ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যুদ্ধে কতক্ষণ টিকতে পারবে উ. কোরিয়া?


গো নিউজ২৪ | আন্তর্জাতিক ডেস্ক প্রকাশিত: আগস্ট ১৩, ২০১৭, ০৪:৪২ পিএম আপডেট: আগস্ট ১৩, ২০১৭, ১০:৪২ এএম
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যুদ্ধে কতক্ষণ টিকতে পারবে উ. কোরিয়া?

যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর কোরিয়ার সামরিক উত্তেজনা সাম্প্রতিক সময়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোর সবচেয়ে আলোচিত খবর। এই বুঝি যুদ্ধে জড়িয়ে যায় দুই দেশ! চলছে হুমকি আর পাল্টা হুমকি। এ নিয়ে উদ্বেগে আছে প্রতিবেশী দেশগুলোও। পরমাণু শক্তিধর দেশ দুটি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়লে ক্ষতি যে হবে অপূরণীয়, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। এরইমধ্যে প্রশান্ত মহাসাগরে মার্কিন দ্বীপ গুয়ামে হামলা চালানোর হুমকি দিয়েছে কিমের বাহিনী। অপরদিকে যুক্তরাষ্ট্রের কিছু হলে খবর আছে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

তবে ইতোমধ্যে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর কোরিয়ার মধ্যে কার সামরিক সক্ষমতা কতখানি। যুদ্ধের ময়দানে এখন পর্যন্ত মার্কিন বাহিনীকেই সর্বশ্রেষ্ঠ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আর এই বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে গেলে কতক্ষণ টিকে থাকতে পারবে কিমের সেনারা? সামরিক বিশ্লেষকদের মধ্যে এ নিয়ে চলছে নানা হিসেব নিকেশ।

বিশ্লেষকদের মতে, উত্তর কোরিয়ার ১২ লাখ নিয়মিত সেনাবাহিনী এবং ৪০ থেকে ৭০ লাখ অনিয়মিত সেনার বিরাট বহর থাকলেও তাদের বিমান ও নৌবাহিনীর সক্ষমতা যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় খুবই কম। বিশেষজ্ঞদের দাবি, প্রায়ই জ্বালানি তেলের স্বল্পতার কারণে উত্তর কোরীয় বিমানবাহিনী তাদের সব বিমান চালাতে পারে না। এ কারণে তাদের বিমানবাহিনীর পাইলটদের আকাশে যুদ্ধ পরিচালনা করার অভিজ্ঞতাও তূলনামূলক কম। একই অবস্থা দেশটির নৌবাহিনীরও।

তবে দূরবর্তী স্থাপনায় নিক্ষেপণযোগ্য পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করে এই দুর্বলতা অনেকটা পুষিয়ে নিয়েছেন কিম। সম্প্রতি মার্কিন বিমানবাহী রণতরী কোরিয়া অভিমুখে যাত্রা করলে আক্রমণ মোকাবিলায় পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের হুমকি দিয়ে বসে উত্তর কোরিয়া। দেশটির উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী হান সং রিয়ল মার্কিন বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে (এপি) দেয়া সাক্ষাতকারে বলেন, ‘আমাদের শক্তিশালী পারমাণবিক বোমার মজুদ রয়েছে। আর মার্কিন হামলার মুখে আমরা নিশ্চিতভাবেই সে অস্ত্রগুলো কোলে করে নিয়ে বসে থাকবো না। মার্কিন বিমান বাহিনী যদি আক্রমণ করে তবে আমরা তার সমুচিত জবাব দিবো।’

উত্তর কোরীয় বাহিনী

হাউড্রোজেন বোমায় উত্তর কোরিয়া যেন গোটা বিশ্ব থেকেই বিচ্ছিন্ন এক দেশ। পরমাণু অস্ত্র উন্নয়ন ও সমৃদ্ধকরণে দেশটি এখন ছাড়িয়ে গেছে বিশ্বের প্রভাবশালী অনেক দেশকে। গোটা বিশ্বই তাদের পরমাণু অস্ত্র উন্নয়ন প্রক্রিয়া নিয়ে আতঙ্কিত। এই পরমাণু অস্ত্রের সমৃদ্ধকরণের অভিযোগে বারবার পড়তে হয়েছে নিষেধাজ্ঞায়। ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তিতে ক্রমাগত উন্নয়ন চালাচ্ছে উত্তর কোরিয়া। বিশেষজ্ঞদের মতে, উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লা প্রায় ৯ হাজার কিলোমিটার। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের একটি অংশে হানা দিতে সমর্থ তারা। সর্বশেষ ২০১৫ সালে হাউড্রোজেন বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ফের ক্ষমতার আস্ফালন দেখায় উত্তর কোরিয়া। ওই বিস্ফোরণে ভূগর্ভ কেঁপে ওঠে ভূমিকম্পেও। রিখটার স্কেলে যার মাত্রা ছিল ৫.১। 

