ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

রাজরাজেশ্বরে দেড় শতাধিক পরিবার গৃহহীন


গো নিউজ২৪ | চাঁদপুর প্রতিনিধি প্রকাশিত: আগস্ট ১৮, ২০১৭, ০৩:৫৭ পিএম আপডেট: আগস্ট ১৮, ২০১৭, ১০:০২ এএম
রাজরাজেশ্বরে দেড় শতাধিক পরিবার গৃহহীন

চাঁদপুর: চাঁদপুরের রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডে নদীর স্রোতে দেড় শতাধিক বাড়িঘর ভেঙে অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয়েছে। দোকান, ঘর-বাড়ি, মসজিদ, মাদরাসা গত দু’দিনে ভেঙে নদীতে চলে গেছে। আশপাশের লোকজন দ্রুত তাদের ঘর-বাড়ি নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে চলে যাচ্ছে।

বৃহস্পতিবার (১৭ আগস্ট) বিকেলে চাঁদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কানিজ ফাতেমা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। সেখানে গিয়ে ৬নং ওয়ার্ডের লগ্নীমারা চরে গৃহহীন মানুষদের সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং তাদের মাঝে শুকনো খাবার বিতরণ  করেন।

বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় হাজি কুদ্দুস বেপারী কান্দি জামে মসজিদটি নদীতে তলিয়ে যায়। এই মসজিদটিতে অর্ধ শতাধিক মুসল্লি প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতো বলে জানান মসজিদের ইমাম মাও. মো. আল-আমিন। 

চাঁদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কানিজ ফাতেমা গৃহহীনদের আশ্বস্ত করে জানান, স্থানীয় সংসদ সদস্য ডা. দীপু মনি এমপি এবং জেলা প্রশাসন ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা প্রণয়ন করে পুনর্বাসন করবে। হঠাৎ মেঘনা নদীতে উত্তরাঞ্চলের বন্যার পানি নেমে আসায় প্রবল স্রোতে বহমান। 

ফলে ১৬ আগস্ট রাত ১২টার পর থেকে ও বৃহস্পতিবার সকাল ১১টার পর থেকে রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নের লগ্নীমারার চর হাজী কুদ্দুস বেপারী কান্দির আশ্রায়ন প্রকল্পের ভাঙন দেখা দেয়। এই আশ্রায়ন প্রকল্পটি স্থানীয় সংসদ সদস্য ডা. দীপু মনি ২০১২ সালের ৯ মার্চ উদ্বোধন করেন। এই আশ্রায়ন প্রকল্পে শতাধিক পরিবার বসবাস করে। 

বুধবার রাতে ভাঙন শুরু হলে  যায়। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে তাদের পুনর্বাসন করা হবে। 

তিনি আরো বলেন, উত্তরাঞ্চল থেকে উজানের পানি চাঁদপুরের নদী সীমানার উপর দিয়ে নামতে শুরু করায় রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নে নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত ৩ বছর যাবৎ শতাধিক পরিবার এ আশ্রায়ন প্রকল্পে বসবাস করছে। এ সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অসহায় নদীভাংতি মানুষের মাঝে শুকনো খাবার ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মাধ্যমে ঔষধ বিতরণ করেন। 

আশ্রায়ন প্রকল্প এলাকায় নদী ভাঙন শুরু হলে অর্ধ শতাধিক পরিবারকে অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয়েছে। এরা হলো- নূরতারা, দিদার দর্জি, খলিল তাঁতি, সেকুল বেপারী, নূরে আলম গাজী, সালাউদ্দিন মাঝি, আলী হোসেন বেপারী, আইয়ুব আলী গাজী, আব্দুর রহিম বেপারী, কামাল বেপারী, ইউসুফ আলী বেপারী, সাত্তার বেপারী, ওমর আলী বেপারী, নবী বেপারী, আনোয়ারা বেগম, ইমান মাঝি, আহমেদ আলী, শরবত প্রধানীয়া, জমির আলী বেপারী, তপিল কাজী, আহছান পাটওয়ারী, মাওলানা হাছান, জিন্দা গাজী, ওচমান প্রধানীয়া, আবুল কাজী, মজিব  বেপারী, নেকমত হোসেন, তৈয়ব সরকার, ওছমান দেওয়ান, নুরুল হক শেখ, রহমত কুড়ালী, রুস্তম কুড়ালী, সেকান্তর মাল, জান শরিফ কুড়ালী, মনির খালাসী, খালেক পাটওয়ারী, নূরুল ইসলাম প্রমুখ। এদের বলিয়ারচর ও মান্দের বাজার এলাকায় সরিয়ে নেয়া হয়েছে। 

আশ্রায়ন প্রকল্পের একটি বৃহৎ অংশ মেঘনাতে 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, লগ্নীমারা চরের যেসব মানুষের ঘর-বাড়ি নদীর স্রোতে বিলীন হয়ে গেছে ও জীবন রক্ষার্থে যারা অন্যত্র উঁচু স্থানের সন্ধানে গিয়েছে তাদের উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঘর নির্মাণের জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্যের সাথে আলোচনা করে ত্রাণের টিন দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে। 

এছাড়া উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের ঘর নির্মাণের জন্যে যা যা করণীয় তা করা হবে। শুধু তাই নয়, অবহেলিত রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নবাসীকে প্রবল স্রোতের হাত থেকে রক্ষা করতে মাটির কেল্লা তৈরি করে সেখানে তাদের বসবাস করার পরিবেশ সৃষ্টি করার চেষ্টা করা হবে। 

ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হাজি হযরত আলী বেপারী জানান, ১ মাস আগে আমি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে এ ইউনিয়নে এ ধরনের নদী ভাঙনের বিষয়ে ব্যবস্থাগ্রহণের জন্য লিখিতভাবে অবগত করেছি। কিন্তু উপজেলা প্রশাসন এ ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। ফলে গত ১৬ আগস্ট রাত ১২টা থেকে লগ্নীমারা, বলিয়ার চর, গোয়াল নগর, মান্দেরবাজার এসব এলাকার প্রায় দেড় শতাধিক পরিবার স্রোতের তোড়ে তাদের ঘর-বাড়ি ভেঙে শরীয়তপুর জেলার পদ্মা নদীর চরে জেগে উঠা রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নের বাঁশগারির চরে আশ্রয় নিয়েছে। 

এছাড়া অনেকে রাজরাজেশ্বর ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন স্থানের উঁচু জায়গাতে এসে ঘর-বাড়ি ভেঙে স্তূপ করে রেখেছে। এদের ইউনিয়নের বিভিন্ন উঁচু স্থানে থাকার জন্যে আমরা ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা করার চেষ্টা চলছে। 

লগ্নীমারাচরের আশ্রায়ন প্রকল্পে প্রায় শতাধিক পরিবার তাদের সন্তানাদি নিয়ে বসবাস করছে বেশ কয়েক বছর ধরে। প্রমত্তা পদ্মা-মেঘনার ভাঙনের সাথে যুদ্ধ করে তারা এখানে বসবাস করলেও চলতি বর্ষার মৌসুমে পদ্মা-মেঘনার ভাঙন দেখা না দিলেও প্রচণ্ড স্রোতের তোড়ে বসতঘরগুলো ভেঙে নদীতে ভেসে যাচ্ছে। 

তিনি আরো জানান, লগ্নীমারা চরে বৃহস্পতিবার প্রায় ৩০টি বসতঘর নদীতে ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। অন্যদের উঁচু স্থানে ঘর ভেঙে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। বর্তমানে লগ্নীমারাচরের যে অবস্থা বিরাজ করছে তাতে যে কোনো মুহূর্তে অন্য বসবাসকারীদের ঘরগুলো স্রোতের তোড়ে ভেসে যেতে পারে। শুধু লগ্নীমারা নয়, পুরো ইউনিয়নটির নদীর পাড় সংলগ্ন বসবাসকারী প্রায় আরও ৫ শতাধিক পরিবার অজানা আতংকে রয়েছে। 

বর্তমানে মেঘনা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে লগ্নীমারার চর এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে এভাবে চলতে থাকলে পুরো ইউনিয়নটি যে কোন মুহূর্তে মেঘনার গর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে। গত বছর একইভাবে এই ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড গোয়াল নগরের চোকদারকান্দি, ৭নং ওয়ার্ড দেওয়ানকান্দির বলিয়ার চর, দেওয়ান বাড়ির শতাধিক পরিবারকে একইভাবে মেঘনার স্রোতে ঘর ভেঙে যাওয়ায় শরীয়তপুর জেলার পাশাপাশি পদ্মা নদীতে রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নের একটি চরে আশ্রয় দেয়া হয়েছে।

সদর উপজেলা নির্র্বাহী কর্মকর্তার সাথে পরিদর্শনের সময় উপস্থিত ছিলেন সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) অভিষেক দাস, ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. নাছির উদ্দিন আহমেদ, ইউনিয়ন পরিষদ সচিব মো. মিজানুর রহমান, ৬নং ওয়ার্ড সদস্য সফিক কুড়ালী প্রমুখ।

গোনিউজ২৪/পিআর

দেশজুড়ে বিভাগের আরো খবর
মানুষের বিশ্বাসকে পুঁজি করে কোটি টাকা নিয়ে পালালো ডাচ-বাংলা ব্যাংকের এজেন্ট

মানুষের বিশ্বাসকে পুঁজি করে কোটি টাকা নিয়ে পালালো ডাচ-বাংলা ব্যাংকের এজেন্ট

দিনের শুরুতেই বিআরটিসি বাসের চাপায় নিহত ৪ 

দিনের শুরুতেই বিআরটিসি বাসের চাপায় নিহত ৪ 

ধারের টাকা দিতে না পারায় বন্ধুর স্ত্রীকে বিয়ে

ধারের টাকা দিতে না পারায় বন্ধুর স্ত্রীকে বিয়ে

বোমাটি বিস্ফোরিত হলে বাসের সবাই মারা যেতেন

বোমাটি বিস্ফোরিত হলে বাসের সবাই মারা যেতেন

রেললাইনে বোমা বিস্ফোরণের চেষ্টা, হাতেনাতে আটক ৩

রেললাইনে বোমা বিস্ফোরণের চেষ্টা, হাতেনাতে আটক ৩

হাতকড়া পরা অবস্থায় বাবার জানাজায় বিএনপি নেতা

হাতকড়া পরা অবস্থায় বাবার জানাজায় বিএনপি নেতা