ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনে সবচেয়ে আকর্ষণীয় দম্পতির গল্প


গো নিউজ২৪ | অনলাইন ডেস্ক প্রকাশিত: জুন ২৭, ২০১৭, ১০:২৪ এএম
বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনে সবচেয়ে আকর্ষণীয় দম্পতির গল্প

খেলোয়াড়ে খেলোয়াড়ে প্রেম-পরিণয় এবং ঘর-বাঁধা খুব নতুন কিছু নয়। তবে বিষয়টা যে খুব হর-হামেশাই দেখা যায় তাও কিন্তু নয়। আপনার কাছে খেলোয়াড় দম্পতির হিসাব জানতে চাইলে করে গুণে খুব বেশি দূর যেতে পারবেন না নিশ্চিত। হ্যাঁ, এমন জুটি বাংলাদেশেও আছে।

প্রথমেই মনে পড়বে ব্যাডমিন্টন তারকা কামরুন্নাহার ডানা ও আবুল হাশেম জুটির কথা। এর দিব্বি সংসার করে চলেছেন দুই যুগের বেশি সময় ধরে। আর তাদের পরে আরো একটি জুটি বেশি পরিচিত। সেটি হলো শুটিং জগতের দুই তারকা সাইফুল আলম রিংকি আর সাবরিনা সুলতানা। এরাও সংসার করে চলেছেন এক যুগেরও বেশি সময়। নিজ দেশ ছেড়ে এসে যুক্তরাষ্ট্রে আগাসির শহর লাস ভেগাসে থাকছেন তিনি।

এখানে আমরা এমন এক দম্পতি নিয়ে আলোচনা করতে যাচ্ছি যারা একেবারে বিশ্বনন্দিত। বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনে সবচেয়ে আকর্ষণীয় ও স্বনামধন্য দম্পতি বলতে যাদের বোঝায় তাদের মধ্যে নিঃসন্দেহে আন্দ্রে আগাসি ও স্টেফি গ্রাফ জুটি অনেক এগিয়ে থাকবে। 

টেনিস ইতিহাসে এরা চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন তা বলা যায়। দুজনই একটা সময় বিশ্বের এক নম্বর তারকাও হন। আর স্টেফি গ্রাফ তো ইতিহাসের অন্যতম সেরা নারী টেনিস তারকা। ৫৬ গ্রান্ড স্লামে অংশ নিয়ে ২২ শিরোপা জয় করেন তিনি। অন্যান্য খেলায়ও দম্পতি পাওয়া যাবে কিন্তু বিশ্বজুড়ে এত ব্যাপক পরিচিত বোধহয় তারা হবেন না। তবে এ দম্পতির টিকে থাকাটাও অনেকটা আশ্চর্যের। এর কারণ দুই জনের খেলা এক হলেও আচার আচরণে ছিলেন সম্পূর্ণ ভিন্নধর্মী।

যুক্তরাষ্ট্রের ছেলে আন্দ্রে আগাসি ছিলেন অনেকটা প্লেবয় ইমেজের। মাথায় ঝাঁকড়া চুল, কানে দুল, মনোভাব বেপরোয়া, বাউন্ডুলে। ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে যতটা আলোচনায় সাফল্যের কারণে তার চেয়ে বেশি ছিলেন বেশভূষা আর স্টাইলের কারণে। 

আর জার্মানির মেয়ে স্টেফি গ্রাফ সাফল্যে এগিয়ে ছিলেন অনেক। খেলাধুলায় ছিলেন একাগ্র ও নিষ্ঠাবান। একে একে রেকর্ড ২২টি গ্রান্ড স্লাম জয় করেন তিনি। আর ব্যক্তিজীবনে কখনো উগ্রতার ছাপ পাওয়া যায়নি। নম্র স্বভাবের, দারুণ ব্যাক্তিত্ববান-একেবারেই কম কথার মানুষ।

বর্তমানে বেশিরভাগ জার্মান মেয়ে সংসারবিমুখ এবং তারা সন্তান নিতেও আগ্রহী নন। সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, অন্যান্য দেশের মেয়েদের যদি সন্তান না থাকে তবে তাদের বলা হয় চাইল্ডলেস। তারা এতে লজ্জিত ও বিব্রত থাকে। 

