ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

রোহিঙ্গারদের আশ্রয় দিবো কি দিবো না?


গো নিউজ২৪ | মতামত ডেস্ক প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৩, ২০১৭, ০৭:১৭ পিএম
রোহিঙ্গারদের আশ্রয় দিবো কি দিবো না?

ঢাকা: দু’জন বাঙালি কখনো নিজেদের মধ্যে একমত হতে পারে না বলে একটা প্রচলিত কথা রয়েছে। এই কথার সত্যতাও কিন্ত রয়েছে। বাংলাদেশে যতো ধরণের সমস্যা আর ইস্যু হয়েছে বা হচ্ছে বা হবে আপনি এই প্রচলিত কথার প্রমাণ সাথে সাথেই পাবেন। বর্তমানে তেমনি একটা সমস্যা রয়েছে আমাদের। তা হলো রোহিঙ্গা ইস্যু।

মিয়ানমারে যে সহিংসতা বা গণহত্যা চলছে সেটা কোনোভাবেই মানা যায় না। এমনিতেই আমার আবেগ আর চোখের পানি খুব বেশি। অল্পতেই কষ্ট পাই, আর কান্না করি। সেই আমি যখন দেখি দুধের একটা বাচ্চার লাশ পানিতে ভেসে বেড়াচ্ছে, কান্না করতে করতে চোখের পানি শেষ করা একটা বাচ্চা আশ্রয়ের আশায় তাকিয়ে আছে, তখন আর নিজেকে ধরে রাখতে পারি না। বুক ফেটে কান্না আসে।

যখন শুনি আমারই মতো কোনো এক রোহিঙ্গা মেয়ে তারই দেশের সেনাবাহিনী দ্বারা ধর্ষিত হয়েছে তখন নিজের ভিতরেই এক চাপা কষ্ট হতে থাকে। কষ্ট আরো বেড়ে যায় যখন শুনি মেয়েটার কোলের বাচ্চাকে ছুঁড়ে ফেলে সেই পশু সেনাবাহিনী মেয়েটিকে নিজের পশুত্ব দেখিয়েছে।

কান্না আরো বেড়ে যায় যখন দেখি নিজের বাবার বয়সী কোনো লোক একটু নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য হাত জোড় করছেন। মায়ের বয়সী, দাদির বয়সী নারীরা চিৎকার করে সাহায্য চাচ্ছেন। মানুষ হয়ে মানুষের এতো কষ্ট সহ্য করতে পারি না। মনে হয় আশ্রয় দেই এদের একটু। একটু নিরাপদ আশ্রয় তো আমরা দিতেই পারি মানবিক দিক দিয়ে চিন্তা করে। 

আসলে আমরা মানবতার ছায়াতলে বৃহত্তর স্বার্থের কথা ভুলে যাই। ভুলে যাই মানবতার পরবর্তী ধাপগুলো কেমন হবে, কী হতে পারে? সংখ্যায় রোহিঙ্গারা এক দুজন না যে আমরা অনায়াসে এদের জায়গা দিয়ে দিবো। সংখ্যায় এরা হাজার হাজার লাখ লাখ। 

বর্তমান বিশ্বরাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নিজের দেশের সুবিধা আগে দেখতে হবে। নিজের দেশের জনগণের নিরাপত্তা আগে। নিজের দেশের সুনাম রক্ষা করা সবার আগে। আগে অনেক রোহিঙ্গা এদেশে প্রবেশ করেছে। বাংলাদেশে কী পরিমাণ রোহিঙ্গা রয়েছে তার কোনো সঠিক হিসাব নেই। 

সরকারিভাবে বলা হচ্ছে, টেকনাফে রোহিঙ্গাদের জন্য দুটি শরণার্থী শিবির রয়েছে। তাতে ২৮ হাজার রোহিঙ্গা রয়েছে। একইভাবে উখিয়া ও টেকনাফে বেসরকারি দুটি ক্যাম্প আছে। তাতে রয়েছে প্রায় ৫০ হাজার রোহিঙ্গা। বিভিন্ন দেশের এনজিওর পৃষ্ঠপোষকতায় এ ক্যাম্পগুলো চলে। মিয়ানমার কখনো এদের ফেরত নেবে না। এরাও আর মায়ানমার ফেরত যাবে না।

রোহিঙ্গারা আমাদের দেশের পাসপোর্ট নিয়ে বিভিন্ন দেশে পালিয়ে যায়। অনৈতিক কাজ করে বিভিন্ন দেশে আমাদের দেশের বদনাম করে বেড়াচ্ছে। গেল ২০১১ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর কালের কণ্ঠে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, প্রায় ৫০ হাজার রোহিঙ্গা বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িত। এর মধ্যে অনুপ্রবেশকারী ও শরণার্থী মিলে ১০ হাজার ভয়ঙ্কর অপরাধী। তাদের হাতে রয়েছে রকেট লঞ্চার, এম-১৬ রাইফেলসহ নানা ধরনের অস্ত্র ও সরঞ্জাম। মানব-পাচার, জঙ্গি তৎপরতা, অস্ত্র ও মাদক ব্যবসার সঙ্গে তারা জড়িত। পার্বত্য অঞ্চলের গহিন অরণ্যে তাদের অস্ত্রের কারখানাও রয়েছে।

