ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ফাঁসি কার্যকরে আরো তিন ধাপ পেরুতে হবে


গো নিউজ২৪ | আদালত প্রতিবেদক প্রকাশিত: আগস্ট ২২, ২০১৭, ১০:২২ পিএম
ফাঁসি কার্যকরে আরো তিন ধাপ পেরুতে হবে

ঢাকা: নারায়নগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম ও আইনজীবী চন্দন সরকারসহ আলোচিত সাত খুন মামলায় আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত নেতা নূর হোসেন, র‍্যাব-১১-এর সাবেক অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, সাবেক কোম্পানি কমান্ডার মেজর (অব.) আরিফ হোসেনসহ ১৫ জনের মৃত্যুদণ্ডের রায় বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট। বাকি ১১ জনের মৃত্যুদণ্ড পরিবর্তন করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। মঙ্গলবার আসামিদের ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) ও আপিলের ওপর রায় ঘোষণা করেন বিচারপতি ভবানী প্রসাদ সিংহ ও বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলামের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ।

হাইকোর্টের আপিলের পর আসামিদের সাজা কার্যকরে বাকি রয়েছে তিনটি আইনি প্রক্রিয়া। ইতোমধ্যে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগে আপিল করবেন বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। বিশেষ করে নুর হোসেনের আইনজীবী অ্যাডভোকেট লুৱফর রহমান আকন্দ, বরখাস্তকৃত মেজর আরিফের আইনজীবী এসএম শাহজাহান তাদের আসামিদের পক্ষে সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করার সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন।

আইন অনুযায়ী আপিলেও তারা প্রতিকার না পেলে একই আদালতে করতে পারবেন রায় পুনরায় বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন। রিভিউ আবেদন করেও যদি আশানুরুপ রায় না আসে সর্বোচ্চ আদালত থেকে। তখন বাকি থাকবে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রান ভিক্ষার আবেদন। এটি তাদের সাংবিধানিক অধিকার। দণ্ডবিধি অনুযায়ী সরকার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামীদের সাজা বিবেচনা করতে পারেন। সাজা কমাতে পারেন। আসামিরা সরকারের কাছে আবেদন না করলেও ফাসি ও যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্তদের ক্ষেত্রে সাজা কমানোর সুযোগ রয়েছে সরকারের। যদি সরকার এটি মনে করেন সে ক্ষেত্রে। রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করে আসামিরা ব্যর্থ হলে তারপর তাদের ফাঁসির সাজা কার্যকর করা যাবে। এদিকে উচ্চ আদালাতের রায় ঘোষণার পর নিহতদের স্বজনরা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন আমরা সরকার প্রধানের কাছে সন্তুষ্ট। মিডিয়ার প্রতিও সন্তোস প্রকাশ করেছেন তারা। তাদের দাবি এ মামলায় যারা সাজাপ্রাপ্ত হয়েছেন তাদের সাজা দ্রুত কার্যকর করা হোক।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন-
নূর হোসেন, তারেক সাঈদ ও আরিফ হোসেন বাদে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অপর আসামিরা হলেন লে. কমান্ডার (চাকরিচ্যুত) এম মাসুদ রানা, হাবিলদার মো. এমদাদুল হক, এ বি মো. আরিফ হোসেন, ল্যান্স নায়েক হিরা মিয়া, ল্যান্স নায়েক বেলাল হোসেন, সিপাহি আবু তৈয়ব আলী, কনস্টেবল মো. শিহাব উদ্দিন, এসআই পূর্ণেন্দু বালা, সৈনিক আবদুল আলিম, সৈনিক মহিউদ্দিন মুনশি, সৈনিক আল আমিন, সৈনিক তাজুল ইসলাম।

যাবজ্জীবন পাওয়া আসামিরা হলেন-
সৈনিক আসাদুজ্জামান নুর, সার্জেন্ট এনামুল কবির, নূর হোসেনের সহযোগী আলী মোহাম্মদ, মিজানুর রহমান, রহম আলী, আবুল বাশার, মোর্তুজা জামান, সেলিম, সানাউল্লাহ, শাহজাহান ও জামালউদ্দিন। এ ছাড়া বাকি আসামিদের বিভিন্ন মেয়াদের সাজা বহাল আছে।

আসামিদের ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের ওপর শুনানি শেষে গত ২৬ জুলাই একই বেঞ্চ রায়ের জন্য ১৩ আগস্ট তারিখ রেখেছিলেন। এদিন রায়ের তারিখ পিছিয়ে ২২ আগস্ট নতুন তারিখ দেন আদালত।