আর জার্মান মেয়েরা যাদের কোনো সন্তান নেই তারা গর্বের সঙ্গে নিজেদের চাইল্ড-ফ্রি হিসেবে বলে থাকে। সেখানে গ্রাফের একাগ্র সংসার কর্ম তার ভিন্ন মানসিকতার পরিচয় বহন করে। তবে এখন কিন্তু দুজনের ধ্যান-জ্ঞান অনেকটা একই রকম। গ্রাফ অবসর নেন ১৯৯৯ সালেই। আর আগাসি আরো কিছুদিন খেলা চালিয়ে যান। তিনি র‌্যাকেট তুলে রাখেন ২০০৬-এ। 

স্টেফি গ্রাফ দুজনই দাতব্য কর্মে ব্যস্ত। আলাদা আলাদা সংগঠনের মাধ্যমে দুজন দুরকম সমাজসেবা করে যাচ্ছেন। দুজনই প্রচারবিমুখ। জনসমাবেশে তাদের দেখা যায় খুব কমই। সংবাদ মাধ্যমের সামনেও আসেন না। এমনকি টেনিস প্রতিযোগিতাতেও তাদের দেখা যায় না। 

গ্রাফের প্রতিষ্ঠান দ্য চিলড্রেন অব টুমরো। আর আগাসির প্রতিষ্ঠান টার্নার-আগাসি চার্টার স্কুল ফ্যাসিলিটিস ফান্ড। তার কিছু স্কুল আছে যার নাম আন্দ্রে আগাসি কলেজ প্রিপারেটরি একাডেমি এবং রকেটশিপ রাইজ স্কুল।

অবশ্য আগাসি ২০০৯এ তার আত্মজীবনীতে উল্লেখ করেন তার জীবনের অনেক অর্থ আর খ্যাতি টেনিস থেকে এলেও এ খেলাটি তিনি মোটেও পছন্দ করতেন না। শৈশবে তার পিতার আগ্রহের কারণেই টেনিস খেলতে বাধ্য হন তিনি। ১৯৯৫ সালে বিশ্বের এক নম্বর স্থানে ওঠার পর তিনি কেমন যেন হয়ে যান। এলোমেলো জীবনযাপনে পরাজয়ের পর পরাজয়ে নেমে ১০০ নম্বরেরও নিচে। সেখান থেকে ফের উত্থান হয় তার। ক্যারিয়ারে তার মোট শিরোপা সংখ্যা ৬০।

আন্দ্রে আগাসির সঙ্গে বিয়ের জন্য স্টেফি গ্রাফের রাজি হওয়াটাই অনেকের কাছে ছিল বিস্ময়ের। কারণ মাত্র কিছুদিন আগে আন্দ্রে আগাসি আর খ্যাতনামা অভিনেত্রী ব্রুক শিল্ডের বিচ্ছেদ ঘটে। ১৯৯৭ সালে ব্রুক শিল্ডকে বিয়ে করেন আগাসি। 

আর ১৯৯৯ সালে ব্রুকশিল্ডই আগাসিকে তালাক দেন মাদ্রকাসক্তের অভিযোগ এনে। ব্রুক শিল্ডের সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হওয়ার পর আগাসি তার চেয়ে এক বছরের বড় গ্রাফের প্রতি আকৃষ্ট হন এবং তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। সেবার (১৯৯৯ সালে) দুজন জয় করেন ফরাসি ওপেনের শিরোপা। রোল্যাঁ গ্যারোর সেই আসরের আনুষ্ঠানিক নৈশভোজে (গালা নাইট) আগাসি গ্রাফের ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করেন।

দুজনের প্রথম পরিচয় কিন্তু আরো আগে। কত আসরে দুজন দুজনকে কাছ থেকে দেখছেন তার ইয়ত্তা নেই। এর বাইরে সেই ১৯৯২ সালে উইম্বলডন টেনিসের শিরোপা জেতেন এই দুজন। পুরুষ এককে আগাসি আর নারী এককে গ্রাফ। এবার তাদের সেই জয়ের ২৫ বছর পূর্তি হচ্ছে। 

