আক্কাস আলী, রিকশা চালায়। বয়স বেশি হয়ে যাওয়াতে এখন আর আগের মতো পরিশ্রম করতে পারে না। পাশের বাড়ির জামিল মিয়া তাকে বুদ্ধি দিলো ব্যাটারিচালিত অটোরিক্সা চালানোর। তাতে কষ্ট অনেক কম হবে আবার অল্প সময়ে বেশি আয়ও করা যাবে। কারণ ব্যাটারিচালিত অটোরিক্সা খুব দ্রুত চলে তাই নির্ধারিত জায়গায় খুব তাড়াতাড়িই পৌঁছাতে পারবে। মজার কথা হল , আক্কাস আলী নিরক্ষর মানুষ , জানেন না আইনগত ভাবে এই বাহনটা অবৈধ।
কিস্তি থেকে টাকা তুলে আক্কাস আলী নিজেই কিনে ফেলেন ব্যাটারিচালিত অটোরিক্সা। স্বপ্ন দেখেন যেহেতু কষ্ট কম আবার দ্রুত চলে তাই ঋণ শোধও হবে তাড়াতাড়ি। মোটামোটি ভালোই দিন যাচ্ছিলো এই অটোরিক্সাটা কিনার পর। সেদিন আক্কাস আলীর ছোট মেয়েটা বায়না করলো একটা মেকআপ বক্স কিনে দিতে। পাশের বাড়ির আলেয়া নাকি মেকআপ বক্স দিয়ে নিজের গাল কেমন গোলাপ ফুলের মতো করে রাখে ! আক্কাস আলী এতো কিছু বুঝে না, তবে মেয়েকে কথা দেয় আজ কাজ থেকে ফেরার সময় মেকআপ বক্স নিয়ে আসবেন।
৪ অক্টোবর বগুড়া, দিনটি আক্কাস আলীর মেয়ের কাছে একদিকে অনেক বড় দিন, অন্যদিকে অনেক আনন্দের। বাবা কখন আসবে এই অপেক্ষাতে তার কাছে দিনটি বড় লাগছে , অন্যদিকে আনন্দের কারণ তার নিজের একটা মেকআপ বক্স হবে।
৪ অক্টোবর বগুড়া, আক্কাস আলীদের কাছে দিনটি কেমন জানি একটা ঘোরের দিন! কি থেকে কি হয়ে গেলো বুঝতেই পারলো না। আক্কাস আলীরা জানেন না প্রশাসন কি, তারা জানেন না তাদের রক্ত পানি করার টাকা দিয়ে কেনা অটোরিক্সাটি অবৈধ। যারা এই অবৈধ যানটি তৈরী করে আক্কাস অলীদের কাছে বিক্রি করে তারা একবারও বলে দেয় নি এই বাহনটি অবৈধ।
যারা এই অবৈধ যানটি ভাড়া দেন বা বিক্রি করেন তাদের কিন্ত কোনো ক্ষতি হয় নাই। কারণ তারা আগেই দোকান-পাট বন্ধ করে সরিষার তেল নাকে দিয়ে চলে গেছে। আমার প্রশ্ন তারা খবরটা পেলো কোথায় ? কিভাবে জানলো সেদিন অবৈধ যানবাহনের জন্য অভিযান চালানো হবে ? পিছনে রাগববোয়ালদের কেমন গন্ধ গন্ধ পাচ্ছি ! লাথিটা কি গরিবদের পেটে দেয়াটা খুব জরুরি ছিলো ?
অবৈধ কার্যক্রমের বিরুদ্ধে যেকোন অভিযান অবশ্যই প্রশংসার দাবীদার। কিন্ত সমস্যাটা অন্য জায়গায়। ব্যাটারিচালিত রিক্সা অবৈধ, কিন্ত পেশা তো অবৈধ নয়। তারা শুধু সতেরোটা রিক্সা বুলডোজার দিয়ে গুড়িয়ে দেয় নি, সতেরোটা পরিবারের স্বপ্ন গুড়িয়ে দিয়েছেন , মুখের অন্ন কেড়ে নিয়েছেন। প্রশাসনের কাজ মানুষের অন্নের ব্যবস্থা করা, ধ্বংস করা নয়।
আচ্ছা , ঢাকা শহরে তো অনেক ব্যাটারিচালিত রিক্সা আছে। প্রধান সড়কে এদের তেমন একটা দেখা না গেলেও অলিতে গলিতে এরা ভরপুর। কিছু কিছু জায়গায় ট্রাফিক পুলিশ এদের আটকালেও পাঁচ - দশ টাকার জন্য আবার এদের ছেড়ে দেয়। এই কাজগুলো কি প্রশাসনের চোখে পরে না ? ঢাকায় উল্টা পথে গাড়ি চালানো তো ক্ষমতাবানরা নিজেদের নিত্য দিনের নিয়ম করে নিয়েছেন। তো জনাব প্রশাসন তাদের ৫০০/৬০০ টাকার মামলা না দিয়ে তাদের গাড়িগুলো আপনাদের বুলডোজার দিয়ে গুড়িয়ে দেয়া যায় না ? নাকি বুলডোজারের জন্ম শুধু গরিবদের স্বপ্ন ভাঙ্গার জন্য, ক্ষমতাবানদের প্রাডো গাড়ির জন্য না !
ওকে, ফাইন। আপনারা আপনাদের দায়িত্ব পালন করেছেন ১৭টা অটোরিক্সা গুড়িয়ে দিয়ে। এখন মানবতার কাজটাও করে দেখান। এদের কাজের ব্যবস্থা করে দেন। ১৭টা পরিবারের জন্য কোনো একটা স্বপ্নের বাহন এনে দেন। কি করে দিবেন ? নাকি শুধু এদের পেট দেখে দেখে লাথিটাই দিবেন ?
যদিও আইন সবার জন্য সমান কিন্ত প্রয়োগটা হয় শুধুমাত্র গরিবদের ক্ষেত্রে। কই ক্ষমতাবানদের বার বার করা ভুলেও তো ওদের কিছু হলো না। উল্টো পথে গাড়ি আটকান , আবার তাদের সাবধান করে দেন ? তাহলে বুলডোজার চালানোর আগে এদের সাবধান করতে পারলেন না, যেমনটা করেছেন অটোরিক্সার রাঘোব বোয়ালদের ক্ষেত্রে ?