ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শিক্ষক ঘুমাননি, ঘুমিয়েছে উপজেলা চেয়ারম্যানের বিবেক


গো নিউজ২৪ | রওশন আরা বিথী, সহকারি শিক্ষক, রংপুর প্রকাশিত: অক্টোবর ২১, ২০১৭, ০৪:০৫ পিএম আপডেট: অক্টোবর ২১, ২০১৭, ১০:০৫ এএম
শিক্ষক ঘুমাননি, ঘুমিয়েছে উপজেলা চেয়ারম্যানের বিবেক

গত ১৮ অক্টোবর বুধবার জকিগঞ্জের কয়েকটি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শন করেন উপজেলা চেয়ারম্যান ইকবাল অাহমদ। সংশ্লিষ্ট একটি ছবি ফেসবুকে ভাইরাল।যা উপজেলা চেয়ারম্যানের নৈতিক পরাজয় হয়েছে বলে আমি মনে করি।

বিবেকের আদালতের ভারসাম্য রক্ষা না হলে সমাজ রাস্ট্রের সুভাবনার সুজনদের সুচিন্তার প্রবেশদ্বার ক্রমশ সংকুচিত হয়ে আসে। যা যুগ থেকে যুগান্তরে নি,শব্দে সুপারসনিক গতিতে প্রবাহিত হয়। আজ কদিন যাবত সোশ্যাল মিডিয়ায় জাতি গড়ার শ্রেষ্ঠ কারিগর জকিগঞ্জের খলাছড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা দীপ্তি বিশ্বাসের ছবি ভাইরাল হয়ে নানা অপ্রত্যাশিত অবাঞ্ছিত প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে। 

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পক্ষে বিপক্ষে তুলোধোনার শব্দ বিকট আওয়াজ তুলছে। অভিযোগ শ্রেণী কক্ষে পরী  চলাকালীনসময়ে টেবিলের উপর মাথা রেখে ঘুমানো। মান্যবর জকিগঞ্জ  উপজেলা চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন বিদ্যালয় ভিজিটে এ অবস্থা দেখে জাতির অন্যতম কারিগরে ছবি ক্যমেরা বন্দি করে ভাইরাল করেন। সারাদেশব্যপী দীপ্তি বিশ্বাসকে নিয়ে টানাহেঁচড়া শুরু হয়ে যায়।

যিনি মহান ব্রত নিয়ে শিক্ষকতা পেশায় জীবনের মুল্যবান সময়টুকু কাটাতে বদ্ব পরিকর। কিন্তু মান্যবর উপজেলা চেয়ারম্যানের ভিন্ন কারিশমায় আজন্ম ফেসে গেলেন দীপ্তি বিশ্বাস। নি,সন্দেহে একজন শিক্ষকের শ্রেণীকক্ষে ঘুমানো সমীচীন নয়। যা লজ্জাস্কর।

কিন্তু কেন দীপ্ত বিশ্বাস ক্লান্তিবোধ করলেন এ বিষয়াদি কি মান্যবর চেয়ারম্যান জানেন কিংবা জানতে চেয়েছেন,,,, তা আজ সুশীল সমাজের প্রশ্ন। সমস্যা হতেই পারে। আর একজন উপজেলা চেয়ারম্যান উপজেলা শিক্ষা কমিটির সভাপতি। উনি নিশ্চয়ই জানেন সকাল ৯ টা থেকে ৪.৩০ পযন্ত কচিকাঁচা শিশুদের নিয়ে খোলাহল পরিবেশে থাকতে হয় যা মাঝে মাঝে নয় নিত্য দিনের ঘটনা। আর শারীরিক সমস্যার উব্ধে’ নয়। সেই দিক বিবেচনা না করে
বালখিল্য ভাবে কাজটি চুকে দিলেন। আজ দীপ্তি বিশ্বাসের ছবি ভাইরাল হয়নি ভাইরাল হয়েছে গোটা শিক্ষক জাতি। নি,শব্দে রক্তকরন হচ্ছে শুধু দীপ্তি বিশ্বাসের নয় শিক্ষক জাতির চোখের কোনে জমেছে নাফনদীর জমানো পানি।

