ঢাকা মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

বরেন্দ্রে কুচিয়া মাছ চাষ, লাভবান হচ্ছে চাষিরা


গো নিউজ২৪ | স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, রাজশাহী প্রকাশিত: জুলাই ২১, ২০১৭, ১০:৪৩ এএম
বরেন্দ্রে কুচিয়া মাছ চাষ, লাভবান হচ্ছে চাষিরা

পাঁচ বিঘার পুকুর লিজসহ কার্প জাতীয় মাছ চাষ করে খরচ বাদে যে লাভ হবে তার চেয়ে বেশি লাভ হবে মাত্র ৩০ গুণ ১২ ফিট আকারের একটি কৃত্রিম পুকুরে কুচিয়া চাষ করে। শুধু তাই না, অনেকেই এ মাছ খায় না। সে কারণে চুরির ঝুঁকি কম। আবার পুকুর হতে সহজে কেউ ধরতে পারে না। বাইরের দেশে এ মাছের ব্যাপক চাহিদা আছে। বরেন্দ্র অঞ্চলে কুচিয়া চাষিরা জানিয়েছেন এমন তথ্য।

বরেন্দ্র অঞ্চলে দিনে দিনে কুচিয়া চাষে আগ্রহ বাড়ছে। বিশেষ করে বরেন্দ্র অঞ্চলের আদিবাসী  গ্রামগুলোতে কুচিয়া চাষ বেশ জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করেছে। বাড়ির পাশে অল্প আয়তনের কৃত্রিম জলাশয় তৈরি করে এ কুচিয়া চাষ সম্ভব। এছাড়া কম পুঁজি ও অল্প পরিশ্রমে অধিক লাভ। তাই মৎস্য অধিদপ্তরের সহযোগিতায় দিনে দিনে বাড়ছে কুচিয়া মাছ চাষ।

২০১৫ সালে বাংলাদেশের কিছু নির্বাচিত এলাকায় কুচিয়া ও কাঁকড়া চাষ ও গবেষণা প্রকল্পের আওতায় মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয় ‘কুচিয়া ও কাঁকড়া’ চাষের প্রদর্শনী প্রকল্প গ্রহণ করে। তখন সারাদেশে ৪৩টি কৃত্রিম কুচিয়া খামারে প্রদর্শনী শুরু করা হয়েছিল। তাতে সফল হওয়ায় বাড়তে থাকে কুচিয়া চাষ।

রাজশাহী বিভাগীয় মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, কুচিয়া ও কাঁকড়া চাষ ও গবেষণা প্রকল্পের আওতায় সরকারিভাবে রাজশাহী বিভাগে বর্তমানে প্রায় ৩০টি কুচিয়া খামারে প্রদর্শনী দেয়া হয়েছে। এছাড়াও রাজশাহীর, নাটোর, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, নওগাঁ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় ব্যক্তি উদ্যোগে আরও গড়ে উঠেছে ১০০টির বেশি কুচিয়া মাছের খামার।

এর মধ্যে রাজশাহীর শুধু তানোর উপজেলা আদিবাসী এলাকায় কুচিয়া ও কাঁকড়া চাষ এবং গবেষণা প্রকল্পের মাধ্যমে তিনটি প্রদর্শনী দেয়া হয়েছে। এতে সহযোগিতা করছেন তানোর উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তর। এর বাইরে তানোরের বিভিন্ন গ্রামে ব্যক্তি উদ্যোগে আরও পাঁচটি কুচিয়া চাষের কৃত্রিম খামার আছে।

চান্দুড়িয়া ইউনিয়নের বাবুল ডাইং কুচিয়া চাষ প্রকল্পের সভাপতি শ্রী সুপল হেমরম জানান, তাদের কুচিয়া চাষে উপজেলা মৎস্য অফিসের সহযোগিতায় যাবতীয় উপকরণ সরকারিভাবে সরবরাহ করেছে। তারা ১০টি পরিবারের প্রতি একজন করে মোট ১০ জন শুধু এর দেখাশোনা করেন। ৭ থেকে ৯ মাস পর বিক্রি করে সম্পূর্ণ টাকা সবাই ভাগ করে নেন।

তিনি বলেন, ‘প্রথম পর্যায়ে সরকার যাবতীয় প্রয়োজনীয় উপকরণ ও প্রশিক্ষণ দিয়ে আমাদের কীভাবে এর চাষ করতে হয় তা শিখিয়ে দিয়েছে। এখন আমরা নিজ উদ্যোগে গ্রামে আরও ২৫ থেকে ৩০ জন মিলে ছোট পুকুরে আবার কুচিয়ার পোনা সংগ্রহ করে চাষ শুরু করবো।’

তানোর উপজেলার কলমা ইউনিয়নের বনগাঁ গ্রামের কুচিয়া খামার মালিক ইমরান আলী বলেন, ‘আমার পাশের গ্রামে কুচিয়া চাষ দেখে আমি নিজ উদ্যোগে করার জন্য উপজেলা মৎস্য অফিসে যোগাযোগ করি এবং সেখান হতে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে কুচিয়া খামার গড়ে তুলি।’