উত্তর কোরিয়া মিলিটারির অফিসিয়াল নাম ‘কোরিয়ান পিপলস আমি’। মোট পাঁচটি শাখার সমন্বয়ে গঠিত এই সামরিক সংস্থা। দেশটির ন্যাশনাল ডিফেন্স কমিশনের হাতে রয়েছে এর নিয়ন্ত্রণ। এই সংস্থার পাঁচটি শাখা হচ্ছে আর্মি গ্রাউন্ড ফোর্স, নেভি, এয়ারফোর্স, আর্টিলারি গাইডেন্স ব্যুরো ও স্পেশাল অপারেশন ফোর্স। বার্ষিক বাজেট প্রায় ছয় বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বিশ্বে বর্তমান সময়ে উত্তর কোরিয়া বৃহৎ সামরিক শক্তির দেশ। দেশটিতে বর্তমান আর্মির সংখ্যা প্রায় ১ দশমিক ২ মিলিয়ন। এই সংখ্যা বিশ্বে চতুর্থ। যে কোনো সামরিক পদক্ষেপ কোরিয়ান পিপলস আর্মিকে মিলিটারি অব সাউথ কোরিয়া ও ইউনাইটেড স্টেটস ফোর্সেস কোরিয়ার মুখোমুখি হতে হয়।

এছাড়া উত্তর কোরিয়ার আট শতাধিক ব্যালাস্টিক মিসাইল রয়েছে বলে ধারণা করা হয়। এর মধ্যে লং রেঞ্জের মিসাইল যেমন রয়েছে আবার শর্ট রেঞ্জের মিসাইলও রয়েছে। এই লং রেঞ্জের মিসাইলকে স্কাড মিসাইলে উন্নীত করা হচ্ছে। স্কাড মিসাইল অনায়াসে যে কোনো দিকে ছুটতে পারে। ১৯৮৪ সালে উত্তর কোরিয়া তার নিজস্ব প্রযুক্তির মাধ্যমে স্কাড-বি মিসাইলের উন্নয়ন করে। নুডং নামে মধ্যম রেঞ্জের মিসাইলও অনেক আছে উত্তর কোরিয়ার। এসব মিসাইল আঘাত হানতে পারে দুই হাজার ৯০০ কিলোমিটার থেকে ১০ হাজার কিলোমিটার দূরত্বে। নতুন মডেলের একটি মিসাইল দিয়ে ১৫ হাজার দূরত্বের আঘাত হানতে সক্ষম উত্তর কোরিয়া।

উত্তর কোরিয়া এখন পারমাণবিক শক্তির দেশ। দেশটির দুই থেকে নয়টি পারমাণবিক বোমার কাঁচামাল আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। একবার দেশটি পারমাণবিক বোমার পরীক্ষা করে জাপান ও উত্তর-গণ-কোরিয়াসহ পশ্চিমা বিশ্বের ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছিল। এই পরীক্ষাটি হচ্ছে দেশটির দ্বিতীয় পারমাণবিক পরীক্ষা। এর আগে ১৯০৬ সালের অক্টোবরে শর্ট রেঞ্জ মিসাইলের প্রথম পারমাণবিক পরীক্ষা চালিয়েছিল দেশটি। ২০০৩ থেকেই পারমাণবিক অস্ত্র হাতে থাকার কথা বলে আসছে উত্তর কোরিয়া। ২০০৬ সালের অক্টোবরে তিনটি পারমাণবিক বিস্ফোরণের কথা ঘোষণা করে তারা। ২০১৩ সালে তৃতীয়বার পারমাণবিক পরীক্ষা চালায় বলে কোরীয় প্রশাসন দাবি করে।

রণাঙ্গনে মার্কিন সেনারা

বর্তমানে উত্তর কোরিয়ার ডুবোজাহাজ আছে ৭০টি, ট্যাংক ৪ হাজার ২০০টি, জঙ্গিজেট ৪৫৮টি, ফিক্সড উইং অ্যাটাক এয়ারক্রাফট আছে ৫৭২টি। এর বাইরে নেভি শিপ আছে ৭০৮টি, মার্চেন্ট মেরিন স্ট্রেন্থ ১৬৭টি, সাবমেরিন ৯৭টি, পেট্রল ও কোস্টাল ক্রাফট ৪৯২টি, মাইন ওয়ারফেয়ার ক্রাফট আছে ২৩টি, উভচর ক্রাফট ১৪০টি, ল্যান্ড-বেইজড অস্ত্র ১৬ হাজার ৪০০টি, সাঁজোয়া যান ২ হাজার ৫০০টি, সেলফ-প্রোপেলড গান আছে ৪ হাজার ৪০০টি, মাল্টিপল রকেট লাঞ্চার সিস্টেম ২ হাজার ৫০০টি, মর্টার্স আছে ৭ হাজার ৫০০টি। উত্তর কোরিয়ার বিমানবাহিনীর রয়েছে ১১ হাজার এন্টি-এয়ারক্রাফট অস্ত্র, মোট এয়ারক্রাফট আছে ১ হাজার ৭৭৮টি, হেলিকপ্টার ৬২১টি এবং এয়ারপোর্ট আছে ৭৭টি।

