ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ভোটের পর নারায়ণগঞ্জ আ.লীগ-বিএনপিতে নতুন মেরুকরণ


গো নিউজ২৪ | অনলাইন ডেস্ক প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৭, ২০১৬, ১০:২৭ এএম
ভোটের পর নারায়ণগঞ্জ আ.লীগ-বিএনপিতে নতুন মেরুকরণ

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পর স্থানীয় রাজনীতিতে নতুন করে মেরুকরণের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। অচিরেই আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কমিটি ও নেতৃত্বে পরিবর্তন দেখা যেতে পারে। এরইমধ্যে স্থানীয় রাজনীতি নিয়ে বিএনপিতে রদবদলের আভাস মিলেছে। অন্যদিকে, সেলিনা হায়াৎ আইভী বিপুল ভোটে জয়ী হওয়ার পর আওয়ামী লীগের ‘বঞ্চিত’ নেতারা একটি প্লাটফর্মে আসতে শুরু করেছেন। আগামীতে এই বিষয়গুলো আরও স্পষ্ট হবে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট নেতারা।

বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও জেলার সভাপতি অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার, তিনবারের সাবেক সংসদ সদস্য আবুল কালাম ও সাবেক সংসদ সদস্য গিয়াসউদ্দিনকে নির্বাচনি প্রচারণায় থাকার জন্য খোদ চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছিলেন। কিন্তু তিনজনের কেউই প্রথমে নির্বাচনে থাকতে রাজি হননি। পরে চেয়ারপারসন এ তিন নেতাকে ডেকে সাখাওয়াতের পক্ষে কাজ করার কড়া নির্দেশ দেন। তিনজনের মধ্যে তৈমূরকে নারায়ণগঞ্জ শহর, গিয়াসউদ্দিনকে সিদ্ধিরগঞ্জ ও আবুল কালামকে বন্দরের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এরপর গত ৫ ডিসেম্বর থেকে কেন্দ্রীয় নেতারা নারায়ণগঞ্জে প্রচারণা শুরু করেন। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও যান সেখানে। তবে কেন্দ্রীয় নেতাদের সরব উপস্থিতি আর প্রচারণার পরও বিপুল ভোটে পরাজয় বরণ করেন বিএনপির প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন।
এদিকে, ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত কেন্দ্রীয় নেতারা যতক্ষণ নারায়ণগঞ্জে ছিলেন ততক্ষণ শহর চাঙ্গা থাকলেও ২০ ডিসেম্বর থেকে একেবারে ফাঁকা হয়ে পড়ে বিএনপির অফিস ও নির্বাচনি ক্যাম্প। তাছাড়া ২২ ডিসেম্বর ভোটের দিনও নারায়ণগঞ্জের অনেক কেন্দ্রে বিএনপির কোনও লোকজনকে দেখা যায়নি। পোলিং এজেন্ট ছিল না বন্দরে। শহরে ক্যাম্প স্থাপনের জায়গা না থাকায় শেষতক বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়া দিপুর বাসায় ক্যাম্প স্থাপন করা হয়। তিনিও স্থানীয় নেতাদের সমন্বয় করে সেখানে সবাইকে বসানোর চেষ্টা করায় শুধুমাত্র ওই ক্যাম্পটি চাঙ্গা থাকে।