এবার স্টেফি গ্রাফের বয়স ৪৭ আর আগাসির ৪৬। তো গ্রাফের কেন জানি ভালো লেগে গেল আগাসিকে। তবুও তাকে যাচাই করে দেখতে সময় নেন খানিকটা। প্রায় দু’বছর পর ২০০১ সালের অক্টোবরে আনুষ্ঠানিক পরিণয় হয় আগাসি-গ্রাফের। দুজনের ঘর আলো করে আছে এক ছেলে আর এক মেয়ে। ছেলে জ্যাডেন গিল, বয়স ১৫ আর মেয়ে জ্যাজ ইলি বয়স ১৩। 

আগাসিকে গ্রাফ যে মেনে নিয়েছিলেন অনেক আগেই তার প্রমাণ মেলে বিয়ের আগে গর্ভবতী হওয়ায়। তাদের ছেলের জন্ম হয় বিয়ের মাত্র চারদিন পর। প্রত্যাশার (এক্সপেক্টেড ডেট) ছয় সপ্তাহ আগেই জন্ম হয় জ্যাডেনের। মজার ব্যাপার হলো এই দুই সন্তানের একজনও টেনিসের প্রতি আগ্রহী নয়।

যেভাবে শুরু আগাসি-গ্রাফ গল্পের
ব্রুক শিল্ডের সঙ্গে বিচ্ছেদ। মনটা ভালো নেই। আগাসি কী করবেন ভাবতে পারছিলেন না। তারপরেও ফরাসি ওপেনের শিরোপা জয়ের পর গ্রাফ যখন অবসরের ঘোষণা দিলেন তখনই তার পিছু নিলেন আগাসি। 

আগাসির ভাষায় এটা ব্রুক শিল্ডের তালাক দেয়ার একদিন পরের ঘটনা। তবে সে ছিল অনেক কঠিন প্রতিপক্ষ। তাকে গলানো সহজ ছিল না। ধীরে ধীরে গ্রাফ সায় দিতে থাকেন আগাসিকে। শোনা যায় আগাসি গ্রাফকে ৩০০০০ পাউন্ড দিয়ে একটি হিরার আংটি উপহার দিয়েছিলেন। আগাসির সংসার ভাঙলেও গ্রাফের কিন্তু এটিই প্রথম বিয়ে। আগাসির প্রস্তাব পাওয়ার পাঁচ মাসের মাথাতেই গ্রাফ তার লাস ভেগাসের বাড়িতে ওঠেন।

আগাসি বিয়ের আগেই বলেন, আমি গ্রাফকে শ্রদ্ধা করি এবং সম্মান করি। আর গ্রাফ বলেছিলেন, আমরা দুজন পাগলের মতো ভালোবাসায় আবদ্ধ। আমি কেবল মনে করছি আমি ঠিক কাজটিই করছি।

গ্রাফের কারণেই আগাসির জীবন অনেক বদলে গেছে। আগাসি বলেন, তার কারণেই সব সম্ভব হয়েছে। আমি সব দিক দিয়েই তার চেয়ে ভালো ছিলাম। তবে সে ছিল আমার সম্পূর্ণ বিপরীত চরিত্রের। সে অনেক সুশৃঙ্খল জীবনযাপনে অভ্যস্ত। কাজের ব্যাপারে সবসময় মনোযোগী। সে আমাকে তার মতো করে বদলে নিয়েছে। সে আমাকে জীবনে অনেক কিছু শিখিয়েছে এবং এখনো শেখাচ্ছে।’

গ্রাফ বলেন, আন্দ্রের সঙ্গে সাক্ষাৎ এবং তার সঙ্গে পরিণয়কে আমি জীবনের বড় আশীর্বাদ মনে করি। আমাদের ভালোবাসা ক্রমেই দৃঢ়তর হচ্ছে। এখন সেটা যেকোনো সময়ের চেয়ে মজবুত আছে। অনেক জিনিস আছে যে জন্য তাকে আমার ভালো লাগে এবং তাকে আমি ধন্যবাদ দিই। আর সন্তানদের বড় করে তোলার জন্য তাকে আমার পাশে পাওয়াটা আমার কাছে স্বপ্নের চেয়েও বেশি।