অপরদিকে সামরিক সক্ষমতায় বিশ্বে সবার উপরে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির সামরিক বাহিনীতে যুদ্ধের জন্য সক্রিয় সদস্য ১৪ লাখ। সংরক্ষিত সক্রিয় সদস্য ১১ লাখ। স্থলযুদ্ধের জন্য ট্যাংক আছে আট হাজার ৮৪৮টি। সাঁজোয়া যান (এএফভি) ৪১ হাজার ৬২টি। স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালু আগ্নেয়াস্ত্র (এসপিজি) এক হাজার ৯৩৪টি। টাওয়েড-আর্টিলারি (এক হাজার ২৯৯ টি। মাল্টিপল লান্স রকেট সিস্টেমস (এমএলআরএস) এক হাজার ৩৩১ টি।

দেশটির সামরিক বাহিনীর মোট বিমান ১৩ হাজার ৮৯২টি। যুদ্ধবিমান দুই হাজার ২০৭টি। ফিক্সড-উইং অ্যাটাক এয়ারক্রাফট দুই হাজার ৭৯৭টি। পরিবহন বিমান পাঁচ হাজার ৩৬৬টি। প্রশিক্ষণ বিমান দুই হাজার ৮০৯টি। হেলিকপ্টার ছয় হাজার ১৯৬টি। অ্যাটাক হেলিকপ্টার ৯২০টি। মোট নৌপথে সক্ষমতা বাড়ানোর মতো নৌযান ৪৭৩টি। বিমান বহনে সক্ষম রণতরী আছে ২০টি। ফ্রিগেট ১০টি। ডেস্ট্রয়ার ৬২টি, সাবমেরিন ৭২টি। কোস্টাল ডিফেন্স ক্র্যাফট ১৩টি, মেরিন ওয়ারফেয়ার ১১টি।

এটা ঠিক যে যুদ্ধে অস্ত্রই শেষ কথা নয়। যুদ্ধ হচ্ছে এক ধরনের কৌশল। তবু প্রশ্ন থেকে যায়, বিশ্বের সর্বাধুনিক সমরাস্ত্রে সজ্জিত মার্কিন বাহিনীর কাছে রণাঙ্গনে কতক্ষণ টিকতে পারবে উত্তর কোরিয়া।

গো নিউজ২৪/ আরএস

আন্তর্জাতিক বিভাগের আরো খবর
বাংলাদেশ-ভারত যাতায়াত সহজ করতে চালু হচ্ছে অন অ্যারাইভাল ভিসা

বাংলাদেশ-ভারত যাতায়াত সহজ করতে চালু হচ্ছে অন অ্যারাইভাল ভিসা

পাকিস্তানের নির্বাচনে জিতে যাচ্ছে ইমরান খান-সমর্থিত স্বতন্ত্ররা

পাকিস্তানের নির্বাচনে জিতে যাচ্ছে ইমরান খান-সমর্থিত স্বতন্ত্ররা

একসঙ্গে মরতে এসে সরে গেলেন প্রেমিকা, ট্রেনে কেটে প্রেমিকের মৃত্যু

একসঙ্গে মরতে এসে সরে গেলেন প্রেমিকা, ট্রেনে কেটে প্রেমিকের মৃত্যু

তোশাখানা কী, চাঞ্চল্যকর যে মামলায় স্ত্রীসহ ফেঁসে গেলেন ইমরান খান

তোশাখানা কী, চাঞ্চল্যকর যে মামলায় স্ত্রীসহ ফেঁসে গেলেন ইমরান খান

জাপানে ২৪ ঘণ্টায় ১৫৫টি ভূমিকম্পের আঘাত

জাপানে ২৪ ঘণ্টায় ১৫৫টি ভূমিকম্পের আঘাত

ডালিম দিয়ে তৈরি আফগানিস্তানের পানীয় বিশ্বজুড়ে আলোচনায়, কিনছে আমেরিকাও

ডালিম দিয়ে তৈরি আফগানিস্তানের পানীয় বিশ্বজুড়ে আলোচনায়, কিনছে আমেরিকাও