ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ব্যাংকের বাড়ছে ‘ফোর্সড ঋণ’ কর্মকর্তাদের বাড়ছে সম্পদ


গো নিউজ২৪ | অনলাইন ডেস্ক প্রকাশিত: নভেম্বর ৩, ২০১৬, ০৮:০০ এএম
ব্যাংকের বাড়ছে ‘ফোর্সড ঋণ’ কর্মকর্তাদের বাড়ছে সম্পদ

ব্যাংকের বাড়ছে ‘ফোর্সড ঋণ’ কর্মকর্তাদের বাড়ছে সম্পদরাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর হাজার হাজার কোটি টাকার অনিয়ম ও কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটেই চলেছে। আর এসব অনিয়মের কারণে বাড়ছে ব্যাংকগুলোর ফোর্সড ঋণের পরিমাণ। অবশ্য সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্মকর্তাদের সম্পদও বাড়ছে সমানতালে। যে কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ফোর্সড ঋণ আদায়ের তাগাদা এলেও কর্মকর্তারা তা আমলে নিচ্ছেন না। দীর্ঘদিন ধরে এসব টাকা অনাদায়ী থাকলেও টাকা আদায়ের ব্যবস্থা তো দূরে থাক, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত কোনো পদক্ষেপও নেয়া হচ্ছে না।

 

এ ছাড়া নির্দিষ্ট সময়ে ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ প্রতিষ্ঠানগুলোকে দায়মুক্ত করতে বিশেষ সুবিধা নিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্মকর্তারা দফায় দফায় পুনঃতফসিলিকরণ সুবিধা তো দিচ্ছেনই। এক্ষেত্রে অনিয়ম করা হয়েছে আরো বেশি। মানা হয়নি কোনো নিয়ম-কানুন। নেয়া হয়নি নির্দিষ্ট পরিমাণ জামানতও। প্রথম দফায় দেয়া ঋণের বিপরীতে যে জামানত নেয়া হয়েছিল পরবর্তী সময়ে ঋণের পরিমাণ দফায় দফায় বাড়লেও জামানত বাড়েনি। ফলে পুনঃতফসিলি সুবিধাভোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণের পরিমাণ জামানতের চেয়ে বেড়ে দাঁড়িয়েছে বহুগুণে। আর এ কারণেই সরকার মালিকানাধীন এসব ব্যাংকের হাজার হাজার কোটি টাকা ফেরত না আসার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

 

সরকারি হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের দেয়া বাণিজ্যিক নীরিক্ষা অধিদফরের এ সংক্রান্ত নথি পর্যালোচনায় এ তথ্য উঠে এসেছে।

 

নথিতে আরো কিছু বিষয়কে এসব অনিয়মের জন্য দায়ী করা হয়েছে। এসবের মধ্যে রয়েছে ব্যাংকের প্রচলিত বিধিবিধান উপেক্ষা করে ব্যাক টু ব্যাক এলসি খোলা, রফতানি এলসির মেয়াদোত্তীর্ণদের পর রফতানি বিল ক্রয় ও দায় আদায়ে ব্যবস্থা না নেয়া, গ্রাহকের রফতানির সামর্থতা যাচাই না করা, ক্রেতার সিআইবি রিপোর্ট সংগ্রহ না করে পিসি ঋণ বিতরণ ও ব্যাংকের তদারকির অভাব। আর এসবই করা হয়েছে ব্যক্তিগত বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত হয়ে। ব্যাংকের শাখা প্রধানসহ কিছু অসাধু কর্মকর্তা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে এসব অনিয়ম করে এসেছে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।

 

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মধ্যে অর্থ কেলেঙ্কারিসহ নানা অনিয়মে শীর্ষে রয়েছে সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংক। তবে সোনালী ব্যাংকের অনিয়ম অন্য ব্যাংকগুলোর তুলনায় কয়েকগুণ বেশি। এই ব্যাংকেই হলমার্ক, ফেয়ার এক্সপোর্টসহ বেশ কয়েকটি বড় অর্থ কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটেছে। হলমার্ক গ্রুপের চাঞ্চল্যকর জালিয়াতির ঘটনা ধরা পড়ার পর সোনালী ব্যাংকের জালিয়াতির ঘটনা নিয়ে সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়। একই সময় সোনালী ব্যাংকের রমনা শাখায় আরো এক জালিয়াতির ঘটনা ধরা পড়ে। এক পর্যায়ে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ আগের জালিয়াতিসহ নতুন জালিয়াতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে রমনা শাখার আগের কিছু জালিয়াতির ঘটনাও কর্তৃপক্ষের নজরে আসে। বিগত চারদলীয় জোট সরকারের সময়ে আইবিপির মাধ্যমে ৩৮টি প্রতিষ্ঠানকে ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা ঋণ দেয়া হয়েছিল। যার বেশিরভাগই পরবর্তী সময়ে খেলাপিতে পরিণত হয়। এ সরকারের আমলেও একই কায়দায় ৭টি প্রতিষ্ঠানকে ৮৫ কোটি ৩৮ লাখ টাকা ঋণ দেয়া হয়েছে। অন্য শাখাগুলোর অবস্থাও অনেকটা একই রকম। জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংকেও কোনো নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে হাজার হাজার কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে।

