ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

যেখান থেকে শিক্ষা নিতে পারে মিয়ানমার, তা না হলে...


গো নিউজ২৪ | আন্তর্জাতিক ডেস্ক প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৫, ২০১৭, ০৭:০১ পিএম
যেখান থেকে শিক্ষা নিতে পারে মিয়ানমার, তা না হলে...

 গত ২৫ আগস্ট থেকে গেরিলা সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা সালভেশন আর্মি— আরসা ও মিয়ানমার সরকারের সশস্ত্র নিরাপত্তা বাহিনীর বিরোধ আরো তীব্র হয়েছে। কয়েক দিন আগে আরসা যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করার পরও মিয়ানমার সরকার তা প্রত্যাখ্যান করে এককথায় এই বলে যে তারা সন্ত্রাসীদের সঙ্গে কোনো সমঝোতা করে না।

যেহেতু বিরোধের পেছনের মৌলিক কারণগুলো অমীমাংসিতই রয়ে গেছে, সেহেতু নতুন নতুন সংকট শিগগিরই দেখা দেবে। কোনো কোনো গণমাধ্যমের আশঙ্কা, সংকট আরো খারাপের দিকে যদি যায় দেশটির পরিণাম হতে পারে যুগোস্লাভিয়ার মতো; সেখানে গৃহযুদ্ধ ছড়িয়ে পড়েছিল, মানুষের দুর্দশা চরমে পৌঁছেছিল এবং শেষ পর্যন্ত দেশটি ভেঙেও গিয়েছিল। সোশ্যালিস্ট ফেডারেল রিপাবলিক অব যুগোস্লাভিয়ার এই কয়েক টুকরো হয়ে যাওয়ার পেছনে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যকার বিরোধই বড় শক্তি হিসেবে কাজ করেছিল।

এখানে এ ধরনের পরিণতি ঠেকাতে চাইলে রাখাইন সংকট অবশ্যই সমাধান করতে হবে। কারণ মিয়ানমারের ওপর এর প্রভাব বহুমাত্রিক। রাখাইনের অবস্থান মিয়ানমারের পশ্চিমাংশে। এখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ হচ্ছে বৌদ্ধ জাতিগোষ্ঠীর মানুষ। রোহিঙ্গারা সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠীর এবং তাদের বেশির ভাগই মুসলমান। কয়েক দশক ধরে রাখাইন ও রোহিঙ্গারা যে তীব্র ও গভীর বিরোধের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তার কারণ শুধু ধর্ম নয়।

রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক সম্পদের স্বল্পতা, জমি ও কর্মসংস্থানের সুযোগ নিয়ে প্রতিযোগিতাও এ জন্য সমান দায়ী। রাখাইনসহ মিয়ানমারের অন্য বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের ধারণা, রোহিঙ্গারা বহিরাগত, তারা এসেছে বাংলাদেশ থেকে। তাই সরকারেরও উচিত নয় তাদের নাগরিকত্বের সুবিধা দেওয়া। তাদের মিয়ানমার থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার দাবিও তারা তুলে এসেছে সরকারের কাছে।

তবে রোহিঙ্গারা বিশ্বাস করে, যেহেতু তারা বহু বছর ধরে মিয়ানমারেই বসবাস করে এসেছে, নাগরিকত্বসহ অন্যান্য রাষ্ট্রীয় অধিকার ও সুযোগ-সুবিধা তাদের প্রাপ্য। রাখাইন সংঘাত ও শরণার্থী সমস্যা নিয়ে ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) সরকারের সামনে এসে দুধারা তলোয়ার হিসেবে ঘরে-বাইরে তারা যে সংকটে পড়েছে, ক্ষমতাসীন হওয়ার পর এমন দ্বৈত সংকটে তারা আর পড়েনি। 

অং সান সু চির নেতৃত্বে সরকার গত বছরজুড়ে ধর্মীয় বিরোধ প্রশমনে নানা ধরনের উদ্যোগই নিয়েছে। গত ২৪ আগস্ট সন্ধ্যায় মিয়ানমার সরকারের তরফে ঘোষণা আসে, জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বাধীন রাখাইন কমিশনের সুপারিশমালা অনুসারে তারা কিছু উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করবে। তবে ঠিক তার পরদিনই ২৫ আগস্ট পুলিশের ওপর খুবই শক্তিশালী ও সহিংস সন্ত্রাসী হামলার পর এই স্থিতিশীল পরিবেশটি নষ্ট হয়ে যায়। থেমে যায় পরিবেশ উন্নয়নের উদ্যোগও।

মিয়ানমারের বাইরেও অনেক রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়ে আছে এবং দেশ-বিদেশের সব রোহিঙ্গারই অভিযোগ হচ্ছে, মিয়ানমার সরকার দীর্ঘদিন ধরেই মানবাধিকার লঙ্ঘন করে আসছে এবং সীমান্ত অতিক্রমকালে তাদের ওপর গুলি চালাচ্ছে। এবারের রাখাইনের এই চরম সহিংসতা মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্তে মারাত্মক রকমের শরণার্থী সমস্যার জন্ম দিয়েছে। শুধু তা-ই নয়, মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর পাশাপাশি সারা বিশ্বেও ছড়িয়ে পড়েছে উদ্বেগ।

আসিয়ান সংস্থার বৃহত্তম মুসলিম দেশ ইন্দোনেশিয়া এবং দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ মালয়েশিয়াও মিয়ানমারের ওপর নিরবচ্ছিন্ন চাপ প্রয়োগ করে যাচ্ছে রোহিঙ্গা ইস্যুতে। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপের রাষ্ট্রগুলো এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো অং সান সু চি ও তাঁর সরকারকে চাপ দিচ্ছে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের নাগরিকত্ব লাভের অধিকারটি ফিরিয়ে দিতে।

