বাসন্তীর কথা (পর্ব-২)
বাসন্তী একটা মায়া, একটা চৌম্বকীয় শক্তি ছায়া
সে আপন আঁধারের মাঝেও আলোর মহাদ্বার
আজও এত প্রেমে সৃষ্টি করি তাকে বারবার।
তার নাম যেন কবিতা সৃষ্টির উৎসস্থল, এক একটা বিরহ শব্দের পাহাড়; যার নেই মৃত্যু, নেই কোন লয়
তাকে না পাওয়ার বেদনা ছড়িয়ে থাকে জগতময়।
বাসন্তী কে? কোথায় সে থাকে? কেন সে এত টানে?
খুঁজে পাইনি, জেনেও হ'লনা জানা কেমন সে,
তার পরিচয় হয়ত তার মনই বড় ভাল জানে।
নিজের কাছেও জানতে চেয়েছি অজস্রবার
কোন উত্তর মেলেনি, হাতের ওপর দেখছি
প'রে আছে একটি ছিন্ন পত্র, অল্প কিছু ঋণ
ব্যঞ্জণাহীন একটি বিহগল সুরের ধ্বণি,
বন্ধ ক'রেছে আমার মনও আত্মার মাঝ দিয়ে
ব'য়ে যাওয়া সংযোগ প্রণালি, দূর হ'তে কে যেন
বাজাইয়াছে সেথায় পরম শূণ্যতার বীণ।
জীবনের বিশেষ সময়ে বিশেষ কিছু সুযোগ
আসে, যা হাত ছাড়া কেউ করে, কেউ হয়ত করেনা
মনে হয় বাসন্তীও পেয়েছিল, তেমনই কিছুর আশ্বাস।
হঠাৎ, বাসন্তীর বিশ্বাসের মাঝে দেখা দিল
কিছু সন্দেহ আর অবিশ্বাসের একটি ছায়া
পরকে ক'রল সে বড় আপন,আপনকে ক'রল পর
বিবাদিকে বাদী, তিলকে বানাল তাল,জল ক'রে ঘোলা
ভেতরের কথা বাহিরে এনে,ভাঙল নিজের সত্য ঘর।
নির্মম বাস্তবতা!
হায়রে অর্থ! হায়রে চেয়ার! হায়রে অলীক ক্ষমতা!
অবুঝের মতো বাসন্তী'র অর্থও ক্ষমতার মোহে
যৌবনের লালসায়, কামনা সাধ একসাথে পেল
প্রভাব-প্রতিপত্তি,বিত্ত-বৈভব,শান-শওকতের দ্রোহে।
বাসন্তীর উচ্চাভিলাস, রাজকীয় সম্ভ্রার,আয়েশী জীবন,
রেশমি শাড়ি-চূড়ি সুশোভিত প্রসাধনী-অলংকার
ধু'লায়ে মেশাল তার সেই মধ্যবৃত্তের অহংকার।
সুসজ্জিত রাজপ্রসাদের সম্রাজ্ঞী!
কত মনি, কত মুক্তা, কত হিরা, কত জহরত
দাস-দাসী ভরা প্রসাদের পাশে রয়েছে আরো
সুন্দর একখানা বাগান বাড়ি।
যা পেল বাসন্তী, হারাল তা'র চেয়ে বহুগুন বেশি
মনের গৌরব, ফুলের সৌরভ থাকেনা চিরস্থায়ী,
যুগে যুগে বু'ঝেছে সবাই লোভ ই যে বড় দায়ী।
সত্যকে মিথ্যায়, বড়কে ছোট, ভালবাসা গেল জলে শুনল না কারও কথা সে এমনি যাদু-মণ্ত্রের ছলে।
বাসন্তী কখন চায়নি অাকাশ পানে,
দু'চোখ মেলে কখন দেখেনি- কত তারায় লেখা আছে তার কত নাম অনন্ত ভাষায়, অনন্ত বর্ণে
নক্ষত্রের মত জ্বলজ্বল করে ভাসছে
সর্ব অাঁধার বিদারী তার রূপ,
মন মাতানো সুরে দু'লে সাগর, উপছে প'রে জল
কোন সে জোৎস্নার প্রভাব আলোয়।
ফেনিল যৌবন জোয়ারে প'রেছে ভাটার টান
নোনাজলে শুষে নিল, যা কিছু ছিল ভাল
কেউ জানল না, কেউ অাঁকল না তার
কোন ছবি সাদা কিংবা কাল।
কেউ খণ্ডিতে পারে না ললাটে বলির রেখা
আপন মায়ায় ভুলে যায় সব,
পেতে কারো স্বর্গীয় দেখা।
কেমন ক'রে বুঝবে মানুষ,
কোথাও কি আছে সততা?