তানোর উপজেলা মৎস্য অফিসার শরিফ-উল-আলম জানান, বর্তমান সরকার মৎস্য প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের আওতায় আদিবাসীদের উন্নয়নে বাংলাদেশের নির্বাচিত এলাকায় কুচিয়া ও কাঁকড়া চাষ এবং গবেষণা প্রকল্পের মাধ্যমে কুচিয়া চাষ প্রদর্শনী ও প্রকল্প গ্রহণ করেছেন।

মৎস্য অফিসার শরিফ-উল-আলম জানান, তানোর উপজেলার ৩টি ইউনিয়নে আদিবাসীদের মধ্যে ৩টি প্রদর্শনী দেয়া হয়েছে। প্রতিটি প্রদর্শনী খামারে ১০ জন করে আদিবাসী জনগোষ্ঠী রয়েছে। সরকারি প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা কৃত্রিম খামার তৈরি ও প্রতিটি খামারে ১০০ কেজি করে কুচিয়ার ছোট পোনা সরবরাহসহ সার্বিক সহযোগিতা করা হয়। কুচিয়াকে খাবার হিসেবে কেঁচো, ছোট ছোট মাছ, সুঁটকির গুরা এবং মাছের খাবার দেওয়া হয়ে থাকে।

মৎস্য কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘প্রদর্শনী দেয়া খামারগুলোতে কুচিয়া চাষে বেশ সফলতা পাচ্ছি। এটা একটি লাভজনক ব্যবসা। আধুনিক পদ্ধতিতে বাণিজ্যিকভাবে কুচিয়া মাছ চাষ কার্যক্রম দারুণ সাফল্য পেয়েছে। ফলে আদিবাসী সম্প্রদায়ে অর্থনৈতিক উন্নয়ন করা সম্ভব হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘কুচিয়া চাষ খুবই সহজ। বাড়ির পাশে মাত্র ৩০ গুণ ১০ ফিট জায়গায় কৃত্রিম পুকুর করে খামার করা হয়। ওই পুকুরের পানির নিচে মোটা পলিথিন জাতীয় কিছু দিতে হয়। তার উপরে কাঁদা পরিমাণ মতো। কারণ কুচিয়া সাধারণত কাদা মাটিতে থাকে। পানির উপরে দিতে হয় কচুরিপানা বা তালপাতা। এছাড়াও পাকা ড্রাম পদ্ধতিতে কুচিয়া প্রজনন ও চাষ করা যায়। বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় এ কুচিয়া মাছকে বিভিন্ন নামে ডাকে। কুঁচে মাছ, কুচিয়া, কুইচ্চা বা কুঁচে বাইম।’

শরিফ-উল-আলম বলেন, ‘বিভিন্ন খাল বিলে যারা কুচিয়া ধরে তাদের কাছ থেকে বাচ্চা কুচিয়া ৩০০ টাকা কেজি দরে কিনে এনে খামারে রেখে বড় করা হয়। তারপর ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হয়। একটি কুচিয়া এক কেজির চেয়ে বেশি ওজনের হয়। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের কুচিয়া দেশের চাহিদা মিটিয়ে কানাডা, দক্ষিণ কোরিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশেও রপ্তানি হচ্ছে। আশা করছি বরেন্দ্র অঞ্চলের কুচিয়া কয়েক বছর পরে বাইরের দেশে রপ্তানি করা সম্ভব হবে।’

গো নিউজ/এমবি

দেশজুড়ে বিভাগের আরো খবর
মানুষের বিশ্বাসকে পুঁজি করে কোটি টাকা নিয়ে পালালো ডাচ-বাংলা ব্যাংকের এজেন্ট

মানুষের বিশ্বাসকে পুঁজি করে কোটি টাকা নিয়ে পালালো ডাচ-বাংলা ব্যাংকের এজেন্ট

দিনের শুরুতেই বিআরটিসি বাসের চাপায় নিহত ৪ 

দিনের শুরুতেই বিআরটিসি বাসের চাপায় নিহত ৪ 

ধারের টাকা দিতে না পারায় বন্ধুর স্ত্রীকে বিয়ে

ধারের টাকা দিতে না পারায় বন্ধুর স্ত্রীকে বিয়ে

বোমাটি বিস্ফোরিত হলে বাসের সবাই মারা যেতেন

বোমাটি বিস্ফোরিত হলে বাসের সবাই মারা যেতেন

রেললাইনে বোমা বিস্ফোরণের চেষ্টা, হাতেনাতে আটক ৩

রেললাইনে বোমা বিস্ফোরণের চেষ্টা, হাতেনাতে আটক ৩

হাতকড়া পরা অবস্থায় বাবার জানাজায় বিএনপি নেতা

হাতকড়া পরা অবস্থায় বাবার জানাজায় বিএনপি নেতা