ঢাকা শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস আজ


গো নিউজ২৪ | নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৪, ২০১৭, ০৮:৩৬ এএম
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস আজ

ঢাকা: আজ ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। বাঙালি জাতির জীবনে একটি স্মরণীয় ও কলঙ্কের দিন। দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবী নিধনের মর্মন্তুদ স্মৃতিঘেরা বেদনাবিধূর একটি দিন। বাঙালির মেধা-মনন-মনীষা শক্তি হারানোর দিন আজ। 

২৫ মার্চ ১৯৭১ কালো রাতেই শুরু হয় বুদ্ধিজীবীদের নিধনযজ্ঞ কার্যক্রম।  আর পরিকল্পিতভাবে ১০ ডিসেম্বর হতে শুরু হয় বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড। ১৪ ডিসেম্বর পরিকল্পনার বাস্তবায়ন হয়। এদিন সবচেয়ে বেশিসংখ্যক বুদ্ধিজীবী নিধন করা হয়েছিল। এদিন প্রায় ২০০ জনের মতো বুদ্ধিজীবীকে তাদের বাসা হতে ধরে নিয যাওয়া হয়। তাদের চোখে কাপড় বেঁধে মিরপুর, মোহাম্মদপুর, নাখালপাড়া, রাজারবাগসহ অন্যান্য আরো অনেক স্থানে অবস্থিত নির্যাতন কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাদের ওপর বীভৎস নির্যাতন চালানো হয়। পরে তাদের নৃশংসভাবে রায়েরবাজার এবং মিরপুর বধ্যভূমিতে হত্যা করে ফেলে রাখা হয়।

নিহত বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে প্রতি বছর ডিসেম্বরের ১৪ তারিখ ‘শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস’ হিসেবে পালন করা হয়।

পাকিস্তানি সামরিক জান্তার এ হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী। আর তাকে তালিকা প্রস্তুতিতে সহযোগিতা ও হত্যাকাণ্ড বাস্তবায়নের পেছনে ছিল মূলত জামায়াতে ইসলামী কর্তৃক গঠিত কুখ্যাত আলবদর বাহিনী। বুদ্ধিজীবী হত্যার প্রধান ঘাতক ছিলেন বদর বাহিনীর চৌধুরী মঈনুদ্দীন (অপারেশনইন-চার্জ) ও আশরাফুজ্জামান খান (প্রধান জল্লাদ)।

১৬ ডিসেম্বরের পর আশরাফুজ্জামান খানের নাখালপাড়ার বাড়ি থেকে তার একটি ব্যক্তিগত ডায়েরি উদ্ধার করা হয়, যার দুটি পৃষ্ঠায় প্রায় ২০ জন বুদ্ধিজীবীর নাম ও বিশ্ববিদ্যালয় তাদের কোয়ার্টার নম্বরসহ লেখা ছিল। তার গাড়ির ড্রাইভার মফিজুদ্দিনের দেয়া সাক্ষ্য অনুযায়ী রায়েরবাজারের বিল ও মিরপুরের শিয়ালবাড়ির বধ্যভূমি হতে বেশ কয়েকজন বুদ্ধজীবীর গলিত মরদেহ পাওয়া যায়। যাদের আশরাফুজ্জামান খান নিজ হাতে গুলি করে মেরেছিলেন।

খুনিদের মূল লক্ষ্য ছিল লড়াকু বাঙালি জাতি স্বাধীনতা অর্জন করলেও যেন বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে পঙ্গু, দুর্বল ও দিকনির্দেশনাহীন হয়ে পড়ে। মেধা ও নেতৃত্বশূন্য হয়ে পড়লে সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসাবে পৃথিবীতে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে না-এমন নীল-নকশা বাস্তবায়নের লক্ষ্যেই হায়েনারা বুদ্ধিজীবী হত্যাযজ্ঞে মেতে উঠেছিল এই দিনে।

গোটা বাঙালি জাতি আজ গভীর কৃতজ্ঞতায় স্মরণ করছে দেশের শহীদ কৃতী সন্তানদের। আজ শোকাহত মানুষের ঢল নামবে সেদিনের সেই হত্যাযজ্ঞের স্মৃতিবিজড়িত রায়েরবাজারে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ, মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থান আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্মৃতিস্তম্ভে। অর্পণ করা হবে পুষ্পার্ঘ্য। দেশের সর্বত্র আজ জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে। শোকের প্রতীক কালো পতাকাও উড়বে। রায়েরবাজার বধ্যভূমি ও মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থান এলাকায় নেয়া হয়েছে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

একাত্তরের ডিসেম্বরে হত্যাযজ্ঞের শিকার শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রকৃত সংখ্যা এখনও নিরূপণ করা হয়নি। প্রাপ্ত তথ্যের ওপর ভিত্তি করে বাংলাপিডিয়ায় শহীদ বুদ্ধিজীবীদের যে সংখ্যা দেওয়া হয়েছে সে অনুযায়ী একাত্তরে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে ছিলেন ৯৯১ শিক্ষাবিদ, ১৩ সাংবাদিক, ৪৯ চিকিত্সক, ৪২ আইনজীবী এবং ১৬ শিল্পী, সাহিত্যিক ও প্রকৌশলী। 

এদের মধ্যে রয়েছেন ড. জি সি দেব, অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী, অধ্যাপক জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা, সন্তোষ ভট্টাচার্য, ড. মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, অধ্যাপক মুনীরুজ্জামান, অধ্যাপক আনোয়ার পাশা, অধ্যাপক গিয়াসউদ্দিন আহমেদ, ডা. ফজলে রাব্বী, ডা. আলীম চৌধুরী, ড. গোলাম মোর্তজা, ড. মোহাম্মদ শফি, শহীদুল্লাহ কায়সার, সিরাজউদ্দীন হোসেন, নিজামুদ্দিন আহমেদ লাডু ভাই, খন্দকার আবু তালেব, আ ন ম গোলাম মোস্তফা, শহীদ সাবের, নাজমুল হক, আলতাফ মাহমুদ, নতুন চন্দ্র সিংহ, আর পি সাহা, আবুল খায়ের, রশীদুল হাসান, সিরাজুল হক খান, আবুল বাশার, ড. মুক্তাদির, ফজলুল মাহি, ড. সাদেক, ড. আমিনুদ্দিন, হাবিবুর রহমান, মেহেরুন্নেসা, সেলিনা পারভীন, সায়ীদুল হাসানসহ আরো অনেকে।

সে সময়ের এই কৃতী বুদ্ধিজীবীদের নামের তালিকা তুলে দেওয়া হয়েছিল তত্কালীন জামায়াতে ইসলামীর সশস্ত্র ক্যাডার গ্রুপ কুখ্যাত আলবদর ও আল শামস বাহিনীর হাতে। পেছন থেকে মদদ যোগান পূর্ব পাকিস্তানের দায়িত্বে থাকা পাক জেনারেল রাও ফরমান আলী। ডিসেম্বরের ১০ থেকে ১৪ তারিখ পর্যন্ত সে তালিকা ধরে বুদ্ধিজীবী হত্যার ঘৃণ্যতম অপকর্মটি করে এই ঘাতক চক্র। সান্ধ্য আইনের মধ্যে রাতের আঁধারে তালিকাভুক্ত বুদ্ধিজীবীদের বাসা থেকে চোখ বেঁধে রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে নিয়ে গুলি করে ও বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। বিজয় অর্জনের পর স্বাধীন বাংলাদেশে রায়েরবাজার, মিরপুরসহ কয়েক জায়গায় পাওয়া যায় শহীদ বুদ্ধিজীবীদের ক্ষতবিক্ষত বিকৃত লাশ। পৃথিবীর অনেক জাতি যুদ্ধ করে, অনেক জীবন ও রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছে। কিন্তু এত প্রাণ কোনো জাতিকে দিতে হয়নি।

