ঢাকা মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ফসলি জমিতে অবৈধ ইট ভাটা, হুমকির মুখে পরিবেশ


গো নিউজ২৪ | শামসুজ্জোহা পলাশ প্রকাশিত: নভেম্বর ১৭, ২০১৭, ০১:৫০ পিএম আপডেট: নভেম্বর ১৭, ২০১৭, ০৭:৫৬ এএম
ফসলি জমিতে অবৈধ ইট ভাটা, হুমকির মুখে পরিবেশ

চুয়াডাঙ্গায় ফসলি জমিতে গড়ে ওঠা প্রায় শতাধিক ইটভাটা নতুন বছরের ইট তৈরির জন্য প্রস্তুত হচ্ছে বেশ জোরে সরে। ইট তৈরি এবং পোড়ানোর আগেই কিছু কিছু ইটভাটায় স্তুপ করা হচ্ছে খড়ি আর ফসলি জমির উপরি ভাগের মাটি। গাছ কেটে ফেলার কারণে একদিকে পরিবেশ যেমন পড়ছে হুমকির মুখে, তেমনি আবাদযোগ্য জমির টপ সয়েল কেটে ফেলায় ফসলি জমি হারাচ্ছে তার উর্বরশক্তি।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ইট একটি প্রয়োজনীয় বস্তু হলেও নিয়ম না মেনে ইট তৈরির কারণে কৃষিজমি যেমন হ্রাস পাচ্ছে, তেমনি আবাদি জমি হারাচ্ছে তার উর্বরতা। অপরদিকে সবুজ বেষ্টনি উজাড় করে গাছ কেটে ফেলার কারণে হুমকির মুখে পড়ছে সামাজিক পরিবেশ। সেই সাথে তৈরি ইট অন্য জেলায় পাচার হলে জেলার উন্নয়ন পড়বে হুমকির মুখে।

জানা গেছে, চলতি বছর জেলাতে ইটভাটা রয়েছে ৮৭টি। এর মধ্যে লাইসেন্স প্রাপ্ত ইটভাটা হচ্ছে ২৬টি। আর ৬১টি ইটভাটা লাইসেন্স বিহীন। অধিকাংশ ইটভাটাগুলোই গড়ে উঠেছে আবাদযোগ্য জমির উপর। আর এসব ভাটাগুলোতে কৃষি জমির উপরি ভাগের মাটি কেটে তৈরি হয় ইট। ফলে অনেক জমি পতিত থাকছে।

স্থানীয় লোকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, ইট তৈরির জন্য ফসলি জমির উপরিভাগের মাটি কেটে নেয়া হলে ওই জমি তার উর্বরশক্তি হারায়। ফলে জমিতে আগের মতো ফসল উৎপাদন সম্ভব হয় না। চাষ করলেও ফসল আগের মতো ভালো হয় না। একটি ইটভাটা স্থাপন করতে অন্তত ৩ থেকে ৪ একর জমির প্রয়োজন হয়।

সূত্র মতে, এক মৌসুমে একটি ভাটায় প্রায় ৪ লাখ ২০ হাজার ঘনফুট মাটি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। সে হিসাবে বছরে ৮৭টি ইটভাটায় ইট তৈরি করতে প্রায় ৩ কোটি ৬৫ লাখ ৪ হাজার ঘনফুট মাটি লাগে। প্রতিবছর জেলাতে ইটের চাহিদা রয়েছে ৪০ থেকে ৪৫ কোটি। চাহিদার বাড়তি বা ঘাড়তি নির্ভর করে আবহাওয়ার উপর।

একবার ক্লিনে (ভাটা বিশেষ) ইট তৈরি হয় ৫ থেকে ১০ লাখের মতো। সে হিসাবে এক মৌসুমে প্রত্যেকটি ভাটায় ইট তৈরির টার্গেট থাকে ৪০ থেকে ৬০ লাখের মতো। আর এসব ইটভাটায় অধিকাংশ মাটি সংগ্রহ করা হবে কৃষিজমির উপরি ভাগ থেকে। সেই সাথে একটি ভাটার জন্য এর আশপাশের জায়গা জুড়ে তৈরি করা হয় উঠোন।

