রংপুর বিভাগের বন্যায় হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ ও অর্ধশত প্রাণহানি ঘটলেও এনজিওগুলো নীরব থাকছে। এ পর্যন্ত বিভাগের ৮ জেলায় ৫৬টি উপজেলার ৩৯৪টি ইউনিয়নের ৫ লাখ ৩৬ লাখ ৯৮৭টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ৬৫ লাখ ১৪ হাজার নগদ টাকা এবং ২ হাজার ১২০ মেট্রিন টন চাল বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে ৯ হাজার ৭০০ প্যাকেট। সেই হিসেবে পরিবার প্রতি বরাদ্দ হয়েছে ১২ টাকা ১৫ পয়সা এবং চাল বরাদ্দ পেয়েছে ৩ কেজি।
জানা গেছে, এ অঞ্চলে তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, ঘাঘট, ধরলা, দুধকুমার, আত্রাই, করতোয়া পূণর্ভবা, রত্নাইসহ বিভিন্ন নদনদীর পানি হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় দ্বিতীয় দফার বন্যা শুরু হয়েছে গত বৃহস্পতিবার থেকে। কোথাও কোথাও বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নীলফামারী, দিনাজপুর ঠাকুরগাঁও, গাইবান্ধা ও রংপুরের অনেক স্থান এখনো তলিয়ে আছে।
এবারের বন্যায় সবচেয়ে ক্ষতি হয়েছে দিনাজপুর ও কুড়িগ্রাম জেলায়। এর পরের অবস্থানে রয়েছে লালমনিরহাট জেলা। বন্যায় একাধিক স্থানে নদীশাসন বাঁধ ভেঙে গেছে। শত শত কিলোমিটার রাস্তা হয়েছে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। হাজার হাজার গরীব মানুষের ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে।
হাজার হাজার হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে গেছে। এবারের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১ কোটির বেশি মানুষ। এই বন্যায় ফসলহানি সমগ্র দেশে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এই বিশাল ক্ষতি সামলানো সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয়। বনার্তদের পাশে সরকারের পাশাপাশি এনজিও, বেসরকারি স্চ্ছোসেবী সংগঠনগুলোকে এগিয়ে আসা উচিত ছিল। কিন্তু প্রথম দফা বন্যার মত দ্বিতীয় দফার বন্যাতে নীরব ভূমিকা পালন করছে স্থানীয় এনজিওগুলো। তারা এখন পর্যন্ত বন্যা কবলিত মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারেনি কেন্দ্র থেকে বরাদ্দ না আসার অজুহাতে। স্থানীয় বানভাসি মানুষ ও বিভাগীয় প্রশাসনের কার্যালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
বুধবার পর্যন্ত জানা গেছে, দু’একটি এনজিও মোবাইল ফোনে প্রশাসনের কাছে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলো সম্পর্কে জানাতে চেয়েছেন। তারা এখনো কোথাও ত্রাণ বিতরণ করেছেন কিনা এ ধরনের কোন খবর বিভাগীয় প্রশাসন কার্যালয় পায়নি।
এ বিষয়ে এনজিও মানবসম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পের জেনারেল ম্যানেজার গিয়াস উদ্দিন জানান, আমরা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা দিতে একটি তালিকা করে কেন্দ্রে একটি ফাইল উপস্থাপন করেছি। সেখান থেকে বরাদ্দ না পাওয়া পর্যন্ত বন্যার্ত্যদের পাশে দাঁড়াতে পারছি না। প্রায় একই ধরণের কথা বলেছেন একাধিক এনজিও কর্মকর্তা। তারা বলছেন, আমারা বন্যা দুর্গতদের পাশে দাঁড়াতে চেয়ে সাহায্য চেয়ে ঢাকায় চিঠি দিয়েছি। কিন্তু সেখান থেকে এখন পর্যন্ত কোন সাড়া পাইনি। তাই ইচ্ছে থাকা স্বত্বেও বন্যার্তদের পাশে দাাঁড়াতে পারছিনা।
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক শাহ আলম জানান, বন্যায় কৃষিতে কী পরিমান ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা এখনো নির্ধারণ করা হয়নি। বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে তথ্য এলে প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতির পরিমান জানা যাবে।
রংপুর বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ৮ জেলায় বন্যায় এ পর্যন্ত মারা গেছে ৪৭ জন। ২ জন এখনো নিখোঁজ রয়েছে।
রংপুরের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মিনু শীল জানান, এ পর্যন্ত দুএকটি এনজিও মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা সম্পর্কে জানতে চেয়েছিল। আমরা তাদের বলেছি আপনাদের প্রতিটি জেলায় নিজস্ব প্রতিনিধি রয়েছে তাদের মাধ্যমে খোঁজ খবর নিয়ে ত্রাণ দিতে পারেন। এর পর কোন এনজিও তাদের সাথে যোগাযোগ করেননি।
কবে নাগাদ বন্যার্তদের পাশে এনজিওগুলো দাঁড়াবে এটা তারাই জানেন বলে মন্তব্য করেন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার।
স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে রংপুর বিভাগে যেসব এনজিও কাজ করছে তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য- ব্র্যাক, নিরাপদ বাংলাদেশ সংস্থা, বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস, ট্রাস্ট ব্লাস্ট, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র, মহিলা বহুমুখী শিক্ষা কেন্দ্র, গ্রাম উন্নয়ন প্রচেষ্ঠা, এনজিও ফোরাম, মানব কল্যাণ পরিষদ-এমকেপি, মানবসস্পদ উন্নয়ন প্রকল্প, প্রত্যাশা বাংলাদেশ সোসাইটি ফর উদ্যোগ, সি সি ডি বি, আলোহা, এনডিএফ, এসএমএনবি , আরডিএফ, অরবিন্দ শিশু হাসপাতাল, নিজেরা করি, প্রয়াস, দিশারী প্রতিবন্ধী সংস্থা, সমাজ উন্নয়ন প্রশিক্ষন কেন্দ্র, অনুঘটক, দি লেপ্রসী মিশন, কাম টু ওয়ার্ক, ভিলেজ ডেভে, ল্যাম্ব, বাংলাদেশ পরিবার পরিকল্পনা সমিতি, পিবিপিএ, বিএসডিএ,এডাব, মমতা পল্লী উন্নয়ন সংস্থা, গ্রাম বিকাশ কেন্দ্র, আরএইচস্টেপ, ইএসডি ও বহুব্রীহি ,আরডিআরএস বাংলাদেশ, টিএমএসএস, কাঞ্চন সমিতি, সিডিএ, আশা, কারিতাস, দীপশিখা, ওয়ার্ল্ড ভিশন, সুপথ, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ, ব্রীফ, সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক), অনন্যা সংস্থা, বিচিত্রা উন্নয়ন সংস্থা, সোসাল এন্ড কালচারাল ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন-এসসিডিএফ, আরসিডিএ, পল্লীশ্রী, উত্তরা ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম, ডেমক্রেসিওয়াচ, মেরীস্টোপস ক্লিনিক, বেইস, ডেভেলপমেন্ট কাউন্সিল, সিএমইএস, এইড কুমিল্লা, পদক্ষেপ মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্র, এআরপি গ্রাম উন্নয়ন কর্ম (গাক) ইত্যাদি।
গোনিউজ২৪/পিআর