নারায়ণগঞ্জ: ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কেন্দ্র থেকে জেলা যুব মহিলা লীগের আহ্বায়ক ঘোষণার পরেও পদচ্যুত করা ও কলঙ্কের তিলক দেয়ায় ক্ষোভ আর দুঃখে অঝোর ধারায় কাঁদলেন নারায়ণগঞ্জের নেত্রী নুরুন্নাহার সন্ধ্যা। এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে বইছে তুমুল আলোচনা-সমালোচনার ঝড়।
বঙ্গবন্ধুর শাহাদাৎ বার্ষিকী উপলক্ষ্যে নারায়ণগঞ্জ শহরের ২নং রেলগেটে জেলা মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে কদিন আগে আয়োজিত শোক সভায় এভাবে কাঁদতে দেখা যায় সন্ধ্যাকে। মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে ওই সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় ‘শামীম ওসমানের ওপর গজব পড়ব’ এমন ‘অভিশাপ’ দিয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে ক্ষমতাসীন দলের নেত্রী সন্ধ্যা বলেন, ‘আমার ওপর অনেক ধরনের কলংক লেপন করা হয়েছে। এসব ঠিক করা হয়নি। আমি এর বিচার চাই। আমার চরিত্র হনন করা হয়েছে। শামীম ভাই আপনি কেন এ কাজটি করলেন?’
ক্ষোভ প্রকাশ করে নুরুন্নাহার সন্ধ্যা নেতাদের উদ্দেশ করে আরো বলেন, ‘শামীম ওসমান আপনার ওপর আল্লাহর গজব পড়বে। কী বলব ভাই, আমিতো শহরে আসতেই পারছিলাম না। কারণ যাদের সঙ্গে রাজনীতি করেছিলাম তারা এভাবে কলঙ্ক দিছে। আমি তো মুখ দেখাতে পারছি না। আমি তো রাস্তা দিয়ে কান্না করতে করতে আসছি।’
প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে সন্ধ্যা বলেন, কাদের সঙ্গে রাজনীতি করলাম, কাদের সঙ্গে জীবনের দীর্ঘদিন পার করলাম। আমি আমার বড় ভাইয়েরে বলতে চাই, কী অপরাধ করছিলাম আমি? আমি তো মানুষের সামনে হাঁটতে পারছি না। আপনে এটা ঠিক করেন নাই ভাই।’
নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী ওসমান পরিবারের সদস্য ও ক্ষমতাসীন দলের সংসদ সদস্য শামীম ওসমানকে উদ্দেশ করে নেত্র নুরুন্নাহার বলেন, ‘আমি বলতে চাই শামীম ভাই আপনার সঙ্গে রাজপথে গেছি, আপনার ভাইয়ের সঙ্গেও গেছি। কিন্তু আপনে আমার চরিত্রে কলঙ্ক দিছেন। এই কলঙ্ক শুধু আমারে দেন নাই। আমার দুইডা এতিম বাচ্চার উপরেও কলঙ্ক দিছেন। আপনার ওপর আল্লাহর গজব পড়ব।’
ক্ষোভ প্রকাশ করে সন্ধ্যা আরো বলেন, ‘আমি আর বলতে চাই, আপনে আর কয়দিন ক্ষমতায় থাকবেন। আল্লাহ কিন্তু ক্ষমতা বেশি দিন রাখে না। আমি শুনছিলাম, জয়নাল হাজারি নাকি অনেক ক্ষমতাবান ছিল। কিন্তু তার ক্ষমতাও বেশি দিনে টিকে নাই। আমি জনগণের সামনে হাঁটতে পারি না। আমার নিজের প্রতি লজ্জা হয়। একদিন আল্লায় আপনার বিচার, ইনশাআল্লাহ করব।’
বঙ্গবন্ধুর শাহাদাৎ বার্ষিকীর ওই শোক সভায় সে সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোকন সাহা, সহসভাপতি শেখ হায়দার আলী পুতুল, রোকন উদ্দিন আহম্মেদ, নূরুল ইসলাম চৌধুরী, যুগ্ম সম্পাদক আহসান হাবিব, জিএম আরমান, সাংগঠনিক সস্পাদক অ্যাডভোকেট মাহমুদা মালা, জি এম আরাফাত, দপ্তর সম্পাদক অ্যাডভোকেট বিদ্যুৎ সাহা, জনসংখ্যা বিষয়ক সস্পাদক ডা. আতিকুজ্জামান সোহেল, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক আক্তারুজ্জামান, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক আব্দুর রশিদ, কার্যকরী সদস্য শাখাওয়াত হোসেন সুমনসহ ২৭ ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের সভাপতি, সহ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা।
এর আগে ৩০ মে নুরুন্নাহার সন্ধাকে আহ্বায়ক করে ও সালমা আক্তার, শারমীন আক্তার ডলি, মায়ানূর মায়া, চায়না আক্তার ও রুম্পা আক্তারকে যুগ্ম আহ্বায়ক করে ৪৯ সদস্য বিশিষ্ট নারায়ণগঞ্জ জেলা যুব মহিলা লীগের কমিটির অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় কমিটি। তবে দুদিনের মধ্যেই সেই কমিটি আবার বাতিল করে নতুন করে কমিটি গঠন করা হয়। এরপর নুরুন্নাহার সন্ধার বিরুদ্ধে নানা ধরনের প্রপাগান্ডা ও আপত্তিকর মন্তব্য করা হয়।
এরপর গত ২ জুলাই সেই কমিটি আবার বাতিল করে আরেকটি নতুন জেলা ও মহানগর আওয়ামী যুব মহিলা লীগের কমিটি ঘোষণা করে দেন নাজমা আক্তার ও অপু উকিল। এতে জেলা যুব মহিলা লীগের আহ্বায়ক করা হয়েছে জেলা পরিষদের সদস্য সাদিয়া আফরিন ও যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়েছে শারমিন আক্তার মেঘলা ও আসমা আক্তারকে।
পাশাপাশি মহানগর কমিটিতে আহ্বায়ক করা হয়েছে অ্যাডভোকেট সুইটি ইয়াসমিন ও যুগ্ম আহবায়ক মুনিরা সুলতানাকে। এর পর সন্ধ্যার বিরুদ্ধে নানা ধরনের প্রপাগান্ডা ও আপত্তিকর মন্তব্য করেন শামীম ওসমানসহ তার পন্থী-সমর্থকরা। পরে সেই মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাহমুদা মালাকেও জড়িয়ে নানা ধরনের আপত্তিকর মন্তব্য করা হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে।
গোনিউজ২৪/এন
