ঢাকা মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

বই পড়া আন্দোলন ও একজন সোহাগ


গো নিউজ২৪ | স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, রাজশাহী প্রকাশিত: অক্টোবর ১৮, ২০১৭, ০৬:৩১ পিএম আপডেট: অক্টোবর ১৮, ২০১৭, ১২:৩১ পিএম
বই পড়া আন্দোলন ও একজন সোহাগ

রাজশাহী: ১৯৯৭ সালের শুরুতে ১৮টি বই নিয়ে একটি পাঠাগার নির্মাণ করেছিলেন। ২০ বছর পেরিয়ে সেই পাঠাগারের আয়তন অনেক বেশি। বইয়ের সংখ্যা চার হাজার ছাড়িয়েছে। তার পাঠাগারের স্লোগান হচ্ছে ‘এসো পড়ি-দেশ গড়ি’। তবে এবার পাঠাগারের নির্মাতা সোহাগ আলী নেমেছেন বই পড়ার আন্দোলনে। 

বইয়ের পাঠক কমে যাওয়ার কারণে ‘পলান সরকার বই পড়া আন্দোলন’ স্লোগানকে সামনে রেখে তিনি এ আন্দোলনে নেমেছেন। সোহাগ আলী রাজশাহী নগরীর তেরখাদিয়া এলাকার বাসিন্দা ও আলোকচিত্রি।

পাঠাগারের পাশাপাশি এখন পাঠকের বাড়ি বাড়ি বই পৌঁছে দিচ্ছেন তিনি। কোন টাকার বিনিময়ে নয়, সম্পূর্ণ ফ্রি বই এখন পাঠক ইচ্ছে করলেই ঘরে বসে পাচ্ছেন। এছাড়াও ফ্রি পত্রিকা পাঠকদের জন্য নিজস্ব উদ্যোগে রাজশাহী নগরীর লক্ষীপুর এলাকায় গড়ে তুলেছেন পত্রিকা কর্নার। সেখানেও ফ্রি পত্রিকা পড়তে পারেন মানুষ। মানুষকে বইমুখি করতে তিনি এ উদ্যোগ নিয়েছেন।

সোহাগ আলী জানান, বই মানুষকে আলোকিত করে। বই পড়ার কোনো বিকল্প নেই। এ চিন্তাভাবনা থেকে প্রথমে কেন্দ্রীয় কিশোর পাঠাগার স্থাপন করেন নিজ বাড়ির একটি কক্ষে। এখন তিনি ‘পলান সরকার বই পড়া আন্দোলনে’ যুক্ত হয়ে বই বিলাচ্ছেন পাঠকদের ঘরে ঘরে। শুধু তাই নয়, স্কুল-কলেজেও চলছে তার এ কার্যক্রম। পাঠকের চাহিদা অনুযায়ী একজনকে সপ্তাহে তিনটি করে বইয়ের যোগান দেয়া হয়। সাতদিন পর সে বই ফেরত দিয়ে নতুন বই নেন পাঠক। ছোট একটি মোবাইল ম্যাসেজ করেই পাঠক হাতে পাচ্ছেন চাহিদা অনুযায়ী বই। এ প্রক্রিয়ায় এখন তার পাঠকের সংখ্যা তিনশ হয়েছে গত ৬ মাসেই।
 
তিনি জানান, নানা কাজে ব্যস্ত থাকায় মানুষ এখন লাইব্রেরি মুখি হচ্ছেন না। অনেকের বই পড়ার ইচ্ছে থাকলেও সময়ের সঙ্গে মেলাতে না পেরে পাঠাগারে আসতে পারছেন না। এ কারনে পাঠকের হাতেই বই পৌছানোর সিদ্ধান্ত নেন তিনি। এসব পাঠকদের মধ্যে কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, ছাত্রছাত্রী, গৃহিনী, ব্যবসায়ী ও শিশু কিশোররা রয়েছেন। শিশু কিশোরদের জন্য তাদের উপযোগী বই দেয়া হয়। এসব বইয়ের মধ্যে রয়েছে, বিভিন্ন মনীষীর জীবনী, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, ভ্রমণকাহিনী, বিজ্ঞান, উপন্যাস, ছড়া, কবিতা, সাধারণ জ্ঞান ও পাঠ্যবইও। 

সোহাগ আলী জানান, ২০১৫ সালের শুরুতে ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি করেছিলেন তিনি। ভ্যানগাড়িতে করে শহরের মোড়ে মোড়ে বই পৌঁছানোর ইচ্ছে ছিলো তার। কিছুদিন এ ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরী চালান তিনি। তবে অর্থনৈতিক দৈন্যতার মুখে মাঝপথে বন্ধ হয়ে যায়। পরে পলান সরকার বইপড়া আন্দোলন শুরু করেন তিনি। এ অন্দোলনের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছেন তিনি। বর্তমানে রাজশাহী নগরী ছাড়াও আশেপাশের উপজেলাগুলোতেও এ কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে।

সোহাগ আলী জানান, বই পড়া আন্দোলন ও পাঠাগারের কারণে ওই এলাকার সামাজিক অবস্থার পরিবর্তন এসেছে। মানুষ ভালোমন্দ বুঝতে শিখেছে। চেতনাগত দিক থেকেও মানুষ সমৃদ্ধ হয়েছে। সোহাগ জানান, প্রতিদিন সকালে পাঠকের মোবাইল/ফেসবুকের ম্যাসেজ প্রাপ্তির পর বই পৌঁছে দেয়া হয়। আর বিকেলে পাঠাগারেই বই দেয়া হয়। আবার ফেরতও নেয়া হয়। পাশাপাশি পাঠাগারও চালু রাখা হয়।