স্বাধীনতা লাভের দীর্ঘ চার দশক পর বুদ্ধিজীবী হত্যাকারী হিসেবে বেশ কয়েকজনের বিচারের রায় দিয়েছে আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এরা হলেন মতিউর রহমান নিজামী, গোলাম আযম, চৌধুরী মইনুদ্দিন ও আশরাফুজ্জামান খান। গোলাম আযম ছাড়া সবার ফাঁসির রায় হয়েছে। ফাঁসির আসামি চৌধুরী মইনুদ্দিন ও আশরাফুজ্জামান খান পলাতক রয়েছেন। জানা গেছে, চৌধুরী মইনুদ্দীন যুক্তরাজ্য এবং আশরাফুজ্জামান খান যুক্তরাষ্ট্রে পলাতক রয়েছেন। এদিকে মানবতাবিরোধী হত্যা মামলায় দণ্ডিত বুদ্ধিজীবী হত্যার অন্যতম হোতা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসির দণ্ড কার্যকর হয়েছে। এছাড়া বুদ্ধিজীবী হত্যার আরেক হোতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের ফাঁসির রায় কার্যকর হয়েছে।

কর্মসূচি: যথাযোগ্য ও শোকের আবহে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালনে দেশব্যাপী বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে শহীদদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, আলোচনা সভা, গান, আবৃত্তি, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র ও আলোকচিত্র প্রদর্শনী, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা প্রভৃতি। আওয়ামী লীগের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সূর্যোদয় ক্ষণে কেন্দ্রীয় কার্যালয়, বঙ্গবন্ধু ভবন ও সারাদেশের দলীয় সংগঠনের কার্যালয়ে কালো পতাকা উত্তোলন, জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ, সকাল ৭টা ১৫ মিনিটে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে, সকাল ৭টা ৪৫ মিনিটে বঙ্গবন্ধু ভবনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে এবং সকাল সাড়ে ৮টায় রায়েরবাজার বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন এবং বিকাল ৩টায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে আলোচনা সভা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে আজ সকাল ৬টা ১৫ মিনিটে উপাচার্য ভবনসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান-প্রধান ভবনে কালো পতাকা উত্তোলন, সকাল সাড়ে ৬টায় অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে জমায়েত এবং সকাল ৬টা ৩৫ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রাঙ্গণস্থ কবরস্থান, জগন্নাথ হল প্রাঙ্গণস্থ স্মৃতিসৌধ ও বিভিন্ন আবাসিক এলাকার স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ, মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণের উদ্দেশ্যে যাত্রা, বেলা ১১টায় উপাচার্যের সভাপতিত্বে ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র মিলনায়তনে আলোচনা সভা। এছাড়া বাদ জোহর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদসহ বিভিন্ন হল মসজিদ ও উপাসনালয়ে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে দোয়া অনুষ্ঠিত হবে।

গোনিউজ/এমবি

জাতীয় বিভাগের আরো খবর
টয়লেটসহ একাধিক সুবিধা নিয়ে দেশে আসছে ছাদখোলা দোতলা ট্যুরিস্ট বাস

টয়লেটসহ একাধিক সুবিধা নিয়ে দেশে আসছে ছাদখোলা দোতলা ট্যুরিস্ট বাস

‘রপ্তানিযোগ্য হারবাল প্রডাক্টের উৎপাদন প্রক্রিয়া ও মান উন্নয়ন’ প্রশিক্ষণ কর্মশালা

‘রপ্তানিযোগ্য হারবাল প্রডাক্টের উৎপাদন প্রক্রিয়া ও মান উন্নয়ন’ প্রশিক্ষণ কর্মশালা

পাঠ্যবইয়ের সংশোধনসহ সচিবদের একগুচ্ছ নির্দেশনা দিলেন প্রধানমন্ত্রী

পাঠ্যবইয়ের সংশোধনসহ সচিবদের একগুচ্ছ নির্দেশনা দিলেন প্রধানমন্ত্রী

শাহজালাল বিমানবন্দরে মাসুদের কাছে পাওয়া গেল ৩ কেজি সোনা

শাহজালাল বিমানবন্দরে মাসুদের কাছে পাওয়া গেল ৩ কেজি সোনা

ইজতেমায় এক বদনা পানি ১০ টাকা!

ইজতেমায় এক বদনা পানি ১০ টাকা!

হজে যাওয়ার মানুষ পাওয়া যাচ্ছে না, দফায় দফায় সময় বাড়াচ্ছে মন্ত্রণালয়

হজে যাওয়ার মানুষ পাওয়া যাচ্ছে না, দফায় দফায় সময় বাড়াচ্ছে মন্ত্রণালয়