৩১ বছর বয়সী আগাসি আর ৩২ বছর বয়সী গ্রাফ তাদের বিয়েটা সারেন বেশ নীরবেই। বিচারক মিকায়েল চেরি তাদের বিয়ে সম্পন্ন করান। বিয়েটা অনাড়ম্বর করার কারণ ছিল আগের বিয়েতে অনেক ধুমধাম করেছিলেন আগাসি। 

সেন্ট্রাল ক্যালিফোর্নিয়ার পেবেল সৈকতে যখন আগাসি আর ব্রুক মিল্ডের বিয়ে চলছিল তখন আকাশে সংবাদকর্মীদের নিয়ে হেলিকপ্টার চক্কর দিচ্ছিল। যদিও এর আগে আগাসি বলেছিলেন তিনি বিয়েটা সারতে চান তাদের সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরই। কিন্তু ডিসেম্বরে সন্তানের ভূমিষ্ঠ হওয়ার কথা থাকলেও তারা বিয়ে করেন অক্টোবরে।

হারিয়ে যাচ্ছিলেন আগাসি
আগাসি এ জন্যেই একপর্যায়ে বিগড়ে গিয়েছিলেন। তিনি ড্রাগে আসক্ত হয়ে পড়েন, হুট করে বিয়ে করে ফেলেন- এমন আরো অনেক কিছু করেন যা তার সঙ্গে যাচ্ছিল না। ক্রিস্টাল মেথ নামক ওষুধে আসক্ত হয়ে পড়েছিলেন নিজেকে হতাশামুক্ত রাখতে। এ সময়ই ব্রুক শিল্ডের সঙ্গে তার টানাপড়েনের শুরু।

১৯৯৭ সালের কথা। হারতে হারতে নিচে নামছেন আগাসি। অক্টোবরে নেমে তার র‌্যাঙ্কিং দাঁড়ায় ১৪১এ। স্টুটগার্ট ওপেনে তিনি তার স্বদেশি টড মার্টিনের কাছে প্রথম রাউন্ডেই হেরে যান। তখন তার কোচ ব্রাড গিলবার্ট আগাসিকে আলটিমেটাম দেন। বলেন, আমাদের এ অবস্থা বদলাতে হবে না হয় আমাদের আলাদা হয়ে যেতে হবে। সেটাই মোড় ঘুরিয়ে দেয় আগাসির। টনিকের মতো কাজ করে গিলবার্টের হুমকি। 

আগাসি বলেন, সেদিন মনে হলো আমার জীবনের মালিক তো আমিই। সেদিন আমি প্রতিজ্ঞা করলাম আমাকে জীবনের মানে বদলাতে হবে। হার-জিত বড় কথা নয়। তবে প্রতিদিনই আমাকে উন্নতি করতে হবে। এর পরই আগাসি তার বেশির ভাগ গ্রান্ড স্লাম জয় করেন। নতুন প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মেতে ওঠেন। তিনি বলেন, সাম্প্রাসের কোন প্রয়োজন ছিল না আমার। তার চেয়ে অনেক দিক দিয়েই ভালো ছিলাম। 

এটা আমার কাছে আয়নার মতো কাজ করে এবং আমি ফের ফর্ম ফিরে পেতে থাকি। কিন্তু এতে শেষ হয়ে যাচ্ছিলাম। সব কিছু কেমন ঝাপসা হয়ে যাচ্ছিল। ২০০৬-এ ইউএস ওপেনের তৃতীয় রাউন্ডে আর পারছিলেন না। হেরে গিয়ে বিদায় নেয়ার ঘোষণা দেন। সেই সময়ের কথা স্মরণ করতে গিয়ে আগাসি বলেন, আমার অবস্থা ছিল প্রায় মৃতের মতো। ঠিক বিমান থেকে লাফিয়ে পড়ার মতো। ততক্ষণে প্যারাসুট খোলারও সময় ছিল না।