আবার অনেকেই জমি সমতল করার জন্য ভাটা মালিকদের কাছে মাটি বিক্রি অথবা বিনা মূল্যে দিয়ে থাকে। ভাটা মালিকরা এ সুযোগে ভাড়ায় এবং নিজেস্ব পরিবহনের মাধ্যমে ওই সব ফসলি জমির মাটি সংগ্রহ করে থাকেন। মাটি সংগ্রহের পাশাপাশি আশপাশের সবুজ বেষ্টনির গাছ কেটে উজাড় হচ্ছে। আর সেই কাটা বনজ ও ফলজ গাছের অধিকাংশই হচ্ছে খড়ি। আর সে খড়ি মজুত হচ্ছে ইটভাটাগুলোতে। যদিও সব ইটের ভাটাই খড়ি দিয়ে ইট তৈরি হয় না। বিশেষ করে মফস্বল এলাকার ইটভাটাগুলোতে খড়ির ব্যবহার বেশি হয়ে থাকে। কারণ মফস্বলের ভাটাগুলোতে প্রশাসনের নজরদারি কম থাকে।

এদিকে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে প্রতিগাড়ী (দু’হাজার ইট) ইটবিক্রি হয়েছে ১৫ থেকে ১৬ হাজার টাকার মধ্যে। বছরক্ষেত্রে মূল্যবৃদ্ধি পাওয়ায় চলতি মৌসুমে ইটবিক্রি হবে ১৮ হাজার টাকার উপরে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ইটভাটা মালিক জানালেন, একটি ভাটা শুরু করতে গেলে বিভিন্ন খাতে অর্থ লাগে। এর মধ্যে রয়েছে কাষ্টমস ভ্যাট ৩ লাখ ৯৬ হাজার টাকা, ইনকাম ট্যাক্স সর্বনিম্ন ৪৫ হাজার টাকা, পরিবেশ সার্টিফিকেট ২৫ হাজার, ইউনিয়নের পরিষদের ট্রেড লাইসেন্স ১০ থেকে ৫০ হাজার টাকা, জমির বাণিজ্য খাজনা শতক ৪০ টাকা হারে।

এছাড়াও অনেক প্রদর্শিত খরচ রয়েছে। প্রদর্শিত খরচের বাহিরেই রয়েছে বিভিন্ন অনুদান হিসাবে নগদ অর্থ বা ইট। এত ঝুটঝামেলা অতিক্রম করে তার পর লাভ। ভাটা মালিকদের বৈধ্য আর অবৈধ্য হিসাবে দেখা হয়। ভাটা মালিকদের কারণে জেলার উন্নয়ন হয়। এবছর সব জিনিসের মূল্য বেড়েছে তাই শুরুতেই ইট কিনতে হবে ১৮ হাজার টাকা করে।

একটি সূত্র বলেছে, চুয়াডাঙ্গা জেলার ইট উত্তর এলাকার রংপুর, লালমনির হাট পঞ্চগড়সহ বিভিন্ন জেলাতে যায়। পাথর নিয়ে ১০ চাকার ট্রাক এ জেলাতে আসে। ফিরে যাবার সময় একটি ট্রাকে ১০ থেকে ১২ হাজার ইট নিয়ে যায়। শুধু এক জেলার ইট অন্য জেলায় যায় না, বেনাপোল, বুড়িমারি বর্ডার দিয়ে দেশের বাহিরেও চলে যায়। চলতি বছর জেলাতে দু’বছরের ডেবলোপমেন্টের প্রচুর কাজ হবে। চাহিদা মোতাবেক ইট তৈরি হবে কি না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। এর পর যদি এই জেলার ইট অন্য জেলায় পাচার হয়ে যায় তাহলে এজেলার উন্নয়ক কাজ করতে হিমসিম খেতে হবে।

অপরদিকে পরিবেশবিদরা মনে করছেন, ইট একটি অতিব প্রয়োজনীয় বস্তু। উন্নয়মূলক কাজ বাস্তবায়ন হয়ে থাকে ইট দিয়ে। তার পরও ফসল উৎপাদনের জন্য মাটির প্রয়োজনীয় উপাদান থাকে জমির উপরিভাগে (টপ সয়েল)। যা তৈরি হতে সময় লাগে কয়েকশত থেকে কয়েক হাজার বছর। তা কেটে বানানো হচ্ছে ইট। এাঁ কোন ভাবেই গ্রহণ যোগ্য না। এতে করে জমি উর্বরতা শক্তি দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। সেই সাথে কিছু ভাটাই কাঠ পোড়ানোর কারণে সবুজ বেষ্টনি হচ্ছে ধ্বংস।

