ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মাদক বিষয়ে কিছু জানা অজানা কথা !


গো নিউজ২৪ | ফারজানা আক্তার প্রকাশিত: মার্চ ১৮, ২০১৭, ১১:৫৯ এএম
মাদক বিষয়ে কিছু জানা অজানা কথা !

মাদক আসলে  কি ? শাব্দিক অর্থে মাদক বলতে বুঝায় ড্রাগ, হেরোয়িন, প্যাথেডিন, আফিম, হাসিস ইত্যাদি। মাদক এমন  একটি ভেষজ দ্রব্য যা ব্যবহারে বা প্রয়োগে মানবদেহে মস্তিস্কজাত সংজ্ঞাবহ সংবেদন হ্রাসপায় এবং বেদনাবোধ কমায় বা বন্ধ করে। মাদক দ্রব্যকে সহজভাবে বলা যায় যা গ্রহণে মানুষের স্বাভাবিক শারীরিক ও মানসিক অবস্থার উপর প্রভাব পড়ে এবং যে দ্রব্য আসক্তি সৃষ্টি করে, তাই মাদকদ্রব্য।


মাদকাসক্তি বলতে কি বুঝায় ? মাদকাসক্তি হলো মানুষের এমন একটি অবস্থা যা ব্যবহারে মানুষ অভ্যস্থ হয়ে পড়ে এবং নির্দিষ্ট সময় অন্তর মাদক গ্রহণের অভ্যাস্থ হওয়াই মাদকাসক্ত। মাদকাসক্ত আক্রান্ত ব্যক্তিকে হটাৎ মাদক গ্রহণ করতে না দিলে আত্মহত্যার মতো ঘটনা ঘটে যেতে পারে। মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে সাধারণত ১৫ থেকে ৩৫ বছরের বয়সের মানুষ যার হার ৭০ ভাগ। অন্যদিকে মাদক গ্রহণের গড় বয়স ২২ বছর।


মাদকাসক্তির কারণ কি ? মাদকাসক্তি এমনই এক  সমাজিক ব্যাধি তাই এর উপযোক্ত কারণ বলা খুব কঠিন। তবে সর্বসাপেক্ষে বলতে গেলে তিনটি কারণ বলা যেতে পারে। হতাশা, কৌতূহল এবং কুসঙ্গ। 

ক) হতাশাঃ হতাশাগ্রস্ত ব্যক্তিদের মাঝেই মাদক গ্রহনের প্রবণতা বেশী লক্ষ করা যায় । কোন করণে মানুষের স্বপ্ন ভঙ্গ হলে মানুষ হতাশাগ্রস্থ হয় আর তখনই মাদক গ্রহণে উৎসাহী হয়ে উঠে। সন্তানদের প্রতি বাবা-মায়ের উদাসীনতাও সন্তানকে হতাশাগ্রস্ত করে ফেলে। নিজের কর্মক্ষেত্রে উন্নতি করতে না পারা, শিক্ষাক্ষেত্রে কাঙ্খিত ফলাফল করতে না পারা এবং আপনজনদের কাছ থেকে কোনো সাপোর্ট না পাওয়া এ সবকিছুই একটি মানুষকে হতাশার চাদরে ঢেকে ফেলতে সক্ষম। 

খ) কৌতূহল নিবারণ ও প্রবল আগ্রহেঃ মানুষ সৃষ্টিশীল তাই তাদের মনের ভেতরে কৌতুহল থাকে সবসময়। মাদকে এমন কি আছে, কি করতে পারে ইত্যাদি তাদের মনকে আরো অনেক কৌতুহূলী করে তুলে। নতুনকে জানার ইচ্ছে এবং আগ্রহতা থেকে মাদকের সাথে পরিচয় ঘটায় এবং এভাবেই মাদক গ্রহণে অভ্যস্থ করে তুলে। 

গ) কুসঙ্গ : " সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস, অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ ". কুসঙ্গ মানুষকে বিপদগামী করে। তারা মানুষকে সেই কালো অন্ধকার দুনিয়ার দিকে হাতছানি দিয়ে। সেই দুনিয়ার বিষয়ে এমন সুন্দর করে মার্কেটিং করবে যে তরুণ সমাজের মনের ভিতর সেই দুনিয়ার বিষয়ে একটা অন্য রকম আখাংকা তৈরী হয়ে যায়। তারা পাগল হয়ে সেই দুনিয়ায় পা রাখে। 

যে কোন পরিবার এবং সমাজের জন্য মাদকসক্ত ব্যক্তি হুমকিস্বরুপ। পরিবাবারের সদস্যদের সাথে কথায় কথায় মনোমালিন্য ছাড়াও অতিরিক্ত টাকা গ্রহণের জন্য বিভিন্ন উপায় বের করে । টাকা না পেলে ছিনতাই, ধর্ষন, খুন সহ নানাবিধি অপরাধ সংগঠিত করে । যা সমাজে অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি সহ শৃঙ্খলা নষ্ট করতে যথেষ্ট ভুমিকা রাখে। 

মাদকাসক্তি প্রতিকারে পরিবারের করণীয় :

