ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মুক্তিযোদ্ধা কোটার পদ সংরক্ষণের নিয়ম শিথিলের অনুরোধ


গো নিউজ২৪ | অনলাইন ডেস্ক প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৮, ২০১৬, ১২:৩৬ পিএম
মুক্তিযোদ্ধা কোটার পদ সংরক্ষণের নিয়ম শিথিলের অনুরোধ

বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে (বিসিএস) কোটার প্রার্থী পাওয়া যাচ্ছে না। অর্থাৎ যাদের অগ্রাধিকার দেওয়ার জন্য চাকরিতে কোটা পদ্ধতি চালু করা হয়েছে তাদের মধ্য থেকে যোগ্য প্রার্থী পাওয়া যাচ্ছে না।

সাধারণ ক্যাডারের ক্ষেত্রে বিষয়টি এখনো প্রকট আকার ধারণ না করলেও কারিগরি বা পেশানির্দিষ্ট ক্যাডারের ক্ষেত্রে সমস্যাটি উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। শুধু মুক্তিযোদ্ধাবিষয়ক কোটাই নয়, নারী কোটা, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কোটারও যোগ্য প্রার্থী মিলছে না।

এ অবস্থায় কোটা সংরক্ষণের বাধ্যবাধকতা শিথিল করার জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ জানিয়েছে পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি)। গতকাল বুধবার এ-সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে দিয়েছে পিএসসি।

পিএসসির চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক বলেন, মুক্তিযোদ্ধা কোটার পদ সংরক্ষণ করার নিয়ম ৩৬তম বিসিএসের জন্য শিথিল করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। কারণ শিথিল করা না হলে অনেক পদ শূন্য থেকে যাবে। বিশেষ করে কারিগরি ও পেশাভিত্তিক ক্যাডারের পদ শূন্য থাকবে।

উল্লেখ্য, ২০১০ সালে মন্ত্রিসভা সিদ্ধান্ত নেয়, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় যোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে সংশ্লিষ্ট পদ সংরক্ষণ করতে হবে। পরের বিসিএসের মাধ্যমে এই শূন্যপদ মুক্তিযোদ্ধা কোটার মাধ্যমেই পূরণ করতে হবে। এখন পরিস্থিতি এমন হয়েছে যে পরের বিসিএসের মাধ্যমেও মুক্তিযোদ্ধা কোটার শূন্যপদ পূরণ করা যাচ্ছে না। কিছু পদ বছরের পর বছর শূন্য থাকছে। ওই সব পদে কর্মকর্তা না থাকায় সাধারণ মানুষ প্রাপ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এর আগেও দুইবার এ জাতীয় সমস্যায় পড়েছিল পিএসসি। তখন সরকারকে কোটা সংরক্ষণের নিয়ম শিথিল করার অনুরোধ করা হয়েছিল। মন্ত্রিসভা শুধু একটি বিসিএসের জন্য কোটার শূন্যপদ সংরক্ষণ করার নিয়ম শিথিল করার সিদ্ধান্ত নেয়। কয়েক বছর পর আবার পদ সংরক্ষণের নিয়ম শিথিল করার অনুরোধ জানায় পিএসসি। সেবারও শুধু একটি বিসিএসের জন্যই শিথিল করা হয়।

পিএসসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কয়েক বছর ধরে কারিগরি ক্যাডারগুলোতে বিভিন্ন কোটার যোগ্য প্রার্থী পাওয়া যাচ্ছে না। ২৮তম থেকে ৩১তম এবং ৩৩তম থেকে ৩৫তম বিসিএসে সাধারণ ক্যাডারগুলোর ক্ষেত্রে শূন্যপদের চেয়ে কৃতকার্য প্রার্থী বেশি থাকায় ওই সব ক্যাডারের মুক্তিযোদ্ধা, নারী ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কোটায় কোনো পদ খালি থাকেনি। কিন্তু কারিগরি ও পেশানির্দিষ্ট ক্যাডারের বিশেষ করে চিকিৎসা, কৃষি, মৎস্য, পশুপালন, প্রকৌশল ও শিক্ষকতা ক্যাডারে মুক্তিযোদ্ধা, নারী ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কোটায় পদের চেয়ে কৃতকার্য প্রার্থীর সংখ্যা কম ছিল। ফলে এসব কোটার সব পদ পূরণ করা যায়নি।