অপরদিকে ভাটার কালো ধোঁয়ায় পরিবেশ ভীষণ ভাবে দূষিত হচ্ছে। ফলে হুমকির মুখে পড়েছে পরিবেশ। আইন অনুযায়ী ৫০টি বাড়ি ও সমপরিমাণ গাছ থাকলে এর ২৫ কিলোমিটার ব্যাসার্ধের মধ্যে কোনো ইটভাটার অনুমতি দেওয়ার বিধান নেই।

গত ৯ সেপ্টেম্বর চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক জিয়াউদ্দীন আহমেদ “সবুজ চুয়াডাঙ্গা, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ” গড়ার লক্ষ্যে এক ঘন্টায় সাড়ে ৭লাখ বৃক্ষরোপন করে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। সে ক্ষেত্রে গাছ কেটে ইটের ভাটার জ্বালানি করা কতটা যোক্তিক? অপরদিকে গত ২২ জুলাই জেলা প্রশাসক জেলার ইটভাটা মালিকদের ডেকে ভাটা তৈরি এবং ইটপোড়ানো আইন কানুন সম্পর্কে ভাটা মালিকদের অবহিত করেছেন।

চুয়াডাঙ্গা ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাজী আব্দুল মোতালেব গোনিউজকে বলেন, খুলনা বিভাগের মধ্যে চুয়াডাঙ্গা জেলার অবস্থান দ্বিতীয়। জেলার অধিকাংশ ভাটা জিগজ্যাগ হয়ে গেছে। অন্যান্য জেলার চাইতে চুয়াডাঙ্গা জেলার ভাটা মালিকরা আইনের প্রতি যতেষ্ট শ্রদ্ধাশীল। আর পরিপূর্ণ বিধিবিধান মেনে ভাটা করতে গেলে দেশে একটিও ভাটা তৈরি হওয়ার কথা না। ইটভাটা মালিক সমিতি যত সমস্যায় সহযোগীতার হাত বাড়ায় তা বর্ণনাতীত।

গোনিউজ২৪/কেআর

 

জাতীয় বিভাগের আরো খবর
টয়লেটসহ একাধিক সুবিধা নিয়ে দেশে আসছে ছাদখোলা দোতলা ট্যুরিস্ট বাস

টয়লেটসহ একাধিক সুবিধা নিয়ে দেশে আসছে ছাদখোলা দোতলা ট্যুরিস্ট বাস

‘রপ্তানিযোগ্য হারবাল প্রডাক্টের উৎপাদন প্রক্রিয়া ও মান উন্নয়ন’ প্রশিক্ষণ কর্মশালা

‘রপ্তানিযোগ্য হারবাল প্রডাক্টের উৎপাদন প্রক্রিয়া ও মান উন্নয়ন’ প্রশিক্ষণ কর্মশালা

পাঠ্যবইয়ের সংশোধনসহ সচিবদের একগুচ্ছ নির্দেশনা দিলেন প্রধানমন্ত্রী

পাঠ্যবইয়ের সংশোধনসহ সচিবদের একগুচ্ছ নির্দেশনা দিলেন প্রধানমন্ত্রী

শাহজালাল বিমানবন্দরে মাসুদের কাছে পাওয়া গেল ৩ কেজি সোনা

শাহজালাল বিমানবন্দরে মাসুদের কাছে পাওয়া গেল ৩ কেজি সোনা

ইজতেমায় এক বদনা পানি ১০ টাকা!

ইজতেমায় এক বদনা পানি ১০ টাকা!

হজে যাওয়ার মানুষ পাওয়া যাচ্ছে না, দফায় দফায় সময় বাড়াচ্ছে মন্ত্রণালয়

হজে যাওয়ার মানুষ পাওয়া যাচ্ছে না, দফায় দফায় সময় বাড়াচ্ছে মন্ত্রণালয়