এরপর গ্রাফের উৎসাহ তাকে নতুন পথে ধাবিত করে। তার পড়ালেখার ঘাটতি তাকে পড়ালেখা নিয়ে ভাবতে শেখায়। বলেন, আমার শিক্ষার অভাব আমার বিকল্প ভাবনার অভাব তৈরি করে। আর তাই আমি শিক্ষা নিয়ে কাজ করার কথা চিন্তা করি।’ আগাসি তার প্রায় সব আয় দিয়ে লস অ্যঞ্জেলেসের এক কঠিন এলাকায় স্কুল দালান নির্মাণে ব্যয় করেন। 

এ জন্য ৪০ মিলিয়ন ডলার বন্ধক রাখেন তিনি। এরপরে থেমে থাকেননি তিনি তহবিল নেমে পড়েন। তিনি প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার সংগ্রহ করে আরো ১২০টি স্কুল নির্মাণ করেন। গত তিন বছরে তিনি ৫৫০ মিলিয়ন ডলার খরচ করেন ৬৪ স্কুলের পেছনে।

তিনি বলেন, ট্যাক্সের পয়সা খরচ না করে স্কুল সিস্টেম উন্নত করার চেষ্টা সত্যি মজার এক পদ্ধতি। পশ্চাৎপদ শিশুদের জন্য কিছু করতে পারাটা আমার কাছে চার বা  অস্ট্রেলিয়ান ওপেন জয়ের চেয়ে বড় কিছু। আর এসবই সম্ভব হয়েছে শুধু একজনের কারণে। সে হচ্ছে স্টেফানি। আমার জন্য তাকে পাওয়াটাই বিরাট ব্যাপার। কারণ সেই আমার সেরা।’

সংসার ও জীবন সম্পর্কে স্টেফি গ্রাফ
স্টেফি এখন স্টেফানি হিসেবেই নিজেকে পরিচিত করতে বেশি পছন্দ করেন। গ্রাফ যে ক্যারিয়ার শেষে টেনিসের সঙ্গে সম্পর্ক রাখবেন না তা পরিষ্কার করে দিয়েছিলেন আগেই। গ্রাফ সেসময় এক ফ্রি-ল্যান্স সাংবাদিককে (ডরিস  হেনকেল নামের ওই সাংবাদিক গ্রাফের ২২ গ্রান্ড স্লামের ১৯টিই কাভার করেন) বলেছিলেন, তিনি কেবল এই প্রতিযোগিতাকে ভালোবাসেন ঠিক, কিন্তু এর বাইরের সবই তার কাছে বোঝা। 

এমনকি সংবাদ সম্মেলন, স্পন্সরের আবদার, বক্তদের ভিড়, এজেন্ট কিছুই তার ভালো লাগতো না।’ তিনি বরং ব্যক্তিগত জীবনে নিরিবিলি থাকতেই বেশি পছন্দ করেন। ইএসপিএন ডাব্লিউকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে গ্রাফ বলেন, আমি আমার খেলোয়াড়ি জীবন সম্পর্কে খুব কমই ভাবি। আমি খেলার জন্য অনেক কিছু করেছি। আমি জানি বিনিময়ে টেনিসও আমাকে অনেক কিছু দিয়েছে। 

এটাই আমাকে আন্দ্রেকে দিয়েছে, সংসার দিয়েছে, এখন সময় তাদেরই দিতে হবে। আমি সত্যিই দারুণ কৃতজ্ঞ।’ অবশ্য ২০০৯ সালে গ্রাফ-আগাসি উইম্বলডনের সেন্টার কোর্টে এক মিশ্র দ্বৈতে খেলতে নামেন কি ক্লাইসটার্স-টিম হেনমেন জুটির বিপক্ষে। প্রসঙ্গত এই বেলজিয়ান তারকা কিম ক্লাইস্টার্স এক সময় প্রেম করতেন অস্ট্রেলিয়ান টেনিস তারকা লেইটন হিইউটের সঙ্গে। কিন্তু তা বেশি দিন টেকেনি। এরপরে তিনি আমেরিকান এক বাস্কেটবল খেলোয়াড়কে বিয়ে করেন।

টেনিস থেকে গ্রাফের এ দূরে থাকাটা এখন সবার কাছে বিদিত। তারা একে আলাদাভাবে দেখেন না। পিট সাম্প্রাসকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস সবারই একটি নিজস্ব পছন্দ-অপছন্দ আছে। সেঠি নিজেকে একটু আড়াল রাখতেই বেশি পছন্দ করে। 

সে মানুষকে অনেক আনন্দ দিয়েছে তার খেলোয়াড়ি জীবনে। আমার মনে হয় সে তার কাজটা করেছে। সে হয়তো অনেক বেশি সাক্ষাৎকার দেয়নি তাতে কি! তার প্রতি আমার যথেষ্ট শ্রদ্ধা রয়েছে।

সন্তানেরা টেনিস খেলবে না
টেনিস ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ দম্পতির সন্তানের টেনিস খেলছে না। বাবা-মা দুজনের অর্জন ৩০ গ্রান্ড স্লাম। অথচ এতে তাদের আগ্রহ নেই বিন্দুমাত্র। আর তাদের বাবা-মারও এ ব্যাপারে কোন আপত্তি নেই, নেই আফসোস। ছেলেটা ঝুঁকেছে বেসবল খেলার দিকে আর মেয়েটা হিপ-হপ নাচে। অবশ্য ঘোড় দৌড়ে আগ্রহ ছিল তার বেশি। কিন্তু একবার দুর্ঘটনার শিকার হলে তা ছেড়ে দেয়। আর হিপ-হপ নাচে এখন সে যতটা অনুশীলন করে তা দেখে বিস্মিত গ্রাফ নিজেও। বলেন, এই বয়সে অন্যকোনো খেলায় কাউকে এত বেশি পরিশ্রম করতে দেখি না।

ছেলে জ্যাডেন ৬ বছর বয়স থেকে বেসবল খেলা শুরু করে। এখন সে পুরোদমে পেশাদার খেলোয়াড়। বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে খেলার কারণে সে তার বাবা-মাকেও ব্যস্ত রাখে। তার হাত-চোখের সমন্বয় খুব ভালো বলে প্রশংসা করে গ্রাফ বলেন, সে বেসবলটা প্রচণ্ড ভালোবোসে। তবে এখন তারা খেলাধুলা করলেও তাদের মূল মনোযোগটা কিন্তু লেখাপড়ার দিকেই আছে। তাদের সুবিধা হচ্ছে আমরা তাদের খাওয়া-দাওয়া ও অনুশীলন সম্পর্কে নানা পরামর্শ দিতে পারছি। তাদের পেশাদার হওয়ার ক্ষেত্রে কোন বাধা নেই। তবে সে জন্য আরো অপেক্ষা করতে হবে।

আগাসি বলেন, জীবনে বড় কিছু হওয়া ছাড়াও এরা অনেক ক্ষেত্র আছে কাজ করার। আপনি কোনো বড় টেনিস খেলোয়াড়ের সন্তানকে দেখবেন না যে সে বড় টেনিস খেলোয়াড় হয়েছে। মানুষ সাধারণত যে কাজ করে তার সন্তানদের জন্য পছন্দ করে না।’ 

আর টেনিসের প্রতি আগাসির রয়েছে আলাদা বিতৃষ্ণা। সপিতা মাইকের চাপে পড়ে টেনিস খেলতে হয় তাকে। মাত্র সাত বছর বয়সে বাবা তাকে টেনিসের এক নম্বর তারকা হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেন। তিনি সব চাইতেন আগাসি টেনিসে বিশ্বসেরা হোক। হ্যাঁ, আগাসি এক নম্বর হয়েছিলেন ঠিকই। কিন্তু টেনিসকে ভালোবাসতে পারেননি।