৩৬তম বিসিএসে দুই হাজার ১৮০টি শূন্যপদে লোক নিয়োগ করা হবে। এর লিখিত পরীক্ষা শেষ হয়েছে। ফলাফল তৈরির কাজ চলছে। এ বিসিএসে চিকিৎসা, কৃষি, প্রকৌশল, মৎস্য, পশুপালন ও শিক্ষকতা ক্যাডারের পদ এক হাজার ৬৩৮টি। এসবের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা কোটার ৪৯১টি (৩০ শতাংশ), নারী কোটার ১৬৪টি (১০ শতাংশ) ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কোটার ৮২টি (৫ শতাংশ) পদ রয়েছে। এই ৭৩৭টি পদের অধিকাংশই খালি থাকবে। ফলে সংশ্লিষ্ট দপ্তর বা অধিদপ্তর কর্মকর্তার অভাবে পড়বে।

সরকারের কাছে পাঠানো চিঠিতে পিএসসি বলেছে, কিছু ক্ষেত্রে প্রার্থী কম থাকায় মেধা কোটার সব পদও পূরণ করা সম্ভব হয় না। মুক্তিযোদ্ধা কোটার পদ সংরক্ষণের নিয়ম থাকায় কারিগরি ও পেশাগত ক্যাডারের মুক্তিযোদ্ধা কোটার অপূরণকৃত পদ সাধারণ প্রার্থীদের মেধাতালিকা থেকে পূরণ করা যায় না।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব বলেছেন, ‘এবারও হয়তো মুক্তিযোদ্ধা কোটার পদ সংরক্ষণ করার নিয়ম শিথিল করা হবে। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নেই। বিষয়টি আমরা মন্ত্রিসভা বৈঠকে উপস্থাপন করব। সেখানেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ’

পিএসসির একজন কর্মকর্তা বলেন, এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত পাওয়ার জন্য বারবার মন্ত্রিসভায় যেতে হলে অনেক সময় ব্যয় হয়। ৩৪তম বিসিএসের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে প্রায় ৪৮ মাস পর। এত দীর্ঘ সময় বসে থাকা চাকরিপ্রার্থীর জন্য কষ্টকর। কিভাবে সময় কমানো যায় তা নিয়ে কাজ চলছে। পরীক্ষার সিলেবাস কমানোর একটি প্রক্রিয়া রয়েছে। তিনি বলেন, মন্ত্রিসভা যদি সিদ্ধান্ত নেয়, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় প্রার্থী পাওয়া না গেলে পদ সংরক্ষণ না করে মেধা কোটা থেকে পূরণ করা যাবে, তাহলে প্রতিবার মন্ত্রিসভায় যেতে হবে না। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কাছেই থাকতে পারে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

চাকরি ক্ষেত্রে বিশেষ শ্রেণিকে সুবিধা দেওয়ার জন্য সংবিধানে পাবলিক সার্ভিস কমিশনকে কোটা পদ্ধতি আরোপ করার এখতিয়ার দেওয়া হয়েছে। এ এখতিয়ারের আওতায় মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ৩০ শতাংশ কোটা চালু করা হয়। কিন্তু তাঁরা অনেক আগেই এ সুবিধার আওতার বাইরে চলে গেছেন। এখন এ কোটায় সুবিধা দেওয়া হচ্ছে তাঁদের সন্তানদের। কিছু ক্ষেত্রে তাঁদের সন্তানদেরও পাওয়া যাচ্ছিল না। তখন এ সুবিধা মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের ছেলেমেয়েদের দেওয়া শুরু হয়। এ ছাড়া ১০ শতাংশ কোটা রয়েছে জেলার জন্য, ১০ শতাংশ রয়েছে নারীদের জন্য এবং ৫ শতাংশ রয়েছে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জন্য। প্রাধিকার কোটার কোনো পদ অপূর্ণ থাকলে ১ শতাংশ কোটা পান প্রতিবন্ধী প্রার্থীরা। বাকি ৪৫ শতাংশ নিয়োগ দেওয়া হয় মেধা কোটায়।

বিসিএসের কোটা পদ্ধতি নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। কোটার প্রার্থীরা অনেক ক্ষেত্রেই কর্মক্ষেত্রে দক্ষতা দেখাতে পারেন না। এ যুক্তি দেখিয়ে কোটা পদ্ধতির সংস্কারের দাবি উঠেছে বিভিন্ন সময়ে। এ দাবিতে বিভিন্ন সময়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন হয়েছে। সাবেক আমলাদের অনেকেও এ পদ্ধতি সংস্কারের পরামর্শ দিয়েছেন। সাবেক মন্ত্রিপরিষদসচিব আকবর আলি খানের নেতৃত্বে একটি কমিটি কোটা পদ্ধতি সংস্কারের সুপারিশ করেছিল। কিন্তু সেই সুপারিশ আমলে নেয়নি সরকার। কোটা পদ্ধতির সংস্কার চায় পাবলিক সার্ভিস কমিশনও। গত ৩১ জানুয়ারি প্রকাশিত কমিশনের সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদনে এ পদ্ধতি সংস্কারের সুপারিশ করা হয়েছে। পিএসসি ২০০৯ সালে সংস্কারের একটি ফর্মুলা দিয়েছিল। তারা বলেছিল, মুক্তিযোদ্ধা, নারী ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর প্রাধিকার কোটা জাতীয় পর্যায়ে বণ্টন করা যেতে পারে। অর্থাৎ প্রাধিকার কোটা জেলা বা বিভাগ ভিত্তিতে ভাগ করা যাবে না। তবে সংস্কারের এ সুপারিশ এখনো আমলে নেয়নি সরকার। সূত্র:কালের কণ্ঠ

 

গো নিউজ২৪/জা আ 

জাতীয় বিভাগের আরো খবর
টয়লেটসহ একাধিক সুবিধা নিয়ে দেশে আসছে ছাদখোলা দোতলা ট্যুরিস্ট বাস

টয়লেটসহ একাধিক সুবিধা নিয়ে দেশে আসছে ছাদখোলা দোতলা ট্যুরিস্ট বাস

‘রপ্তানিযোগ্য হারবাল প্রডাক্টের উৎপাদন প্রক্রিয়া ও মান উন্নয়ন’ প্রশিক্ষণ কর্মশালা

‘রপ্তানিযোগ্য হারবাল প্রডাক্টের উৎপাদন প্রক্রিয়া ও মান উন্নয়ন’ প্রশিক্ষণ কর্মশালা

পাঠ্যবইয়ের সংশোধনসহ সচিবদের একগুচ্ছ নির্দেশনা দিলেন প্রধানমন্ত্রী

পাঠ্যবইয়ের সংশোধনসহ সচিবদের একগুচ্ছ নির্দেশনা দিলেন প্রধানমন্ত্রী

শাহজালাল বিমানবন্দরে মাসুদের কাছে পাওয়া গেল ৩ কেজি সোনা

শাহজালাল বিমানবন্দরে মাসুদের কাছে পাওয়া গেল ৩ কেজি সোনা

ইজতেমায় এক বদনা পানি ১০ টাকা!

ইজতেমায় এক বদনা পানি ১০ টাকা!

হজে যাওয়ার মানুষ পাওয়া যাচ্ছে না, দফায় দফায় সময় বাড়াচ্ছে মন্ত্রণালয়

হজে যাওয়ার মানুষ পাওয়া যাচ্ছে না, দফায় দফায় সময় বাড়াচ্ছে মন্ত্রণালয়