রাখাইনের পরিস্থিতি যদিও কোনো আশার আলো দেখাচ্ছে না, সাবেক যুগোস্লাভিয়ার মতো দেশ ভেঙে যাওয়ার পরিণতি মিয়ানমারের হয়তো হবে না। এর প্রথম কারণটি হচ্ছে, বিগত নব্বইয়ের দশকে যুগোস্লাভিয়ার গৃহযুদ্ধের মূলে ছিল এর কয়েকটি প্রজাতন্ত্রের স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে মাথা তুলে দাঁড়ানোর আকাঙ্ক্ষা। মিয়ানমারের সমস্যার ধরনটি অন্য রকম। 

যুগোস্লাভিয়ায় যেখানে বহু জাতির ও বহু ধর্মের বিভেদ ছিল, আরাকানের মূল সমস্যা হচ্ছে বৌদ্ধ ও মুসলমানদের মধ্যকার বিরোধ। দ্বিতীয়ত, মিয়ানমারের আরাকানই শুধু নয়, দেশটির শান, কাচিন ও মন রাজ্যে ২০টির মতো শাখা রয়েছে স্থানীয় গেরিলা গোষ্ঠীর। বিভিন্ন দাবি থেকে তারাও সরকারি বাহিনীর সঙ্গে সশস্ত্র সংঘাতে জড়িয়েছে। তবে এখনো তারা স্বাধীনতাকামী হয়ে ওঠেনি। বরং তারা জোর দিয়ে বলছে, আরো বেশি স্বায়ত্তশাসনই তাদের কাম্য।

পূর্ব ইউরোপ থেকে রুশ প্রভাব হ্রাসে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ন্যাটো সাবেক যুগোস্লাভিয়ার ওই গৃহযুদ্ধে গভীরভাবে জড়িয়ে পড়েছিল। বিশেষ করে ১৯৯০ সালে ন্যাটো বাহিনীগুলো যুগোস্লাভিয়ায় ৭৮ দিন ধরে বোমা বর্ষণ করেছিল। ‘মানবতার বিপর্যয় রোধ’ করার কথা বলে চলেছিল এই হামলা। এভাবেই তারা বাধ্য করেছিল যুগোস্লাভিয়ার সরকারকে পদত্যাগে। কসোভোর স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে অভ্যুদয়ের সূচনা হয়েছিল এভাবেই।

এখনো পর্যন্ত মিয়ানমারে এ ধরনের হস্তক্ষেপের ঘটনা ঘটেনি, তবে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ ইতিমধ্যেই এই আভাস দিয়েছে যে তারা রাখাইনে ‘মানবতার বিপর্যয় রোধ’ করতে চায়।

এখন রাখাইনের সামনে জরুরি কাজটি হচ্ছে মিয়ানমার সরকার, সেনাবাহিনী, বৌদ্ধ ও রোহিঙ্গা মুসলমান সম্প্রদায়—সবাই মিলে এমন একটি সমাধানসূত্র খোঁজা, যার আলোয় সংকট থেকে বেরোনোর পথটি দেখা যাবে। একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল তোলার বদলে স্থিতিশীল ও সম্প্রীতির একটি আবহ সৃষ্টি সম্ভব হবে এভাবেই।

লেখক : মিয়ানমারের শিক্ষাবিদ। চায়না ইনস্টিটিউট অব কনটেম্পরারি ইন্টারন্যাশনাল রিলেশন্সের সহযোগী অধ্যাপক ও বে অব বেঙ্গল শাখার প্রধান।-কা.ক.
সূত্র : মিয়ানমারের গণমাধ্যম মিজিমা ডটকম

গো নিউজ২৪/এবি

আন্তর্জাতিক বিভাগের আরো খবর
বাংলাদেশ-ভারত যাতায়াত সহজ করতে চালু হচ্ছে অন অ্যারাইভাল ভিসা

বাংলাদেশ-ভারত যাতায়াত সহজ করতে চালু হচ্ছে অন অ্যারাইভাল ভিসা

পাকিস্তানের নির্বাচনে জিতে যাচ্ছে ইমরান খান-সমর্থিত স্বতন্ত্ররা

পাকিস্তানের নির্বাচনে জিতে যাচ্ছে ইমরান খান-সমর্থিত স্বতন্ত্ররা

একসঙ্গে মরতে এসে সরে গেলেন প্রেমিকা, ট্রেনে কেটে প্রেমিকের মৃত্যু

একসঙ্গে মরতে এসে সরে গেলেন প্রেমিকা, ট্রেনে কেটে প্রেমিকের মৃত্যু

তোশাখানা কী, চাঞ্চল্যকর যে মামলায় স্ত্রীসহ ফেঁসে গেলেন ইমরান খান

তোশাখানা কী, চাঞ্চল্যকর যে মামলায় স্ত্রীসহ ফেঁসে গেলেন ইমরান খান

জাপানে ২৪ ঘণ্টায় ১৫৫টি ভূমিকম্পের আঘাত

জাপানে ২৪ ঘণ্টায় ১৫৫টি ভূমিকম্পের আঘাত

ডালিম দিয়ে তৈরি আফগানিস্তানের পানীয় বিশ্বজুড়ে আলোচনায়, কিনছে আমেরিকাও

ডালিম দিয়ে তৈরি আফগানিস্তানের পানীয় বিশ্বজুড়ে আলোচনায়, কিনছে আমেরিকাও