওয়ার কথা জানিয়ে কাগজে সই করেন তিনি। বাদশার কক্ষ থেকে বেরিয়েই অবাক হয়ে যান বিন নায়েফ। কারণ বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলেন মোহাম্মদ বিন সালমান। তিনি (সালমান) তখন নতুন যুবরাজ। তাকে আলিঙ্গন করেন বিন নায়েফ, হাত ধরে চুমু খান আনুগত্যের প্রতীক হিসেবে। আর চুমু খাওয়ার এই ছবি পরে মধ্যপ্রাচ্যের গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রচার পায়।

এরপর বেরিয়ে যান বিন নায়েফ। ততক্ষণে সালমানের সঙ্গে তার ছবি ও শাহি ফরমান রাজপ্রাসাদ থেকে ছড়িয়ে দেয়া হয় গণমাধ্যমে। ওই রাতের সবকিছু শেষ হয়ে যায় নায়েফের। সূর্য ‍ওঠা ভোরে নিজের সূর্য ডুবিয়ে বাড়ি ফেরা বিন নায়েফ তখন কার্যত গৃহবন্দী। ঘনিষ্ঠজনেরা জানান, পরিবার নিয়ে সুইজারল্যান্ড বা যুক্তরাজ্যে চলে যেতে চেয়েছিলেন তিনি। তবে বাদশা সালমান ও তার ছেলে মোহাম্মদ বিন সালমান নায়েফকে জানিয়ে দেন, ‘না, এখন তার ইচ্ছায় আর কোনো কিছুই হবে না।’

১৫ বছর ধরে সৌদি আরবের সবচেয়ে প্রভাবশালী নিরাপত্তা কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন বিন নায়েফ। তিনি যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ গোয়েন্দা যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন। এর মধ্য দিয়ে তিনি সৌদি জোটের বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য ব্যক্তিতে পরিণত হয়েছিলেন তিনি।

গো নিউজ২৪/ আরএস

আন্তর্জাতিক বিভাগের আরো খবর
বাংলাদেশ-ভারত যাতায়াত সহজ করতে চালু হচ্ছে অন অ্যারাইভাল ভিসা

বাংলাদেশ-ভারত যাতায়াত সহজ করতে চালু হচ্ছে অন অ্যারাইভাল ভিসা

পাকিস্তানের নির্বাচনে জিতে যাচ্ছে ইমরান খান-সমর্থিত স্বতন্ত্ররা

পাকিস্তানের নির্বাচনে জিতে যাচ্ছে ইমরান খান-সমর্থিত স্বতন্ত্ররা

একসঙ্গে মরতে এসে সরে গেলেন প্রেমিকা, ট্রেনে কেটে প্রেমিকের মৃত্যু

একসঙ্গে মরতে এসে সরে গেলেন প্রেমিকা, ট্রেনে কেটে প্রেমিকের মৃত্যু

তোশাখানা কী, চাঞ্চল্যকর যে মামলায় স্ত্রীসহ ফেঁসে গেলেন ইমরান খান

তোশাখানা কী, চাঞ্চল্যকর যে মামলায় স্ত্রীসহ ফেঁসে গেলেন ইমরান খান

জাপানে ২৪ ঘণ্টায় ১৫৫টি ভূমিকম্পের আঘাত

জাপানে ২৪ ঘণ্টায় ১৫৫টি ভূমিকম্পের আঘাত

ডালিম দিয়ে তৈরি আফগানিস্তানের পানীয় বিশ্বজুড়ে আলোচনায়, কিনছে আমেরিকাও

ডালিম দিয়ে তৈরি আফগানিস্তানের পানীয় বিশ্বজুড়ে আলোচনায়, কিনছে আমেরিকাও