এ পাঠাগারে বাংলাদেশের ৫জন বিখ্যাত ব্যক্তির নামে নামকরণ করা হয়েছে ৫টি গ্যালারি। এগুলো হলো- জাতীয় কবি রবীন্দ্র গ্যালারি, নজরুল গ্যালারি, বেগম রোকেয়া গ্যালারি, বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঈীর গ্যালারি, লালন শাহ গ্যালারি ও মুহাম্মদ ইজহারুল হক গ্যালারি। এসব গ্যালারিতে রয়েছে শিশু-কিশোর ও তরুণদের মুক্তিযুদ্ধের  ইতিহাস জানার জন্য আলোকচিত্র। দুর্লভ আলেকচিত্র দিয়ে সাজানো হয়েছে ফিরে দেখা ১৯৭১ গ্যালারি। এখানে রয়েছে, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ, ৩ মার্চের অসহযোগ আন্দোলন, ২৫ মার্চের গণহত্যা, পাকিস্থানীদের হত্যাও নির্যাতনের চিত্র, মুক্তিযুদ্ধাদের প্রশিক্ষণ, ১৪ ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবি হত্যা, ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্থানীদের আত্মসমর্পণ ও বিজয় উল্ল-াসসহ মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন ছবি।

এছাড়া পাঠাগার সংলগ্ন দরিদ্র অসহায় ছিন্নমূল পিছিয়েপড়া শিশুদের আদর্শ নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষে ২০১৪ সালের ১ জানুয়ারি সেখানে প্রাক প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। কেন্দ্রীয় কিশোর পাঠাগারে প্রতিদিন সকালে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম চলে। এ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য রাজশাহী কাইছার মেমোরিয়াল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মাসিক ৫০০টাকা অনুদান দিয়ে থাকেন। সেই ক্ষুদ্র আয়ে চলে প্রাক-প্রাথমিক বিদ্যালয়।  

যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কেন্দ্রীয় কিশোর পাঠাগারে সাধারণ পাঠকদের জন্য রয়েছে কম্পিউটার কর্ণার। এ কর্ণারে একজন পাঠক বিনামূল্যে সর্বোচ্চ ২০ মিনিট কম্পিউটার ব্যবহার করতে পারেন। বিভিন্ন জাতের দেশীয় ফল ও ক্যাকটাসের গাছসহ কৃষি বিষয়ক বই এবং পত্রিকাও রয়েছে এখানে। পাঠাগারে ছোট একটি র‌্যাকে শুরু হয়েছে মিনি সংগ্রহশালার কার্যক্রম। মুদ্রা, দেশ-বিদেশের ডাকটিকিট, গ্রাম বাংলার এতিহ্যবাহী জিনিসপত্র, কাসা-পিতল,ক্যামেরাসহ বেশ কিছু পুরানো বিষয় স্থান পেয়েছে এ মিনি সংগ্রহশালায়।

ননাা কার্যক্রমও পরিচালিত হয় এ পাঠাগারে। কেন্দ্রীয় কিশোর পাঠাগার উদ্যোগে প্রতিবছর দুইবার স্কুল/কলেজের শিক্ষার্থীদের নিয়ে বইপড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। শিশু-কিশোরদের প্রতিভা বিকাশে রচনা ও চিএাংকন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। 

পাঠাগারের উদ্যোক্তা সোহাগ আলী জানান, কেন্দ্রীয় কিশোর পাঠাগার সাহিত্য চর্চাও নতুন লেখক সৃষ্টির লক্ষে পাঠাগার কার্যালয়ে নবীন-প্রবীণ লেখকদের নিয়ে সাহিত্যআড্ডা ‘আমরা করব জয়’ অনুষ্ঠিত হয়। পাঠাগার থেকে সাহিত্য কাগজ অনিয়মিত ভাবে বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দিবসে প্রকাশিত হয়ে থাকে। এছাড়াও পাঠাগার থেকে প্রকাশিত হয়েছে কিশোর সংবাদ, তমাল, অনুভবসহ আরো কয়েকটি প্রকাশনা । ২০০৫ সাল থেকে প্রতিবছর দেশ সেবায় বিশেষ অবদানের জন্য কবি সাহিত্যিক, সাংবাদিক, লেখক, সংগঠক, শিল্পীকে গুণিজন সংবর্ধনা ও সম্মননা প্রদান করে থাকে। 

গোনিউজ২৪/পিআর

দেশজুড়ে বিভাগের আরো খবর
মানুষের বিশ্বাসকে পুঁজি করে কোটি টাকা নিয়ে পালালো ডাচ-বাংলা ব্যাংকের এজেন্ট

মানুষের বিশ্বাসকে পুঁজি করে কোটি টাকা নিয়ে পালালো ডাচ-বাংলা ব্যাংকের এজেন্ট

দিনের শুরুতেই বিআরটিসি বাসের চাপায় নিহত ৪ 

দিনের শুরুতেই বিআরটিসি বাসের চাপায় নিহত ৪ 

ধারের টাকা দিতে না পারায় বন্ধুর স্ত্রীকে বিয়ে

ধারের টাকা দিতে না পারায় বন্ধুর স্ত্রীকে বিয়ে

বোমাটি বিস্ফোরিত হলে বাসের সবাই মারা যেতেন

বোমাটি বিস্ফোরিত হলে বাসের সবাই মারা যেতেন

রেললাইনে বোমা বিস্ফোরণের চেষ্টা, হাতেনাতে আটক ৩

রেললাইনে বোমা বিস্ফোরণের চেষ্টা, হাতেনাতে আটক ৩

হাতকড়া পরা অবস্থায় বাবার জানাজায় বিএনপি নেতা

হাতকড়া পরা অবস্থায় বাবার জানাজায় বিএনপি নেতা