নীলফামারী: নীলফামারী সদর উপজেলায় এখন চলছে ধান কাটা আর মাড়াইয়ের কাজ। তবে বন্যার কারণে অতিরিক্ত ব্যয় হওয়ায় লাভের মুখ দেখতে পারছে না কৃষকরা। অন্যদিকে শ্রমিক সংকটের কারণে ক্ষেত থেকে ধান কেটে নিতে বিড়ম্বনার মধ্যে পড়েছে তারা। এ কারণে হাসি নেই তাদের মুখে।
নীলফামারী সদর উপজেলার সংগলশী সুবর্ণখুলি গ্রামের কৃষক জয় রায় ৭৫ বিঘা জমিতে আমন ধানের আবাদ করেছেন। বিঘা প্রতি ১৬ হাজার টাকা খরচ হয়েছে তার। প্রতি বিঘায় সর্বোচ্চ ১৬ মণ করে ধান পাবেন। বাজার দর হিসেবে ৮০০ টাকা মন দরে প্রতি বিঘায় দাম পাওয়া যাবে ১২ হাজার ৮০০ টাকা।
কৃষক জয় রায় জানান, বন্যার কারণে অতিরিক্ত খরচ হয়েছে ক্ষেতে। বন্যার আগে সার ও কীটনাশক দেয়া হলেও বন্যার পরে আবারো নতুন করে সার ও কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয়। ওখানে অতিরিক্ত ব্যয় হওয়ায় ধানে লাভ হবে না।
একই এলাকার কৃষক ধীরেন্দ্র নাথ রায় বলেন, ‘এবার ৬০ বিঘা জমিতে আমন চাষ করছি। ধান আবাদ করিতো লাভই হয় না। কিন্তু কোনো উপায় নাই। আবাদ করি হামাক চলিবার নাগে।’
তিনি জানান, শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। চড়া দাম দিয়েও তাদের কাজে লাগানো যাচ্ছে না। ধান কাটতে বিঘা প্রতি ২৫০০ টাকা নিচ্ছে। নানান সংকটে আমন মৌসুম কৃষকদের বিপাকে ফেলেছে।
শ্রমিক ওহিদুল ইসলাম বলেন,‘আমরা বিঘা প্রতি ২০০০ থেকে ২৫০০ টাকা নেই। ১০ থেকে ১২ জনের দল মিলে ধান কেটে দেই। কিন্তু শ্রমিকরা বিভিন্ন এলাকায় যাওয়ায় সংকট দেখা দিয়েছে।’
এদিকে পাতা মোড়ানো রোগের কারণে বিভিন্ন স্থানে আমনের কিছুটা ক্ষতি হলেও তেমন প্রভাব পড়েনি সবক্ষেত্রে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নীলফামারী উপ-পরিচালকের কার্যালয় সূত্র জানায়, চলতি আমন মৌসুমে জেলায় ১ লাখ ১২ হাজার ১০৮ হেক্টরে আমন আবাদ হয়েছে। আর লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লাখ ২ হাজার ৪২৩ মেট্রিক টন চাল।
যেখানে গতবার নীলফামারী জেলায় ১ লাখ ৯ হাজার ৫৬০ হেক্টরে ধান আবাদ করা হয়েছিল। চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা ছিল ৩ লাখ ৬ হাজার ৮৯৫ মেট্রিক টন।
নীলফামারী সদর উপজেলার লক্ষ্মীচাপ ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা রাকিব আবেদীন হিরু জানান, ক্ষেতজুড়ে এখন চলছে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ। কৃষকরা ব্যস্ত আমন ধান ঘরে তোলা নিয়ে। ক্ষেত থেকে ধান কাটা প্রায় শেষ পর্যায়ে।
কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, ১২ হাজার ৪৬০ হেক্টর জমির আমন ক্ষেত বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হলেও কৃষকরা কাটিয়ে উঠতে পেরেছেন। নতুন করে বীজ দেওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত জমিতে হয়েছে আমন আবাদ। এছাড়া প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় দেয়া হয়েছে সার, বীজ ও কীটনাশক।
ইটাখোলা ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা লোহানী জানান, বন্যার ক্ষতির পরও মাঠ জুড়ে চলছে ধান কাটার ব্যস্ততা। কয়েক দিনের মধ্যে সব ধান কাটা শেষ হয়ে যাবে।
তিনি জানান, যেসব কৃষক বন্যার ক্ষতিতে নতুন করে চারা লাগিয়েছেন, তারা এক মাসের মধ্যেই ধান কেটে ঘরে তুলতে পারবেন।
জেলা কৃষি বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক (শস্য ও সংরক্ষণ) কেরামত আলী জানান, প্রতিকূলতার মাঝে আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে। কৃষকরা এখন মাঠে ব্যস্ত ধান কাটা নিয়ে। আর দশ দিনের মাথায় ক্ষেতের সব ধান কাটা শেষ হয়ে যাবে।
প্রতি বছরই নীলফামারী জেলায় ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যায় বলে উল্লেখ করেন তিনি।
গোনিউজ২৪/এমবি