আমার লেখায়, কবিতায় বাসন্তী নেই,
কেহ নাহি জানুক বন্ধু, আমিতো জানি
সে অাছে, সে ছিল, সে থাকবে
ধ'রে কোথাও কারও কোমল হাতখানি।
বাসন্তী অমর, তার প্রেম চিরন্তন,
তার ভালবাসা চিরমহান
মায়ার বাঁধনে শুধু বাঁধেনা সে
আপন মনে শুণায় দেবতার গান।
মধুর স্বপ্ন, রাগ-খেয়াল, ভৈরবী গীত-বিতান
অনন্ত সাধনার মাঝেও সে থাকে অমলিন
নেই লয়, নেই প্রলয়, নেই যে কোন অবসান।
তোমার দৃষ্টিতে ডাকে সাত সমূদ্রের বাণ,
বলে না আমায়, ডাকেনা অামায়,
দেয় যে শুধু দূরে থাকার অাহবান।
আমার সৃষ্টিতে, দৃষ্টিতে শুধু তুমি
কাব্যে তুমি, চেতনায় তুমি ওগো অভিমানি,
কবিতায় খুঁজে পাই,পরিপূর্ণা শুধু তোমায়।
আমি দেখেছি তোমায়,
উপলব্ধি ও অনুভবে আমাতেই মিশে আছ
বাতাস হ'য়ে দোলাও আমায়,
জাগাও প্রাণে হে কবি!
গোপনে যে আমি আসি মনের ঘরে
তাই লাগে তোমার এত ভয়।
দ্বিধাহীন অভয় চিত্তে নিশ্চিন্তে
তুমি আছ সেই অন্তঃপুরে
সেখানে আমি খুঁজিব তোমায়
রাধাসম প্রেম তৃষ্ণায় কৃষ্ণের বাশীর সুরে।
একদিন ভাল লাগার সুন্দর মুহুর্তে
বাসন্তীর মন কাকে যেন ব'লছিল-
আমি তোমার শৈশব দেখিনি,
আমি তোমার কৈশর জানিনা,
আমি তোমার যৌবনও দেখিনি,
আমি দেখেছিলাম 'তোমার কষ্ট লাঘবের দিনগুলো।
বাসন্তী জেনেও জানেনা,
জননী জন্মভূমি জন্মস্থান
যেমনি লেখা তেমনি আসে সবার
গর্ব,অহংকার তাতে নেই
সবই নিয়তি, সবই বণ্টিত যতটুকুন যার।
ধনী-গরীব, উচুঁ-নিচুঁ নেই কোন ভেদাভেদ
কোথায় তুমি, কোথায় আমি
সবাই আমরা একে অপরের।
জন্মগত পেয়েছ একটু বেশি এই তো
অল্পতে যে আনন্দ পায়
জগতে মহিয়ান সে ই তো।।
একদিন মহাকালের উষ্ণতায় গলে যাবে বাসন্তীর
মনের সব কষ্ট, বিরহের সেই হিমালয়,
মুছে যাবে সকল দুঃখ, বেদনার অন্তর্জ্বালা
বুকের ওপর থেকে সরে যাবে ঐ ভারী পাহাড়।
বাসন্তী, সেদিন আর আমি দেখবনা-
হয়ত পত্র-পল্লবহীন কোন বৃক্ষ,
বিষদন্তহীন কোন ফণি-মনষার অার্তনাদ
রণাঙ্গণ থেকে ফিরে আসা কোন ব্যর্থ নবাব
কিংবা কাফন বস্র পরিহিত চিরনিদ্রাবিষ্ট
কোন একজন খাঁটি প্রেমিক।।
.......................................................................
সৈয়দ এ মু'মেন (২৫ অক্টোবর ২০১৭ খ্রিঃ)
সিনিয়র এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড