ঢাকা: মাত্র ১১ বছরের শিশু গৃহকর্মী আদুরীকে নির্মমভাবে নির্যাতন করে মৃত ভেবে ডাস্টবিনে ফেলে দেয়া সেই গৃহকর্ত্রী নওরীন জাহান নদীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। রায় ঘোষণার সময় আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে ছিলেন নদী।
রায় ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে উত্তেজিত হয়ে পড়েন নির্যাতনকারী ওই নারী। তাকে বেশ অস্থির দেখা যায়। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তখন সতর্ক হয়ে যান। এসময় গণমাধ্যমকর্মীরা তার সঙ্গে কথা বলা ও ছবি তোলার প্রস্তুতি নেয়।
তবে রায় ঘোষণা শেষ হলে আদালত থেকে কারাগারে নিয়ে যেতে চাইলে নদী আরো উত্তেজিত হয়ে পড়েন। ক্ষিপ্ত হলে বলেন, ‘আমাকে বাইরে নিয়ে চলো। আমি পাঁচতলা থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করবো।’ এসময় গণমাধ্যমকর্মীরা ক্যামেরায় ছবি তুলতে চাইলে তিনি মুখে হাত দিয়ে নিজেকে আড়াল করেন।
এরপর আসামি নদীকে বেশ সতর্কতার সঙ্গে আদালত থেকে কারাগারে নিয়ে যায় পুলিশ। নদী কথা বলতে না চাইলেও তার পক্ষের আইনজীবী সাইফুর রহমান বলেন, ‘ঘোষিত আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করবেন।’
মঙ্গলবার (১৮ জুলাই) সকালে ঢাকা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৩-এর বিচারক জয়শ্রী সমাদ্দার গৃহকর্মী আদুরীকে নির্যাতনের মামলায় গৃহকর্ত্রী নওরিন জাহান নদীর বিরুদ্ধে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় ঘোষণা করেন।
এছাড়া রায়ে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে নদীকে। এ টাকা নির্যাতিত আদুরীকে দিতে আদেশ করা হয়েছে। রায় ঘোষণার সময় আসামি নদীর মা ইসরাত জাহানও উপস্থিত ছিলেন। তবে তাকে খালাস দেয়া হয়েছে।
এদিকে, নিজের ওপর চার বছর আগে ঘটা নির্মম-নিষ্ঠুর নির্যাতনের মামলার রায় শুনতে ট্রাইব্যুনালের এজলাসকক্ষে এসেছিল আদুরী। সঙ্গে ছিলেন তার মা সাফিয়া বেগম, খালা শাহিনুর বেগম ও মামা মামলার বাদী নজরুল চৌধুরীসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা। রায়ে তারা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় রাজধানীর বারিধারা ও ডিওএইচএস তেলের ডিপোর মাঝামাঝি রেললাইন সংলগ্ন ডাস্টবিন থেকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করা হয় কঙ্কালসার ও মৃতপ্রায় গৃহকর্মী আদুরীকে। উদ্ধারের সময় তার শরীরে ছিলো অসংখ্য নির্যাতনের চিহ্ন। পল্লবীর ১২ নম্বর সেকশনের ২৯/১, সুলতানা প্যালেসের দ্বিতীয় তলায় সাইফুল ইসলাম মাসুদের বাসায় গৃহকর্মীর কাজ করতো শিশু আদুরী।
দীর্ঘদিন মারধর, গরম খুন্তি ও ইস্ত্রির ছ্যাঁকা, ব্লেড দিয়ে শরীর পোঁচানো, মাথায় কোপ, মুখে আগুনের ছ্যাঁকা, খেতে না দেয়াসহ নানা নির্মম-নিষ্ঠুর নির্যাতন চালিয়ে মৃত ভেবে ওই ডাস্টবিনে ফেলে দিয়েছিলেন মাসুদের স্ত্রী গৃহকর্ত্রী নদী ও তার পরিবারের লোকজন। প্রায় দেড় মাস আদুরীকে চিকিৎসা দেয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। যখন তাকে রিলিজ দেয়া হয়, তখনও সে ভালোভাবে কথাও বলতে পারতো না। শরীর ছিলো প্রচণ্ড দুর্বল। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে ওই বছরের ৭ নভেম্বর আদুরী চলে যায় পটুয়াখালীর গ্রামের বাড়িতে।
নির্যাতনের ঘটনায় তিনদিন পর ২০১৩ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর পল্লবী থানায় নওরীন জাহান নদী, তার স্বামী সাইফুল ইসলাম মাসুদ, মাসুদের দুলাভাই চুন্নু মীর ও তাদের আত্মীয় রনিকে আসামি করে মামলা করেন আদুরীর মামা নজরুল চৌধুরী।
গো নিউজ২৪/এন