স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা জানান, সাখাওয়াতকে শুরু থেকেই মেনে নিতে পারেনি বিএনপির স্থানীয় নেতাকর্মীরা। সে কারণেই শুধুমাত্র ইচ্ছের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় নেতাদের দেখানোর জন্যই মাঠে নেমেছিল তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। তাছাড়া নির্বাচন চলাকালীন প্রচণ্ড সমন্বয়হীনতা দেখা যায়। স্থানীয় নেতাদের অবমূল্যায়নের অভিযোগ উঠলেও কেন্দ্রের তৎপরতার কারণে স্থানীয় পর্যায়ের কেউ মুখ খুলেনি। কিন্তু ২২ ডিসেম্বর ভোটের দিন তার প্রভাব পড়ে। নির্বাচনে বিএনপির ভরাডুবির পর ইতোমধ্যে কেন্দ্র থেকে তার কারণ জানতে ডাকা হয়েছে জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার, সাবেক দুই এমপি আবুল কালাম ও গিয়াসউদ্দিনকে।
তবে মেয়র পদে বিএনপির প্রার্থী হারলেও গিয়াসউদ্দিনের ছেলে গোলাম সাদরিল ও তৈমূরের ভাই মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ কাউন্সিলর পদে জিতেছেন। বিএনপির এক জ্যেষ্ঠ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, এ নির্বাচনের পর নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতেও আমূল পরিবর্তন আসতে পারে। কারণ এ নেতৃত্ব ইতোমধ্যে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। এ কারণে আগামীতে বিএনপির কমিটিতে পরিবর্তন হতে পারে। তাছাড়া বিএনপির জেলা কমিটি ইতোমধ্যে ৭ বছর পার করেছে, কিন্তু পূর্ণাঙ্গ হয়নি। মহানগর কমিটি এখনও গঠন করা হয়নি। ৭ বছর ধরেই মেয়াদহীন কমিটি দিয়ে চলছে শহর কমিটি। ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটিও ইতোমধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে। সিটি করপোরেশনের ভোটের পর তিক্ত অভিজ্ঞতায় এবার কমিটিতেও আমূল পরিবর্তন আসতে পারে বলে ওই নেতা জানান।

নগর বিএনপির সেক্রেটারি এ টি এম কামালও নেতৃত্বে পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের মহানগরের কমিটি নেই। যে কারণে সাংগঠনিক সমন্বয়হীনতা রয়েছে। কমিটি থাকলে হয়তো আরও ভালো কিছু হতো। তবে এখন সময় এসেছে কমিটি পুনর্গঠনের।’

জেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মাসুকুল ইসলাম রাজীব অভিযোগের তীর ছুড়েছেন সাখাওয়াতের দিকেই। তিনি বলেন, ‘ব্যক্তিগতভাবে দুই-একজন ছাড়া সাখাওয়াত কোনও সংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে বসে তার পরিকল্পনা বা কিভাবে উনি কাজ করতে চান বা নেতাকর্মীদের কিভাবে কাজ করতে হবে বা কি করা উচিত, এ ধরনের কোনও নির্দেশনা দেননি। বরং সামান্যতম সৌজন্য দেখানোর ক্ষেত্রেও ছিলেন কৃপণ। উনি প্রত্যেক ওয়ার্ডের বিএনপিসহ সব অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের চরমভাবে অবহেলা করেছেন। তবে আমরা চাই সবগুলো কমিটিতে যোগ্য নেতারা আসুক।’
নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার জানান, ‘আমরা ব্যর্থ না বরং বলব সফল। একেবারে নতুন একজন প্রার্থীকে নিয়ে লড়তে আমাদের কষ্ট হলেও লড়েছি। কমিটি পুনর্গঠন হলে গতি বাড়বে। চেয়ারপারসন কী করেন, সেটাই এখন দেখার বিষয়।’

গত ৯ অক্টোবর গঠন করা হয় নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের আংশিক কমিটি। কেন্দ্র থেকে ঘোষিত কমিটিতে সভাপতি হিসেবে আবদুল হাই, সহসভাপতি হিসেবে সেলিনা হায়াৎ আইভী ও সেক্রেটারি পদে আবু হাসনাত শহীদ বাদলের নাম ঘোষণা করা হয়। এ তিনজনের মধ্যে বাদল এমপি শামীম ওসমানের অনুসারী বলে পরিচিত। কমিটি গঠনের পর পূর্ণাঙ্গ করতে কেন্দ্রে বাদল একটি কমিটি জমা দিলেও তা অনুমোদন হয়নি। এর মধ্যে কেন্দ্রে মহানগর আওয়ামী লীগ মেয়র পদে যে তালিকা পাঠিয়েছিল সেখানে আইভীর নাম ছিল না। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শেষতক আইভীকেই মনোনয়ন দেন। নির্বাচনের শুরু থেকেই শামীম ওসমানপন্থীরা কিছুটা নাখোশ ছিল, পরে তারা মাঠে নামলেও আন্তরিকতা ছিল না।

আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, আইভী আবারও মেয়র হওয়ায় এবার জেলা কমিটিতেও তার প্রাধান্য থাকবে। গতবছরের ডিসেম্বরে ঘোষিত মহানগর কমিটিতে স্থান হয়নি আইভীর। ওই কমিটিতে আইভীপন্থীদেরও মূল্যায়ন হয়নি। সে হিসেবে আগামীতে জেলা কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে আবারও ব্যাকফুটে থাকা আইভী সমর্থকদের ঠাঁই হবে ধারণা করা হচ্ছে।
যদিও জেলার সভাপতি আবদুল হাই শুরু থেকেই আইভীর নির্বাচনী প্রচারণাতে ছিলেন। তাছাড়া শামীম ওসমানপন্থীদের সঙ্গে তার দূরত্বও রয়েছে। কারণ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হতে স্থানীয় নেতাকর্মীরা বিশেষ করে শামীম ওসমানপন্থীরা মহানগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি চন্দন শীলের নাম প্রস্তাব করেছিলেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী এখানে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, যার নাম মেয়র পদের মনোনয়নের জন্য পাঠানো হয়েছিল তাকেই চেয়ারম্যান হিসেবে মনোনয়ন দেন। তিনি এখন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান হয়েছেন। ২২ ডিসেম্বর ভোটের পরদিন ২৩ ডিসেম্বর আবদুল হাই ও আনোয়ার হোসেনকে সঙ্গে নিয়েই শহরের দুই নম্বর রেল গেটের জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে ফুল দেন আইভী। পরে তারা একত্রে গণভবনে আসেন। বিগত ২০১১ সালের সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আনোয়ার ও আইভী একত্রে থাকলেও ২০১৪ সালের ২৬ জুন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের উপ নির্বাচনের পর আনোয়ার হোসেন চলে আসেন শামীম ওসমানদের বলয়ে।

এ ব্যাপারে জেলা যুবলীগের সভাপতি আবদুল কাদির জানান, ‘বিগত দিনে আমাদের রাজনীতিকে প্রকৃত মূল্যায়ন করা হয়নি। এবার প্রধানমন্ত্রী আইভীকে জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি ও মেয়র পদে মনোনয়ন দিয়েছেন। এতে আমরা আশার আলো দেখতে পাচ্ছি। শুধু কারও ইচ্ছায় না, প্রকৃত নেতাদেরও এবার মূল্যায়ণ করা হবে, সেটাই প্রত্যাশা।’

নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল হাই জানান, ‘নির্বাচনের পর অনেক বিষয় স্পষ্ট হতে শুরু করেছে। প্রকৃত নেতৃত্ব ও জনপ্রিয়তা এখানে যাচাই করা হয়েছে। ভবিষ্যতে কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে হয়তো এগুলোকেই প্রাধান্য দেওয়া হবে। জেলার রাজনীতিতেও পরিববর্তন ঘটবে।’সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন 

 

গো নিউজ২৪/জা আ 

রাজনীতি বিভাগের আরো খবর
রিজার্ভ বাড়াতে এবার ডলার ধার করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক

রিজার্ভ বাড়াতে এবার ডলার ধার করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক

সংরক্ষিত নারী আসনে আ.লীগের টিকিট চান তারকা, মন্ত্রী-এমপিদের স্ত্রী, হিজড়া

সংরক্ষিত নারী আসনে আ.লীগের টিকিট চান তারকা, মন্ত্রী-এমপিদের স্ত্রী, হিজড়া

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বামীকে আটকে স্ত্রীকে নিয়ে যা যা করলো ছাত্রলীগ নেতারা

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বামীকে আটকে স্ত্রীকে নিয়ে যা যা করলো ছাত্রলীগ নেতারা

খালেদা জিয়া ও বিএনপির জন্য দারুণ সুখবর

খালেদা জিয়া ও বিএনপির জন্য দারুণ সুখবর

ইসলামী আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা

ইসলামী আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা

এমপি হিসেবে শপথ নেয়ার পর এক টাকাও আমার হাতে আসে নাই : সুমন

এমপি হিসেবে শপথ নেয়ার পর এক টাকাও আমার হাতে আসে নাই : সুমন