" প্যারেন্টিং " খুব বড় একটা ব্যাপার। সন্তান জন্ম দিলেই মা বাবা হওয়া যায় না। তার জন্য একটা উপযোক্ত পরিবেশ, সমাজ তৈরী করতে হয়। সন্তানকে মানুষের মতো মানুষ করতে হবে। তবেই মা বাবার সফলতা আসে। পারিবারিক পরিবেশ হতে হবে ধূমপানমুক্ত। সন্তানের গতিবিধী এবং বন্ধুবান্ধবের খোঁজ খবর রাখতে হবে। সন্তান যে জায়গাগুলোতে সব সময় যাওয়া আসা করে সেই জায়গাতে খোঁজ খবর নিয়ে রাখতে হবে। তার সাথে আচরণ করতে হবে বন্ধুর মতো যেন বাহিরে কোনো সমস্যা হলে সে নিজের থেকেই পরিবারের সাথে শেয়ার করে। সন্তানদের সামাজিক, মানসিক, লেখাপড়া সংক্রান্ত অর্থনৈতিক চাহিদাগুলো যথাসম্ভব মেটাতে হবে, তবে প্রয়োজনের অতিরিক্ত দিয়ে তাদের প্রত্যাশা বাড়তে দেয়া যাবে না।


মাদকাসক্তি প্রতিকারে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় করণীয় :

সমাজের সর্বস্থরের মানুষ এই মরণ নেশা মাদকের প্রতি আক্রান্ত হচ্ছে। আমাদের সমাজকে রক্ষায় আমাদেরকেই নিজেদের থেকে এগিয়ে আসতে হবে। আমরা যেখানে থাকিনা কেন মাদককে না বলি সবসময়, মুক্ত ভাবে আলোচনাই পারে মাদক মুক্ত সমাজ গড়তে। 

জনমত সৃষ্টির মাধ্যমে এই ভয়াবহ সমস্যাটি মোকাবিলা করতে হবে। প্রশাসনকে মাদকের উৎপাদন এবং এর অবৈধ ব্যবসা নির্মূল করতে হবে। স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচিতে মাদকাসক্তি ক্ষতিকারক দিকগুলো সম্পর্কে আলোচনা অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। মাদকবিরোধী প্রচারণার মাধ্যমে সবাইকে এর কুফল সম্পর্কে জানাতে হবে। মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রগুলোতে সাংগঠনিক দক্ষতা, ব্যবস্থাপনা প্রযুক্তি ও কর্মসূচির ধারাবাহিকতার নিশ্চয়তা থাকতে হবে। মাদকাসক্তির নির্বিষকরণ প্রক্রিয়ায় শরীরের সঙ্গে মাদকের জৈব-রাসায়নিক নির্ভরশীলতা দূর হয়ে শরীর তার নিজস্ব গতি-প্রকৃতিতে ফিরে এলেও মাদক গ্রহণের মূল প্রভাবক (ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব, চরিত্র, মনস্তাত্ত্বিক প্রবণতা, আবেগ, অনুভূতি, চিন্তাধারা ইত্যাদি ক্ষেত্রে অসঙ্গতি) দূর করার জন্য নিরাময় কেন্দ্রগুলোতে দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা , কাউন্সেলিং ও থেরাপি প্রয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে।

পরিশেষে মনে রাখতে হবে, নিকোটিন ও অ্যালকোহলও মাদক হিসেবে স্বীকৃত। এই মাদকও ক্ষতি করে দেহ-মন, ধ্বংস করে পারিবারিক সম্প্রীতি, সন্তানদের ঠেলে দেয় মাদক গ্রহণের ঝুঁকিতে। সামগ্রিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য ধূমপান ছাড়তে হবে, ছাড়তে হবে মদ্যপানও। 

 

 

লাইফস্টাইল বিভাগের আরো খবর
বিয়ে-বিচ্ছেদ বেড়েছে খুলনার মেয়েদের, কম বরিশালের

বিয়ে-বিচ্ছেদ বেড়েছে খুলনার মেয়েদের, কম বরিশালের

৪ মাসে একবার বিছানার চাদর কাচেন ব্যাচেলররা: গবেষণা

৪ মাসে একবার বিছানার চাদর কাচেন ব্যাচেলররা: গবেষণা

ডেঙ্গু আক্রান্তরা যে কারণে ডাবের পানি পান করবেন

ডেঙ্গু আক্রান্তরা যে কারণে ডাবের পানি পান করবেন

বাংলাদে‌শিদের জন্য ই-ভিসা চালু করেছে নেপাল

বাংলাদে‌শিদের জন্য ই-ভিসা চালু করেছে নেপাল

গর্ভাবস্থায় কী কী খাবার খেলে আপনার সন্তান হবে মেধাবী ও বুদ্ধিমান!

গর্ভাবস্থায় কী কী খাবার খেলে আপনার সন্তান হবে মেধাবী ও বুদ্ধিমান!

ডেঙ্গু সম্পর্কিত যেসব ভুল তথ্য এড়িয়ে যাবেন

ডেঙ্গু সম্পর্কিত যেসব ভুল তথ্য এড়িয়ে যাবেন