 

নথি পর্যালোচনায় দেখা গেছে, প্রাথমিকভাবে ঋণ বিতরণে নিয়ম রক্ষা করা হলেও পরবর্তী সময়ে বড় বড় ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে চরম অনিয়ম ও দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। দফায় দফায় ঋণ পুনঃতফসিলিকরণের মাধ্যমে জামানতের ১০০ গুণ পর্যন্ত বেশি টাকা বিতরণ করা হয়েছে। ফলে প্রদেয় টাকা আদায়ে অনেকটাই অসহায় হয়ে পড়েছে ব্যাংকগুলো। ব্যাংকিং সূত্রগুলো দাবি করেছে, রাষ্ট্রায়ত্ত এসব প্রতিষ্ঠানকে কোম্পানি করার কারণে ব্যাংকগুলোর ওপর সরকারের সরাসরি কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদই সব কিছু দেখে। ফলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি থাকলেও কোনো লাভ হয় না। ব্যাংকগুলো সমঝোতা চুক্তির শর্তপূরণকে খুব বেশি গুরুত্বও দেয়নি। আর এই সুযোগে শাখা ব্যবস্থাপকরা পরিচালনা পর্ষদকে ম্যানেজ করে এসব অনিয়ম করে গেছেন।

 

তবে ইতিমধ্যে এসব অনিয়মে জড়িতদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ ও ফৌজদারি মামলা রুজু করা হয়েছে বলে নথিতে উল্লেখ করা হয়। সোনালী ব্যাংকের হোটেল শেরাটন শাখার অনিয়মের দায়ে তৎকালীন শাখা ব্যবস্থাপক ব্যবস্থাপক আলতাফ হোসেন হাওলাদার অবসরে থাকায় বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশে তার অবসরোত্তর সব ধরনের বেনিফিট স্থগিত করা হয়েছে। সিন্ডিকেটের অপর ১১ কর্মকর্তার মধ্যে ২ জনকে অব্যাহতি, ৭ জনকে পদাবনতি ও ২ জনের একটি করে বার্ষিক বেতন প্রবৃদ্ধি এক বছরের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। এ ছাড়া শাখা ব্যবস্থাপকের বিরুদ্ধেও ফৌজদারি মামলা দায়ের করা হয়েছে। অন্য ব্যাংকগুলোর দায়ীদের বিরুদ্ধেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে নথিতে উল্লেখ করা হয়।

সূত্র: মানবকন্ঠ

 

গো নিউজ২৪/জা আ 

অর্থনীতি বিভাগের আরো খবর
৫ বছর মেয়াদি সুকুক বন্ড বাজারে ছাড়ার উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে সরকার

৫ বছর মেয়াদি সুকুক বন্ড বাজারে ছাড়ার উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে সরকার

বেসিক ব্যাংক কি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে?

বেসিক ব্যাংক কি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে?

বাজারে এখন টাকা ও ডলার উভয় মুদ্রার সংকট, অদল-বদল নিয়ে নতুন সিদ্ধান্ত

বাজারে এখন টাকা ও ডলার উভয় মুদ্রার সংকট, অদল-বদল নিয়ে নতুন সিদ্ধান্ত

ইসলামী ব্যাংকসহ ৮টি ব্যাংকের কারণে ঘাটতিতে পুরো ব্যাংক খাত

ইসলামী ব্যাংকসহ ৮টি ব্যাংকের কারণে ঘাটতিতে পুরো ব্যাংক খাত

হোটেল-রেস্তোরাঁয় বিয়ে বা জন্মদিনের অনুষ্ঠানে জনপ্রতি ৫০ টাকা আয়করের প্রস্তাব

হোটেল-রেস্তোরাঁয় বিয়ে বা জন্মদিনের অনুষ্ঠানে জনপ্রতি ৫০ টাকা আয়করের প্রস্তাব

ব্যাংক পরিচালকদের সভায় অংশগ্রহণকারীদের সম্মানী মাসে ৫০ হাজার টাকা

ব্যাংক পরিচালকদের সভায় অংশগ্রহণকারীদের সম্মানী মাসে ৫০ হাজার টাকা