আমি রংপুর সদরের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত।সেই কাকডাকা ভোর থেকে আমি আলস্যকে ঝেড়ে ফেলে যথাসময়ে স্কুলে অর্থাৎ সকাল ৯:০০টার মধ্যে স্কুলে উপস্থিত হওয়ার দৌড় শুরু করি।যথাসময়ে বিদ্যালয়ে উপস্হিত হয়ে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে দৈনিক সমাবেশে উপস্হিত হই। এরপর উপকরন ও পাঠ পরিকল্পনা সহকারে ৯:৩০ থেকে ১২:০০ টা পর্যন্ত পাঠদান করি। কারন আমি প্রাক-প্রাথমিক এর জন্য নিয়োগপ্রাপ্ত। এরপর দ্বিতীয় শিফটের সমাবেশে অংশ নিয়ে নাকে মুখে সামান্য নাস্তা গ্রহন করে আবার ১২:১৫ থেকে পাঠ দান করি।দ্বিতীয় শিফটেও আমাকে প্রায়শই ৪টি বিষয়ে পাঠদান করতে হয়।এর মাঝে দুপুরে খাবার ও নামাজ তো আছেই।৪:৩০ টা বিদ্যালয় প্রাঙ্গন ত্যাগ করে বাড়ি ফিরতে ফিরতে ৫:০০টা বাজে।বাড়ি ফিরে দেখি স্বামী সন্তান সব এলোমেলো করে রেখেছে।পোশাক বদলে ব্যাস্ত হই সংসারিক কাজে।সন্তানকেও পড়াতে হয়।এরপর রান্নার কাজ সেরে খাওয়ার পর যখন ঘুমাই মনে হয় মরার মতন ঘুমাই।কারন স্বপ্নও দেখি না। মানে স্বপ্ন দেখার সময়নেই বলেই স্বপ্ন দেখি না।আবার পরদিন  সকাল থেকে একই রুটিনে জীবন যাত্রা।

এখন আপনারাই বলুন এভাবে চলতে চলতে মাসে একদিন যদি আমার মাথা ব্যাথা বা অন্যান্য শারীরিক অসুস্থতাজনিত কারনে টেবিলের দিকে মাথা হেলে পড়ে তাহলে কী মারত্মক অন্যায় হবে?উচিত হবে কী ঔ অবিরত ছুটে চলা মানুষটির দূর্বল সময়ের ছবিটি ক্যামেরাবন্দী করে মিডিয়ায় প্রকাশ করা?আমারা নারীরা তো মানুষ!রোবট তো নই!

পাঠকগণ!! আপনারা সহজেই অনুমান করতে পারছেন ঘটনাটি সত্য না মিথ্যা। আমরা শিক্ষক আমরাও মানুষ। আমাদেরও তো একটা শরীর আছে আর সেই শরীরে অসুখ বিসুখ হতেই পারে। আর অসুখের চিকিৎসার কারণে এবং কোন ঔষধের প্রভাবে যদি একটু আধটুকু ঘুম ঘুম ভাব হয়েই থাকে বা ঘুমিয়েই পরেন তাহলে সেই ঘুমানো শিক্ষিকার ছবি তুলতে হবে,পত্রিকায় দিতে হবে এটা কেমন কথা?উনি তো ঐ শিক্ষিকাকে ঘুম থেকে ডেকে জিজ্ঞাসাও করতে পারতেন ওনার কি হয়েছ? শরীর খারাপ কিনা? উনি তা না করে ছবি তোলায় ব্যস্ত হয়ে পড়লেন।

আমার দৃঢ় বিশ্বাস উনি(ম্যাডাম) সেদিন ইচ্ছে করে ঘুমাননি, কারন কোন শিক্ষক পরীক্ষার হলে ইচ্ছে করে ঘুমোতে পারেন না, ক্লাসে হলে তাও কিছুটা বিশ্বাস করা যেত। এখন আপনারাই বলুন এভাবে চলতে চলতে মাসে একদিন যদি কোন শিক্ষিকার মাথা ব্যথা বা অন্যান্য শারীরিক অসুস্থতাজনিত কারনে টেবিলের দিকে মাথা হেলে পড়ে তাহলে কী মারাত্মক অন্যায় হবে?উচিত হবে কী ঔ অবিরত ছুটে চলা মানুষটির দূর্বল সময়ের ছবিটি
ক্যামেরাবন্দী করে মিডিয়ায় প্রকাশ করা?আমরা শিক্ষকরাও তো মানুষ!রোবট তো আর নই!ধিক্কার জানাই এসব হীন মানুষিকতাকে!

ঐ শিক্ষিকা যদি চেয়ারম্যান সাহেবের বোন বা স্ত্রী হতেন তাহলে উনি কি এই ভাবে ছবি তুলে প্রচার করতে পারতেন!!!

লেখক:রওশন আরা বিথী
সহকারি শিক্ষক, রংপুর।

গো নিউজ২৪/এবি

মতামত বিভাগের আরো খবর
নারীরা,মনের দাসত্ব থেকে আপনারা কবে বের হবেন?

নারীরা,মনের দাসত্ব থেকে আপনারা কবে বের হবেন?

আন্তর্জাতিক শিক্ষা দিবস ও আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা

আন্তর্জাতিক শিক্ষা দিবস ও আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা

সুচন্দার কষ্টে আমরাও সমব্যথী

সুচন্দার কষ্টে আমরাও সমব্যথী

প্রিন্টমিডিয়ার অন্তর-বাহির সংকট

প্রিন্টমিডিয়ার অন্তর-বাহির সংকট

সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বাড়ানো দরকার যেসব কারণে

সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বাড়ানো দরকার যেসব কারণে

সিলেটের শীর্ষ শিল্প উদ্যোক্তাদের নিয়ে একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ

সিলেটের শীর্ষ শিল্প উদ্যোক্তাদের নিয়ে একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