২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড থেকে অপহৃত হন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম, আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাতজন। তিন দিন পর ৩০ এপ্রিল শীতলক্ষ্যা নদীতে একে একে ভেসে ওঠে ছয়টি লাশ, পরদিন মেলে আরেকটি লাশ। নিহত বাকিরা হলেন নজরুলের বন্ধু মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম, লিটন, গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম ও চন্দন সরকারের গাড়িচালক মো. ইব্রাহীম। ঘটনার এক দিন পর কাউন্সিলর নজরুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বাদী হয়ে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা (পরে বহিষ্কৃত) নূর হোসেনসহ ছয়জনের নাম উল্লেখ করে ফতুল্লা মডেল থানায় মামলা করেন। আইনজীবী চন্দন সরকার ও তাঁর গাড়িচালক ইব্রাহিম হত্যার ঘটনায় ১১ মে একই থানায় আরেকটি মামলা হয়। এ মামলার বাদী চন্দন সরকারের জামাতা বিজয় কুমার পাল। পরে দুটি মামলা একসঙ্গে তদন্ত করে পুলিশ।

দুই মামলায় চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজ আদালত রায় দেন। রায়ে র্যালবের সাবেক ১৬ কর্মকর্তা-সদস্য এবং নারায়ণগঞ্জের সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর নূর হোসেন ও তাঁর অপরাধজগতের নয় সহযোগীসহ মোট ২৬ জনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন আদালত। এ ছাড়া র্যাাবের আরও নয়জন সাবেক কর্মীকে বিভিন্ন মেয়াদে সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

কী ঘটেছিল সেদিন- ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল ঢাকা-নারায়ণগঞ্জের লিংক রোডের লামাপাড়া এলাকায় র্যা বের সদস্যরা চেকপোস্ট বসিয়ে কাউন্সিলর নজরুলের গাড়ি থামান। র্যা ব গাড়ি থেকে নজরুল, তাঁর তিন সহযোগী ও গাড়িচালককে তুলে নিয়ে যায়। এ সময়ে ওই পথ দিয়ে যাচ্ছিলেন আইনজীবী চন্দন সরকার। তিনি অপহরণের বিষয়টি দেখে ফেলায় তাঁকে ও তাঁর গাড়িচালককেও র্যা ব তুলে নিয়ে যায়। পরে তাঁদের সবাইকে হত্যা করে ওই রাতেই পেট কেটে এবং ইটের বস্তা বেঁধে সবার লাশ শীতলক্ষ্যা নদীতে ডুবিয়ে দেয়। ৩০ এপ্রিল ছয়জন ও পরদিন একজনের লাশ ভেসে ওঠে। এর এক সপ্তাহের মধ্যে এ ঘটনায় র্যালব-১১-এর অধিনায়ক তারেক সাঈদসহ তিন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার যুক্ততার তথ্য প্রকাশ পায়, টাকার বিনিময়ে হত্যার অভিযোগ ওঠে। একসঙ্গে সাতজনকে ঠান্ডা মাথায় হত্যা ও গুমের নৃশংসতায় শিউরে ওঠে মানুষ। তারেক সাঈদ ত্রাণ ও দুর্যোগমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার জামাতা হওয়ায় বিষয়টি ভিন্ন মাত্রা পায়।

একই সময়ে ঘটনার অন্যতম অভিযুক্ত নূর হোসেনের সঙ্গে নারায়ণগঞ্জের সাংসদ শামীম ওসমানের একটি টেলিকথোপকথন প্রকাশ পায়। যাতে নূর হোসেন ভারতে পালাতে শামীম ওসমানের সহায়তা চান। এরপর নূর হোসেন পালিয়ে যান ভারতে। এ ঘটনায় নারায়ণগঞ্জের আইনজীবীরা আন্দোলনে নামেন। সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ করে নজরুলের অনুসারীরা ও এলাকাবাসী। গণমাধ্যমে ও সারা দেশে বিষয়টি হয়ে ওঠে আলোচনার প্রধান বিষয়বস্তু।

গোনিউজ২৪/পিআর

আইন-আদালত বিভাগের আরো খবর
জামিন পেলেন মামুনুল হক

জামিন পেলেন মামুনুল হক

৫ মিনিটের মধ্যেই জামিন পেলেন ড. ইউনূস

৫ মিনিটের মধ্যেই জামিন পেলেন ড. ইউনূস

নোবেলজয়ী  ড. ইউনূসের ৬ মাসের কারাদণ্ড

নোবেলজয়ী ড. ইউনূসের ৬ মাসের কারাদণ্ড

‘খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না’

‘খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না’

দেশটা তো জাহান্নাম বানিয়ে ফেলেছেন, রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীকে হাইকোর্ট

দেশটা তো জাহান্নাম বানিয়ে ফেলেছেন, রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীকে হাইকোর্ট

ভাইস চেয়ারম্যানসহ ১৫ বিএনপি নেতার চার বছরের কারাদণ্ড

ভাইস চেয়ারম্যানসহ ১৫ বিএনপি নেতার চার বছরের কারাদণ্ড