আরেকটি পত্রিকায় রিপোর্ট বেরিয়েছে, রোহিঙ্গারা অস্ত্র কেনার জন্য ২০ কোটি টাকার তহবিল সংগ্রহ করেছে। মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের বিভিন্ন সূত্র থেকে তারা সংগ্রহ করেছে এ তহবিল। মাদক-পাচারের সঙ্গেও রোহিঙ্গাদের সংশ্লিষ্টতার তথ্য রয়েছে বাংলাদেশ সীমান্ত-রক্ষী বিজিবির হাতে। গত বছরের সেপ্টেম্বরে টেকনাফ পৌরসভার বাস-স্ট্যান্ডে বিজিবি জওয়ানরা অভিযান চালিয়ে এক হাজার ১০টি ইয়াবাসহ সেতারা বেগম ও তার স্বামী মো. খানকে গ্রেপ্তার করেছে। তারা উভয়ই রোহিঙ্গা। এর আগে ১৫ আগস্ট টেকনাফ সদরের জওয়ানরা ট্রানজিট নিয়ে আসা মিয়ানমারের মংডু শহরের মোহাম্মদ শহীদকে ৯৮৯টি ইয়াবাসহ আটক করে। এমন আরো অনেক জানা অজানা ঘটনা রয়েছে রোহিঙ্গাদের।

এখন আমরা যদি মানবতার খাতিরে আরো রোহিঙ্গাদের প্রবেশ করাই, তাহলে নিকট ভবিষ্যতে আমাদের দেশের অবস্থা কী হবে ধারণা করতে পারছেন? ধারণা করতে পারছেন আপনার সদ্য জন্ম নেয়া সন্তান, সদ্য স্কুলে যাওয়া সন্তান, ভার্সিটি পড়া ছোট ভাই-বোনদের ভবিৎষতের কথা? পরিবার নিয়ে নিরাপদে ঘুরে আসতে পারবেন চট্টগ্রাম, টেকনাফ, কক্সবাজার থেকে? এমন হাজারো প্রশ্ন মনে কি আসছে আপনাদের?

এমন যদি হতো, এই ভয়াবহ অবস্থায় ওদের আশ্রয় দেয়া হলো, তারপর যখন পরিস্থিতি ঠান্ডা হবে তখন ওরা চলে যাবে- তাহলে একটু চিন্তা করা যেতো। কিন্ত ওরা তো আর সেই মিয়ানমার জাহান্নামে ফেরত যাবে না। আর ওই জাহান্নাম মিয়ানমার ওদেরও কখনো ফেরত নেবে না।

অনেকে বলছেন, ভারত আমাদের যুদ্ধের সময় আশ্রয় দিয়েছিলো। ভারতে গিয়ে আমাদের দেশের মানুষ এমন ধ্বংসলীলা দেখায়নি। যুদ্ধশেষে প্রতিটা মানুষ আবার বাংলাদেশে চলে এসেছে। আর সব থেকে বড় কথা আমাদের আশ্রয় দেবার বিনিময়ে ভারত এর প্রতিদানও নিয়েছে। ভারত আমাদের আশ্রয় দিয়েছে তাই এখন আমরা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিবো, দুটা এক বিষয় না। আপনারা একটু ভেবে দেখুন।

জাতিসংঘ আমাদের কেন বলছে ওদের আশ্রয় দিতে? সে মিয়ানমারকে কেন বলছে না মানবিক বিপর্যয় থামাতে? আসলে কোনো কথা বলার থেকে সেই কাজ করে দেখানো অনেক কঠিন। সব দেশের ক্ষমতাবান ব্যক্তি কেন আজ চুপ? তারা মিয়ানমারের কোন শক্তিকে ভয় পাচ্ছে? আমার ছোট মাথায় এটা ঢুকছে না। বিশ্ব আজ নীরব এক এক সু চির কাছে! কেন?

অং সান সু চি হিটলারের নারী ভার্সন!

গোনিউজ২৪/এন

মতামত বিভাগের আরো খবর
নারীরা,মনের দাসত্ব থেকে আপনারা কবে বের হবেন?

নারীরা,মনের দাসত্ব থেকে আপনারা কবে বের হবেন?

আন্তর্জাতিক শিক্ষা দিবস ও আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা

আন্তর্জাতিক শিক্ষা দিবস ও আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা

সুচন্দার কষ্টে আমরাও সমব্যথী

সুচন্দার কষ্টে আমরাও সমব্যথী

প্রিন্টমিডিয়ার অন্তর-বাহির সংকট

প্রিন্টমিডিয়ার অন্তর-বাহির সংকট

সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বাড়ানো দরকার যেসব কারণে

সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বাড়ানো দরকার যেসব কারণে

সিলেটের শীর্ষ শিল্প উদ্যোক্তাদের নিয়ে একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ

সিলেটের শীর্ষ শিল্প উদ্যোক্তাদের নিয়ে একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