বর্তমান সময়ের অস্ট্রেলিয়ান টেনিস খেলোয়াড় নিক কিরগিওজের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, কেউ যদি কোনো কিছু পছন্দ না করে তবে তাকে জোর করে সেটা চাপিয়ে দেয়া ঠিক নয়। যেটা তার ভাালো লাগে সেটাই করতে দেয়া উচিত।

গ্রাফ বলেন, শারীরিকভাবে ও মানসিকভাবে টেনিস অনেক কঠিন এক খেলা। এখন তারা যা করছে তাতে অনেক সময় পাওয়া যায় বিশ্রামের ও অন্য কিছু করার। আর আমরা যখন খেলতাম তখন ঠিক ১২ মাসেই বছর হতো। আর আমাকে অনেকবার চোটের কারণে মাঠের বাইরে থাকতে হয়েছে।

দ্য চিলডেন অব টুমরো
গ্রাফ জানতেদন অবসরের পরের জীবনে দ্রুতই সব পাল্টে যায়। তাই টেনিস নিয়ে আর ভাবতে রাজি ছিলেন না। বিষয়টি নিয়ে আগাসির সঙ্গেও কথা বলেন। এখন নিজের সন্তানেরা বড় তখন তিনি ব্যস্ত তার সংগঠন দ্র চিলড্রেন অব টুমরো নিয়ে। 

পৃথিবীর নানা প্রান্তে যুদ্ধ ও সন্ত্রাসের কারণে যেসব শিশু শারীরিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ও আক্রান্ত সেই সব শিশুর সুন্দর ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে কাজ করছে এই প্রতিষ্ঠান। এরটি জার্মানিতে তার  নিজের শহর হামবুর্গ কেন্দ্রিক। বছরে পাঁচ ছয়বার এ জন্য গ্রাফকে হামবুর্গ যেতে হয়। তার ভাষায় এটা দৈনন্দিন কাজের মতোই স্বাভাবিক হয়ে গেছে। সন্তানদের দেখাশোনায় কোনো ক্ষতি হয় না এতে। 

টেনিস মাঠে গ্রাফকে দেখা না গেলেও তিনি বলেন, আমি দূর থেকে সব খবরই রাখি। যেন বললেন, এখন অনেক ছেলেমেয়ের খেলাধুলায় আসা কঠিন হয়ে গেছে। কারণ ১৬ বছরের নিচে কেউ পেশাদার আসরে আসতে পারে না। 

অথচ আমি আর আগাসি কিন্তু ১৩ বছর বয়সেই পেশাদার জগতে ঢুকে গিয়েছিলাম। তিনি সেরোন উইলিয়ামসের প্রশংসা করে বলেন, তার অর্জন অসামান্য। শরীর ভাল থাকলে সে আরো কিছুদিন খেলা চালিয়ে যেতে পারবে।-মা.জ.


গো সিউজ২৪/এএইচ

সংবাদপত্রের পাতা থেকে বিভাগের আরো খবর
ব্যাংকে জমানো আমানত কমে যাচ্ছে

ব্যাংকে জমানো আমানত কমে যাচ্ছে

কারা হবে বিরোধী দল, লাঙ্গল না স্বতন্ত্র?

কারা হবে বিরোধী দল, লাঙ্গল না স্বতন্ত্র?

বিভিন্ন ছাড়ে ব্যাংক খাতের আসল চিত্র আড়ালের সুযোগ দিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক

বিভিন্ন ছাড়ে ব্যাংক খাতের আসল চিত্র আড়ালের সুযোগ দিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক

পাসপোর্ট এনআইডিসহ ১৯ কাজের অতি প্রয়োজনীয় জন্মসনদ এখন ‘সোনার হরিণ’

পাসপোর্ট এনআইডিসহ ১৯ কাজের অতি প্রয়োজনীয় জন্মসনদ এখন ‘সোনার হরিণ’

সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় যে ব্যাংক

সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় যে ব্যাংক

প্রশাসনের শীর্ষ পদে পদোন্নতিপ্রত্যাশীদের হতাশা বাড়ছে

প্রশাসনের শীর্ষ পদে পদোন্নতিপ্রত্যাশীদের হতাশা বাড়ছে